এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৮

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৮
নুসাইবা রেহমান আদর

সাইফ এক দৃষ্টিতে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিয়া তো নিজের মনের মত ফুচকা খাচ্ছে । সিনথীয়া খেয়াল করল।
সিনথীয়া: উহুম!ছোট ভাই একটু অন্য দিকে তাকাও। এভাবে বেচারির দিকে তাকিয়ে আছো দেখে তো মনে হচ্ছে বেচারি খাওয়ার দিকে তুমি নজর দিচ্ছো।

সাইফ সিনথীয়ার কথা শুনলে বিষম খেলো । সাইফ বুঝতে পারে নাই যে সিনথীয়া সবার সামনে তাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিবে। সিনথীয়ার দিকে রাগী চোখে তাকালো। এদিকে ড্রয়িং রুমে সবার দৃষ্টি সাইফের দিকে নিবদ্ধ।
সাইফ: এভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন সবাই? রাফিয়া যেভাবে খাওয়া শুরু করছে তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। একটা মেয়ে একসাথে এতগুলো ফুচকা কিভাবে খেতে পারে। এখানে আমার দোষ কি তোমরা বলো?
সাফোয়ান: তোকে কি কেউ খেতে মানা করছে? যে নিজের খাওয়া রেখে অন্যের খাওয়ার দিকে নজর দিচ্ছিস।
রাফিয়া: আপনি তো নজর ভালোনা, এখন যদি আমার পেট খারাপ হয়। দেইখেন কি করি আপনার?
রাফিয়ার কোথায় ড্রয়িং রুমে হাসির রোল পরে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাইফ : শাকচুন্নি কোথাকার তোর কথা যদি আমার পেট খারাপ হয় তাহলে তোর কি অবস্থা করি।
সাফোয়ান: এই তোমরা তোরা থামবে, এত এত ঝগড়া কিভাবে করতে পারিস তোরা?
সানা:দেখ সবাই ইচ্ছে বেশি বেশি ঝগড়া করে, সেই আজকে জিগায় অন্য মানুষ কিভাবে ঝগড়া করে?
ইনডাইরেক্টলি অপমান করার চেষ্টা করছে সানা তা সাফোয়ান খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে । সানা তাকিয়ে দেখে সাফোয়ান তার প্রশ্ন কেন জবাব দেয় নাকি। সাফোয়ানের কোনো ভাবান্তর দেখছে না।তখন ড্রয়িংরুমে সাফানের মা-বাবার আগমন ঘটে। সবাই নিজেদের হাসি-ঠাট্টা থামিয়ে দেয়।

লিমা:সাহিব সাফওয়ান সোনা তোমাদের সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
সানা:হ্যাঁ মামী বলুন।
সবাই জানার আগ্রহ নিয়ে সাফোয়ানের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।সে অপেক্ষা করছে কিভাবে সব সাজিয়ে বলবে। সাফোয়ান অনেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। সহজে কথার মারপ্যাচ ধরে ফেলে।
লিমা:আমি ঠিক করেছি যে আমার আর সাইফের আব্বুর যেই সম্পত্তিগুলো আছে তা তোমার সাইফের এন্ড সিনথিয়ার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিব। এই যে কিছু কাগজপত্র তা তোমরা তিনজন যদি সাইন করে দিতে তাহলে ভালো হতো আমার জন্য।

লিমা বেগমের কথার মানে আর কেউ বলতে না পারলে সাইফ ভালোভাবে বুঝতে পারছে তার মায়ের মনে কি চলছে। লিমা বেগম যে সাফোয়ান কে নিঃস্ব করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তা একমাত্র সেই বুঝতে পারছে।
সিনথীয়া:আম্মু আমার কিছু লাগবে না তুমি আমারটা দুই ভাইকে ভাগ করে দাও। আমি এত সম্প্রতি দিয়ে কি করব বলো তো।
লিমা:সিনথিয়ার ভাগেরটা না হয় আমি আমার সাফোয়ান কেই দিয়ে দেই।এমনিতেও আমার সাইফের যা আছে তা তে হবে।

এতোক্ষন সবার কথা মন দিয়ে সাফোয়ান শুনলো।সানা সেখানে নির্বার দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শুধু সানা একা না সাথে রাফিয়াও আছেন। রেহানা নিজের কাযে লেগে পরেছে।
সাফোয়ান: আমার কিছু লাগবেনা। আমার কিছু লাগবে না। যা আছে তা তোমার ছেলে মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দাও মম।

মনে মনে বলছে লিমা যে কে তোকে দিতে চাই এগুলো তো তোর সব সম্পত্তি আমার নামে করে দেওয়ার দলিল।
সাইফ নীরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলো সবার উদ্দেশ্যে।
সাইফ:কেউ কারো নামে কোন সম্পত্তি এখন দেয়া হবে না। ভাই আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই বলতে পারি? মম যাও ডেড কে ডেকে নিয়ে আসো এরপর সব সাইন হবে এর আগে না।
লিমা বেগম সাহেবের কথা শুনে সেখান থেকে চলে গেলেন মিষ্টার শিহাবকে ডাকতে। সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সাইফের দিকে। কি এমন বলতে চায় যে সবার আসার অপেক্ষায় আছে।

সানা: ভাইয়া মামার জন্য অপেক্ষা কেনো করছো তুমি? যা বলার বলে ফেলো।
সাইফ;না বোন বাবা আসুক তারপর সব বলবো।
এরমধ্যে সেখানে লিমা বেগম শিহাব সাহেব কে নিয়ে চলে আসেন।তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট তারা বুঝতেই পারছি না কি নিয়ে আলোচনা করবে, স যার জন্য সবাইকে এখানে উপস্থিত থাকতে বলছে।
শিহাব সাহেব:কি ব্যাপার আব্বু তুমি আমাদের এখানে ডেকেছো কিছু কি হয়েছে কি বলবে?
সাইফ:আম্মু যে তোমাদের নামের সম্পত্তি আমার সাফার নামে করে দিচ্ছে এটা কি তুমি জানো?

