এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৫

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৫
নুসাইবা রেহমান আদর

সানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে,তার ই সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করছে সাফোয়ান। সানা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে এই প্রথম কেউ সানার গায়ে হাত তুললো। দৌড়ে রুমে গিয়ে সানা রুমের দরজা আটকে দিলো। সাফোয়ান ঠাই দাঁড়িয়ে আছে নিজের যায়গায়। যেভাবেই হোক এই আপদ কে তার বাসায় পাঠাতেই হবে। আজ যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারতো। তখন কি হতো তার। এমনি চারোদিকে শত্রুর অভাব নাই।
কিছুক্ষন আগে —

অবশেষে সাফোয়ান আর সানা বাড়িতে পৌছালো। চারোদিকে আধার ঘনিয়ে আসছে। সাফোয়ান তাকিয়ে দেখে সানা ঘুনে বিভোর হয়ে আছে। গাড়ি থেকে নেমে সানাকে কোলে নিয়ে নিলো সাফোয়ান। ঘুমন্ত সানার নিষ্পাপ মুখ সাফোয়ানের অনেক ভালো লাগছে। সানাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যাচ্ছে গার্ড গুলা হা করে তাকিয়ে আছে সাফোয়ানের দিকে।
– হা করে আমার মুখের দিকে না তাকিয়া কলিং বেল দেও৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গার্ড এবার কলিংবেল দিতে রেহানা নামক কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলো।
– ভাইজান ভাবি তো ঘুমিয়ে আছে আপনি আপনার রুমে নিয়ে যান আমি খাবারের আয়োজন করি।
– হ্যাঁ আপা জলদি খাবারের ব্যাবস্থা করুন আমার ক্ষুদা লাগছে।
সাফোয়ান সানাকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো। গার্ড আর রেহানা কথা বলতে লাগলো।
– রেহানা স্যার বিয়ে করছে আমাকে তুই আগে বলবিনা?

– আর বইলেন না কুদ্দুস ভাই আমিও একটু আগে জানছি।বড় ম্যাডাম কল দিয়ে বললো স্যারের রুম গুছাতে।
– ভালোই হইছে স্যারের বউ কত সুন্দর অই মারিয়া ডা*য়ে*নী*র মত না হলেই হবে।
– হ্যাঁ মারিয়া ম্যাডাম তো শুধু স্যারেকে টাকার মেশিন মনে করতো।
– যা যা রান্না কর না হলে স্যার আবার রাগ করবে।
– হ্যাঁ যাইগা আপনিও আপ্নার কাজে যান।
– হুম,এই শুন?
– জ্বী?
– আমি তোরে ভালোবাসি।

কুদ্দুস আর না দাড়িয়ে ওখান থেকে চলে গেলো আর রেহানাকে রেখে গেলো এক আকাশ বিষ্ময়ের মধ্যে। রেহানা দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলো।
সাফোয়ান গোসল সেরে তোয়ালে পরে আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানায় নিজেকে দেখে যাচ্ছে। এই শ্যামবর্নের গায়ের রঙ্গের জন্যই তো তাকে ছেড়ে চলে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে সে সাফোয়ান থেকে দেখতে সুন্দর ফর্সা এক ছেলেকে বিয়ে করছে।

সাফোয়ান এমন এক মেয়েকে ভালোবেসেছে যার কাছে সুন্দর আর টাকাই ম্যাটার করে। সাফোয়ানের কাছে তো টাকার কমতি ছিলোনা। তবে হ্যাঁ হয়তো সে মারিয়ার চাওয়ার মতো সুন্দর না তাই।প্রথম প্রথম এই শ্যামবর্নের লোকের জন্য পাগল ছিলো সে। এসব ভাবতে ভাবতে সাফোয়ানের নজর গেলো আয়নার দিকে। সানা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সানাকে এভাবে তাকাতে দেখে সাফোয়ানের অস্বস্তি হচ্ছে।

– এই মেয়ে এভাবে কি দেখছো আমার দিকে তাকিয়ে তুমি?
– আপনি এভাবে আধা নাঙ্গু পাঙ্গু হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনার আম্মু বলে নায় আয়নাতে জ্বীন থাকে?
– নাঙ্গু পাঙ্গুর মানে কি?
– আল্লাহ আপনি জানেন না নাঙ্গু পাঙ্গুর মানে?
সানা জোরে জোরে হাসা শুরু করলো। সাফোয়ান ভেবলার মতো তাকিয়ে আছে সানার দিকে।
– সাট আপ সানা।

সাফোয়ানের ধমক খেয়ে সানা কান্নাকাটি শুরু করলো। সানার কান্না দেখে সাফোয়ান কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। এসব ঝামেলা তার আর ভালো লাগছে না। নিজের জামাকাপড় নিয়ে আবার ও ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। সানা হা করে তাকিয়ে আছে সাফোয়ানেত যাওয়ার দিকে। সে ভাবছিলো কান্না করলে হয়তো সাফোয়ান তার সাথে ভালোভাবে কথা বলবে।সানা সাফোয়ানের ব্যাবহারে অনেক কষ্ট পেলো।

– এই লোক নিজেকে কিভাবে কে জানে.রা*ক্ষ*স কোনহানকার। ও আল্লাহ এই বেডায় যে আছার খাইয়া পইরা ব্যাথা পাইয়া কান্না করে আমার সামনে।
সানার এমন উদ্ভট চাওয়া না চাইতেও যেনো আল্লাহ কবুল করে নিলো। ওয়াসরুমের ভিতর থেকে সাফোয়ানের চিৎকার কানে এলো সানার। সানা দ্রুত খাট থেকে নেমে ওয়াসরুমের সামনে যায়।
– আপনার কি হইছে এভাবে চিৎকার দেন কেনো?

