অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩০

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩০
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_প*রপুরু*ষের স্প*র্শ বুঝি খুব ভালো লাগে? তাই তো একেবারে গায়ে গিয়ে পড়ে*ছো নিশানের!এই জন্যই আমার স্পর্শ নিতে পারো না। আমি ধরলেই পালাবার চেষ্টা করো।ছেলে মানুষ দেখলেই গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে তাইনা??
আমি জামায় পড়ে যাওয়া জুস পরিষ্কার করার জন্যই আপুর রুমে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই একজোড়া শক্তপোক্ত হাত আমায় রুমে নিয়ে গেল।দরজা আটকে দিলো।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই হাতের মালিক আমায় দেয়ালে চে*পে ধরলো।

তারপর এই অ*রুচি সম্মত প্রশ্ন গুলো আমার দিকে ছু*রে দিলেন।আঁধার এর এরকম প্রশ্নের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না
।হাত দেয়ালের সাথে চেপে রাখায় ব্যাথা পাচ্ছি ভীষণ। চুড়ি কয়েকটা ভেঙে গেথে গেছে হাতে। অথচ তার তিনি ভ্রুক্ষেপহীন। তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।নিচে এখনো অনুষ্ঠান চলছে।সবাই মজা করছে ভীষণ। আমি তাই নিজের মুড নষ্ট করলাম না। তাই ভালো ভাবেই আঁধারকে বললাম,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_দেখুন এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। এর বেশি কিছুই না।আপনি অহেতুক ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা তৈরি করছেন। হাতটা ছাড়ুন। জামা পরিষ্কার করে আবার আমাকে নিচে যেতে হবে।
তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম ভীষণ ক্ষেপে আছেন। এখন ক্ষেপো কেনো চান্দু!খুব জলছে বুঝি!জ্বালানোর জন্যই তো করেছি আমি কাজগুলো। কেনো এখন বুঝি তোমার প্রেমিকা নোরা ফাতেহি অপ্সস সরি নিদ্রা কে ভালো লাগছে না।এতক্ষণ তো ঠিকই তার সাথে ভেটকাচ্ছিলা। এখন মুখের হাসি গায়েব কেনো!ইশ,, ভিতরটা বুঝি খুব পুড়তেছে তাই না ডাক্তার সাহেব!তার এই চেহারা ভীষণ আনন্দ দিচ্ছে আমায়

আমার কথায় তিনি আমায় ছাড়লেন তো না বরং ব্যাথা হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেই বললেন
_কেনো?নিচে আবার কি ঐ নিশানের সাথে হাসাহাসি করার জন্য যাচ্ছিস?একবার গায়ে পড়ে শখ মিটেনি তোর?
তার তুই তুকা রি কথা শুনে এবার আমার মেজাজ বিগড়ে গেল। ফালতু একটা বিষয় নিয়ে এইরকম আজব বিহেভিয়ার করার কোনো মানেই হয়না।তাই তাকে গায়ের জোর দিয়েই ধাক্কা দিলাম,

_দূরে থাকুন। একদম অসভ্যের মতো আচরণ করবেন না। কয়বার বলবো এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো,,,আর হ্যাঁ, কিসের এতো অধিকার দেখাচ্ছেন আপনি? আপনি যখন আপনার প্রেমিকার সাথে গায়ে পড়ে হাসাহাসি করেন কিছু বলি আমি?ঘরে বউ থাকতে চরিত্রহীন পুরুষ মানুষের মতো প্রমিকার সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়ান,, তাতে নাক গলাই আমি? জানেন তো চরিত্রে দোষ থাকলে এমন টাই হয় ঘরের বউ থেকে পরনারী ভালো লাগে আর আপনি ও সেইম ডাক্তার সাহেব।একজন ক্যারেক্টার লেস পারসন।

__ঐশীইই,, i am warning u, don’t cross your limits.নিদ্রা আমার জাস্ট ফ্রেন্ড আর কিছুই না। শুধু মাত্র এই ফালতু কারনে তুই নিশান এর সাথে গায়ে হাত রেখে কথা বলবি?
ভীষণ রেগে গলা ফাটিয়ে বললেন আঁধার। ভয়ে মৃদু কেপে উঠলাম আমি। চোখ, মুখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে তার।ধূসর মণির মাঝে শুভ্র মুখখানা একেবারে লালবর্ণ ধারণ করেছে যা সামনে থাকা মানুষের কাপানি ছুটাতে সক্ষম।
কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। সবসময় শুনবো নাকি! দোষ তো উনার আমার চাইতে বেশি। তাহলে আমাকে এতো শাসন করার উনি কে?

