ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২১

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২১
সাইয়্যারা খান

নিজে নিজেই এবার ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আদ্রিয়ান। অনেক তো শুনলো,বুঝলো,দেখলো আর কত? এভাবে দিন যাবে না নিশ্চিত? যেখানে এই মাসের পরে যাবে সেখানে আজই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও। মিশানকে ডিরেক্ট হোস্টেল থেকে ওখানে নিয়ে যাবে।

মাইশা আদ্রিয়ানকে অনেক জোর করতো নিজের একটা বাড়ী করার জন্য। হাজার হোক এই বাড়ী তো আদ্রিয়ানের বাবার করা। এই বাড়ীর মালিকানা কেউ পাবে না। সবাই একসাথে বাচ্চাদের নিয়ে থাকবে কিন্তু কারো নামে বাড়ী এটা ভাগ হবে না। অন্য সম্পদগুলো তিন সন্তানকে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন ভদ্রলোক।
নিজে আলাদা না হও তবুও নিজের বলে কিছু থাকা দরকার এটা ছিল মাইশার কথা। কিন্তু তখন আদ্রিয়ান এত টাকা পাবে কই? যেখানে নিজের, বউয়ের, ছেলের ভরনপোষণেই হিমশিম খেতে হতো ওকে সেখানে নিজের বাড়ী বা ফ্লাটের কথা ভাবাও বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। আর সেই বিলাসিতার স্বপ্ন দেখতো মাইশা কিন্তু কখনো ও আদালা হতে চায় নি। শুধু বলতো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— নিজের জন্য কিছু করো আদ্রিয়ান। যেটা শুধু মাত্র তোমার থাকবে। টাকা আজ আছে কাল নেই কিন্তু একটা জমি অথবা বাড়ী সবসময় থাকবে।
ঐ দিকে খেয়াল করেই আদ্রিয়ান পরবর্তীতে যখন টাকা ইনকাম করা শুরু করলো পুরোচোটে তখন ধানমন্ডিতেই একটা বড় ফ্লাট কিনে নেয় নিজের নামে। এতদিন খালিই পড়ে ছিলো। আজ এতবছর পর প্রয়োজন পরেই গেল সেটার। কিন্তু একদিনে ওখানে সিফ্ট হওয়া সম্ভব নয় তাই বুদ্ধিমান আদ্রিয়ান গুছিয়ে সব প্লান করে ফেললো কিভাবে কি করবে। ফোনটা বের করে একজনকে কল করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। যাক আপাতত সমস্যা সমাধান হলো কিছুটা। আদ্রিয়ানের টনক নড়লো যখন রোদ রুমে এসে রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— কি শুরু করলেন আপনি?
আদ্রিয়ান শোয়া থেকে উঠে বসলো। দায়সারাভাবে উত্তর দিলো,
— যা বলেছি করো।
— আমি কিছুতেই এখান থেকে যাব না। নিচে চলুন। মামানি কাঁদছে। এখানে তার তো কোন দোষ নেই।
আদ্রিয়ান শান্ত ভাবে রোদের হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো। রোদের মাথাটা নিজের প্রসস্থ বুকে নিয়ে আলত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

— দোষ আম্মুর কেন কারোই নেই। দোষ কেবল আমার রোদ। আমিই দোষী।
— কি বলতে চাইছেন?
— ভুল আমি করেছি মাইশাকে বিয়ে করে কিন্তু আমার করা সবচেয়ে সুন্দর ভুল ঔটা রোদ। ঐ ভুলের দায় আজ আমার দুটো সন্তান আছে। মিশান আছে, মিশি আছে, তুমি আছো। জীবনে আর কি চাই আমার? এই এতো এতো সুখতো ঐ ভুলেরই প্রতিদান। ভুলটা না করলে এত কিছু কি পেতাম তুমিই বলো?
রোদ মনোযোগ দিলো আদ্রিয়ানের কথায়। সব শুনলো। মানলো, হ্যাঁ সব ঠিক কিন্তু আজ যেটা আদ্রিয়ান করতে চাইছে এটা মোটেও ঠিক না। রোদ বুকে থেকেই বললো,

