এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৮

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৮
নুসাইবা রেহমান আদর

সানাকে এইভাবে হাসতে দেখে বিরক্ত হয় শ্রাবন।
~এই ভাবে রাক্ষসীর মতো না হেসে যা তো সর। এরপর আমি আর এইভাবে রিক্স নিতে পারবো না।
শ্রাবনের কথায় বিচলিত হয় না সানা। সে জানে শ্রাবন সবসময় তার পাশে থাকবে ছায়ার মতো। এটা শ্রাবন নিজে না বললেও সানার জানা আছে।

~কথা বাড়াস না, আমি গেলাম।তুই এখান থেকে পরে বের হস।
~ যা যা নাহলে তোর অই জামাই আবার এসে পরবে।
সানা মুচকি হেসে নিজের জিনিশপত্র নিয়ে শ্রাবন যে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। বাহিরে চিন্তিত মুখে সাফোয়ানকে পায়চারি করতে দেখে সানার অনেক ভালো লাগে। আচ্ছা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের বুঝি এতোই জোর? বিয়ের আগে যা কে চিনতো না অথচ বিয়ের দুদিনের মাথায় এইরকম মায়া জন্মে গেলো। সানা মনেমনে ঠিক করে নেয় যে সাফোয়ানেত প্রতি তার সদ্য জন্মানো এই অনুভুতি গুলোকে বাহিরে আসতে দিবে। সে সংসার করবে এই লোকের সাথে। মৃত্যুর আগ অব্দি সে চায় সাফোয়াবনের পাশে থাকতে।সানাকে এগিয়ে আসতে দেখে তার দিকে সাফোয়ান গিয়ে সোজা প্রশ্ন করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~ এতো সময় লাগে সামান্য কিছু কিনতে
~ও আপনি বুঝবেন না। আমাদের মেয়েদের কেনাকাটা করতে টাইম লাগবেই। এইজন্য আমি বলেছি একা আসি। নিজে জোর করে আমার সাথে এসেছেন এখানে আমার কি দোষ? এখন আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছেন।
এক নিশ্বাসে কথা গুলো শুনিয়ে দিলো সাফোয়ান কে। সাফোয়ান বিরক্তিকর ভাবে সানাকে ধমক লাগায়।
~ আস্তে ধীরে কথা বলা যায় না? আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি যে এতো তারাহুরো করে এক নিশ্বাসে সব কথা বলতে হবে? শ্বাস আটকে যাবে নে আপনার এভাবেই কথা বলতে থাকলে ইডিয়ট।

~ কুল ডাউন সাফোয়ান আমার আরো কেনাকাটা বাকি আছে। আপনি থাকবেন না কি চলে যাবেন?
~এতো সময় লাগিয়েও কমপ্লিট হয় নাই আপনার?
~না কিছু জিনিশ বাকি আছে।
~আচ্ছা যাইহোক আপনার কি বোরখা আছে?
সানা কি জবাব দিবে সাফোয়ান কে? একজন মুসলিম মেয়ে হয়েও সে কখোনো বোরখা কিনে নাই। তার কাছে আসবে কিভাবে?সানাকে আমতা আমতা করতে দেখে যা বুঝার বুঝে যায় সাফোয়ান।

~ শুনেন সানা,আমি যেমন ই হই না কেন। শালীনতা বজায় রেখে চলতে পছন্দ করি। আর যেহুতু আল্লাহ এর রহমতে আপনি আমার স্ত্রী রুপে আসছেন সেই হিসেবে আমার দায়িত্ব আপনার খেয়াল রাখা। আমি এটা বলছি না যে আপনি অশালীন কাপড় পরেন,কিন্তু বাহিরের জন্য এটা ঠিক না।আমাকে টক্সিক হাসবেন্ড ভাইবেন না। আমি আমার চিন্তাধারা আপনার উপর চাপাতে চাই না। শুধু বলতে চাই যে আপনার যদি মনে হয় আর ইচ্ছা হয় আগামী দিন গুলোতে বাহিরে বের হলে বোরখা নিকাব পরে বের হবেন। চলেন আজ আমি আমার পছন্দ মতো কিনে দেই।

সানা এতক্ষণ চুপ চাপ সাফোয়ানের কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলো। সাফোয়ান যে এত গম্ভীর গম্ভীর কথা বলবে তাকে সে ভাবে নাই। প্রত্যেকটা কথা সানার অনেক ভালো লেগেছে। সাফোয়ানের প্রতি সানা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। সবার কাছে সোনার সাফওয়ান এর সাথে এই সাফোয়ানের কোন মিল নাই।
~আচ্ছা আপনার যা ভাল মনে হয় কিনেন।আমি আপনার এসব কথা মানার চেষ্টা করব।
সাফোয়ান নিজেও অবাক হয়ে গেল আজ কোন ঝগড়া-বিবাদ ছাড়া প্রত্যেকটা কথা চুপচাপ মেনে নিল কিভাবে? সানাতো এত শান্ত স্বভাবের না।

তবুও কিছু বলল না সানাকে। নিজের পছন্দ মত কেনাকাটা করে তারা বাড়ির দিকে রওনা দিলো। সানা কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সে পার্লামেন্টে চলে যাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিটিং আছে তা শেষ করতে হবে। সানা ভাবছে সে কখন বাড়ি ফিরবে আর শ্রাবণের দেওয়া সেই পেনড্রাইভে দেখবে কে কে জড়িয়ে আছে। যতই তারা আপনজন হোক না কেন তাদের কখনোই সে ক্ষমা করবে না।

~আচ্ছা সাফোয়ান আপনি হঠাৎ আপু পালিয়ে যাওয়ায় আমাকে কেন বিয়ে করলেন? সে পালিয়ে চলে গেল আপনার আর কোন মেয়ের অভাব পরতো না আমাকে কেন বিয়ে করতে হলো? আজ যদি আপা সেখান থেকে পালিয়ে না যেত তাহলে তো আজ আপনি আমার দুলাভাই হতেন ।
সানার মুখে এসব কথা শুনে ভরকে যায় সাফোয়ান। হঠাৎ সানা এধরনের প্রশ্ন করছে কেন তাকে? তবুও নিজেকে শান্ত করে সানাকে বলে,,

~পুরনো কথা এখন কেন তুলছেন আপনি? যা অতীতে ঘটে গেছে সেই কথা মনে করে এখন কি লাভ। আমি শুধুমাত্র বাড়ির লোকের কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম। মেয়ে কে ছিল সেটা আমি জানতাম না। সেটা রাফিয়া ছিল নাকি আপনি ছিলেন এটাও জানতাম না।

কিন্তু যখন বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর শুনি আপনার বোন বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে চলে গেছে তখন আমার প্রচন্ড রাগ হয়। যদি তার বিয়ে না করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে আগেই না করে দিত এভাবে আমাকে এত মানুষের সামনে অপমান করার কোন প্রয়োজন ছিল না। সব নিউজ চ্যানেলে খবর চলে যেত ভবিষ্যৎ মন্ত্রী সাফওয়ান শিকদারের বউ পালিয়ে চলে গেছে। বিয়ের আসর থেকে বিয়ে না করেই ফিরে এসেছে ।

আমি কখনোই নিজের তিরস্কার সহ্য করি নি আর করবো ও ন। আপনার মামাকে আমি খুব ভালো করে চিনি লোভী মানুষ ছিলেন এবার আপনি যা মনে করেন। এরপর আবার আমার লোক লাগিয়ে আপনাদের খোঁজ নেই।এই কাজ আমার আগেই করার দরকার ছিলো কিন্তু আমি বোকামি করেছিলাম। এরপর যখন আমার লোক আমাকে খবর দেয় যে যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার ছোট বোন এখানেই আছে। আমি চাইলেই তাকে বিয়ে করতে পারেন।

আপনার বয়স এই মুহূর্তে ১৮ প্লাস আগামী কয়েক মাস পর উনিশে পা দিবেন। এত বড় মেয়েকে আপনার বাড়ির লোকজন কিভাবে যে বাচ্চা বলে তা আমি জানিনা। আপনার বিয়ের বয়স হয়নি এই কথাটা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। আর আপনি বা কেমন নিজেকে বাচ্চা বলেন কোন আক্কেলে বলেন তো?আর শেষ কথা আমি স্বামী হই,দুলাভাই এইসব বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।

সানা প্রথমে চুপচাপ মনোযোগ সহকারে সাফোয়ানের সমস্ত কথা শুনছিল। যখন সাফোয়ান তাকে তার বয়স নিয়ে কটাক্ষ করে তখন প্রচুর রাগ হয়।
~শুনেন মিষ্টার শিকদার আমাকে বাচ্চা বলেছি এই আক্কেলে যে আপনার নিজের বয়স টা দেখেন আর আমার বয়সটা দেখেন যতই আমি সাবালিকা হই না কেন আপনার বয়স আমার বয়স থেকে বেশি হবে। আপনার বয়স হিসাব করলে সেই হিসেবে আমি বাচ্চা।

নিজের কথার জালে সাফোয়ান নিজেই ফেসে গেছে। সে একটু সানাকে খোঁচা মেরে কথা বলতে গিয়েছিল। সানা উল্টে তার বয়স নিয়ে খোঁচা মেরে দিল। সবসময় সবার সাথে যে পাঙ্গা নিতে হয় না সে হারে হারে টের পাচ্ছে।
~শুনেন সানা আপনি যতটা আমার বয়স নিয়ে ব্যঙ্গ করছেন অতটাও বয়স আমার এখনো হয়নি। সুতরাং আর এসব নিয়ে কথা বাড়াবেন আপনি আমার সাথে চুপচাপ থাকুন তো ভালো লাগতেছে না।

সানা মুখ চেপে হেসে ফেলে। সাফোয়ান কখনো এটা স্বীকার করবে না যে তার বয়স বেশি। এই একটা কথা দ্বারা সাফোয়ানকে খুব সহজে কাবু করে ফেলতে পারে সে। আর কোন লোকের ভালো লাগবে যে কথায় কথায় তার বউ তাকে তার থেকে অনেক বড় এই ডায়লগ শোনাতে থাকবে।

রাফিয়া রুমে বসে বসে ভাবছে সে এখন কি করবে?এখন অব্দি তাকে জানানো হলো না পরবর্তী পদক্ষেপ। এইভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে একদম ভালো লাগছে না তার। রাফিয়ার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সাইফকে ভালোবাসা। এই একটা মানুষকে ভালোবেসে সে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে। না এভাবে বসে থাকলে হবে না তার কাছে তার লক্ষ্য সবার আগে। যেভাবেই হোক তা এখানে থেকে কাজটা কমপ্লিট করতে হবে। সানা আর সাফোয়ান তো বাড়িতে নেই এই সুযোগে সাফোয়ানের রুমে গিয়ে সব কিছু খোঁজা শুরু করতে হবে তার। যেই ভাবা সেই কাজ নিজের রুমের দরজা আটকে দিয়ে সে সানাদের রুমে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ভিতর থেকে দরজাটা চাপিয়ে দেয়। সাফোয়ানের রুমের প্রতিটা জায়গা ভালোভাবে চ্যাক করতে থাকে। তার কাঙ্খিত জিনিস যেভাবে হোক খোঁজে বের করতে হবে।

~সাইফ পার্টি অফিসে বসে আছে অপেক্ষা করছে তার বড় ভাইয়ের। ভাইজান তাকে যতই ভুল বুঝুক সে তো তার বড় ভাইকে প্রচন্ড ভালোবাসে। কোন মানুষ চাইবে না যে বড় ভাইয়ের সাথে থাকতে না। সাইফ ছোটবেলা থেকে সাফোয়ান বলতে পাগল। অন্যদিকে সাফেয়ান মুখে প্রকাশ না করলেও ছোট ভাই অন্তপ্রাণ সে। সাইফ কে সে অনেক ভালোবাসে কিন্তু তা প্রকাশ করে না। কারণ সাফোয়ান চায়না যে সবাই তার দুর্বলতা সম্পর্কে জানুক।

তার জন্য সাইফের কোন বিপদক হোক এই জিনিসটাও সে কল্পনাও করতে পারে না। সবাই ভাবে সাফোয়ান রাগী এক ছোট মানুষ। ক্ষমতা টাকা এসব কিছুর কারণে সে অনেক অহংকারী । মানুষের এসব ধারনা ভুল কিন্তু সফয়ান নিজেকে কারো কাছে প্রকাশ করে না।অথচ সাফোয়ানের মনের মধ্যে কি আছে কেউ জানলো না।

সানা বাসায় ফিরে খুবই চিন্তিত হয়ে আছে তার রুমের সবকিছু কেমন যেন অগোছালো অগোছালো লেগেছে। যাওয়ার সময় সে যেমন গুছিয়ে রেখে গিয়েছিল তেমন নাই। কেউ রুমে এসে তার রুম ঘাটাঘাটি করবে এই সামান্য জিনিসটা বোঝার মত কমনসেন্স আছে সানার। তারা যাওয়ার পর কেউ হয়তো তাদের রুমের মধ্যে এসেছিল। কিন্তু কে আসবে এই রুমে তাদের অনুমতি ব্যতীত?

দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে যে কেন কেউ তাদের অনুপস্থিতে রুমে ঢুকে তল্লাশি চালাবে? এখন রুম এভাবে রেখে যাওয়া যাবেনা সামনে থেকে। ভিতর থেকে রুমে দরজা আটকে দিলো সানা। এরপর জামাকাপড় নিয়ে গোসল করতে চলে গেল। গোসল করে এসে চুপচাপ দেখা যাবে কি কি ডকুমেন্টস পেনড্রাইভে করে পাঠিয়েছে শ্রাবণ। খুব তাড়াতাড়ি খেলার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।
সাইফ আর সাফোয়ান বসে আছে মিটিং রুমে। সাফোয়ান বসে বসে কিছু গোপন বিষয়ে কথা শেয়ার করছে সাইফের সাথে।

~ভাই আমার যা মনে হচ্ছে আমাদের টিমের কেউ বিপক্ষ দলে কথা পাচার করছে আমাদের সম্পর্কে। না হলে আমাদের সব পদক্ষে গুলোর কথা বিপক্ষ দল তো আগে জেনে তারা সে কাজগুলো আগে কিভাবে করতে?
সাইফের কোথায় সাফোয়ানের নড়েচড়ে বসে সে। সাফওয়ান ভালোভাবেই জানে তাদের দলের কোন লোক বিপক্ষ দলের সাথে যুক্ত আছে। পিঠ পিছে ছুরি মারা যে তাদের অভ্যাস।

~ওরা আমাদের পদক্ষেপ গুলো জেনে আগে সেজ কাজ গুলো করছে। সেটা বড় কথা নয় সাইফ,জনগণের সেবা হচ্ছে তাদের প্রয়োজন মিটছে এতেই আমি খুশি। আমি তাদের জন্য আগে কাজ করব এরপর এরা দেখে দেখে সেই কাজের জন্য তারা আমাকে ভোট দেবে এরকম ইলেকশন আমি চাই না ‌। আমার যতটুকু করার সাধ্য আছে আমি ততটুকু কাজ করি তাদের জন্য এবার তাদের যদি মনে হয় আমাকে ভোট দিবে তাহলে দিবে আর যদি অন্য কোন দলকে দেওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে সেখানে দিবে। আমার কোন সমস্যা নেই। যেই দল জিতুক না কেন জনগণের সেবা করাই আসোল।

সাইফ জানে তার ভাই কতটা উদার মনের মানুষ। রাজনৈতিক পেশায় আসার একটাই তো কারণ সাধারণ মানুষের সাহায্য করা। তাদের বিপদে আপদে পাশে থাকা। তাদের সাথে থেকে তাদের সেবা করাই প্রধান উদ্দেশ্য সাফেয়ান।
~কিন্তু আমরা এখানে তো কাল সাপ পুষে রাখতে পারি না? ভাইয়া কি ভাবছো কি করবে কিভাবে ধরবে তাকে?

~চিন্তা করিস না তাই তোর ভাই তো কাঁচা প্লেয়ার না তাদের যা করার ইচ্ছা তা করতে থাকুক। আমারটা আমি বুঝে নেব। আমি কি করছি তুই শুধু খেয়াল রাখবি কারো সাথে যেন কোন অন্যায় হয় কোন মারামারি এসবের মধ্যে আমাদের দলের ছেলেরা যাতে না জরায় খেয়াল রাখ। কাল সবাইকে কল দিয়ে স্টডিয়াম চলে আসতে বলিস আমার কিছু জরুরী কথা বলার আছে আমি সেখানে চলে যাব টাইম মতো।

~জি আচ্ছা ভাই তুমি চিন্তা করো না আমি সব কাজ খুব ভালোভাবে করব।
~ যা বাড়িতে গিয়ে রাফিয়া কে সাথে করে কোথাও ঘুরে আয় ফ্রেস লাগবে।

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৭

( তিন ভাগের এক অংশ দিলাম, বাকি টুকু এডিট করে সকালে দিবো। আপাদত আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে তবুও খুব কষ্টে রিভিউ দিচ্ছি বানানের?

এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৯