-নাথিং,নিজে চেঞ্জ করে ফেলো। আমি বের হয়ে নিচে যাইবো খাবার খাওয়ার জন্য।
সানার মনে প্রশ্ন একটাই এইভাবে চি*ৎ*কা*র দেওয়ার কারন কি। লাগেজ খুলে নিজের জন্য জিন্স আর একটা গোল ফ্রক বের করে নিলো। নিজে চেঞ্জ করে ওয়েট করছে কখন বের হবে সাফোয়ান।
অনেক্ষনপর সাফোয়ান ওয়াসরুমের দরজা খুলে বের হয়েছে।সাদা লুঙ্গি আর কালো টিশার্ট পরে।
– যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো যেই ঘুম দিছো।

– আপনার কথায় যাবো নাকি,আমি আমার ইচ্ছায় যাবো।
এই বলে সানা ওয়াসরুমে চলে গেলো৷ সানা ওয়াসরুমে যাওয়ার পর সাফোয়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বডি লোশন দিচ্ছে। চুল গুলো আচরিয়ে এবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো।
– নিচে চলুন আমার ক্ষুদা পেয়েছে৷
সানার কথায় সানার দিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখে। চুল ঝুটি করা একটা গোলাপি রঙের ফ্রক আর কালো জিন্স। কোনো ওরনা নাই সানার সাথে।

– তোমার ওড়না কই?
– দেখছেন না জামার সামনে রুমাল কাট ডিজাইন ওড়না লাগেনা।
– ওটাকে লোলদানি বলে যা ছোট বাচ্চাদের পরানো হয়৷
-আপনি বেশি জানেন?
-কথা কম নিচে চলো।

সানাকে নিয়ে নিচে গেলো সাফোয়ান। রেহানা সানাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো৷ সানাকে দেখে অবাক হয়ে যায় রেহানা। সানা এতো ছোট, তখন বোরখা হিজাব পরে থাকায় বুঝা যায়নাই। রেহানা সবাইকে খাবার বেরে দিলো।
– আপু আপনি খাইছেন?
সানা রেহানাকে জিজ্ঞেস করলো।
– না ম্যাডাম আমি খাইনি আপনারা আগে খান।
– আপ্নিও বসেন আপু আমরা একসাথে খাই?

সানার আচরনে মুগ্ধ হয়ে যায় রেহানা। দেখতে যেমন বাচ্চা স্বভাব ও তেমন। কি উৎফুল্ল হয়ে তাকে খেতে বললো। রেহানা সাফোয়ানের দিকে তাকালো।
-রেহানা তুই ও বসে পর ও যখন বলছে।

সাফোয়ানের কথায় খুশি হয়ে যায় সানা। রেহানা খাবার নিজের জন্য প্লেটে বেরে বসে পরে। সানা খাচ্ছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে। রেহানা সাফোয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে একমনে খেয়ে যাচ্ছে। সবার খাওয়া শেষ সানা ড্রয়িংরুমে গিয়ে টিভি দেখতে বসলো। খেতে বসে আগেই সে ড্রয়িং রুমে টিভিটা খেয়াল করছে। রেহানা চলে যায় থালাবাসন ধুতে। এরমধ্যে খবর আসলো ওপর পার্টির লোক লোকজন নিয়ে আসছে। তারা জানে সাফোয়ান বাসায় নাই ওই সুযিগে বাসার মধ্যে ঝামেলা করে ভাঙগচুর করে যেতে পারবে।

– আমি বাহিরে যাচ্ছি একটু সানা, কেউ দরজা নক করলে ভুলেও খুলবেনা।
– কেন তাহলে আপনি আসবেন কিভাবে?
-আমার কাছে এক্সট্রা চাবি আছে আমি আসতে পারবো।

দ্রুত পায়ে সাফোয়ান গার্ডদের নিয়ে চলে যায় বাগানের দিকে। সানা বসে বসে টিভি দেখছে। অনেক্ষন টিভি দেখার জন্য এখন তার ভাল্লাগছে না। সাফোয়ান ও এখনও আসে নাই। দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে এদিক ওদিক সাফোয়ান কে খুজতে লাগলো। বাগানের দিকে এগিয়ে দেখে সাফোয়ানেত সাথে একটা লোকের মারামারি হচ্ছে। সানা অবাক হয়ে মারামারি দেখে যাচ্ছে। সাফোয়ানের নজর যায় সানার দিকে সে দাঁড়িয়ে আছে।

– সানা যলদি ঘরে যাও কুইক,রান।
সানা হা করে দেখে যাচ্ছে সাফোয়ান কে। সে সাফোয়ানের কথা শুনছেই না। লোকটা সাফোয়ানকে সানার দিকে তাকানোর সুযোগ নিয়ে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিলো। মাটি থেকে রি*ভা*ল*বা*র উঠিয়ে সানার দিকে গু*লি ছুরে মারলো। তখন ই পিছ থেকে একজন গার্ড এসে সানাকে টেনে সরিয়ে দেওয়ায় সানার শরীরে লাগে নাই। সব গার্ড মিলে লোকটা কে ধরে রাখে।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৪

সাফোয়ান একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো গু*লি*র আওয়াজে। আজকে সানা না থাকলে হয়তো তার কোনো চিন্তা ছিলোনা।
– ওকে আমাদের ঠিকানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখো। আমি আসছি একটু পরে।
এরপর সাফোয়ান সানাকে টেনে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যায় আর থাপ্পর দেয়। বাকিটা তো জানেন ই।
বর্তমানে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আজ যদি সানার কিছু হয়ে যেতো তাহলে সবাইকে কি উত্তর দিতো সে।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৬