অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩২

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩২
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_অ*সভ্যের মতো ওড়নায় ধরেছেন কেনো? মাঝরাস্তায় একটা মেয়ের ওড়না ধরে টানাটানি করে কি প্রমাণ করতে চাইছেন! আপনি চরিত্রবান!!আমার মনে হয় না রাস্তার লোকজন আপনায় সুপুরুষ বলে আখ্যায়িত করবে। ওড়না ছাড়ুন। নয়তো আপনি সেদিন রাতে যে কাজটা করেছেন তা আমাকে এখন রিপিট করতে হবে। আমাকে থা*প্পড় দিতে বা*ধ্য করবেন না। প্রথম বারের থা*প্প*ড় টা নিশ্চয়ই মনে আছে,ডক্টর এ.আর.সি?

একথা বলে জোর করেই আঁধারের হাত রেখে নিজের ওড়না ছাড়িয়ে নিলাম। আমার কথায় সে সানগ্লাস চোখ থেকে নামিয়ে বাকা হেসে বলল,
__অবশ্যই মনে আছে প্রাণপাখি। বউয়ের হাতের প্রথম ছোয়া আজন্মকাল মনের কোঠায় থাকবে। আর অসভ্যতামি কখন করলাম,বউ?আমি তো আমার বউয়ের ওড়না ধরেছি। বউ তো কথা শোনার জন্য দাড়াচ্ছেই না তাই এই স্টেপ তা নিতে হলো। বাসায় চলো।সবকিছু বাসায় গিয়ে সমাধান করবে।এভাবে সবাইকে টেনশনে ফেলে তুমি গুহায় লুকিয়ে থাকবে তা তোমার বর হতে দিবে না,sweetheart

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার কথায় আমি ভ্যা*বাচেকা খেলাম। এ কি এই তিন দিনে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন?ভুলে গেছেন তিনি কি করেছেন? সেদিন রাতে আমার গায়ে হাত দেয়ার ব্যাপার টা আমার মনে একপ্রকার জ্বলন সৃষ্টি করেছে।আমাকে, আমার অনুভূতি কে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার জন্য তার এই নিকৃ ষ্ট ব্যবহার বিষন্নসুন্দর ছিলো। তাই তো বাকি আত্মসম্মান টুকু বাচাতে রাত উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম বাড়িতে ফিরবো কিন্তু আম্মুর কটুবাক্য সহ্য করার শক্তি ছিল না গায়ে তাই তো আলিফ ভাইয়ার বাসায় উঠেছি।

আমাকে এতো অ*সম্মান করে তিনি তৃপ্তি পান নি? নাকি আবার অভিনয় করছেন! অভিনয়ে তো উনি আবার সেরা।তার এইসব আজাইরা প্রলেপ শোনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।তাই তাকে একপ্রকার উপেক্ষা করে চলে আসতে গেলাম কিন্তু সে পথ আগলে দাঁড়িয়ে!

__সমস্যা কি আপনার? আবার নতুন কোন নাটক রচনা করতেছেন? দেখেন, আপনার এতো নাটক দেখার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নাই আমার।আমার আর আপনার পথ এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু একটা সিগনেচার করলেই আপনি মুক্ত। চিন্তা করবেন না, আর কয়েক দিন পর তাও পাঠিয়ে দিবো।
একথা বলেই তার পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই আমার হাত ধরে ফেলে সে।

__ঐশী, i am so sorry. সেদিন রাতে তুমি যখন নিজেকে নিজে বাযে মন্তব্য করেছো সত্যিই নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারিনি আমি,i am really sorry,, Plz এবারের মতো ক্ষমা করে দেও আমায়।আর হবে না বিশ্বাস করো।আর আমি আর নিদ্রা শুধুই ভালো বন্ধু আর কিছুই না। তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্যই নিদ্রা এমন করতো। এটা আমাদের জাস্ট একটা প্ল্যান ছিলো। কিন্তু বিশ্বাস করো রাতের ব্যাপার টা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়ে গেছে। তুমি তো জানো আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা।বাট প্রমিজ করছি আর কখনো এমন হবে না।

তার কথায় মেজাজ বিগড়ে যায় আমার। সাথে সাথে এক ঝটকায় তার থেকে হাত সরিয়ে নিলাম। এতে ভাসিটির সামনে মানুষ সব ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তাতে আমার কি!এ নিজেকে কি মনে করে খুন করে এসে বলবে রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি, সরি, ব্যাস খুনি জীবিত হয়ে যাবে!! তার সাথে কথা বলার মোটেই ইচ্ছে নেই। তার কথা গুলোর কোনো রিয়েকশন না দিয়ে সামনে আগালাম। উনি পিছন থেকে আসতে আসতে ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছেন।আমাকে দাড়াতে বলছেন। আমি সামনেই একটা সিএনজি পেয়ে উঠে পরি।তাড়াতাড়িই ড্রাইভার চাচাকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলি। এখানে থাকলেই আবার আবেগের বশে মরীচিকার পিছনে ছুটতে হবে

বিকেলে বিছানায় শুয়ে নোটস পড়ছিলাম। কালকে লাস্ট পরীক্ষা। এমন সময় রুমে সায়মা আসলো বলল,
_কিরে আর কতক্ষণ এভাবে রুমে বসে থাকবি?ছাদে চল।
_এইতো ভাই,,আর কয়েকটা প্রশ্ন তারপর যাবো।তুই এখন একা যাবি না। এখানে বোস। আমার মাথা টা আচরাই দে। প্লিজ,, তুই না আমার ভাইয়ের বাচ্চার আম্মা। আমি আজকে সকালে শুধু কাটা দিয়ে আটকাই তাড়াতাড়ি ভাসিটি চলে গেছিলাম। গোসলের পর জাস্ট ঝারছি আর এখনো চুলে হাত লাগানোর সুযোগ পাই নি।

_বেডি,, তোর মতো আইলসা আমি আর দেখি নাই।আমার বাচ্চা টা পেটে থেকে তোর আইলসামি শিখে যাবে
একথা বলে সায়মা আমার মাথা চিরুনি চালাতে লাগলো। আমি তার কথায় হাসলাম। এই মেয়ে টা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কম বোনের ভূমিকায় বেশি।আমি এখানে আসলাম তিন দিন।

আমার পরীক্ষা দেখে সে প্রেগন্যান্ট অবস্থায়ও সব কাজ সামলে নেয় অথচ আমাকে কোনো কাজ ধরতেও দেয় না।এই বাসায় এই মাসে এমনি তেই ঝামেলা তারউপর আমি আর এক ঝামেলা তাদের ওপর। কোম্পানির কিছু সমস্যার কারণে ভাইয়া এই মাসের শেষে বেতন পাবে। বাসায় সব জিনিসপত্র ভাইয়ার বাকি আনতে হচ্ছে।কিন্তু আমাকে নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই।
চুল বাধা শেষে আমি উঠে গেলাম। বাকিটা পরে পড়ে নেবো। ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে সায়মার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,

_এটা রাখ। ভাইয়াকে দিস।
_এগুলো কিসের টাকা?? আর আমাকেই কেন দিচ্ছিস?
_ আজকে আসার পথে ব্যাংকে গেছিলাম। আমার বেতনের টাকা থেকে ত্রিশ হাজার উঠাইছি।আমার জন্য পাচ হাজার রাখছি। বাকিটা তোকে দিলাম। বাকি জিনিসপত্র আর আনতে হবে না। ভাইকে এগুলো দিয়ে বাজার করতে বলিস।
সায়মা অবাক হয়ে বললো,

_তুই জব ও করতি??
_হ্যাঁ, আমার শশুর এর অফিসে।
_কিন্তু এই টাকা আমি রাখতে পারবোনা।তোর ভাই কে দিলে আমাকে উড়াধুরা পিটাবে।
__শুন, এতো ডং করিস না,তুই আমার বোনের থেকেও অনেক বেশি। আমি এগুলো তোকে দিসি। বোনের দেয়া জিনিস ফেরত দিবি!
__কিন্তু,,
_ধুর,আবার কিসের কিন্তু! তোর দেয়ার কাম দিবি। কবি যে তোমার বইন দিসে, যাই বইনের লগে কথা কও,, ব্যাস শেষ প্যাচাল।আর কথা বলিস না, চল, তুই না ছাদে যাবি।

__ঐশী,, এই ঐশী,ড্রইং রুমে একবার আয় তো।
রুমেই পড়ছিলাম।দাদাভাইয়ের ডাক শুনে ঘড়ির দিকে তাকালাম। মাত্র রাত ৮:৩৫ বাজে। এতো তাড়াতাড়ি তো খাবারের জন্য ডাকবে না।তাহলে কি টাকার ব্যাপার এ কথা বলবে!ধুর যাই দেখি গিয়ে কিসের জন্য ডাক পড়ছে!
_কিরে দাদাভাই পড়তেছিলাম তো! কেনো,,,
সামনে সোফায় বসা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আর বলি নি বাকি অংশ।আঁধার এখানে কেনো আসছে! উনি কি ভাইয়া কে সব বলে দিয়েছে!
আমাকে দেখেই ভাইয়া বলল,

_বোস, এখানে। তুই ঐ বাড়ি থেকে রাগ করে চলে এসেছিল,এটা আমাকে জানাস নি কেন?
ভাইয়ার কথায় আমি আমতা আমতা করে বললাম,
_দাদাভাই আমি বলতাম কিন্তু তুমি চিন্তা করবে তাই বলিনি
_বেশি পাকনামি করিস তুই।একে তো মিথ্যে বলেছিস এখন আবার বাহানা দিয়ে বাচতে চাচ্ছিস!ঐ বাড়ির সবাই চিন্তা করছে।এখন আঁধারের সাথে ওখানে যা।তিন দিন ধরে তুই মানুষগুলোকে পাগল বানাই ফেলছিস। বেশি বদ হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন!

যেটার ভয় ছিলো তাই হইছে।এবার আমার ভাইকেও এই গন্ডারের ডাক্তার বসে করে ফেলছে।শালা শয়তান ঐ বাড়িতে ও শান্তি দিতো না এখন এখানের শান্তি ও হারাম করার জন্য আসছে!কেন রে তোর পুরাতন প্রেমিকা ক্যাটরিনা থুক্কু নিদ্রা তোরে আবার ছ্যাঁকা পরটা খাওয়াইছে!যে এখানে আসছিল!শালা গন্ডার,আমার ভাইয়ের সামনে এখন “লালসালু ” উপন্যাসের মজিদ সাজতেঁছো!ভন্ড!
_দাদাভাই আমি কোথাও যাবো না। একেবারে চলে এসেছি।এখানেই থাকবো।
আমার কথা শুনে ভাইয়া ধমক দিয়ে বললেন,

_একে বারে মানে!তোর কাছে বিয়ে ছেলেখেলা মনে হয়!ফাজিল!তোদের নিজেদের পারসোনাল ইস্যুর কারণে বাকি মানুষ গুলো কে কেন কষ্ট দিবি?দোষ দুজনেই করেছিস তাহলে তাদের কি দোষ? ঐ বাড়ির সবাই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে আর তুই এমন ছেলে মানুষি করছিস?
এবার আমার ভাইয়ার উপর ভীষণ রাগ লাগছে।
_দাদাভাই উনি আমার গায়ে তুলছে।আমি থাকবোনা এরকম অসভ্য মানুষের সাথে।
এবার ভাইয়া আমার দিকে শান্ত ভাবে চেয়ে বললেন,

_তুই কিছু করিস নি!
_না, আমি কি করবো?আমি তো ড্রেস পরিষ্কার করতে গেছিলাম। উনি তো আমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলেছে।আবারর থাপ্পড় মারছে।
আমি আমতাআমতা করে বললাম
আমার বলার ধরন দেখে ভাইয়া দাড়িয়ে রাগান্বিত ভাবে বললেন,
__তুই নিজের ব্যাপার এ বাজে কথা বলিস নি?
ভাইয়ার কথা শুনে আমি ডুক গিললাম। আঁধারের বাচ্চা টা সব বলে দিসে ভাইকে।দেখো এখন শয়তান এর মতো পিন লাগাই দিয়ে ইনোসেন্ট গিরি দেখাচ্ছে। শালা লেজ কাটা বান্দর।

_কিরে চুপ করে আছিস যে!বল,নিজের দোষ লুকাতে ভালোই জানিস।তোকে আরও চারটা মারা দরকার ছিলো। আমি ঐখানে থাকলে তো তোরে মাইরেই ফেলতাম। এতো বাজে কথা তোর থেকে আশা করি নি আমি।
ভাইয়ার কথায় আমি কান্না করে দিলাম। কান্নারত অবস্থায় বললাম,
_তুমি নিজের বোন রেখে বন্ধুর কথা কানে নিচ্ছো!আমি নিজেকে নিয়ে বলছি তাতে তোমার বন্ধুর কি!তোমার বাসায় আমি থাকছি তাই তোমার সমস্যা হচ্ছে। এই জন্যই যেতে বলছো তো। তোমার বাসা আমি কালকেই ছেড়ে গার্লস হোস্টেল এ চলে যাবো।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩১

আমার কথায় এবার ভাইয়া দমে গেলেন।আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,
_এতো জিদ ভালো না,ছোট্টপাখি।দেখ সবাই কতটা চিন্তা করছে।
_ঐশী প্লিজ, আর অভিমান করো না।আমি সত্যিই অনেক দুঃখিত সেদিন এর জন্য। এবার ফিরে চলো।
আঁধারের কথায় আমার গা জ্বলে উঠলো। এবার আর রাগ টা সহ্যের সীমানায় থাকলো না।ভাইয়া কে ছাড়িয়ে তার দিকে র*ক্তিম চোখে তাকালাম,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৩