অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি শেষ পর্ব 

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি শেষ পর্ব 
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

__দেখ,আমি জানি তোমার আর তোমার স্বামীর সম্পর্ক নড়বড়ে।তুমি এই সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে এসো।দেখ,ঐশী আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। আমি তোমাকে খুব সুখে রাখবো। তুমি আঁধার কে ছেড়ে দাও।
নিশান ভাইয়ের কথা শুনে আমি স্তব্ধ।পাগল নাকি। আআরেকজনের বউকে ভালোবাসে!কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম,

_দেখুন, ভাইয়া,আপনার থেকে এরকম কথা আমি আশা করি নি।আমি ভেবেছি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ কথা বলবেন তাই কফি শপে আপনার কথায় আসলাম।কিন্তু এরুপ ফালতু বিষয় হবে তা ভাবিনি। আমার আর আমার স্বামীর সম্পর্ক যেমন ই হোক তা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আপনি নাক না গলালেই আপনার জন্য উত্তম।
এ কথা বলে উঠে চলে যেতে নিলেই নিশান ভাই আমার হাত ধরে ফেলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_দেখো,আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে আমার কথা মানতেই হবে।
এমনিতেই হাত ধরছে তার উপর আবার ফাউল বকতেছে।রাগে আমার গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। কোনো কিছু না ভেবেই নিজের হাত ছাড়িয়ে একটা কষে চড় বসালাম নিশানের গালে।নিশান আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে আছে।

__বেয়াদব, হাত ধরিস কোন সাহসে! তুই কোন কুত্তা পাড়ার জমিদার যে তোর কথা মানবো।আমি ভালোবাসি আমার স্বামীকে।আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্ক যেমন ই হোক তাতে তোর বাপের কি!অন্যের বউদের দিকে নজর দিতে লজ্জা করে না!ঐ দিন আমার জামাই আমাকে শাসন করে একদম ঠিকই করছে।ঐদিন তোর লুচ্চা ব্যাটার সাথে কথা বলা উচিত ছিলো না। তাহলে আজকের এই দিন দেখতে হত না।
কথাগুলো বলে আমি দ্রুত সে জায়গা ত্যাগ করি। এখানে থাকা মানেই বিপদ।যদি আধারের চোখে পরি তাহলে এবার দশটা থাপ্পড় পড়বে গালে।

বাসায় পৌঁছাতেই আমার আম্মু জিজ্ঞেস করলেন,
_কিরে তুই একা ফিরলি যে।আঁধার আর তোর ভাই ছোট টা কই?
আম্মুর কথায় রাগ লাগলো। আমি বের হইছি এটা এদের জানানোই লাগবে!!

__আম্মু আমি তোমাকে বলছিলাম আমি ওদের সাথে মিট করেই বাসায় চলে আসবো। তাও তুমি ছোট ভাইয়াকে পাঠাইছো!আমি কি বাচ্চা নাকি যে সব জায়গায় আমাকে দেখাশোনা করতে উনাদের জাইতে হবে?
__তোর আম্মা বলে নি কিছু। আমি বলছি।একবার হারাই আমাদের শিক্ষা হয়েছে তাই এই ভুল আরেকবার যাতে না হ্য় সে দিকে খেয়াল রাখছি।তাছাড়া তোরে না পেয়ে তোর জামাই সারাবাড়ি তুলে ফেলছে তাই বলছি।এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তুই তোর মায়ের কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছিস।বদমাইশ মেয়ে!।যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। দ্রুত যা।
আমার শাশুড়ীর ধমকে আমাকে আর পায় কে। আমি তাড়াতাড়ি উপরে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে দেখি রুম জুড়ে অন্ধকার। জানালার আবছা আলোয় সোফায় বসা আঁধার কে চোখে পড়লো। আমি গিয়ে রুমের লাইট অন করলাম। তার দিকে তাকালাম। তাকিয়ে আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। উনি এভাবে রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন! নিশান এর সাথে আমাকে দেখে ফেলেছেন!যদি এমন হয় তাহলে এবার আবার আমাকে ভুল বুজবেন।আচমকা উনি উঠে দেয়ালের সাথে আমায় চেপে ধরলেন,

