অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩১

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩১
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_দেখো গিয়ে কোন পরপু*রুষের সাথে ভেগে গেছে।পর*কীয়া করছে তোমার পিছনে তুমি হয়তো জানোও না।বাবা,জানতাম এই মাইয়া এমনই কাজ করবে।ছোট বেলা থেকে তো কম পোড়ায় নাই আমারে।তোমার বাবা-মাকে বলছিলাম নিশুকে তোমার বউ করে ঘরে তুলতে। কিন্তু তাদের তো এই মুখপুরি কে পছন্দ। এখন পালিয়ে গেছে তো,,
আর কিছুই বলতে পারলো না আঁধারের র*ক্তবর্ণ চেহারা দেখে এক ঢুক গিলল ঐশীর মা। এটাই তো সুযোগ তাই তিনি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।তাই তিনি সাহস জুগিয়ে বললেন,

_এই মেয়েকে আর ঘরে তুইলো না বাবা।পরে আবার ও ভেগে যাবে।তোমার সাথে তো ঐশীর স*ম্পর্ক এতোটা ভালো না।তুমি বরং ওকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।ওর চরিত্র এতোটা ভালো না।নিশুকে নাহয় পরে বিয়ে করে নি,,,
এবার আর সুযোগ দিলো না কথা বলার আঁধার। এতক্ষণ সে গুরুজন বলে চুপ করে ছিলো কিন্তু এই মহিলা এবার মাথায় চড়ে বসেছে।গম্ভীর স্বরে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_আচ্ছা আপনি কেমন মা বলেন তো!নিজের মেয়ে সম্পর্কে এগুলো বলতে কি আপনার একটু বিবেকে বাধছে না?নিজের মেয়ের সংসার জোড়া দেয়ার জায়গায় আপনি ভাং*তে চেষ্টা করছেন!আমি বিয়ের প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছি, আপনি ঐশী কে দেখতে পারেন না।এককথায় অবহেলা, অবজ্ঞা করেন। সেটা আপনাদের মা মেয়ের ব্যাপার ভেবে আমি বিষয় টি এড়িয়ে চলতে চেয়েছি।কিন্তু আজকে তো আপনি সীমা পার করে ফেলেছেন।
একটু থামলো। রাগে তার শরী*র কাপ*ছে।তার ভুলের কারণেই মেয়ে টাকে এতো টা কথা শুনতে হচ্ছে।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় ঠান্ডা গলায় বললো

_আমার ভু*লের কারনে সে বাড়ি ছেড়েছে।অথচ আপনি আমাকে শাসন করার জায়গায় ওকে বাজে কথা বলছেন। অপরাধ আমি করেছি তার সাথে।আপনি কোথায় তাকে খুঁজে পাওয়া কোনো ক্লু দিবেন। তা না করে আপনি তার চরিত্র নিয়ে কথা বলছেন!! নিজের সন্তান সম্পর্কে এতো বাজে শব্দ গুলো ইউজ করতে আপনার মন কাপে নি!এতো জঘন্য কেন আপনি?নিজের মেয়ে,,

_ঐশী আমার মেয়ে না।না যানি কোন পা*পের ফল এই মেয়ে।রাস্তা থেকে তোমার শশুর তুলে এনে বাড়িতে জায়গা দিয়েছে। রাস্তার মেয়ে ও।এবার বলো তুমি,, রাস্তার মেয়েকে কি তুমি তোমার স্ত্রী করে রাখতে চাও।তোমার ভালোর জন্য বলছি আমি।
কথাটা বলে ঐশীর আম্মু চুপ করে আঁধারের উত্তর এর অপেক্ষা করে আছেন। এইবার জায়গা বরাবর টোপ ফেলেছে তিনি।সাকসেস তাকে হতেই হবে,

_ওহ, তাহলো আপনি ওর মা নন।হওয়া উচিত ওও না।ওর মতো মেয়ের মা হতেও যোগ্যতা লাগে। যেটার ধারে কাছেও আপনি নেই।আপনি যদি আমার বড় না হতেন তাহলে এতোক্ষণে আপনার নাজেহাল করে দিতাম।
আর হ্যাঁ,, সেই রাস্তার মেয়েকেই আমি ভালোবাসি। সে আজন্ম আমার বউ হয়ে থাকবে।তাই এইসব দিবাস্বপ্ন দেখা অফ করে সামনে থেকে সরুন।

একটু আগের ঘটনা

আঁধার বাড়িতে এসে দেখে পুরো বাড়িতে থমথম ভাব।গেস্ট রা চলে গেছে।তবে বাবাকে দেখে সে অবাক।
_আরে বাবা তুমি! এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে! তোমার না পরশু আসার কথা ছিল? আমাককেএ,,
আর বলতে পারে নি তার আগেই রেজোয়ান চৌধুরী আঁধারের গালে থাপ্পড় বসিয়েছে

_বেয়াদব , ছোট বেলা থেকে তোমায় আর তোমার রাগকে প্রশ্রয় দিচ্ছি বলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হচ্ছে!
আঁধারের মাথা নিচু।সে ভেবেই ছিল এমন কিছু একটা হবে।কারণ ঐশীর গাল সে জ্ঞান হারানোর পর লক্ষ্য করেছিল।উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারায় হাতের আঙ্গুল এর ছাপ স্পষ্ট ছিল।আলো তা দেখে সবাইকে বলে দিয়েছে হয়তো। কিন্তু তার বাবা ছোট ভাইবোন দের সামনে এভাবে থাপ্পড় মাড়বে এটা সে কল্পনা করে নি।

__বাবা আআমি,,
রেজোয়ান চৌধুরী হাত দেখিয়ে বললেন,
_বাস!আর কোনো কথা বলবেনা তুমি।তুমি একটা কাপুরুষ। আমার নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে যে আমি তোমার বাবা।ঐশী কে আমি তোমার জন্য চুজ করেছিলাম। সে রাজি ছিল না। বাচ্চা মেয়ে পরে হয়তো পরিবারের অত্যাচার এর কারণে রাজি হয়েছে।তুমি তো বিয়েতে আমায় না করোনি তাহলে এখন কেন মেয়েটা কে নিয়ে তোমার এতো সমস্যা। মেয়েটা ঐ বাড়ির অত্যাচার, অবহেলা অনেক সহ্য করেছে। আর এখন তুমি ওর গায়ে হাত তুলেছো!আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলার এতো সাহস কোথায় পেয়েছো তুমি?
আঁধার তার বাবার হাত জরো করে ধরলো।শান্ত কন্ঠে বলল,

_বাবা, I am sorry, বিশ্বাস করো অনেক চেষ্টা করেও আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। আমাদের মাঝে একটা ছোট্ট misunderstanding হয়েছে।আমি একটু বেশি রেগে ছিলাম। আমার সত্যিই অনেক বেশি ভুল হয়েছে। আমি ঐশীর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবো।
রেজোয়ান চৌধুরী হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
_তাকে পেলে তবেই তো!
আঁধার অবাক হয় তার বাবার কথায়। কেমন যেন আতংক ছড়িয়ে পরে তার মন মহলে।তীব্র উত্তেজনা নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
_মানেহ!!
__সে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।তোমার মার ও এবার মগজে বাতি জ্বলবে।এবার তুমি আর তোমার মা শান্তিতে থেকো বাড়িতে।

এরপর নিদ্রা দিকে তাকিয়ে বললেন,
_তুমি কালকের মধ্যে হোটেলে শিফট হবে।
এরপর আঁধার এর হাতে একখানা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে তিনি ড্রইং রুম ত্যাগ করলেন।আঁধার কাগজ টি পড়ে নি।আঁধারের মনে হচ্ছে ঐশী রুমেই আছে। তাকে ছেড়ে যেতে পারে না। তাই সে দ্রুত রুমে আসলো। কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো।

আঁধারের কাছে সবকিছু এলোমেলো লাগছে।চলে গেছে মানে!সে নাহয় ভুল করেছে তাই বলে চলে যাবে।আঁধার তো নিয়ন্ত্রিত ছিল।ঐশীর প্রতি যে তার ভালোবাসা ছিল এটা সে মুখে প্রকাশ করেনি কিন্তু কাজে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে।নিদ্রা দিয়ে জাস্ট জেলাসি ফিল করানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু ঐশীর কি দরকার ছিলো নিজেকে নিয়ে ফালতু শব্দ ব্যবহার করার!সে তো ঐশীর আশেপাশে কোনো কাউকে সহ্য করতে পারে না সেখানে ঐশী বলা কথাটা তার অনুভূতিকে আঘাত করেছে।তাই তো ইচ্ছে বিরুদ্ধে কাজ করে ফেলেছে।

সে কি আঁধারের চোখের চাহনি বুঝতো না!তার অনুভূতির কি কোনো মূল্যই ছিলো না তবে!টানটান উত্তেজনা নিয়ে কাগজ টায় চোখ রাখলো,সেই পরিচিত লিখা,পরিচিত অক্ষর

“সম্মোধন “করার মতো শব্দের ভীষণ অভাব ছিল তাই তা উহ্যই থাক।জানেন তো মিথ্যে অনুভূতি পুষে ছিলাম এই কয়দিনে তার শাস্তি পেয়েছি। এখন তো নিজের আত্মসম্মান এর কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি!দয়া করে আর দায়িত্ব পালন করবেন না। আমি নিজের দায়িত্ব নিজে ভালো করে পালন করে নেবো।বলেছিলাম বিয়ের ছ’মাস পর চলে যাবো। এখন চারমাস সমস্যা নেই বাকি দুমাস পর ডিভোর্স পেপার আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েন।ভালো থাকবেন আপনার নতুন জীবন সঙ্গী নিয়ে।
কাগজ খানা পড়েই আঁধার এক মুহূর্ত দেড়ি করেনি। তাড়াতাড়ি তার শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। কিন্তু সে এ বাড়িতে এসেও ঐশীকে পায় নি।তার উপর এই মহিলা আজাইরা প্রলেপ যেনো তার মেজাজ টাকে বিগড়ে দিচ্ছে

বর্তমান

আঁধার তার শশুর এর নাম্বার এ কল দিচ্ছে কিন্তু তা সুইচড অফ। উনি ঢাকা গেছেন সেটা আঁধার এবাড়িতে এসে জানতে পারে। ঐশী নিজের ফোনটাও বাসায় ফেলে চলে গেছে। নয়তো লোকেশন ট্র্যাকিং করে ঐশীর খোঁজ লাগানো যেত।তার মাথায় এখন হাজার চিন্তা ঐশী যদি এখানে না থাকে তাহলে কোথায় যাবে!আবার সে এনাদের সন্তান না হলে তার আসল পরিচয় ই কি!ঐশীর পরিবার এখন কোথায়!

এসব চিন্তার মাঝেই আঁধার ঐশীর রুমে এসেছে । এখানে যদি ঐশী পর্যন্ত পৌঁছানোর কোনো ক্লু থাকে।
সে সারারুন খুঁজে কোনো কিচ্ছু পায় নি।এই রুমে একটা খাট,টেবিল আর ছোট সাইজের একটা আলমারি ছাড়া কিছুই নেই।এই রুমে টেবিলে পড়ার বইয়ের থেকে উপন্যাসের বই বেশি।এবার হতাশ লাগছে। হঠাৎ ই তার চোখ গেল টেবিলের ড্রয়ার এর দিকে। কিন্তু ড্রয়ারটা লক করা। নিশুকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল,

_ভাইয়া,এটার চাবি বাসার কারও কাছেই নেই।মা মিথ্যে বলছে না।চাবি তো ঐশীর কাছেই থাকে। এটার চাবি ও কাঊকে দেয় না।
__তোমার মাথা থেকে একটা কালো ক্লিপ খুলে দাও তো। ফাস্ট
নিশু অবাক হয়ে একটা ক্লিপ ওর মাথা থেকে খুলে দিয়ে দেয়।আঁধার মুহূর্তেই লক খুলে ফেলায় বিস্মিত হয় সে।
আঁধার ড্রয়ার খুলে সেখানে একখানা ডায়েরি পায়।সাথে একটা লকেট পায়।লকেট টা দেখে আঁধার চমকায়।লকেটের ভিতরের ছবি দেখে সে আরও বেশি অবাক হয়।নিশুকে জিজ্ঞেস করে,

__এই লকেট টা এখানে কেন?কার এটা?
__এটা ঐশীর লকেট ভাইয়া। বাবা যখন ঐশীকে পেয়েছিল তখন এই লকেট টা ঐশীর গলায় ছিলো।
__তুমি ও দেখি সব জানো!!ঐশী কি জানে ও এবাড়িতে পালিত?.
_না ভাইয়া। বাবার নিষেধ ছিল। তাই বাড়ির কেউ একথা ওর কানে তুলে নি।
__ওকে তুমি যেতে পারো।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩০

আঁধার লকেটের ছবি টিতে তাকিয়ে মৃদু হাসে।হাত দিয়েই ছুয়ে দেয় ছবিটি
“এবার তোমায় আজন্মের মতো বেধে নেবো।তুমি হাজার চাইলেও ছুটতে পারবে না ”

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩২