এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৪

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৪
নুসাইবা রেহমান আদর

সানা মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ করে বসে আছে। সানাকে এমন চুপচাপ দেখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সাফোয়ান তার দিকে এগিয়ে আসলো।
~তোমাকে কিছু বলার আগেই মনে হবে কেঁদে ফেলবা। আর আজ যখন নিজের মামা মারা গেছে একথা শুনার পরেও তোমার মধ্যে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না কেন?

~সেটা জেনে আপনার কোন কাজ নেই। আমি আপনাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই মিস্টার সাফোয়ান শিকদার।
সানার এমন ত্যারা জবাব পছন্দ হলো না সাফোয়ানের। সাানা যে এভাবে তাকে ত্যারা উত্তর দিবে সেটা ভাবতেও পারে নাই। এই মুহূর্তে মন চাচ্ছে মেয়েটাকে থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিতে। শুধু মেয়েদের উপর হাত তোলে না সাফোয়ান ‌,এই জন্য আজ সানা বেঁচে গেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~আমার প্রশ্নের উত্তর তুমি আমাকে দিতে বাধ্য। যেখানে আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার বাসায় এনেছি ‌। তাও তোমার অমতে তাহলে বুঝে নেও আমি কি করতে পারি। ভুলে যেও না এই শহরের এমপি আমি ‌।‌
সানা এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে সাফোয়ানের দিকে তাকালো। সানার এই দৃষ্টির মানে সাফোয়ান বুঝতে পারছে না। হঠাৎই যেনো অবুঝ মেয়েটার মধ্যে ম্যাচুরিটি এসে ভর করেছে।
~যাইহোক রেডি হয়ে নাও আমি এটা চাই না যে রিপোর্টাররা আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু প্রকাশ করুক। এমপি সাহেব তার স্ত্রীকে মামার মৃতদেহ দেখতে নিয়ে যায়নি।
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সানা উঠে দাঁড়ায় আর বলে ওঠে,

~আপনি সত্যিই একজন বিরক্তিকর মানুষ। আমার এই ছোট্ট জীবনে আমি কি পাপ করেছি মহান আল্লাহ তায়ালা জানেন যে আমার ভাগ্যে আপনার মত একজন বদমাশ ,বদমেজাজি, লোককে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
~এই মেয়ে কি বললে তুমি আমাকে? পুরো শহর যাকে ভয় পায় তার মুখে মুখে তর্ক করতে তোমার কলিজা কাপে না?
~শুনেন মিস্টার সাফোয়ান শিকদার, আপনাকে যদি আমার ভয় করত তাহলে আমি আপনার স্ত্রী হয়ে এই শিকদার বাড়িতে পা দিতাম না। আর এই সানা না চাইলে তাকে তার অনিচ্ছায় কেউ বিয়ে কেন তার ছায়া মারাতে পারবে না। তাই সবার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলবেন না। এখানে আমি আপনার ইচ্ছা নয় নিজের ইচ্ছায় এসেছি। ‌

সানার এই কথার মানে সাফোয়ান এক ফোটাও বুঝলো না ‌। সানা কি ভুলভাল বকছে নাকি সত্যি কথা বলছে?কারণ সানাকে তো সাফোয়ান জোর করে বিয়ে করেছিল। এই মেয়েটার কি সত্যি তার সাথে কোন খেলা খেলছে নাকি। কিন্তু ওর ভাবনার বাহিরে সাফোয়ান শিকদার কি জিনিস।
~তো ম্যাডাম আপনার ডায়লগ বাজি হয়ে গেলে যাওয়া যাক?

সানা সাফোয়ানের এমন উত্তর শুনে ভড়কে যায়। এই লোকটাক ভড়কে দেওয়ার জন্যই তো এতগুলো কথা বলল।উল্টো তার কথাকে পাত্তা না দিয়ে তাকেই ভড়কে দিলো সাফোয়ান।কিযে মহা বিপদে পড়েছে সে বুঝতে পারছেনা নিজেও।
~আমি না করলে তো আপনি শুনবেন না। জোর করে সেই আমাকে নিয়ে যাবেন তাহলে বসে কেন আছেন? চলুন!
সানার কথায় সাফোয়ান মুচকি হাসে। তারপর আগে আগে গাড়ির চাবি নিয়ে চলে যায়। সানা সাফোয়ানকে ফলো করতে করতে তার পিছু পিছু গেল।

নিচে গিয়ে শুনলো বড় বোন রাফিয়া আগেই চলে গেছে। রাফিয়া তার মামাকে অনেক শ্রদ্ধা আর সম্মান করে। মামা বলতে পাগল মেয়েটা। এইজন্য তার মৃত্যুর খবর শুনে সে খুব ভেঙ্গে পরেছে। মায়ের পরে সেই জায়গাটা মামাকে দিয়েছিল রাফিয়া। সানা তার বোনের আবেগ বুঝে। কিন্তু সানা তো আর রাফিয়া নয়। রাফিয়ার মত অত আবেগ ভালবাসার তার মনের মধ্যে নেই। তার মনের মধ্যে শুধু আছে ঘৃনা আর প্রতিশোধের নেশা। এই মামা কে সে প্রচন্ড ঘৃণা করে আর ঘৃণা করেই যাবে। তার মৃত্যুতে এক ফোটাও কষ্ট পাচ্ছে না সানা। বরঞ্চ তার মনের মধ্যে অনেক আনন্দ বিরাজ করছে।

তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে সাফায়ানের সাথে চলে গেল মামার বাড়ি। যদিও এতদিন সেই বাড়িতে তারা দু’বোন বড় হয়েছে।
রাফিয়া আর সানাকে দেখে ওর মামি কান্নায় ভেঙে পরে। এই মেয়ে দুটোর উপর কম তো অত্যাচার করে নি সে৷ অথচ খবর পাওয়া মাত্রই দুই বোন এসে হাজির হলো। রাফিয়া মামির এমন আহাজারি আর কান্না দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না। সেও দৌড়ে গিয়ে মামীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলো।সানা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ওদের কান্না দেখতে লাগলো। সানা এসব দেখে প্রচণ্ড পরিমাণ বিরক্ত হচ্ছে। সাইফ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।

~মিস্টার সাইফ শিকদার আপনার স্ত্রীকে গিয়ে সামলান বেশি কান্না করলে কিন্তু ওনার মাইগ্রেনের ব্যথা উঠে।
এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজের স্ত্রীকে কান্না করতে দেখতে ব্যাস্ত ছিল সাইফ।শালীর এমন কথা শুনে ধ্যান ভাঙলো তার। প্রথমে চমকে গেলেও এরপর সানা কে দেখে বুঝে যায় এটার তার ভাবি+শালী। ওর কথার উত্তর না দিয়ে রাফিয়ার দিকে এগিয়ে গেল সাইফ।
~রাফিয়া তুমি এভাবে কান্না করলে তোমার মামীকে কে সামলাবে? নিজেকে সামলাও এবং ওনাকে একটু দেখো। তোমরাই যদি এভাবে ভেঙে পড়ো তাহলে কিভাবে সব হবে বলো?

~আমি কিভাবে নিজেকে সামলাবো সাইফ আমার মামা? যাকে আমি আমার মায়ের পরে দ্বিতীয় স্থানটি দিয়েছি। শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা সব। আজ মাথার উপর থেকে দ্বিতীয় ছায়াটিও সরে গেলো।
স্ত্রী কে এভাবে কান্না করতে দেখে সাইফের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। নিজের ভালোবাসা কিভাবে ভেঙে পরছে তা দেখে তার কষ্ট লাগছে খুব। ইচ্ছে করছে সব দুঃখ কষ্ট থেকে তাকে দূরে নিয়ে যেতে।

~কে বলেছে রাফিয়া তোমার মাথার উপর কারো ছায়া নেই আমাদের পুরো পরিবার আছে তোমার সাথে। নিজেকে একা কখনো ভাববেনা তোমার স্বামী আছে এখন তোমার পাশে। যে তোমাকে সবরকম প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করবে।
রাফিয়া সাইফ কে জড়িয়ে ধরল। সাইফ ভরসার হাত রাফির পিঠে রাখলো আর কান্না করতে না করল। দূরে দাঁড়িয়ে থেকে এসব কিছু লক্ষ্য করছে সাফোয়ান । আজ যদি সানা কান্না করতো তাহলে তো সেও গিয়ে এভাবে সান্ত্বনা দিতে পারতো। আর খবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজে ছাপা হতো যে এমপি সাফোয়ান শিকদার তার স্ত্রীর কষ্ট সহ্য করতে পারে না। কিন্তু তার স্ত্রী কোন ধাতুতে গড়ক আল্লাহ জানে।এর মধ্যে কি ইমোশন নাই? কি সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে সব কান্নাকাটি দেখে যাচ্ছে।

~এই মেয়ে একটু তো কান্না করতে পারো তোমার না মামা মারা গেছে?
~আমার কান্না না পেলে আমি কিভাবে কাদবো?জোর করে তো আর আমি কাঁদতে পারবো না। মানুষ তার স্ত্রীকে সবসময় হাসাতে চায় আর আপনি কিভাবে চাচ্ছেন আমি কান্না করি?
~হ্যাঁ তুমি কাদবে কেন? তুমি তো একবারে বড় মানুষ কান্না কেন করবা?
~চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে থাকুম, না হলে আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন। এসব ড্রামা দেখার কোন ইচ্ছা করছে না আমার।

~কি দিয়ে তৈরি তুমি? তোমার মধ্যে কি এক ফোটা ইমোশনও নাই? তোমাকে দেখে আমার অকৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে। যে মানুষটা তোমার মা মারা যাওয়ার পর এত বড় করছে, লালন পালন করেছে, পড়াশুনা করিয়েছে৷খাইয়েছেন তোমাদের দু বোন কে। তার মৃত্যুতে তোমার মধ্যে কোন কষ্ট ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

~আপনাকে খেয়াল করতে হবে না। উনি আমার মামা ছিলেন আমি বুঝি নিবো। আপনি এসব থেকে দূরে থাকুন।
সানার প্রতি সাফোয়ানের প্রচন্ড পরিমান রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে সানার মতো বাজে মেয়ে আর দুইটা নেই। এরে শিক্ষা দিতেই হবে।সবকিছু আস্তে আস্তে টের পাবে কাকে বলে ইমোশন। যখন ওরে প্রথম দেখেছি তখন তো বাচ্চা বাচ্চা মনে হয়েছে কিন্তু এখন বড়দের মতো ম্যাচিউরড মনে হচ্ছে তাকে। আসলে কি মেয়েটা সেই যাকে দেখে আমি বিয়ে করেছি না অন্য কেউ?

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৩

হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে সাফোয়ানের মনে। সে কি কোন ভুল করে ফেলেছে সানাকে বিয়ে করে?

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৫