__নিশানের সাথে কফিশপে কি করছিলে?তুমি না তোমার ফ্রেন্ডসদের সাথে মিট করতে গিয়েছিলে,তাহলে ওই রাবিশশ টার সাথে কি করছিলে??
এতক্ষণ এটারই ভয় পাচ্ছিলাম। উনার মুখের দিকে তাকানোর সাহস করলাম না। আমতাআমতা করে বললাম,
__নিশান ভাইয়ার সাথে আমার কফিশপে দেখা হয়ে যায়।ততাইই ককথাথা বলেছিলাম,
আমার কথায় তার রাগের মাত্রা আরও বেড়ে গেলো।আমার হাত চেপে ধরেই বললেন ,

__আমার সাথে তো সারাদিনের মধ্যে একটা কথা ও বলো না। অথচ ঐ রাস্কেল এর সাথে ভালোই কথা বলছিলে।
__দেখুন,, আপনি ভুভল ভাবছেনন
__বরকে এতো ভালোবাসো,, তা বরকে না বলে নিশান কে বলছিলে!এটা কিন্তু খারাপ বউ।আমার আগে তুমি নিশান কে জানালে কেন?

আমি তার এহেন প্রশ্নে আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে আছি।আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে সে জোরে শব্দ করে হেসে উঠলেন। তার হাসিতে নিজের বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব হলো। কী মারাত্মক তার হাসি!একটু আগের সেই রাগী ফেইস ছেড়ে এখন কি সুন্দর হাসছেন! হাসির মাঝেই আঁধার বললেন,

__ওখানে তো বাঘিনীর মতো নিশান কে থাপ্পড় বসিয়েছিলে।আর আমি কাছে আসতেই বিড়ালের বাচ্চার মতো মিউ মিউ করে কথা বলছো!নিজেকে স্ট্রং রেখে তখন কার মতো প্রতিউত্তর করতে কি ভুলে গেছো! আমি কি রাক্ষস নাকি যে আমাকে সামনে দেখলে সবসময় কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়!!
এবার তার উপর আমার ভীষণ রাগ হলো। উনি সব জেনে আমাকে শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছিলেন। কথাই বলবো তার সাথে।চলে যেতে নিলেই কোমড় জড়িয়ে ধরলেন,

__এতো দিন লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকেই ভালোবাসছো অথচ আমার অজান্তে! নিশান কে আজকের জন্য আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তার কারণে রহস্য খুললো।
তার কথায় আমার এবার ভীষণ লজ্জা লাগছে। ধরা পড়ে গেলাম।
__আমার সমস্ত #অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
যার চারপাশে বৃত্ত হয়ে ঘুরছি আমি💜
কপালে তার অধরের স্পর্শ পেয়ে লজ্জায় আরও নুয়ে গেলাম। তার হাতের বাধন আগলা হতেই পালালাম রুম থেকে। হুটহাট এমন স্পর্শ আমার ছোটখাটো হৃদয়টাকে নাড়িয়ে দেয়

রাতে সবার খাবার পর্ব শেষ। আমি গাড়িতে আলো আপু আর ছোট ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। গায়ে আমার বাসার পরা শাড়ি টাই আছে।ভাইয়া বলছিলো আজকে আমাকে আর আলো আপু কে এখন ফুচকা খাওয়াতে নিবে।দোকান তো একটু সামনে তাই অলসতার কারণে আর চেইঞ্জ করি নি তাছাড়া এখন রাত কেউ দেখবে ও না।আমার ভাবনার মাঝেই গাড়ি চলা শুরু করলো,

__আরে ভাইয়া আলো আপু তো আসে নি,আপুর জন্য দাড়া,,
পাশে তাকিয়ে বাকিটা আর বলা হয়নি।
__আরে আপনি এখানে কেন??ছোট ভাইয়া আর আলো আপু ওও যাবে। তাদের ফেলে আপনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন কেন?আশ্চর্য!!!!

__কি হলো বলুন!!, ডাক্তার সাহেব আপনি ওদের নিচ্ছেন না কেন!
উনি আমার কথাগুলোর কোন উত্তর ই দিলেন না।ভাব দেখো।
বেশ কিছুক্ষন পর সে গাড়ি থামালেন। সি আর বি এটা। রাতের কারণে এখানে মানুষ নেই বললেই চলে। তবেমাঝের মধ্যে দু’একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে। ।অদ্ভুত ভুতুড়ে লাগছে। কিন্তু ভীষণ সুন্দর। লাইটিং থাকার কারনেই বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। এই রোডের বাতাস সবসময় শীতল থাকে তবে আজকের আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ত কিছু ক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি নামতে পারে।উনি নেমেই আমাকে নামতে বললেন। আমি নেমে একপাশে দাড়িয়ে তার মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছি।আমাকে এখানে একা ফেলে চলে যাবেন না তো!