_কেনো,,এখন বুঝি খুব লাগছে!আপনি তো বলেছিলেন আমাকে নিজের বউই মানেন না।তাহলে এতো অধিকার কিসের আমার উপর? আমি যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে আপনার কি? আপনার ব্যাপার এ আমি তো কোনো অধিকার দেখাই না। তাহলে আপনি কেন এতো অধিকার দেখাচ্ছেন? আমি অন্য ছেলেদের সাথে হাসবো,কথা বলবো, ঘুরবো আর প্রয়োজন পড়লে শুয়ে থাক,,,ব

আর কিছু বলার আগেই তার থাপ্পড়ে ছিটকে গিয়ে দেয়ালে বারি খেলাম। আগের কাটা জায়গায় পুনরায় বারি লাগাতে মাথাটা ঘুরে উঠলো । নিজেকে স্থির করে দাড়ানো চেষ্টার মাঝেই উনি দ্বিতীয় দফা আক্রমণ করলেন। তার হাত দিয়ে আমার বাহু চেপে ধরলেন। মনে হচ্ছে আংগুল ডেবে যাচ্ছে।একটু আগে তো নিচে এমন কিছু ঘটে নি যে তিনি আমার গায়ে আঘাত করবেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে তার দিকে তাকানো চেষ্টা করতেই শুনতে পেলাম তার রূঢ় কন্ঠ

_সাহস বেশি বেড়েছে তোর! আমাকে যা বলেছিস মেনে নিলাম। কিন্তু নিজের সম্পর্কে কি বললি!অন্য ছেলে, তাই না!অন্য ছেলের সাথে,,কি কি যেন করবি?শুধু মুখে আন আরেক বার,,তোর মুখ ভেঙে আমি গুড়ো করে দিতেও দ্বিধা করবো না।নেক্সট টাইম এরকম সাহস দেখালে খুন করে পুতে ফেলবো। অন্য ছেলের কথা স্মৃতি থেকে মুছে ফেল।তুই এই আঁধারের,, শুধুমাত্র আমার।আমার,,
আর শুনতে পেলাম না। দাঁড়িয়ে থাকার আর শক্তি হারিয়ে ফেলেছি । চোখ বুজে এলো। তার গায়ে ভর ছেড়ে দিলাম।

ফ্ল্যাশব্যাক

ঐশী নিচে নেমে দেখে মেহমান রা সবাই চলে এসেছে। এখানে বেশির ভাগ মানুষই আরাফ এর ফ্রেন্ডস।একটু পরই কেক কাটা হবে। আলোর কাছে গিয়ে দাড়াতেই দেখে নিদ্রা আঁধার আর ভোরের সাথে কথা বলছে। আলো বারবার চোখ রাঙানি দিচ্ছে কিন্তু এই মেয়ে এক হাতে ভোর কে ধরে রেখেছে।বেচারা ভোর পড়েছে এক ফ্যাসাদে। বউয়ের দিকে তাকালেই তার কলিজা কেপে উঠছে।তাই নিদ্রাকে বললো

_আরে নিদ্রা ছাড়,আমি ওয়াশরুমে যাবো।
নিদ্রা তো ছাড়লোই না আরোও জেকে ধরে বসলো।ভোর টোটালি ফেসে গেছে।বেচারা বউয়ের রাগেই ভস্ম হয়ে যাচ্ছে।তাই আঁধারের কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
__ভাই, এই আপোদ টারে তাড়াতাড়ি বিদায় কর তোর বাসা থেকে। নয়তো তোর বইন আমারে বেগুন ভর্তা বানাই দিবে। পড়ে পেপারে খবর ছাপানো হবে,বান্ধুবীর জন্য বউয়ের হাতে খুন হয়েছে এক অবলা পুরুষ।

ভাই এই ছাগল এইভাবে তোর সাথেও গায়ে পড়ে থাকে যে,তোকে ঐশী কিছু বলে না?
ভোরের প্রশ্নে বাকা হেসেই ঐশীর দিকে তাকালো সে।মেয়েটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে অথচ ভ্রুক্ষেপহীন। যেন এর কিছু আসে যায় না।ক্ষীণ হেসে বললো
_এই মেয়ে অতি দরদী। এতো দেখিয়ে দেখিয়ে কথা বলি।কিন্তু এর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।নিজের বর এর সাথে অন্য মেয়ে ঘেঁষে কথা বলে এতে সে বিন্দুমাত্র জেলাসি ফিল করে না।বরং নিদ্রাকে সুযোগ করে দেয় কথা বলার।হয়তো আমি এলিয়েন কে বিয়ে করেছিলাম!
ভোর তো ভীষণ অবাক,

_কি বলিস,এ কোন মাটি দিয়ে তৈরি ভাই!আর আমার টা এই নিয়ে এগারো বার চোখ রাঙানী দিসে।এবার তো মনে হয় এক সপ্তাহ কথা বলা অফ করে দিবে।ভাই এখন এরে সামলা।
এরপর ভোর নিদ্রা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
_আরে তুই এতো বছরের জমানো কথা একদিনে শেষ করতে পারবি নাকি!আমাদের এক নাম্বার দুই নাম্বার ও তো পায়।বোন তুই আঁধারের সাথে কথা বল।আমি শুধু ওয়াশরুম এ যাবো আর আসবো।
আলো এবার একটু শান্তি পেল।তা দেখে ঐশী হেসে উঠলো,

_যাক,তুমি ঐ নোরার সরি নিদ্রার হাত থেকে নিজের জামাইকে বাচাইতে সক্ষম হইসো।পারে নাই ভোর ভাইয়ার ঘাড়ে উঠে বসতে!
_আরে নোরার থেকেও বেশি উরফি জাবেদ এর ম্যাচ হয়।শাড়ি পড়ছে নাকি এটা!এর থেকে ভালো কাপড় ছাড়াই আসতো হুদাই শাড়ির অপমান করতেছে।দেখনা,, যদি পারতো আঁধার ভাইয়ের কোলে চড়ে বসতো।এতো ছাড় দিস না,যখন হাতের বাহিরে যাবে তখন বুঝবি।
ঐশী কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।

কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে থাকার মাঝেই নিশানের সাথে আলাপ হয়। ছেলেটা দাড়ুন মিশুক। মুহুর্তেই তাদের মধ্যে ফ্রেন্ডলি ভাব চলে আসে।ঐশী খেয়ালই করেনি এক জোড়া রক্তচক্ষু তাকে পরোক্ষভাবে দেখছে।
কেক কাটা শেষে,, এখন চলছে মুখে কেক মাখামাখির কাজ।রোজা, আলো আর কলি একে অপরকে একেবারে ভুত বানিয়ে দিয়েছে।বেচারি ঐশী নিজেকে বাচাতে লুকিয়ে রান্না ঘরে যাবার পথে আরাফ একগাদা কেক মেখে দেয়।

ঐশী কম কিসে সে ও এক গাদা আরাফের মুখে লাগানোর চেষ্টায় টার্গেট মিস করে নিশান এর মুখে মেখে দেয়।নিশানের হাতের জুস ফ্লোরে পড়ার সাথে কিছুটা তার জামায় ও পরে।নিশান তো তাজ্জব হয়ে দাঁড়িয়ে। ঐশী সরি বলে সরে যেতে নিলেই ঘটে বিপত্তি!ফ্লোরে জুসের কারনে পা পিছলে পড়তে নিলেই নিশান ধরে ফেলে।ঘটনা সবাই আকস্মিক এক্সিডেন্ট ভেবে নিলেও আঁধার ভীষণ ক্ষেপে ছিল। তার বউকে অন্যজন স্পর্শ করবে এটা সে কিছু তেই মেনে নিতে পারছিল না। নিশান কে মুহুর্তেই তার খুন করতে ইচ্ছে করছিলো। পরের ঘটনা সবার জানা🙂

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৯

চোখে পানির ছিটা পড়ায় পিট পিট করে চোখ খুললাম। তাকিয়ে দেখি আলো আপু গ্লাস হাতে বসে আছে
_তোর জ্ঞান ফিরলো তবে! সেই কখন থেকে পানি ছিটাচ্ছি।তুই বেহুশ হইলি কিভাবে?
ভাইয়া কে দেখলাম নিদ্রা কে এক রামধমক দিয়ে ভীষণ রেগে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে।তোর সাথে কি ভাইয়ের ঝামেলা হইছে?

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩১