শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১৯

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১৯
আলিশা

অত্যধিক যত্নের সঙ্গে ভাঁজে মোড়ানো সেই কাগজ। সঙ্গে অতিশয় বুদ্ধি মত্তার সাথে আলমারির কাঠের সন্ধিস্থলে রেখে দেওয়া। আমি হাতের নখের সাহায্যে কাগজের টুকরো বের করে বিস্মিত। প্রস্থ ছোট করে ভাজ করা। ঠিক ছোট বাচ্চারা যেমন করে কাগজ দিয়ে পাখা তৈরি করে এমন করে। দুইবার ভাজ করা হয়েছে। অতঃপর ঠেলেঠুলে সেটা ঠেসে রেখে গেছে কেউ দুই কাঠের সুই চালনা করার মতো ফাঁকা স্থানে। বিষ্ময় দমিয়ে আলমারির সামনে দাঁড়িয়েই কাগজের ভাজ খুললাম। অতঃপর তাতে লেখা কিছু কথা নজরে এলো

” তুমি এখানে কি করছো? জলদি যাও এখান থেকে। স্মরণ আছে বাসায়। আমি আজ নাচ গার্ডেনে যাবো না। ”
লেখাগুলো আমাকে অবাক করলো। কার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল এই চিরকুট? আর কার লেখনী হতে পারে? ‘নাচ গার্ডেন’ জিনিসটা কি? তিনটা প্রশ্ন মাথায় হাঙ্গামা শুরু করে দিলো। ঘরের আলমারিতে হাত রাখার মতো মানুষ তো স্মরণ নিজে, অথৈ, ছোঁয়া, আর আমি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কারো উদ্দেশ্যে চিরকুট লিখে তাকে পাঠাতে ব্যর্থ হয়ে কেউ ঠেসে রেখে গেছে চিরকুট। স্মরণ কি একাজ করবে? নাহ! স্মরণ করলে চিরকুটে স্মরণের নাম আসে কিভাবে? ছোঁয়া? ও তো ছোট বাচ্চা। আমি তো এমন কিছু করি নি। তবে সন্দেহের তালিকায় রয়ে যায় এখন অথৈ!

বিষয়টা নাড়া দিলো আমার মস্তিষ্ক। মানস্পটে ভেসে উঠলো তখন দাদিমার নাতনি ও অথৈয়ের ছবি। তাদেরই অদ্ভুত সাজসজ্জার ছবি যেন ইঙ্গিত করে কিছু। আমি এঘর ছেড়ে চটজলদি আমার ঘরে গেলাম। চিরকুট, ছবি বিছানায় সাজিয়ে রেখে খুঁজতে লাগলাম এই নতুন প্রহেলিকায় ঢাকা পথ। তবে সুনিশ্চিত, সুস্থিশীল হচ্ছে না কোনো ভাবনাই। কে এমন চিরকুট লিখতে পারে? কার জন্য লিখতে পারে? ভাবনার মাঝেই মনে হলো ‘নাচ গার্ডেন’ এর বিষয়টা। এই নাচ গার্ডেন কি? গতকাল বিশ্রী মানসিকতার সেই লোকটাও আমাকে নিয়ে মন্তব্য করেছিল

” নাচ গার্ডেনে রাখমু”
ভাবনা গুলো এবার একঝাঁক মৌমাছি হলো। আর নাচ গার্ডেন যেন হলো মৌচাক। ক্রমশ চোখ সরু হলো। অতলে ডুবলাম ভাবনার। এমন সময়ই খালার ডাক
— বউ, নাস্তা করবা না? স্মরণ বাবা আইছে। নাস্তা কইরা যাও।

স্মরণের কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই মনে হলো তার কাছে নাচ গার্ডেন সম্পর্কে ধারণা নিলে কেমন হয়? এমন ভাবনা মনে চেপে খাবার টেবিলে পৌঁছাতেই আমি নুইয়ে পরলাম। বাবাও ছিলো সেখানে। উপরন্তু স্মরণের মুখাবয়ব ছিলো নির্জীব। বুকটা ধুকপুক করে উঠলো আমার। হয়তোবা তার মাথায় ভীর করেছে চিন্তা। আবারও নতুন হুমকি ধামকি দিয়েছে কিনা ওরা। ভাবতে গিয়ে আমিও ঢুলে পরলাম অশান্তির কোলে।

হঠাৎ আমার সংসার জুড়ে অসুখের হাওয়া। আমার ঘরের মানুষ গুলোর দিপ্ত চেহারা আজ ম্লান। মেয়েটাও আজ ঘরের বাহির। কথা ছিলো হাসি, আড্ডা আর দুষ্টামিতে দিন পার করবো। “আমার সংসার” শিরোনামের সুখের ফসল কি আমার পাওয়া হবে না? ভাবতে গিয়েই গলা চেপে এলো। ক্ষুধা উড়ে যাওয়ার আর খাওয়া হলো না আমার। একই দশা যেন স্মরণেরও। একচামচ ভাতেই তার খাওয়া সমাপ্ত। ছেলে ও বৌ মার এমন উদাস ভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গ দিলেন বাবাও। তিনি এক প্লেট ভাত নিয়ে অনেকটা সময় বসে রইলেন টেবিলে। অতঃপর উঠে গেলেন নীরবে।

আমার মস্তিষ্ক পুনরায় ব্যস্ত হলো চিরকুট নিয়ে। কোমো মতোই আমি দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে সক্ষম হচ্ছি না। কেবলই মনে হচ্ছে আমি নাচ গার্ডেন সম্পর্কে না জানা অব্দি চার মেলানোর জন্য বাকি দুই খুঁজে পাবো না। ভাবনা বেশি প্রসন্ন করলাম না। দ্রুত ফোন করলাম শান্তকে। এই বিপদে একমাত্র ভাররক্ষার্থ কাঠাম শান্তই হতে পারে।

— শান্ত, কোথায় তুই?
— বাব্বাহ,কেমন আছি এটাই জিজ্ঞেস করলি না? সোজা কোথায় আছি?
আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম। ফর্মালিটিও ভুলে গেছি অতি চিন্তায়।
— সরি দোস্ত, আসলে আমি কিছু ঝামেলায় আছি।
শান্ত অস্থির চিত্তে ওপাশ থেকে শুধালো

— কি হয়েছে তো? সব ঠিকঠাক তো? তোর বুইড়া জামাই আবার ভক্কর চক্কর শুরু করলো নাকি?
নাক মুখ কুঁচকে শান্তকে শক্তপোক্ত এক ধমক দিলাম। আমার জামাইকে জোর করে বুড়ো ডাকার অপরাধে। অনন্তর বললাম
— সিরিয়াস কথা শান্ত, ভালোভাবে শোন। আজ আমাকে নিয়ে তোর এক জায়গায় যেতে হবে। তুই আমার শশুর বাড়ির দক্ষিণ দিকটায় আসবি। দেয়ালের ওপাশে রাস্তায় দাড়াবি। আমি জানালা দিয়ে কন্টাক্ট করবো। আর আমরা এক জায়গায় যাবো বুঝলি?

— কখন যাবো আমি?
— এগারোটায় আয়।
শান্ত রাজি হলো। আমি ফোন কেটে এবার স্মরণের শিডিউল জানার জন্য পা বাড়ালাম। সে কখন বাসা ছাড়বে? স্মরণকে পাওয়া গেলো তার নিজস্ব রুমে। পা টিপে টিপে দরজার এপাশে দাড়িয়ে দরজায় টোকা দিলাম। একবারের মাথাতেই দরজা খুলে দিলো স্মারণ। আমি দরজার এপাশ থেকে উঁকি দিয়ে তাকে নরম কন্ঠে শুধালাম

— আজ কোথাও বেরোবেন?
— নাহ।
অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো আমার। সে না বেরোলে আমি বের হবো কি উপায়ে? শুনেছি সি আই ডি দের চোখের পাওয়ার 6/6 হয়। কিন্তু আমার জন্য যে তার চোখের পাওয়ার মন/বাহির। সে যে বাহির থেকেই আমার মনের ভাবনা ধরে ফেলতে পারে।

— এগারোটায় ডাক্তার আসবে বাসায়।
আমি আরো চমকে উঠলাম। এগারোটাতেই কেন?
— আমি ডাক্তার দেখাবো না।
স্মরণ সরু চোখে চাইলো। আমি গোমড়া ভাব ধরে রেখে সঙ্গে যুক্ত করলাম রাগ। দাপিয়ে উঠে বললাম
— আপনি এমন কেন? আমি কোনো ছেলে ডাক্তারের সরনাপন্ন হবো না ব্যাস।
— তোমাকে কে বলল যে ছেলে ডাক্তার?

চুপসে গেলো আমার মুখ। ভেবেছিলাম একটু রাগ দেখিয়ে ডাক্তার আসা বন্ধ করে দেবো। কিন্তু দমে গেলাম না আমি। আরো খানিকটা জেদ নিয়ে বললাম
— আপনি সবসময় এমন করেন। আমি ডাক্তার দেখাবো না বললাম তো। যদি ডাক্তার দেখাতে হয় তাহলে এখনই। আর যদি না দেখাতে হয় তাহলে আর দেখাবো না। আমার মাথা ব্যাথা করছে। ঘুমাবো আমি।
স্মরণ ধৈর্য নিয়ে আমার রাগারাগি সহ্য করলো। আমি ধুপধাপ পা ফেলে নিজের ঘরে চলে এলাম। এখন দশটা পঁচিশ। শান্ত এসে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকবে? বেচারা আমায় সাবান পানি ছাড়া ধুয়ে দেবে।

ডাক্তার এলো। সে দশটা চল্লিশে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো। ডাক্তার দেখে স্মরণের আহ্বানের পূর্বেই আমি পৌঁছে গেলাম ডাক্তারের নিকট। মধ্যবয়স্ক এক ডাক্তার। স্মরণ আমাকে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলে উঠলো
— ডাক্তারই দেখাবে না এখন আবার ডাকার আগেই দৌড় দিয়েছে।

আমার কানে কথাটা পৌঁছালেও নিশ্চুপ হয়ে ডাক্তারের মতলব বোঝার চেষ্টা করলাম। ডাক্তার ম্যাম আমাকে আট দশটা প্রশ্নের সম্মুখীন করলেন। আমি বরাবরই এমন করে উত্তর করলাম যেন আমাকে নিয়ে তার মনে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টা জেগে না ওঠে। মাঝখানে স্মরণ বাগড়া দিয়ে বসলো।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১৮

সে আমার কিছু সমস্যা ঘেঁটে দিতেই আমি তীব্র প্রতিবাদ করে ডাক্তারকে অন্য কিছু বুঝিয়ে দেই। একটা সময় এমন হলো যে ডাক্তার স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন স্মরণের দিকে। আবার কিছুসময় তাকালেন আমার দিকে। যেন তিনি ভীষণ রকমের বিপাকে পরেছেন। তিনি যেন বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন আসলে রোগীটা কে?

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২০