— সব ঠিক মানলাম আমি। আপনি আরেকবার ভাবুন যা করতে চাইছেন তা কতটা ঠিক।
— ঠিক ভুল বুঝে লাভ নেই। গোছানো শুরু কর।
— আপনি একটা ভরা পরিবার ভাঙতে চাইছেন?
— আমি অতশত বুঝতে চাই না। গো ফাস্ট। একটু পরই বের হবো।
— আমি যাব না। বললাম তো।
— রাগীও না আমায় রোদ।
রোদ ফট করে বুক থেকে সরে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। রুষ্ট চোখে তাকিয়ে বললো,

— আমি কিছুতেই যাব না।
আদ্রিয়ান ও দাঁড়িয়ে মুখোমুখি হয়ে বললো,
— যেতে তোমাকে হবেই?
— বল্লাম তো যাব না।
–রোদ!
বলে চিৎকার করে হাত তুলে আদ্রিয়ান। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর। এতক্ষণ শান্ত ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছে ও কিন্তু এই মেয়ে শুনলে তো?

মুখ খিঁচে চোখ বন্ধ করে আছে রোদ কিন্তু গালে থাপ্পড় না পড়ায় চোখ খুলে তাকালো রোদ ওমনি নজরে এলো আদ্রিয়ানের ভয়ংকর চাহনি। রোদের শরীর মৃদু কেঁপে উঠলো। আদ্রিয়ান শক্ত করে ওর বাহু চেপে ধরে বললো,
— বলেছি না আমাকে রাগাতে না? হ্যাঁ বলেছি? দিনকে দিন বেয়াদব হচ্ছো। কথা শুনো না নিজের বরের। আর একটা কথার হেরফের হলে থাপ্পড়টা কানের নিচে পরবে। যাও সব গুছাও।

বলেই ছেড়ে দিলো।রোদের চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পরলো কয়েক ফোটা। কষ্ট আদ্রিয়ানের ব্যাবহারে না বরং ওর কারণে কারো সাজানো পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। রোদ এখানে না থাকলে নিশ্চিত এমন কিছু হতো না।
রোদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই আদ্রিয়ান নিজের চুলগুলো টেনে ধরলো। শান্ত মেজাজের আদ্রিয়ানের রাগ সহজে উঠে না কিন্তু যখন উঠে তখন যেন সব ধ্বংস করে দিতে মন চায়। কোন হুস থাকে না তখন। এখন রোদকে কোন ভাবেই নিজের রাগ দেখাতে ইচ্ছুক নয় আদ্রিয়ান। কিছু ঘন্টা আগেও মেয়েটা অসুস্থ হয়ে ছিলো। এখন কিছু হওয়া মানেই রোদের জন্য বিপদ ডেকে আনা। এগিয়ে এলো আদ্রিয়ান রোদের দিকে। রোদ তখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। আদ্রিয়ান আলত হাতে রোদকে ধরে নিজের কাছে আনলো। পেছনে দেয়ালে পিঠ ঠেকলো রোদের সামনে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান চুমু খেল রোদের কপালে। ডাকলো,

— রোদ?
–আমি চলে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে আমি চলে যাই।
আদ্রিয়ানের রাগ কমার বদলে এই কথার ফলে বাড়লো কয়েকগুণ। চেপে ধরলো রোদকে নিজের সাথে। দাঁত চেপে বললো,
— তোমাকে আমি মৃত্যুর আগে ছাড়ব না। যতই দূরে যাও না কেন আমারই রবে তুমি। যেদিন এই দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করব ঐদিন তুমি মুক্ত। আদ্রিয়ানের থেকে মুক্ত। আমার বানানো অদৃশ্য খাঁচা থেকে মুক্ত।
— আমি…

আদ্রিয়ান রোদের কপালে কপাল ঠেকালো। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে এখন। ভারী নিঃশ্বাস গুলো আছড়ে পড়লো রোদের সারা মুখ জুরে। অদ্ভুত অনুভূতি হলো রোদের। ওর নিজের ও শ্বাস প্রশ্বাস তখন বেসামাল হয়ে উঠলো। আদ্রিয়ান থেমে থেমে আকুল গলায় আবেদন করলো,
— আমাকে রাগীও না রোদ। শান্ত করো আমায়। আমার রাগ যে ভয়ংকর। নিজের মধ্যে থাকি না আমি তখন। দয়া করো আমার উপর। কিছু করো রোদ।

বেসামাল রোদের কান দিয়ে সব ঢুকলেও করতে পারলো না কিছুই। নিজের অজান্তে মুখ এগিয়ে নিলো আদ্রিয়ানের দিকে। আপাতত আর কিছু করার নেই ওর। আদ্রিয়ানের রাগগুলো যেন হঠাৎ করে ধাক্কা খেলো নরম ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের ঠোঁটে পেয়ে। রোদ স্বেচ্ছায় এতদূর এসেছে বাকিটুকু আদ্রিয়ান নিজ দায়িত্বে উশুল করে নিলো। গভীর ভাবে ডুবে গেল রোদের মাঝে। রাগ গুলো সব নিমিষেই উবে গেল ওর। সব ভালোবাসা ঢেলে দিলো রোদের ওষ্ঠাধরে। রোদও সমানতালে ভালোবাসা বিনিময় করলো। আদ্রিয়ান ওভাবেই কোলে তুলে নিলো রোদকে। বেডে শুয়িয়ে কাছে টেনে নিলো। আবারও আলিঙ্গন করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো দুজন দুজনকে।

কিছু ঘন্টা আগে~
রোদ রোজকার ন্যায় আগেই নিচে যায় সকালে। শাশুড়ীর সাথে তখনও দেখা হয় নি। সাবাকে কিচেনে দেখেই রোদ ওকে টেনেটুনে টেবিলে বসিয়ে বাকিকাজ নিজেই করবে বলে কিচেনে ডুকে। জারবাও হাতে হাতে হেল্প করে রোদকে। সব গুছিয়ে রোদ যখন টেবিলে আনছিলো হঠাৎ কেউ ওর হাত ধরে। রোদ তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ানের মা। মিষ্টি করে হাসি দিয়ে রোদ বললো,

— কোথায় ছিলে তুমি?
আদ্রিয়ানের মায়ের চোখে পানি তখন। রোদ ওনাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— মামনি প্লিজ। আমি জানি তখন মন থেকে তুমি ধমক দাও নি আর নাই ঐসব কথা মনে রেখেছি আমি। ভুলে যাও৷ ঠিক আছে?
আদ্রিয়ান মা রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— আমি জানি আমি ভুল করেছি। মাফ..
রোদ ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

— প্লিজ মামনি এভাবে বলো না। আমি ভুলে গিয়েছে তো সব।
ততক্ষণে বাকিরাও টেবিলে আসতে লাগলো একে একে। রোদ শাশুড়ীকেও বসতে বলে সব জারবার সাহায্য টেবিলে আনলো। খাওয়া শেষে সবাই কাজে যেতে ব্যাস্ত হলো। সাবা তখন উপরে আরিয়ানের সব গুছাতে।
হঠাৎ অপরিচিত কয়েকজন মহিলাকে দেখে সালাম দিয়ে রোদ শাশুড়ীর কাছে গিয়ে বললো,

— মামনি কারা যেন এসেছে।
— তুই যা আসছি আমি।
রোদ সোফাররুম ছেড়ে মিশির দুধ নিতে কিচেনে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ান রোদকে খুঁজতেই আদ্রিয়ানের কানে এলো অপ্রীতিকর কিছু কথা যার সম্পূর্ণটা রোদকে ঘিরে। এতদিন আশেপাশের মানুষেরা কেউ জানলো না যে রোদের বাচ্চা হওয়া সমস্যা আছে কিন্তু গতকাল মামি কিছু মহিলার সামনে রোদকে ঐ বিষয়ে খোঁটা দিতেই ঐ সব মহিলারা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছে।

কিছু মানুষ আছে সমাজের মধ্যে যারা নিজের থেকে অন্যর ঘরে কি হচ্ছে এ নিয়ে পড়ে থাকে সারাদিন। এদের অভ্যাসই হলো সবার ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া,হায় হায় করা,কটুক্তি করা। তাদের কথার ফল কারো জীবনে কি ঝর বয়ে আনে তাতে তাদের বিন্দু মাত্র আফসোস নেই। অথচ কারো অনুপস্থিতিতে তার নামে কথা বলা এককথায় গীবত কারীর জন্য রয়েছে ভয়ংকর শাস্তি। কারো গীবত করারকে নিজের ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এতসব জেনেও শুধু মাত্র নিজেদের বিনোদনের জন্য এই সব মহিলার মতো কিছু মানুষ অন্যের জীবনে টাং নারাতে এসে পরে।

আদ্রিয়ানের মা যথাসম্ভব তাদের কথার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে। সাবা নিচে এসে আদ্রিয়ানকে লাল চোখ করে হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পাশ থেকে কিছু কথা শুনে যার ফলে সব ক্লিয়ার হয়ে যায়। সাবা গিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করলো। আদ্রিয়ান সোজা বাবার রুমে ডুকে।
রোদ কিচেন থেকে বের হয়ে দুধের গ্লাস নিয়ে মিশিকে খুঁজতে সোফায় রুমেই ডুকে। সাথে সাথে ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেল। রোদকে দেখেই কয়েকজন মুখ সিটকে কিছু কথা বললো। কেউ একজন বললো,

— যাই বলো না কেন মেয়ে সুন্দর কিন্তু যাই হোক বাজা তো বাজাই হয়। সন্তানের সুখ কপালে নেই। কি আর করবে সৎ তো আর আপন হয় না।
“বাজা” আর “সৎ” শুনে রোদ আর প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেললো। আর কত? কতই বা প্রতিবাদ করা যায়?মিশি আর মিশান ওর কাছে কি তা রোদ কাউকে বুঝাতে পারবে না। রোদ শুধু বের হয়ে গেল এখান থেকে। পেছন থেকে কানে এলো আদ্রিয়ানের মা আর বাবার ঐ মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলা কিছু কথা। মহিলা গুলো মুখ বাকিয়ে চলে গেল অথচ তারা এখানে একজনের ভরা, সুখের সংসারে আগুনের ফুলকি জ্বালিয়ে গিয়েছে যার দাবানলে পুরো ছাই হয়ে যাচ্ছে কারো সুখের সংসার।

রোদ রুমে ডুকার আগেই সিঁড়ির কাছের দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ হাত-পা কাঁপতে লাগে ওর। অতিরিক্ত কাঁপনে হাত থেকে গরম দুধের গ্লাসটা পরে গেল ওর পায়ে। সেদিকে খেয়াল হলো না রোদের। আদ্রিয়ান বাবার রুম থেকে বের হওয়ার সময় কিছু পড়ার আওয়াজে তাকাতেই ওর অন্তর আত্মার পানি শুকিয়ে গেল। দৌড়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠার আগেই কাঁপতে থাকা রোদ পড়ে গেলো।

আদ্রিয়ান ধরার আগেই আরিয়ান উপর থেকে ধরে ফেললো। রোদ জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আরিয়ানকে। আরিয়ান পরতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। আদ্রিয়ান ততক্ষণে রোদকে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো। রোদ শুধু কাঁপছে। ছাড়া পেতে চেয়ে হাত-পা ছুড়তে লাগলো। ছাড়া না পেয়ে আদ্রিয়ানের বুকে গোঙরাতে লাগলো। ভয় পেয়ে গেল আদ্রিয়ান। রোদের আজ অনেকদিন পর এই এট্যাক এসেছে এবং অনেক তীব্র ভাবে।

ভীষণ বেগ পেতে হলো সামলাতে। একা আদ্রিয়ান পারছিলো না শক্তিশালী পুরুষ হয়ে। আরিয়ান রোদের দুই হাত চেপে ধরলো নাহলে ব্যাথা পেয়ে যাবে যেকোনো সময়। বাকিরাও দৌড়ে সিঁড়ির দিকে এলো। মিশি কেঁদেই যাচ্ছে। আলিফের সাথে বাইরে ছিলো এতক্ষণ। বাসায় ডুকে মাকে এভাবে দেখেই কেঁদে যাচ্ছে। আলিফ শক্ত করে হাত ধরে রাখলো ওর। নিজেও ভয় পেয়ে আছে ও। তবুও মিশির দিকে তাকিয়ে বললো,

— কাঁদিস না। খালামনি ঠিক হয়ে যাবে।
দুইজন হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলো নিচে। মিশি কেঁদেই যাচ্ছে। বেশ সময় লাগিয়ে আজ স্বাভাবিক হলো রোদ। কোনদিন এত সময় লাগে না। আদ্রিয়ান ইশারায় আরিয়ানকে হাত ছাড়তে বললেই আরিয়ান ছেড়ে দিলো। রোদকে বুকে নিয়ে বসে রইলো সিঁড়িতে আদ্রিয়ান। উঠার শক্তি পাচ্ছে না আদ্রিয়ান। ভালোবাসার মানুষের এমন দুরাবস্থা যেন ওর সকল শক্তি শুষে নিয়েছে। আরিয়ান বুঝতে পেরে আদ্রিয়ানকে ধরে দাঁড় করায়। আদ্রিয়ান রোদকে কোলে নিয়ে রুমে হাটা দিলো।
সবাইকে জানিয়ে দিলো আজই এই বাসা ছাড়বে ওরা।

সব ধরণের চেষ্টা করেও লাভ হয় নি। কাউকে পরোয়া না করে আদ্রিয়ান নিজেই সব গুছিয়ে নিয়েছে। রোদ আদ্রিয়ানের মায়ের কাছে নিচে। আদ্রিয়ানের মা জানে আদ্রিয়ান আজ থামবে না। কাউকেই মানবে না ও। রোদের হাত ধরে বললেন,
— আমার ছেলের দায়িত্ব তোকে দিলাম। দেখে রাখিস।
রোদ কান্না করে দিলো। ওভাবেই বললো,

— আমি যাব না মামনি। ওনাকে বলো।
— তুই যাবি রোদ। আত্মীয়রা বাসায় আসবেই। কারো মুখতো আমরা থামিয়ে রাখতে পারবো না। তার থেকে তুই যা আম্মু। ভালো থাক। আমাকে মাফ করে দে। আমি মা হতে পারি নি শাশুড়ীই হয়ে গেলাম। মা হলে নিশ্চিত আরো প্রতিবাদ করতাম।

কি বলবে এই মুহূর্তে ভেবে পেলো না রোদ। এই রকমের পরিস্থিতিতে আগে পরে নি ও। তখনই মিশিকে কোলে নিয়ে নিচে নামলো আদ্রিয়ান। ড্রাইভার আগেই সব গাড়ীতে তুলেছে। তুলেছে বলতে ওদের কাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিস আর কিছুই না। আদ্রিয়ান রোদকে ওভাবে বসে থাকতে দেখেই শান্ত ভাবে বললো,

— উঠে আসো।
রোদ এবার শশুরের দিকে আর আরিয়ানের দিকে তাকালো। তারাও অনেক বলেছে লাভ হয় নি। জারবা দৌড়ে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— বাড়ী ছাড়ছি দুনিয়া না। কাঁদিস কেন?
জারবা নাক টেনে ডাকলো,
— ছোট ভাইয়া আমিও যাব।
— যাবি তো। পরে এখন না।
রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— রোদ আসতে বলেছি না আমি?

রোদ তবুও ঠাই বসে। আদ্রিয়ান ধুপ ধাপ পা ফেলে রোদর এক বাহু ধরে টেনে দাঁড় করালো। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সবার সামনে দিয়ে চলে গেল। একসময় দৃষ্টি সীমানা ছাড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ানের মা দৌড়ে বাইরে এলেন। জারবা ভেতরে কেঁদেই যাচ্ছে। আরিয়ান বোনকে জড়িয়ে রাখলো। গাড়িটা চলে যেতেই সাইড থেকে আস্তে আস্তে ভেতরে ডুকলো আলিফ। যতক্ষণ দেখা গিয়েছে ততক্ষণ এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো ও। ভেতরে ডুকে মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো ছোট্ট আলিফ। সাবা ছেলের মাথায় হাত বুলালো। কি থেকে কি হয়ে গেল?

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২০

গাড়ীতে রোদ মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। আদ্রিয়ানও ততটা ঘাটলো না। মিশি বাবাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আর আদ্রিয়ান উত্তর দিচ্ছে। একসময় গাড়ী থামতেই রোদ সামনে তাকালো ওমনি অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেল।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ২২