বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩০

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩০
শারমিন আক্তার বর্ষা

বিয়ে বাড়ি আস্তেধীরে শূন্য হতে লাগল। গেস্টরা একে একে চলে গেলো। লোকসমাগম কমে গেলো বাড়িটায় নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায়। রুহানি ওদের সাথে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ওদের পিছু যাচ্ছিল হঠাৎ একটা ওয়েটার সাথে ধাক্কা খায় নাজ। নাজিনের ছোট্ট করে নাজ। গায়ের জামায় সফট্ ড্রিংকস পরায় জামাটা ভিজে যায়। ওয়েটার স্যরি বলে, নাজ কে ওপরে একটা ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। পরিস্কার হওয়ার জন্য।

সবাই চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ একা নিস্তর ড্রয়িংরুমের মধ্য খানটায় হাঁটু গেঁড়ে বসে রইল ইয়াসির। বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে, কেনো সে বুঝতে পারিনি? যে মেয়ে টার মুখশ্রী দেখিলে পরাণ জুড়িয়ে যায়। ভেতর থেকে আসে প্রশান্তির শ্বাস। যাকে পাশে বসিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললে মনে হয়, হ্যাঁ ওই আমার সবচেয়ে আপন জন। সে মেয়ে টা কে কিভাবে এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলাম। ভেবে পাচ্ছে না ইয়াসির। চোখের সামনে প্রথম দিন হতে রুহানির মুখশ্রী ভাসছে। লেকে হঠাৎ ধাক্কা খাওয়া।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আল্লাহর ইচ্ছে ছিল বলে, সেদিন অজান্তেই মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। দূর্ভাগ্যবশত চিনতে পারিনি। ওর সাথে কথা বলার সময় মুগ্ধ নয়নে ইয়াসির রুহানির মুখটি লক্ষ্য করেছে। তার কথা বলার ধরণ, কথার মাঝে খিলখিল করে ওঠে ওঠা। সব যে তার পূর্ব পরিচিত। রুহানির মধ্যে ইয়ানার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছিল ইয়াসির। তারপর রেস্টুরেন্টের সামনে অপমান করা। কিছুক্ষণ আগে, নিজের মেয়ে কে নিজ হাতে ধাক্কা দিয়ে দেওয়া। গার্ড দিয়ে বের করে দিতে চাওয়া। সব জেনো এখন ইয়াসিরের গলা চেপে ধরেছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জল টুপটুপ করে বেয়ে চলেছে।

আমতা আমতা করে বলল, ‘-ও’ কি শুধু তোমার মেয়ে ইয়ানা? তোমার রুহি কী আমার কেউ নয়? আমি যদি জানতাম -ও- আমার কলিজার টুকরা৷ তাহলে ও-কে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার মেয়েটাকে কাউকে হার্ট করতে দিতাম না। আমি ও মেয়ে টেরোরিস্ট এর সাথে সংযুক্ত আমাদের ক্ষতি করার জন্য আসছে। আমার ভুল টা কোথায় ইয়ানা? রুহি আমারও মেয়ে। তুমি ও-কে এত বছর আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখছো। আমি আর আমার মেয়ে কে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।’ বলে ওঠে হাসপাতালের উদ্দেশ্য দ্রুত রওনা দেয়।
‘বাড়ি না জেনো গোলকধাঁধা। কখন থেকে হাটছি। বারবার মনে হচ্ছে ঘুরেফিরে এক জায়গাতেই আসছি। কোন দিকে যে যাবো?’

বিড়বিড় করে বলতে বলতে একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো নাসরিন। দরজার বাহির থেকে আরিশের কথাগুলো শুনে ফেললো সে। ভয়ে হাত-পা বরফের ন্যায় জমে আসতে লাগল। শুঁকনো ঢোক গিলে ছুটে চলে যায়।
আরিশের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রবীর ও ওয়াসিফ। মেঝের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল তাজ। নাক টেনে বলল, ‘ছোট্ট থেকে চিনি এই ছেলে টাকে। ছোট্ট থেকে চিনি যে কি না আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিং যে সপ্তাহে সপ্তাহে কোটি টাকার ডিল করে। যার নিজের টাকা সম্পত্তির অভাব৷ সে কি না বলছে সে সব কিছু তার মামুর সম্পত্তির জন্য করেছে। হাহহ আরিশ, জন্মের পর থেকে ঠিক মতো সাজিয়ে মিথ্যে কথাও বলতে শিখিসনি। পুরো দুনিয়ার মানুষ জন এসে যদি বলে, তুই সব টাকার জন্য করেছিস তাহলেও আমি তাজ বিশ্বাস করবো না।’

তাজের কাঁধে হাত রাখে ওয়াসিফ। বলল, ‘আমার কেন মনে হচ্ছে -ও মিথ্যে বলে পালিয়ে গেছে।’
পাশ থেকে প্রবীর চেঁচিয়ে বলল, ‘কারণ সত্য এটাই। আরিশ মিথ্যা বলছে। ওর কোনো জন্মেও টাকার লোভ ছিল না। আরিশ পৃথিবীতে সব থেকে বেশি যাকে ভালোবাসে সে হচ্ছে ওর মামু। ওর মামুর খুশির জন্য ই সে মৈথি কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল। তা বাঁধে ওইদিন রাতের ঘটনা আমরা সবাই জানি। ল্যাপটপের ওপাশে ব্যাক্তির কাছে হাত জোর করে কান্না পর্যন্ত করেছিল আরিশ। শুধু মাত্র রুহানির জন্য। দরজার আড়ালে লুকিয়ে দেখেছি শুনেছি আমরা আরিশের ওই ব্যাক্তির কাছে আর্তনাদ। প্রতি টা আর্তনাদে ছিল আমায় রুহানি কে দান করুন। বেশিদিন তো হয়নি মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা। আরিশের আর্তচিৎকার ব্যাক্তির হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। সে দেয়নি রুহানিকে আরিশ কে।’

