বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩১

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩১
শারমিন আক্তার বর্ষা

‘ওর বেঁচে থাকা আমার জন্য বিপদজনক। আমাদের সিক্রেট কারবারির সব প্রমাণ লুকিয়ে কালেক্ট করেছে। এবং একটা আননোন নাম্বার থেকে কল করে আমাদের হুম-কি দিচ্ছে। আমরা যদি ওর কথা না শুনি তাহলে সে সব কিছু ওহ মিডিয়ায় ছাপিয়ে দিবে।’

‘সে হু-মকি দিলো আর তোরা ভয় পেয়ে গুটিগুটি পায়ে আমার কাছে আসলি। ভুলে গেছিস? সিংহের গর্জনে বন কেঁপে ওঠে। সিংহ গুহায় ঢোকার আগে ও পরে সিংহ সিংহ-ই থাকে। কিছুদিন শিকার করিনি বলে কী? সবাই ভাবছে সিংহ দূর্বল হয়ে পরেছে? ছোট্ট ছোট্ট লোকজন এখন হুম-কি দিচ্ছে। বুঝাতে হবে, এ.স বছর খানেক আগেও সিংহ ছিল আর বছর খানেক পরেও সিংহ-ই থাকবে। এক ঘন্টার মধ্যে আমার লোকটার খবর চাই। সে কোথায় আছে সে ডিটেইলস আমি আমার টেবিলের ওপরে চাই।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

টেবিলের ওপরে একটা ফটোকপির কাগজ রাখল তাজ। তীক্ষ্ণ চোখে তাকাই লোকটার এড্রেস দেখল। শাহাদাত আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘আমার বিরুদ্ধে কী প্রমাণ আছে এই মধ্য বয়স্ক লোকটার কাছে?’
প্রবীর শানিতকণ্ঠে বলল,
‘লোকটার ওপর একজন কে নজর রাখতে বলেছিলাম। ও জানিয়েছে, লোকটা কিছুক্ষণ আগে তার দ্বিতীয় বাড়িতে গেছে। সাথে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে ছিল।’
প্রবীরের কথা কর্ণপাত হতে হেসে বলল, ‘এতো মেঘ না চাইতে জল।’

অন্ধকার ঘরে এক মেয়ে ও বয়স্ক লোকের অদ্ভুত আওয়াজ দরজার বাহির পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ। রাগে দাঁত কটমট করছে তাজ। তেড়েমেরে যেতে লাগল দরজার দিকে। দরজা ভাঙার প্রস্তুতি নিলো। আরিশ তাজ কে থামিয়ে দেয়। তেজ রাগী গলায় বলল, ‘বাড়িতে বউ বাচ্চা রেখে এখানে নির্জন বাড়িতে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে ন’ষ্টা-মি করছে। আর তুই আমাকে আটকাচ্ছিস?’
এ.স গম্ভীর গলায় বলল, ‘আমি যেটা বুঝি সেটা তুই বুঝিস না। তোর লজ্জা করবে না একটা মেয়ে ও ছেলে কে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে?’

আরিশের কথার পিঠে চুপসে গেলো তাজ। ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট দেখিয়ে ওয়াসিফ বলল, ‘তোদের যা ইচ্ছা কর বাবা। আমার তো খিদে পেয়েছে দেখি কিচেনে কি আছে?’
আমান গজগজ করে বলল, ‘তুই এখানে কাজে আসছিস নাকি গিলতে?’
ওয়াসিফ হাই তুলে বলল, ‘আপাতত গিলতে।’

মেয়েটা চলে যাওয়ার জন্য আর্জি করছে। এবং দু’হাতে জলিল কে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটার এভাবে হাত ছুটোছুটি করছে দেখে রেগে গেলো জলিল। রেগেমেগে তার আঙুল দিয়ে মেয়েটার পিঠে আঁচড় কাটলো। মেয়েটা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল। জলিল হিংস্র পশুর মতো মেয়েটার বুকে কামড় বসাল। মেয়েটা চিৎকার দিয়ে উঠল। জলিল মেয়েটার শরীর ভোগ করতে ব্যাস্ত হয়ে উঠল। মেয়েটার ঠোঁটে কামড় বসায়। মেয়েটার চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল। জলিল কানে কানে বলল, ‘বহু বছর পর ভার্জিন মেয়ে পেয়েছি৷ একবার খেয়েই ছেড়ে দেই কি করে বল? তোর টাকার প্রয়োজন আমি তোকে টাকা দিবো প্রয়োজনে ডাবল দিবো তবুও আজ আমি আমার পরিপূর্ণ তৃপ্তি না পর্যন্ত তোকে ছাড়বো না।’

রাত প্রায় তিন টা বাজে এখনও মেয়েটার ওপরে নির্যাতন করছে জলিল। ঘন্টা খানেক পর, ছেড়ে দেয় সে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বাথরুমে চলে যায়৷ ফ্রেশ হয়ে আসতে জলিল মানিব্যাগ থেকে মেয়েটার হাতে টাকা গুঁজে দেয়। মেয়েটা ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না। তবুও কষ্ট করে সে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাহিরে চলে আসে। জলিল বাথরুম গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রুমে আসে। রুমে আসতে অবাক হয়ে যায়৷ চারজন ছেলে তার রুমের চার কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চিনতে মোটেও ভুল হয়নি জলিলের।

তাদের দেখে শুঁকনো ঢোক গিলল সে। দরজার সামনে থেকে সিটি বাজিয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করল আরিশ। ওদের চারজন কে দেখে যতটা না ভরকে গিয়েছিল তার থেকে তিনগুন বেশি ভয় পেলো সে আরিশ কে দেখে।
আরিশ বিছানার অবস্থা দেখে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নেয়। তাজ কে বলে, ‘ও-কে ধরপ বাহিরে নিয়ে আয়।’
আরিশের হু-মকি শুনে জলিল ভয় পায়। সে ভয়ে কাঁপছে। আরিশ লোকটার চুল ধরে টান মারল। শক্ত গলায় বলল, ‘এই সাহস নিয়ে তুই আমার পিছনে লাগতে আসছিলি?’

জলিলের থেকে সব সত্য বের করল প্রমাণ গুলো কোথায় আছে। জলিলের ল্যাপটপে আছে, আর ল্যাপটপ রুমে রয়েছে। রুম থেকে ল্যাপটপ এনে সব ডকুমেন্টস নষ্ট করে ল্যাপটপ ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলল। আরিশের ইশারায় প্রবীর গান পয়েন্ট করল জলিলের মাথায়। কিছুক্ষণ পর ঠাস একটা শব্দ হলো। প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়াল আরিশ। ঘাড় টা কিঞ্চিত বাঁকা করে বলল, ‘ভালোর সাথে ভালো তবে খারাপের সাথে ঠিক কতটা হিংস্র পরিমাপ করা কঠিন।’

হাসপাতাল_কিছুক্ষণ আগে। রাত ৯টা বাজে বিশ মিনিট অশ্রুসিক্ত চোখে তাকাই রুহানি বেড ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। অশ্রুসিক্ত চোখে নাজিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি বলে দিচ্ছে, সে নাসরিনের একটা কথাও বিশ্বাস করেনি৷ আরিশের কথা নাজিন শুধু শুনেইনি বরং ‘ও’ অডিও রেকর্ড ও করেছে। রুহানি কে জোর গলায় বলল, সে রেকর্ড করেছে আমার মুখের কথা বিশ্বাস না হলে রেকর্ডিং শোন।

ফোনের রেকর্ডিং রুহানি কে শুনানোর জন্য ব্যাগ হাত দিলো। কিন্তু ব্যাগের কোথাও ফোন নেই। মাথায় হাত দিয়ে ফোন কোথায় রাখছিল মনে করার চেষ্টা করছে। তারাহুরো করে বের হতে গিয়ে ফোন আরিশের বাড়ির কোথাও ফেলে দিয়ে আসছে। মনে আসতে ভীষণ রাগ হল নাজিনের৷ সে রুহানির হাত ধরে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করল। রুহানি কিছুতে নাজিনের কথা বিশ্বাস করছে। নাজিনের জোরাজুরিতে উত্তেজিত হয়ে উঠল রুহানি। নিজ বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিশ্বাস করতে পারছে না।

কেনো নাজিন তার কাছে আরিশের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে? রুহানি’র কন্ডিশন খারাপ দেখে বেলকনির দরজার সামনে থেকে দৌঁড়ে কাছে আসে শীষ। ফোনে কথা শেষ করে কেবিনে পা রাখছিল। তখনই নাসরিনের কথা শুনে থমকে দাঁড়ায়।
রুহানির হেল্থ আরও খারাপ হচ্ছে দেখে উচ্চস্বরে, ‘নার্স নার্স।’ বলে চেঁচাতে লাগল। দরজার সামনে ভিড় জমেছে। কেউ ভেতরে আসতে পারছে না। দরজা ভেতর থেকে লক করা। দরজায় কষাঘাতে শীষ রাগী গলায় ধমক দিয়ে বলল, ‘দাঁড়িয়ে আছেন কেন? গিয়ে দরজা টা খুলে দিন।’