আমার ভাবনার মাঝেই তার হাতের স্পর্শ পেলাম। আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে হাটতে লাগলেন। আমি কোনো প্রশ্নই শুধালাম না। যদি বিরক্ত হয়ে আমাকে রেখে চলে যায় তখন আমার মতো বোকাসোকার কি হবে!তিনি হাটতে হাটতে বললেন,

__জানো তো,এই রাস্তা টা আমার খুব পছন্দের।বিশেষ কারণ আছে তার অবশ্য। যদিও আগে এই রাস্তা টা একদম বাজে লাগতো।দিনের বেলায় এই জায়গা জোড়া জোড়া মানুষে পরিপূর্ণ থাকে।তাই রাতের পরিবেশ টা হাটার জন্য পারফেক্ট।
এই জায়গায় আগে তেমন অনুভূতির রেশ থাকতো না। কিন্তু তোমার চিহ্ন টুকরো এখানে পাওয়ার পর থেকে এই জায়গাটাও তার মায়াজালে আটকে দিয়েছে আমায়,যেমনটা তুমি আটকেছো।তোমায় না চিনেই তোমার লেখা প্রতিটি অক্ষরের মায়ায় আটকে ছিলাম, তারপর তোমার মায়ায়।

কথার মাঝেই সে হাটা বন্ধ করে আমার দিকে ফিরে তাকালেন। তার তাকানোতে একরাশ মুগ্ধতা দেখতে পেলাম।
__হুট করেই তুমি আমার ব্যস্ত জীবনে অনুভূতির চিহ্ন নিয়ে প্রবেশ করেছিলে।যার রেশ দিন দিন ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে।এটা তোমার সবচেয়ে বড় ভুল।শাস্তি স্বরুপ তোমাকে কি করবো বলো তো!হৃদ পিঞ্জিরাবদ্ধ করে রাখবো।
তার কথায় ক্ষীণ হাসলাম।বললাম,

__পিঞ্জিরা ভেঙে পালালে??
__আর পালাবে না,,সেই বিশ্বাস আছে।
তার কথার মাঝেই শহর জুড়ে ভারি বৃষ্টি নামলো।সে আমাকে নিয়ে দ্রুত গাড়ি তে যেতে চাইলে আমি মাঝরাস্তায় থামিয়ে দেই।তাতেই উনি চোখ রাঙিয়ে বললেন,

__একদম না,তোমার বৃষ্টি তে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যায়।গতবার জ্বর বাধিয়েছিলে মনে নেই?
আমি তার কথায় পাত্তা না দিয়েই হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ছোয়ার মক্ত থেকেই বললাম,
__এখন জ্বর বাধালে সমস্যা নেই নিজের ব্যক্তিগত ডাক্তার সাহেব আছে।তাছাড়া একটা মিষ্টি পরিবার আছে আমার তারা সেবায় আগের পরিবারের মতো অবহেলা করবে না।তাই মরার ভয় নেই, ডাক্তার সাহেব।
আমার কথায় হ্যাচকা টেনে আমাকে তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললেন,

__নেক্সট টাইম মরার কথা বললে একদম জানে মেরে দেবো।
__পারবেন,,ডাক্তার সাহেব??
আমার কথায় সে আমার গালে হাত রেখে বললেন,
___”ঐ আকাশ জানে; জানে বিস্তর ভূমি,,বিচ্ছিন্ন #অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি।নিজের অনুভূতি কে কীভাবে হত্যা করি,, বলো!”

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৯

বিচ্ছিন্ন এক অনুভূতি তুমি, অনুভবে মিশে থাকো প্রতিটা মুহুর্ত। ইচ্ছে হয় তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই তোমার মাঝে। তোমার অস্তিত্বের মাঝে আমি আমায় পেতে চাই।
প্রিয়, এভাবে ভালোবাসা হয়?বলো!!!
তার কথায় আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম।এই মানুষ টার প্রতিটা শব্দে আমি ঘোরে চলে যাই।আমি,, জানি তার অনুভুতির প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠায় শুধু আমিই আছি।।

সমাপ্ত