কাঞ্চাসোনা ২ শেষ পর্ব 

কাঞ্চাসোনা ২ শেষ পর্ব 
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

ধ্রুব আর সকালকে দেখলে যে কেউ বলবে যে দুজনেই সুখী মানুষ।ধ্রুবর যতো পাগলকরা আবদার আছে সব সকালের কাছে আর সকালের যতো আহ্লাদ আছে সব ধ্রুবর কাছে।সকালের চোখে ধ্রুব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বামী।ধ্রুব আজকাল সকালকে চোখে হারায়,অফিসে থাকলেও কয়েকবার ফোন দেয়,বাসায় এসে ঘামে ভেজা শার্ট গায়ে নিয়েই সকালকে জড়িয়ে ধরবে,মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা বেসামাল কাজ কর্ম করতেও ভুলে না।

ধ্রুবর এমন কাজে সকাল অবশ্য রাগ করেনা,সে এগুলোই বেশী উপভোগ করে।আসলে সে কেনো সব মেয়েরাই তার স্বামীর চোখে বিশেষ হয়ে থাকতে চায়,আহ্লাদীর প্রশ্রয় পেতে চায়,স্বামীর একটু পাগলামিময় আবদার শুনতে চায়,স্বামীর চোখের তার জন্য ভালোবাসার উত্তাল সমুদ্রের ঝড় দেখতে চায়।অনেকেই বলতে পারেন এগুলো না দেখালে কি ভালোবাসা হয় না?হয়!কিন্তু অধিকাংশ মেয়েরা স্বামীকে সবার সামনে ফিট কিন্তু তার সামনে আদুরে স্বামীই আশা করে।সেক্ষেত্রে সকাল খুব ভাগ্যবতী!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ধ্রুব এমন এক পুরুষ যার কাছে কিনা সকাল কোনোকিছুর কমতি পাবে না।আজকাল সকালেরও লজ্জা কমছে,সাপ্তাহ খানেক ধ্রুবকে দেখলে লজ্জা,ভয়,সংসয়ে দম আটকে আসতো কিন্তু এখন সে নিজেই ধ্রুবকে চায়,চোখের ইশারায় কাছে আনতে চায়।ধ্রুব বুঝে।পাখির ছটফটানি দেখে মুচকি হাসে।সকালকে সে আশকারা দিয়ে পৃথিবীর সুখী মানুষদের একজন বানিয়ে দিতে কোনো কৃপণতা করে না।

ধ্রুব শুধু সকালকে ভালোবাসে তা না সে সকালের সকল বিষয়ে যত্ন নেয়,আগলে রাখে।সকালের সানিধ্যে এসে আটাশ বছর বয়সী ধ্রুব নিজেকে আবার নতুন করে উপলব্ধি করে,সুখী ভাবে,পৃথিবীতেই আরেক প্রেমপুঞ্জর সন্ধান পায়।আজকে সকালে ধ্রুব অফিসে যাচ্ছিলো,আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল আচড়ে নিচ্ছে সকাল এসে গা ঘেষে দাঁড়ায়।বাহু আঁকড়ে ধরে নাক ঘষে আদুরে বিড়ালের মতো মিশে যেতে চায়।ধ্রুব হাত বাড়িয়ে সকালকে বুকে নিয়ে বলে,

“কি হয়েছে আমার পাখিটার?”
সকাল পিটপিট করে ধ্রুবকে দেখে নেয়।মন খারাপের সুরে বললো,
“আজকে অফিসে না গেলে কি হবে?”
ধ্রুব তার কপাল সকালের কপালের সাথে লাগিয়ে বললো,
“চাকরি চলে যাবে সোনা।”
সকাল অবুজ বালিকার মতো বললো,
“চলে যাক।”

“হুহ!চলে গেলে আপনাকে খাওয়াব কি?”
সকাল ঝলমল করে হেসে বললো,
“আদর খাবো,তাতেই হবে।”
এটা বলেই চোখ মেরে দেয়।ধ্রুব সকালের মাথায় টোকা দিয়ে বললো,
“ওরে দুষ্টু!আদর খেলে পেট ভরবে?”
“হুম।”

ধ্রুব কিছুক্ষণ সকালের দিকে তাকিয়ে থেকে টুপ করে সকালের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,
“আপাতত এতোটুকু আদরে পেট ভরান,আমি জলদি আসবো।আল্লাহ হাফেজ।”
ধ্রুব চলে গেলে সকাল আয়নায় নিজেকে দেখে,শরীরে বেশ পরিবর্তন ফুটে উঠেছে।এসব ভাবনার মাঝে ধ্রুব আবার রুমে আসে সকালকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তোমাকে আতো আদুরে লাগে কেনো?”