দরজা খোলার পর দুজন নার্স ভেতরে আসে এবং উনারা নাজিন কে কেবিন থেকে বের করে দেয়। নাজিন কখন আসছে কেউ দেখেনি। সকলের চক্ষুর আড়ালে সে কেবিনে ঢুকেছিল। হঠাৎ কি এমন হয়েছে ভেতরে যার ধরুণ ডাক্তার শীষ নার্সদের এভাবে ডাকলেন? হতবিহ্বল চোখে নাজিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নাজিন দুইহাতে মুখমণ্ডল চেপে ধরে কাঁদছে।

দু’দিন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিল রুহানি। এ দুদিনে একবার আরিশ হাসপাতালে যায়নি৷ হাসপাতালে বাহিরের মানুষ জন বেশি এলাউ ছিল না। সব সময় একা থাকতে হত। মাঝেমধ্যে ডাঃ শীষ রুহানিকে চেক-আপ করার জন্য আসতেন এবং বসে অনেকক্ষণ গল্প করেন। একা সময়ে শীষ কে পাশে পেয়ে শীষের সাথে জেনো ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় রুহানির।
ইয়ানার কাছে বহুবার জিজ্ঞেস করে আরিশের কথা সে প্রতিবার আরিশ কে ভুলে যাওয়ার জন্য বলে।

নাজিন তার হারিয়ে যাওয়া ফোনটা অনেক গুঁজে কিন্তু পায়না। আসলে ফোনটা রাস্তায় একটা অটোর মধ্যে পরে গিয়েছিল পরে একজন লোক ফোনটা পেয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। সিম খুলে অন্য জায়গায় কম দামে ফোনটা বিক্রি করে ফেলে।
এই দু’দিনে হাসপাতালের সামনে থেকে একটুও সরেনি ইয়াসির। সে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। তাকে হাজার বার বলেও হাসপাতাল থেকে সরাতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর রুহানি কে রিলিজ করা হবে। লাস্ট বার চেক আপ করার জন্য ডাক্তার শীষ কেবিনে আসে। রুহানির সাথে বসে কিছু ক্ষণ গল্প করে। চলে যাবে বলে, কিছুটা মন খারাপ করে সে। রুহানির মন খারাপ হয়। বন্ধু বলে কথা। রুহানি ও শীষ ঠিক করল হাসপাতালের বাহিরেও ওরা দেখা করবে ওদের বন্ধুত্ব টাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে।

রিসিপশনের পাশে ইয়াসির কে দেখে অবাক হল রুহানি। এগিয়ে যেতে নেয় ইয়াসির দিকে। ইয়ানা শক্ত করে ধরল রুহানির হাত। রুহানি তার মায়ের হাতটি ছাড়িয়ে বলল, ‘ছাড়ো মাম্মাহ। আমি ভালো আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো।’
রুহানির মুখে ভালো আঙ্কেল ডাক শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় ইয়ানা। কেননা রুহানি ভালো আঙ্কেল বলে তার কাছে একজন লোকের গুণগান করেছিল।

যার সাথে তার লেকে দেখা হয়েছিল। বিচলিত হয়ে উঠল ইয়ানার মন। তার মানে রুহানির সাথে প্রকৃতি ওর বাবার অনেক আগেই দেখা করিয়ে দিয়েছিল কিন্তু কেউ কাউকে চিনতে পারেনি। ইয়ানার হাত হালকা হয়ে যায়। রুহানি দৌঁড়ে ছুটে যায় ইয়াসির কাছে। রুহানি উল্লাসিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘আঙ্কেল আরিশ আসেনি?’

রুহানি কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুইহাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরল ইয়াসির। আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় রুহানি। সে বুঝতে পারছে না কেনো ইয়াসির তাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলেন। রুহানি জেনো একটা ভ্রমে চলে গেছে। ইয়াসির রুহানি কে নিজের সামনে দাঁড় করালো। মেয়ের গালে হাত ছুঁয়ালো কপালে চুমু দিলো। রুহানি ভ্রু কুঁচকানো করে তাকিয়ে আছে। ইয়াসির জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘তুই আমার মেয়ে। আমার মেয়ে তুই।’
– ‘মেয়ে?’

‘হ্যাঁ। আমার মেয়ে। আমি তোর বাবা। তুই আসবি খবর পেয়ে তোকে দেখার জন্য কাতর হয়ে ছিলাম আমি একুশটা বছর। আমার শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর আগে তোকে জেনো একটিবার দেখতে পাই। দেখ সে ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করে দিয়েছে।”
আগের সব ঘটনা রুহানি ভুলে গেলো। সে পিছনে ফিরে তাকাল তার মায়ের দিকে। ইয়ানা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চুপ থাকা বলে দিচ্ছে ইয়াসির যা বলছে সত্য। ইয়াসির ই তার বাবা যাকে খুঁজতে সে বাংলাদেশে এসেছে। বাবা বলে কান্নায় ভেঙে পরে রুহানি। দুইহাতে ইয়াসির কে জড়িয়ে ধরে ‘বাবা’ বলে কান্না করছে।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসে। রুহানি তার মা’কে অনেকক্ষণ যাবত বুঝাচ্ছে।

‘ অতীত ভুলে যাওয়ার জন্য৷ অতীত কে মনে রেখে বর্তমান চলা কঠিন। মানুষ বলেই ভুল। মানুষ ভুল করবে। একজন ভুল করলে অন্য জন কে তাকে ক্ষমা করে মানিয়ে নিতে হয়। ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাহিলে ক্ষমা করতে হয়। বাবা ভুল করেছে তোমার চলে যাওয়ায় সে কষ্ট পেয়েছে তুমিও কিন্তু সুখে ছিলে না। তুমিও কষ্টে ছিলে। তাহলে কেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দু’জনে কষ্টে থাকবা। তোমাদের কাছে অপশন আছে নিজেদের সাথে থেকে ভালো থাকার। তাছাড়া তোমাদের কিন্তু ডিভোর্স হয়নি। গর্ভবতী অবস্থায় ডিভোর্স প্রযোজ্য নয়।

আমি কিছু শুনতে চাই না। তোমাদের দু’জন কে এক হতে হবে। সবার মা বাবা আছে আমার থাকতেও নেই৷ ছোটো থেকে বাবা ছাড়া বড় হয়েছি মা। তুমি কেন তোমার মেয়ে কে তার বাবা থেকে বঞ্চিত করবা? তুমি বাবাকে ক্ষমা করে দাও আর সব মনমালিন্য মিটিয়ে নাও।’

রুহানির সাথে ওর বন্ধুরাও বলল সাথে রুহানির নানা নানী ও একই কথা বলল। কেননা তারা দু’জন তো জানেন, ইয়ানা ইয়াসিরের প্রতি দৃঢ় ভালোবাসা’। সে দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসতে পারেনি। ইয়াসির ইয়ানার হাত ধরে ক্ষমা চাইলো। ভুলের জন্য মাফ চাইল, সে তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। ইয়ানা গম্ভীর শ্বাস ফেলল। মেয়ে স্বামী বাবা মা সবার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর সব কিছু ভুলে ইয়াসির’কে মাফ করে দেয়। পাশ থেকে আদনান চেঁচিয়ে বলল,
‘ওহহ ইয়াহহ। এবার আঙ্কেল আন্টির বিয়া খাবো।’

আদনানের লাগামহীন কথায় ইয়ানা লজ্জা পেলো। এবং বাকিরা সবাই সশব্দে হাসতে শুরু করে। ইয়ানা, রুহানি সবাই কে সাথে নিয়ে ইয়াসির তার বাড়িতে আসে। রুহানি বাড়িতে আসার পর থেকে আরিশ কে দেখেনি। ইয়ানা চমকায় তার দেয়ালে পোর্টেট গুলো দেখে।

মামুর সাথে মামির সব ঠিকঠাক হয়েগেছে শুনে তৃপ্তির হাসি হাসল আরিশ। সে তো এটাই চেয়েছিল তার মামনি ফিরে আসুক৷ ওরা বাড়ি আসছে পর থেকে সেমুখি আর হয়নি আরিশ। সে তার একটা ফ্ল্যাটে চলে গেছে। আজ দু’দিন ধরে ওখানেই আছে। তার ফোনটাও বন্ধ। ফোন অপেন করলে ইয়াসিরের সাথে কথা বলে আবারও বন্ধ করে নেয়। আরিশের আদেশে সেই দু’জন গার্ড কে খুঁজে বের করে আনা হল। ওদের শুধু হুকুম দিয়েছিল রুহানি জেনো বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। তাকে জেনো আটকানো হয়৷ তাই বলে তাকে মে’রে আহত করার অনুমতি দেয়নি৷