শিহাব সাহেব এক পলক স্ত্রীলিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে সাইফের কোথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় যে সে সব জানে।
লিমা: তুই চাইছিস টা কি বলতে বল?
সাইফ: এত অধৈর্য কেন হচ্ছো তুমি আম্মু? তোমার কি ভয় করছে নাকি নভয়ে আছে কোন কিছু প্রকাশ হয়ে যাওয়ার?
রাফিয়া:যা বলার সোজাসুজি বলেন। এত নাটক করার কি, আছে সবাইকে কি মজা পাচ্ছেন আপনি?
রাফিয়ার কোথায় সাইফ রাফিয়া দিকে দৃষ্টিতে তাকায়।সাইফের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রাফিয়া ভয় পেয়ে যায়।
সাইফ:কথার মাঝখানে তুমি বাম হাত কেন ঢুকালে? আমাদের পারিবারিক বিষয়ে তুমি নাক গলানোর অঅধিকার কোথায় পেয়েছো?

সাইফের কোথায় রাফিয়া অনেক অপানবোধ করে ফেলে।তাও রাফিয়া সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
সাইফ: এক পা ও ওপরে দিবেনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।
সাফোয়ান: এটা কিরকম ব্যাবহার সাইফ। রাফিয়া তোর ফুফাতো বোন না?
সাইফ: রাইট ভাই সে আমার ফুপুর মেয়ে তোমাকে না ভাবলেও চলবে।
সানা: সাইফ ভাইয়া রাগের জন্য ভুলে যাইয়েন কখন কাকে কি বলে হার্ট করছেন।প্লিজ শান্ত হয়ে যান।এরপর বলুন কি হয়েছে।

সানার কথা শুনে সাইফ বুঝতে পারলো রাগের বসে সে কি করে ফেলছে। নিজের কাছে নিজের ই খারাপ লাগছে তার কার রাগ কার উপর দেখাচ্ছে সে।
সাইফ: অনেক ভনিতা হয়েছে এখন আমি কিছু কথা সিরিয়াসলি বলতে চাই। তুমি হয়তো জানো না ভাইয়া তোমার পিঠ পিছে কত বড় ষড়যন্ত্র চলছে। আর যারা করছে তারা তোমার আপন মানুষ।তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা যাদের আপন ভাবো তারাই তোমার পিঠে ছু ড়ি চা লা চ্ছে।

আর তারা কেউ না আমাদের ই মা-বাবা। আমাদের মানে আমার আর সিন্থীয়ার। কারণ তুমি তো জানোই না যে এই মহিলা তোমার আপন মা না,আমি আর সিনথীয়া ও তোমার আপন না।
সাইফের কথায় সানা,রাফিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে। নিজের রুম থেকে আসা সদ্য সিনথীয়াও এটা পরে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে ফেলে।সাফোয়ান নির্বিকাত ভাবে মেঝের দিকে তাকয়ে আছে।

সানা: কি বলছেন ভাইয়া এসব সত্যি?
লিমা বেগম: তোর মাথা ঠিক আছে সাইফ,আজেবাজে যা আসছে মুখে তাই বলে বেড়াচ্ছিস। তুই আদোও বুঝতে পারছিস যে কি হচ্ছে?। আমরা কেন সাফোয়ানের ক্ষতি করবো?

সাইফ:আম্মু তুমি চুপ থাকো আমার কথা আমাকে শেষ করতে দাও। একদিন আমি মম ডেডের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।তখন আমি শুনতে পাই যে তারা কিছু নিয়ে কথা বলতে।আমি যখন দুই মাসের পেটে তখন বাবা প্লেন করে তার বন্ধু মোহাম্মদ আবরার সিকদারের সাথে চুক্তিতে বিয়ে করে । মানে মোহাম্মদ আবদার শিকদার জানতো না যে এই মহিলা তার বন্ধুর বউ। তখন সাফোয়ান ভাই তিন বছরের ছিলো তাই তার দেখাশোনার আনবো না এটা জন্য বিয়ে করার প্রয়োজন ছিল। আঙ্কেল তখন মম আর ড্যাড এর ফাদে পা দিয়ে ফেলে।

সে বুঝতেই পারে নাই মম বিয়ে করছিল তাকে সম্পত্তির জন্য। এরপর মম দ্যাট সুযোগ বুঝে আঙ্কেলকে খুন করে ফেলে। স্বপন ভাই ছোট থাকে সেতু কিছু বুঝতে পারি নাই তা কি তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।এসব তারা নিজের মুখে স্বীকার করেছে।
সাফোয়ানের ভাব ভঙ্গি এখোনো স্বাবাভিক। সানা হুইলচেয়ার ঠেলে সাফোয়ানের কাছে গিয়ে তার কাধে হাত রাখে। শান্ত চোখে সাফোয়ানের দিকে তাকায়।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৭

সানা; ভাইয়া যা বলছে আপনি কি তা শুনছেন?
সাফোয়ান : হ্যাঁ যেহেতু আমি কানে কম শুনি না। তাই এখানে সবাই যা শুনছে আমিও তাই শুনেছি।
সাইফ: তাহলে ভাই তুই এতো শান্ত আছিস কিভাবে?
সাফোয়ান: আসলে এসব তো আমার জানা কথারে তাই অনেক আগেই রিয়্যেক্ট করা ছেড়ে দিয়েছি।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৯