সকাল মুচকি হাসে।
“আপনার বউ বলেই তো।”
ধ্রুব ফিসফিস করে বললো,
“ইশ!কথা শুনলেও আদর আদর লাগে।মিষ্টিপাখি।”
এমন দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটির মাঝেই ধ্রুব আর সকালের দিনকাল ভালোই যাচ্ছিলো।

মিতু ক্লান্ত চোখে সামিরের বাসার দিকে তাকিয়ে আছে।মুখে অভিমানের গাঢ় ছাপ,আর বুকে এক আকাশ পরিমাণ কষ্ট;এসবের কারণ হচ্ছে সামিরের উদাসীন আচরণ।তাদের বিয়ের পনেরো দিন হতে চললো কিন্তু সামির তার সাথে ঠিকঠাক দেখাই করে না এমনকি দারোয়ানকে বলে দিয়েছে মিতুকে ঢুকতে দিলে বাড়িওয়ালাকে ঘুষের কথা বলে চাকরি থেকে বের করে দেবে সেই হু মকি শুনে দারোয়ান মিতুর সাথে কথা বলতেও নারাজ।

মিতু ফোন দিলে সামির ধরে কিন্তু কেমন দায়সাড়া ভাবে কথা বলে,সে নিজেই কতোক্ষন এটা সেটা জিজ্ঞেস করে সামির হু হা বলে উত্তর দিয়েই চুপ।অগ্যতা মিতুই ফোন রেখে দেয় একা একা কতোক্ষন কথা বলা যায়?গত এক ঘন্টা ধরে সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে,সে জানে সামির বাসায় আছে কিন্তু না ধরছে ফোন আর না বাসা থেকে বেরোচ্ছে।মিতুর চোখ জ্বালা করে,চোখের পাতা কাঁপিয়ে পানি নামে।এই লোকটা এতো নিষ্ঠুর কেনো?আর কেনোই’বা এই লোকটাকেই তার মন দিয়ে ফেললো!সামির তখন বাসা থেকে বের হয় স্থির চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসে।

“কি ব্যাপার?কোনো দরকার?”
মিতুর গলা কেঁপে ওঠে।
“আপনার সাথে কি আমার দরকারের সম্পর্ক?”
সামির কিছু না বলে স্থির চোখে মিতুকে দেখে।বিয়ের পর থেকে মিতুকে পা/গলের মতো কাছে পেতে ইচ্ছে করছে,দেখা হলেই আদর ভরা স্পর্শে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।আগেতো এমন ইচ্ছে করেনি তাহলে এখন কেনো এমন হয়?মন,শরীর দুটোই কি বিয়ের মানে বুঝে?বিয়ের পবিত্রতা বুঝেই কি তাদের বন্ধন আরো মজবুত করতে মরিয়া!কিন্তু সামির এটা চায় না।

সমাজে সম্পর্কের ভিত্তি গড়েই মিতুকে কাছে টানবে।সে মিতুর অস্তিরতা খুব বুঝে,ব্যাকুল চোখের চাহনী ঠিক দেখে তখন তার ভেতরে স্বত্তা আরো জেগে যায় কিন্তু চুপ থাকে।মনে মনে নিজেকে স্বান্তনা দেয়,আর কয়টা দিন।সে তার মনকে আর মিতুকে সমানতালে বুঝালেও মিতু বুঝতে নারাজ,সে রোজ দেখা করতে উ ন্মাদ হয়ে থাকে,অথচ সে জানেই না তার এই উ ন্মাদনায় সামিরের বুক পু ড়ে খাকখাক হয়ে যায়।
সামিরকে এমন নিশ্চুপ থাকতে দেখে মিতুর কষ্ট হয়।

“কিছু বলছেন না কেনো?”
সামির মাথা নেড়ে বললো,
“কি বলবো?”
“আপনি এমন করছেন কেনো?”
সামিরের ভ্রু কুঁচকে যায়।
“কি করেছি মিতু?আর যাই করিনা কেনো আমাদের ভালোর জন্যই তাই না?দুই দিনের সুখের জন্য বড়ো কোনো কিছু নষ্ট হওয়া উচিত না।”
সামির কিসের ইঙ্গিত করেছে মিতু বুঝেছে তাই মাথা নেড়ে সায় দেয়।সামিরের দিকে তাকিয়ে তার বুকে হাত রেখে কাতর গলায় বললো,

“এখানে খুব কষ্ট হয়।একটুও সুখ হচ্ছে না।”
সামিরের মুখের ভাব নরম হয়ে আসে;অপলক মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে।সন্ধ্যার আবছা আলোয় মিতুকে স্নিগ্ধ লাগছে।হাত বাড়িয়ে মিতুর হাতটা কাছে টেনে নেয়।কোমল গলায় বললো,
“আমি যেদিন কাছে টানতে পারবো এখানে আর কোনো কষ্ট হবে না।”
মিতু সুবোধ বালিকার মতো মাথা নাড়ে।সামির বললো,
“বাসায় যাও।কালকে দেখা হবে।”

মিতু মাথা নেড়ে বাসার দিকে পা বাড়ায়।এর পরের দিন ঠিক সামিরের সাথে দেখা করতে আসে কিন্তু সামির লাপাত্তা।দারোয়ানের থেকে জানতে পারে সামির আজকে সারাদিন বাসায় আসেনি।অনেকক্ষন অপেক্ষা করে মিতু হাল ছেড়ে দেয়।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে সে বাসার দিকে পা বাড়ায়,ভেবেছিলো বিয়ের পরের মুহূর্তগুলো ভালো কাটবে কিন্তু কিসের কি বিয়ের পরে আরো বেশীই যন্ত্রণায় কাটছে।

দম বন্ধ করা অবস্থায় সে দিন রাত কাটাচ্ছে।হ্যাঁ সামির বলেছিলো দেখা সাক্ষাৎ কম করতে হবে কোনো ভাবেই কাউকে বুঝতে দেয়া যাবেনা যে তারা দুজনে স্বামী-স্ত্রী।মিতু মুখে মুখে মানলেও কাজে মানতে পারেনি,তার মন যে বড়োই অবাধ্য,এই অবাধ্য মন স্বামীর সানিধ্য চায়,তাইতো বারবার ছুটে আসে।অথচ সামিরের কেমন জানি নির্জীব আচরণ।ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে বাসায় এসে মিতু অবাক!এসব কি!তার অগোচরে এতো সব হচ্ছে আর সে জানেই না!

সামির সোফায় বসে আছে তার সামনে ধ্রুব,আনোয়ার মির্জা,সারোয়ার মির্জা বসে আছে।মিতু ভালো করে সামিরের দিকে তাকায় আজকে সামিরকে মোটেই অগোছালো,চালচুলোহীন লাগছে না বরং ফর্মাল পোশাকে সুন্দর লাগছে।
মিতুকে দেখে ধ্রুব চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়।ভাইয়ের চোখের ভাষা বুঝে মিতুর বুক কেঁপে উঠে।মনের ভেতর উঁকি দেয় অজানা ভ য়।

ধ্রুব মিতুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে ফিরেছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়ার পরে সামির ফোন দিয়ে নিচে নামতে বলে।সে নেমে গেলে সামির তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“চাকরি হয়ে গেছে,প্রথমেই পয়ত্রিশ হাজার স্যালারি।”
ধ্রুব উল্লাসে হেসে বললো,
“সালা!বাজিমাত কইরা দিছোস।”
তারপর কিছুক্ষণ এটা সেটা বলার পরে সামির আস্তে করে বললো,
“তোর কাছে কিছু চাইলে দিবি?”

ধ্রুব জিজ্ঞাস্য চোখে তাকালে সামির বললো,
“দোস্ত;আসলে কেমনে বলি”
ধ্রুব সামিরের পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“আমার সাথে ফর্মালিটি বাদ দে,সালা।”
সামির দম নিয়ে বললো,
“মিতুকে পছন্দ করি।”
ধ্রুব বজ্রকন্ঠে বললো,
“কি?”

“চেতিস না প্লিজ,অনেক ভালোবাসি,বিয়ে করতে চাই।”
ধ্রুব শীতল চোখে তাকিয়ে আছে।
“মিতু!মিতু তোকে পছন্দ করে?”
সামির সত্যিটাই বললো,
“করে।মিতুও আমাকে ভালোবাসে।”
“সামির এসব কবে থেকে শুরু হলো?আমি টেরও পেলাম না?”
“কিছু শুরু হয়নি,তুই সম্মতি দিলে শুরু হবে।আমি মিতুকে বিয়ে করতে চাই।”
ধ্রুব অবিশ্বাস্য চোখে বললো,

“কিভাবে সামির?তুই কি পা,গল?”
সামির ধ্রুবর হাত আঁকড়ে ধরে।
“প্লিজ ধ্রুব।আমি তোর আশায় আছি,প্লিজ।”
ধ্রুব সামিরের মুঠো থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“এসব বাদ দে তো।যা হবে না তা নিয়ে কথা বলে লাভ নাই।”
সামিরের বুকে হারানোর যন্ত্রণা কেঁপে কেঁপে ওঠে।ভেবেছিলো ধ্রুবকে বুঝিয়ে রাজি করাতে পারলে মিতুকে পাওয়া সহয হবে,কিন্তু এখন যে ধ্রুবই নারাজ।সামির চোখ জ্বালা করে উঠে।হঠাৎ করে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ভাই,প্লিজ।তুই আমার সাথে এমন করিস না।মিতু ছাড়া আমার কেউ নাই রে।একটু দয়া কর।”

সামিরের করা কাজে আর কান্নাভেজা গলায় ধ্রুব থমথম খেয়ে যায়।সামিরকে টেনে সরিয়ে বললো,
“আরে!কাঁদিস নাকি?”
সামিরের গাল বেয়ে তখন পানি ঝড়ছে।ধ্রুবর কথা পাত্তা না দিয়ে হাত বাড়িয়ে ধ্রুবর পা ধরতে চায়।সামিরের হাত বাড়ানো দেখে ধ্রুব দূরে সরে যায়।
“কি করছিস?”
“মিতুকে ভালো রাখতে পারবো।তুই আমাকে বিশ্বাস করছিস না?আমি পারবো।”

ধ্রুব কান্নারত সামিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।মিতুর জন্য সে মনে মনে সামিরকে সেই কবেই ঠিক করে রেখেছে শুধুমাত্র একটা চাকরির জন্য কাউকে বলা হয়নি এখন সামিরের কথা শুনে মনে হচ্ছে আর দেরী করা উচিত না।যেই ছেলে মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য নিজেকে ভেঙে দিতেও দিদ্ধা করেনা তাকে নিয়ে ভ য় কিসের?ধ্রুব গম্ভীর গলায় বললো,
“বাসায় চল।”

সামির হাত দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে।তারপর ধ্রুবই তার পরিবারের কাছে সব জানায়।সবাই তখন থেকে চুপ করে আছে।ছেলে ভালো,চাকরি ভালো,কিন্তু এতিম যে!ধ্রুব বেশী জোড় দিচ্ছে।তারপর হাজারো কথা হয়,সামির হাতজোড় করে মিতুকে চায়,এতিম ছেলের এমন আহাজারি সবার মন নরম করে।তখনি মিতু এসে উপস্থিত হয়।পরিবারের প্রত্যেকে তখন অবিশ্বাস্য দৃষ্টি দিয়ে মিতুকে দেখছে।সারোয়ার মির্জা মিতুকে ডেকে কাছে আনলেন,গম্ভীর গলায় বললো,

“সামিরকে পছন্দ করো?”
মিতু চকিত নয়নে সামিরের দিকে তাকায়,সামির তার দিকেই তাকিয়ে আছে।ভ.য়ডর ভুলে মাথা নেড়ে বললো,
“জ্বী।”
সারোয়ার মির্জা সোজাসাপটা বললো,
“বিয়ে করতে চাও?”

বাবার কথায় মিতু ঢোক গিলে মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।তারপরের সবকিছু স্বপ্নের মতো হয়ে যায়।ধ্রুবর জোড়ের কারণেই তখনি কাজী ডেকে দুজনের বিয়ে দেয়া হয়।বিয়ের পরে সামির শক্ত করে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তুই এতো ভালো কেনো?কিভাবে ধন্যবাদ দেই বল তো?”
ধ্রুব সামিরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
“আরে এখনো কাঁদবি?”
তারপর সামিরের কানে কানে বললো,

“সালা,বাসর ঘরে যাবিনা?বউ অপেক্ষা করে তো।”
কান্নাচোখেই সামির হেসে বললো,
“তোর না বোন হয়!”
“আপাতত বন্ধুর বউ হিসেবে বলেছি।”
সামির মাথা নেড়ে মিতুর কামড়ায় যায়।মিতু চুপচাপ বিছানায় বসে আছে,তার কাছে এখনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে।সামির দরজা আটকে কাছে এসে মিতুর পাশে বসে বললো,

“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।”
মিতু ফিক করে হেসে বললো,
“আমারো বিশ্বাস হচ্ছে না।”
সামির দাঁড়িয়ে গায়ের শার্ট খুলে রাখে মিতু দাঁড়ালে মিতুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দেয়।মিতু আজকে সামিরকে ভ.য় পাচ্ছে।সরে যেতে চাইলে সামির তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কোথায় যাও?”
“একটু.”

সামির তাকে কথা বলার সুযোগ দেয় না।মিতুকে নিজের বাহুডোরে নিয়ে বললো,
“খুব তো জ্বালানো হতো এখন ভ,য় পাওয়া হচ্ছে কেনো?”
সামিরের আদুরে কথায় মিতু লজ্জায় মিশে যায়।সামিরের আদুরে স্পর্শ পেয়ে মিতু নতুন সামিরকে আবিষ্কার করে।তারপরে সামির মিতুর কপালে চুমু দিয়ে বুকে হাত রেখে বললো,

“বুকে শান্তি হচ্ছে?”
“খুব।”
মিতু চুপ থেকে বললো,
“আগের বিয়ের কথা বলেছেন?বলা উচিত ছিলো না?”
সামির হেসে বললো,
“ওটা শুনলে আর আজকে বিয়ে হতো না,সবাই খুব রেগে যেতো।তারচেয়ে ভালো এটা অজানাই থাকুক।কতোজনেরই তো দুইবার বিয়ে হয়।এটা আমাদের জীবনের বেস্ট সিক্রেট।”
মিতু মাথা নেড়ে সায় দেয়।

পরের দিন সামির অফিস থেকে এসে দেখলো ধ্রুব সহ বাকিরা কক্সবাজার যাওয়ার জন্য তৈরি।ধ্রুব আর সকাল বেশ খুশীমনেই রেডী,সামির আসলে তাকেও তৈরি হতে বলা হয়।ধ্রুব মাথা নেড়ে কানেকানে বললো,
“আমার পক্ষ থেকে বন্ধু হিসেবে হানিমুন গিফট।”
“কিন্তু আমার অফিস?”
ধ্রুব বললো,
“আমারো তো অফিস আছে,আজকে বৃহস্পতিবার,আজকে রাতে যাবো,কালকে আর শনিবার থেকে শনিবার রাতেই বেক করবো।অকে?”

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ২১

সামির হেসে রাজি হয়।দুই কপোত-কপোতীরা রাতেই সমুদ্রের কাছে চলে যায়।সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে সামির আর ধ্রুব মুগ্ধ চোখে তাদের স্ত্রীকে দেখে তারপর গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠে,
❝দেখেছি রূপ সাগরে মনের মানুষ কাঞ্চাসোনা(কাচাঁসোনা)❞

(সমাপ্ত)