লোক দু’টো কে একটা বন্ধ রুমে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোক দু’টো ছটফট করছে। আসলেই তাদের মস্তবড় ভুল হয়েছে। অন্ধকার ঘরে হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে নড়েচড়ে ওঠে ওরা দু’জন। সামনের চেয়ার টায় বসে আরিশ। দু’জনের সাথে দু চারটে কথা বলে। চুলের মুঠি ধরে দু’জনের গালে কোষে কয়েকটা থাপ্পড় মারে। এতেও ওর জ্বালা কমেনি। তাজ ও আমান কে ইশারা করল৷ দু’জনে দুই বোতল অ্যাসিড নিয়ে আসল এবং তা গার্ডদের শরীরে ছুড়ে মারল। মুখে ও শরীরে এসিড ছুড়ে মারার কারণে পুড়ে যায় ত্বক, বিকৃত হয়ে ওঠে চেহারা। চোখে এসিড লাগলে অন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মুখে কাপড় বাঁধা শব্দ করতে পারছে না। কৈ মাছের মতো লাফাচ্ছে দুজন।

তিন দিন পর, ডাক্তার শীষ এর সাথে দেখা করতে রুহানি ও ওর বন্ধুরা একটা ছোটো লেক অথবা পার্ক বলা যায়। সেখানে আসে। শ্যামা আসতে পারেনি গতকাল রাতে ওর স্বামী আসলে বলে ‘ও ওর শশুর বাড়ি চলে যায়। ডাক্তার শীষ আসতে দেরি করছেন। গাছের নিচে বসার জন্য বড়বড় বেঞ্চ রয়েছে। অনেক হয়তো এখানে বিকেল দিকে হাঁটতে আসে ও এখানে বসে বিশ্রাম নেয়।

রুহানি ও ওর বন্ধু রা মিলে বসে অপেক্ষা করছে। ওরাও ওদের ফ্রেন্ড গুলো কে এখানে আসার জন্য বলেছে। তারা রাস্তায় আছে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে। রুহানির হঠাৎ চোখ পরল রাস্তার পাশে ওদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে আরিশ ওর বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সাথে আরও তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোক গুলো কথা শেষ করে গাড়িতে ওঠে যায়। আরিশ হেঁটে নিজের গাড়ির ডোরে হাত রাখে। রুহানি আরিশের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। তাকে প্রশ্ন করে এখানে কি করছে? বাড়ি যাচ্ছে না কেন?

রুহানি কে এই সময় এখানে দেখে চমকে ওঠে আরিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হয়ে গেলো রুহানির সাথে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। রুহানির মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে এক ঘোরে ডুব দিতে লাগল আরিশ। পরক্ষণে চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘আমি কোথায় থাকবো? কোথায় যাবো কোথায় যাবো না। সে কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাবো না। আমাকে যেতে হবে সরো আমার সামনে থেকে।’

রুহানি ভালোবাসার অধিকার খাটালো। ব্যর্থ হলো। আরিশের পরিবর্তন তাকে বিব্রত করছে। সে জানতে চাইলো কেনো করছো আমার সাথে এমন। তবে কি ভালোবাসোনি তুমি আমায়?
আরিশ কাঠকাঠ কথায় রুহানিকে শোনালো সে তাকে ভালোবাসেনি। রুহানির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরল। সে বিশ্বাস করল না আরিশের কথাখানি। ধরে ফেলল আরিশের হাত শক্ত করে। সে মূহুর্তে এসে উপস্থিত হল ডাক্তার শীষ। আরিশ এক ঝটকায় রুহানির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে গেলো।

রুহানি গিয়ে ছিটকে পরল মাটিতে। গাড়িটা চলতে লাগল। শীষ ছুটে আসল রুহানির কাছে। তার ধরে বসল পাশে। ফ্রন্ট সিটে বসেছে আরিশ। গাড়ির সাইট মিরর দিয়ে দেখছে ডাক্তার রুহানির হাত ধরেছে। রাগে হাত মুঠ করে নিয়েছে। কপালে রগ শীরদাঁড়া হয়ে গেছে। আরিশ কে দেখে ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলছে, তাজ ও ওয়াসিফ।

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩০

আমান ও প্রবীর আজ অন্য কাজে অফিসে রয়ে গেছে। লুকিং গ্লাসে ওয়াসিফের দিকে তাকাল তাজ। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে তাজ ও ওয়াসিফের। আরিশ কে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার শীষ নর্মালি আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল রুহানি কে। রুহানির কান্না থামছে না দেখেই সে রুহানি কে জড়িয়ে ধরেছে। আরিশ চোখ দু’টো বড় বড় করে তাকাল। কর্কশকণ্ঠে চেঁচিয়ে বলল, ‘ওই গাড়ি ব্রেক কর।’

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩২