শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৬

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৬
আলিশা

হাতের মুঠোয় মাখো-মাখো কাঁদা। সাদা হয়ে উঠছে দ্রুত। বেলকনিতে কিছু গাছ লাগালাম। তন্মধ্যে বেলি ফুলের গাছটা একটু বেশিই যত্নে লাগালাম। ভীষণ পছন্দের ফুল কিনা! চুলগুলো বড্ড এলোমেলো হয়ে গেছে। কোমড় ছেড়ে যাওয়ার চুলগুলো গালে, নাকে, মুখে পরে সুরসুর করছিলো। বেশ বিরক্ত ছিলাম আমি। দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলাম গাছগুলো ঠিকঠাক লাগাতে পারলাম কিনা। আমি আবার এতোটাই নিষ্কর্মা যে কোনো কাজ সুক্ষ্ম ভাবে করতে পারি না। সুক্ষ ভাবে কোনো কাজ না করার মধ্যে একটা ব্যাপার থাকে। এই ধাঁচের মানুষ গুলো কিন্তু বড্ড সহজ-সরল হয়।

— ওখানে কি?
ভাবনার মাঝে হঠাৎ স্মরণের কন্ঠ কানে এলো। ফিরে চাইলাম পেছনে। বেলা তো বেশি নয়। সবে সাড়ে দশটা। অফিসে না মাত্র গেলো! ভ্রু কুঁচকে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম
— আপনার এখানে কি?
আধখোলা শার্টটা আর তার পুরোপুরি খোলা হলো না। ভ্রু জোরা তীরের মতো বাকিয়ে আমার পানে চাইলো। অতঃপর বেশ খানিকটা সময় সে হাতে রেখে জবাব দিলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এখানেই তো আমার সব। বউ, বাচ্চা, সংসার, খাট, পালঙ্ক, কাপড়….
আমি কাঁদা মাখা হাত নিয়ে এগিয়ে গেলাম দু কদম। অমিথ্যা অভিযোগ করে গাল ফুলিয়ে বললাম
— এহহহ! বাসায় এসে দুম করে পরে ঘুমানো ছাড়া আর কি করেন শুনি? দুইটা মাত্র বউয়ের মাঝে একটা মাত্র খেয়া আমি। ভালোই তো বাসেন না আমাকে। আবার বলছেন বউ আছে বাসায়?

স্মরণের আধ খোলা শার্ট খোলা হয়ে গেছে। সবগুলো বোতাম এখন মুক্ত। বিরাট বেলকনি হতে আগত সমীরণে তার ঘর্মাক্ত শার্ট উড়ছে। তার এলোমেলো চুলগুলো মৃদু সোরগোলে যেন অস্থির হয়ে পরেছে। বুকটা ধ্বক করে উঠলো আমার। তবুও পাত্তা দিলাম না। মুখ ফোলানো ভঙ্গিটা বিতারিত করলাম না। স্মরণ বেশ খানিকটা এগিয়ে এলো আমার দিকে। স্থির দৃষ্টি তাক করে ভয়ানক কন্ঠে শুধালো

— ভালোবাসি না?
আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললাম
— নাহ!

কথাটা বলার মাঝপথে আমার চুলগুলো এসে বাগড়া দিয়ে বসলো। মুখে এসে পরলো এলোমেলো হয়ে। ভীষণ বিরক্তি নিয়ে স্মরণকে পাশ কাটতে যাচ্ছিলাম। তার সাথে ভালোবাসার হিসাব করতে বসলে সে শুধু হু, হা, ঠিক আছে বলেই কথা কাটাবে অনায়াসে। মুনাফা নেই আমার। বরং আসলও চলে যাবে। ভাবনা নিয়ে এক কদম দূরত্ব অতিক্রম করতেই হঠাৎ টান পরলো হাতে। একশো নিউটন বলে যেন টানা হলো। পিছিয়ে গেলাম দু কদম। স্মরণ আমাকে দাড় করিয়ে দিয়ে আমার পেছনে চলে গেলো।

মুঠোয় ভরলো আমার খোলা চুল। আমি হতবাক হয়ে হিমায়িত হলাম। খোঁপা করার চেষ্টা করছে সে। তার আঙ্গুল গুলো হুটহাট ভুল করে যেন ছুয়ে ফেলছে আমার ঘাড়। কেঁপে উঠলাম বার কয়েক। অবিশ্বাস্য ভাবে সফল হলো। প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথাতে এলোমেলো, অদৃঢ় এক বাঁধনে সব চুল বদ্ধ করলো সে। আমি লাজুকলতা সহসাই লজ্জায় পরে গেলাম। রাঙা হলাম মুহূর্তের মাঝে। দু একটা ছোট চুল কপালে আঁচড়ে পারছিলো বারংবার। হাতটা মুঠ পাকিয়ে তাদের তাড়াতে গেলে ব্যার্থ হয়ে ফিরলাম। এই ব্যার্থতার সূত্র ধরে স্মরণ সেগুলোকেও গুঁজে দিলো কানের পিঠে। যাহ! এবার তার মুখোমুখি আমি। ধরণীর সব লজ্জা তাড়া করলো আমাকে। হঠাৎ এমন সময় স্মরণ আমার কানের নিকট মুখখানা এগিয়ে নিয়ে বলল

— এমন লজ্জা নিয়েই আবার সে আমার ভালোবাসা চায়। মনে মনে একটা বেবির দরখাস্ত করে আমার কাছে। আগে তো নিজেকে সামলাও।
কথাটা বলতে বলতেই হুট করে অনুভব হলো সে আমার কোমরে হাত রেখেছে। আমি চমকে তাকালাম। শাড়ির আঁচল গুঁজে রেখেছিলাম কোমরে। তারা এখন বাড়াবাড়ি করে, পন্ডিত সেজে আলগা হয়ে গেছে একেকটা। শুধু এক দু’টো ভাজ যেন অনিচ্ছা নিয়ে গুঁজে ছিলো। স্মরণ পুরো আঁচলটা গুঁজে দিলো সযত্নে।

আমি তড়িৎ গতিতে চাইলাম তার দিকে। তার দৃষ্টি পুরোটা আমার চোখে নিবদ্ধ। আমার বুকের ভেতর যেন কালবৈশাখী ঝড় বইছে।না পারছি তার থেকে চোখ সরিয়ে নিতে। আর না পারছি এক দৌড়ে ছুটে তার চোখের আড়াল হতে। করুন এক অবস্থা আমার। স্মরণ কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুঁজে দিয়ে শান্ত হলো। দূরে সরলো। আমি আটকে রাখা দমটা ফোঁস করে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত পা বাড়ালাম ঘরের বাইরে। এ ঘরের ওয়াশরুম ব্যাবহার করাও আমার জন্য আপত্তিকর হলো। আগামী দুই ঘন্টার মাঝে তার চেহারা দর্শন করাও পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজ হয়ে গেছে আমার জন্য।

সত্যিই তাকে এড়িয়ে চললাম। দিন কেটে রাত হলে ঘরে ফিরলাম তার ঘুমন্ত দশা পরখ করে। ছোঁয়া দু’দিন হলো ওর নানুর বাসায় চলে গেছে। আমার মেয়েটা থাকলে বড্ড ভালো হতো। এতোটা অস্বস্তি হতো না স্মরণের কাছে যেতে। রুমে একটা ড্রিম লাইট ব্যাতিত সব লাইটই নেভানো। আমি চুপিসারে দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করলাম। পা টিপে টিপে বিছানা অব্দি গিয়ে একটু দূর হতে দেখার চেষ্টা করলাম স্মরণ আদৌও ঘুমিয়েছে কিনা।

হাত নাড়ালাম তার মুখের সামনে। দু একবার করতালি দিলাম। নাহ! নড়চড় দেখলাম না তার। নিজের বুকে হাত রেখে দীর্ঘ একশ্বাস টেনে বিছানায় উঠলাম। খুশিতে গদগদ হয়ে শুয়ে পরলাম তার পাশে। আকস্মিক, অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হঠাৎ আমার পিঠের নিচে পরলো নরম নরম, লম্বা সরু এক বস্তু৷ বুকের মাঝে ছ্যাৎ করে উঠলো। দ্রুত গতিতে শোয়া থেকে বসে যাই আমি। উক্ত বস্তু হাতে ধরি।

মৃদু আলোর মাঝে গাঢ় দৃষ্টি ফেলে পরখ করে বুঝতে চাইলাম জিনিসকে কি? অতঃপর যখন বুঝলাম এাট ভয়ঙ্কর জিনিস। এটা একটা সাপ। আমি একটা চিৎকার দিয়ে বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে গেলাম। তখন স্মরণের হাসির শব্দ কানে এলো আমার। আমি ঘরময় ছোটাছুটি শুরু করলাম। তার হাসির শব্দে বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা তারই তৈরি ফাঁদ। এপাশ হতে বিছানার ওপাশে চলে গেলাম। স্মরণ ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলো। হাতে তুলে দিলো খেলনা সাপ। এগিয়ে এলো আমার দিকে৷ আমি ছিটকে দূরে গেলাম। সাবধান করে দিয়ে বললাম

— আমি ভয় পাই এটা। প্লিজ সরান। আমার হাত পায়ে শক্তি পাই না এটা দেখলে।
স্মরণ যেন মজা পেলো। আমার দিকে ক্রমেই এগিয়ে এসে বলল
— সত্যি?
বলতে বলতেই আমার দিকে ছুড়ে দেওয়ার কায়দা করে। আমি ছোট খাটো একটা চিৎকার দিয়ে দূরে সরি। স্মরণ হাসতে হাসতে যেন গড়াগড়ি খাবে এমন দশা।

— আপনি এতো খারাপ কেন? এটা আপনি ইচ্ছে করে রেখেছেন তাই না?
স্মরণ অকপটে বলল
— হ্যা। তোমার গলায় পেচিয়ে দেবো।
আমি ভীত কন্ঠে বললাম
— একদম না। প্লিজজজজজ!
— না না। এটা তোমার গলার মালা করতেই হবে। তা নাহলে তোমার এই আমার সামনে না আসার চিন্তা গুলো দূর হবে না।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৫

( পর্বের ফিনিশিং দিতে পারলাম না। ভালো হলো না পর্বটা। আমি আপসেট এই লেখালেখি নিয়ে। একটা গল্পও তো সুন্দর করে লিখতে পারিনি আজ অব্দি। উফফ! ভালো লাগে না আমার

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৭