‘ওই ব্যাক্তিটা তো আরিশের___’
‘হুঁশশ নাম নিস না। আরিশ শুনতে পেলে মারা-ত্মক রেগে যাবে।’
‘অন্যায় হচ্ছে আরিশের সাথে। আমরা সবটা জেনেও মেনে নিবো?’
‘যার সাথে হচ্ছে সে মেনে নিয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।’
তীক্ষ্ণ কণ্ঠে তাজ বলল, ‘ওই ব্যাক্তিটার আরিশ কে দেওয়া শর্ত টা মনে আসলে আমার লোমহর্ষক অবস্থা হয়। ইচ্ছে করে সব কিছু তছনছ করে দেই।’
‘আরিশের ভেতরের অবস্থা কল্পনা করতে পারছিস প্রবীর?’

হাসপাতাল এইট ফ্লোর হাত দু’টি পেছনে মুঠি বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আরিশ। কিছুক্ষণ পর, কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়াল। আরিশ নরম গলায় তার কাছে মিনতি করল। কোনটি সে তার কথা থেকে বিন্দুমাত্র নড়চড় হল না। উনি ফোনে যা বলে ছিলেন এখনও সেটাই পুনরাবৃত্তি করলেন।
তিনি কাঠখোট্টা কণ্ঠে বলল, ‘তোমার অনুরোধ আমি ফেলতে পারবো না বলে ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারলাম না। ভুল তোমাদের ছিল না, ভুল আমার ছিল। কেননা আমি তোমাদের ভুল করার সুযোগ দিয়ে ছিলাম।’
আরিশ অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনলো। উনার বলা শেষ হতে উনি চলে গেলেন। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আরিশ।

রুহানির অবস্থা আগের থেকে ভালো। জ্ঞান ফিরেছে, চোখ মেলে সবার আগে আরিশ কে দেখতে চাইলো। ইয়ানা রুহানি কে জানায় আরিশ এখানে আসেনি। দরজার বাহিরে ইয়ানার বাবার সাথে ইয়াসির কথা বলছে। সে বার বার অনুনয়-বিনয় করে মেয়ের সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।
বাহিরের শব্দ রুহানির কানেও আসছে৷ সে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাহিরে কে?’

ইয়ানা কথা ঘুরিয়ে ফেলল। রুহানি কে বিশ্রাম নিতে বলে বাহিরে চলে যায়। কেবিনের মধ্যে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার শীষ৷ হাতে রুহানির রিপোর্ট। রিপোর্টে এক নজর চোখ বুলিয়ে রুহানির দিকে তাকায়। মুচকি হেসে বলল, ‘আজকের দিনটা আপনাকে হাসপাতালে থাকতে হবে। আগামীকাল আপনি রিলিজ পাবেন।’
ডাক্তার শীষ এর ফোনে কল আসল। ইমার্জেন্সি বলে, বেলকনিতে গিয়ে কল ধরল সে। হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকল নাসরিন। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল রুহানি। দরজার শব্দ শুনে ওদিকে তাকাল। নাসরিন ভারী ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। কেবিনে কাউকে না দেখতে পেয়ে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে রুহানির দিকে এগিয়ে গেলো। কম্পিত কণ্ঠে সব বলল। যা সে আরিশের মুখ থেকে শুনেছে।

রাত ক’টা বাজে ঠিক জানা নাই। ঘড়ির কাঁটা ঠকঠক করছে। শেয়াল হাঁক ছেড়ে ডাকছে। অর্ধনগ্ন দু’টি মানব দেহ আপত্তি কর অবস্থায় শুয়ে আছে। আনুমানিক এই ২০থেকে ২১ বছরের বয়সী একটা মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ইব্রাহীম খলীল। দুই তলা বাড়ি ওপর তলায় চারটা বেডরুম। নিচ তলায় দুইপাশে দুইটা রুম। এক পাশে বড় ড্রয়িং রুম। অন্য পাশে রান্নার জন্য রান্নাঘর ও অন্য দিকে ডাইনিং টেবিল। এত বড় বাড়িতে দুজন ছাড়া আর কেউ নাই। মেয়েটা শরীরে বিছানার চাদর পেছিয়ে ওঠে দাঁড়াল। অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ আমাকে এখন বাড়ি ফিরতে হবে।’
লোকটা ওঠে বসল। মেয়েটির হাত ধরে টেনে বিছানায় ফেলে দিলো। উপর থেকে মেয়েকে চেপে ধরে বলল, ‘তোকে দশ হাজার টাকা দিয়েছি। কি এখনই চলে যাওয়ার জন্য আজ সারারাতের তুই আমার ভোগের সামগ্রী।’

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৯

(আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক পাঠিকা গণ। গল্প ছোটো হওয়ার জন্য দুঃখিত। প্রচুর মাথা যন্ত্রণা নিয়ে শুধু মাত্র আপনাদের জন্য লিখা আজকের পর্ব। তাছাড়া আজকের পর্বটা আপনাদের কাছে এলোমেলো লাগতে পারে তারজন্য দুঃখিত। সব কিছুর জন্য আমার মাথা যন্ত্রণা দ্বায়ী। ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে।
পরবর্তী বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। রি-চেইক দেওয়া হয়নি। ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন।)

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩১