অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৯

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৯
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_আপনি নিজে সারারাত আমার কোমড়ের উপর অত্যা*চার চালিয়ে এখন বলছেন আমি অত্যা*চার করছি!আমার কোমড় কি আপনার বাপের সম্পত্তি নাকি!সরুন,গিয়ে আপনার প্রেমিকার কোমড় জড়িয়ে ধরুন।
আমার কথা শুনে উনি আহাম্মক এর মত আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।এমন ভাব করছে যেনো এই বিষয় এ উনি কিছুই জানে না।সব অভিনয় । বিয়ের পর ও প্রেমিকার সাথে বউ রেখে আলোচনা সভা বসাবে।ব*দলোক একটা। আমি তার তাকানো কে পাত্তা না দিলাম না।কথা না বাড়িয়ে উঠে গেলাম। রাতে তেমন পড়া হয়নি। কি লিখবো আল্লাহ যানে!

_কিরে পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন?
_আর প্রিপারেশন! পরীক্ষা দিতে আসছি এটাই অনেক।তোদের কি অবস্থা,, লিখে তো ফাটাই দিবি আজকে তাই না।
আমার কথা শুনে মীম ভাব নিয়েই বললো,
_আজকে থিউরি, ইতিহাস রচনা করবো।তোরা তো জানোস আমি math এ খারাপ হলেও থিউরি তে অনেক ভালো।
পরীক্ষা শেষে আপুর সাথে বাড়ি ফিরলাম। ড্রইং রুমে এসে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এই ডাইনি, রাক্ষসী মেয়ে সারাদিন আধারের সাথে চিপকে থাকে। আঁধার এর তো এখন হহসপিটালের থাকার কথা। এতো তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে কে বলছে উনাকে।।এখন তো উনার রোগীর ও অভাব পড়বে।আমি বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়েই শাওয়ার নিতে গেলাম। এদের প্রেমলীলা দেখার আমার একদম ই ইচ্ছে নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এভাবেই কেটে গেছে পাচ দিন কিন্তু এই মেয়ের যাওয়ার কোনো নাম নাই। দিনে দিনে আঁধারের সাথে সময় কাটানোর শুধু সুযোগ খুঁজে।আর আঁধারের ও এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। তাকে দেখে মনে হয় সে অনেক ভালো থাকে নিদ্রা আপুর সঙ্গ পেয়ে। আমাকে দেখলে তাদের হাসি,ঠাট্টা আরো বেড়ে যায়।মাঝে মাঝে মনে হয় আঁধার আমাকে জেলাসি ফিল করানোর জন্য এমনটা করে। কারণ সেদিন আমি রুমেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু দরজার কাছে গিয়ে শুনতে পেলাম,

_এটা বাংলাদেশ নিদ্রা, তাই যখন তখন আমায় ধরে কথা বলবা না।মানলাম আমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ।কিন্তু আমি তোমার জন্য পরপুরুষ। আমার নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন আছে।সো পযাপ্ত পরিমাণ ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলবে।
এরপর নিদ্রা আপুকে দরজা দিয়ে গটগট করে চলতে যেতে দেখলাম।
__পিচ্চি ভাবী, কেমন আছো?
নিচে নামতেই ভোর ভাইয়ার সাথে দেখা।হাতে একগাদা গোলাপের তোরা হাতে দাড়িয়ে আছেন।
_আআসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনার কি অবস্থা?
_আমার অবস্থা আর বলোনো না, পিচ্চি।ভীষণ ভীষণ খারাপ। বউ আমার রাগ করে ৫ঘন্টা ৪৫মিনিট কথা বলেনি। বুঝতে পারছো কতটা কষ্টে আছি!

হতাশার সুরেই বললেন কথাটা
_আপু রুমেই আছে ভাইয়া। গোলাপ কিন্তু তার ভীষণ পছন্দের। খুশি হবে দেখলে
__যা রেগে আছে!যদি মুখে ছুড়ে মারে।
কাদো কাদো চেহারা নিয়ে ভোর ভাইয়া বললেন। তার কথা শুনে হাসি পেল আমার। মুখে হাসি রেখেই বললাম
_গিয়ে মান ভাঙান ভাইয়া।নয়তো দেরি হয়ে যাবে।পরে সত্যিই ছুড়ে মারবে।

রান্না ঘরে এসেছি। আজকে আবার অনেক কাজ। আরাফ ভাইয়া জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে ছোট খাটো একটা পার্টি রেখেছেন আঁধার। সেখানে তাদের বন্ধুবান্ধব দেরও দাওয়াত দিয়েছে।আঁধার বলেছিলো সব আইটেম বাহির থেকে আনার ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু আলো আপু আর আমি মানা করেছি।যেহেতু বেকার সমাজ বাসায় উপস্থিত তাই সব বাসায় বানানো হবে।সবাই রান্না ঘরে এতক্ষণ আলো আপুও ছিলো কেকটা ওভেন এ দিয়ে বাকিদের বলে উপরে গেছে।
_রোজা আপু আমাকে কি করতে হবে বলো?বিকেল তো প্রায় হয়ে এলো।
রোজা আপু বিরিয়ানি রান্না কিরছিলো।নাড়তে নাড়তেই বললো

_তুমি ওই চুলোয় কলির বানানো সমুচা আর সিংগাড়া গুলো ভেজে ফেলো।তার এখন যেই রোল গুলো বানাচ্ছে তা তেলে ভেজো।
আমি চুলোয় কড়াই বসিয়ে দিলাম। কলি আপু আমার দিকে তেল এগিয়ে দিলো।আপু অনেক ভালো হয়ে গেছে এখন আর আগের মতো রুড বিহেভিয়ার করে না।রোজা আপুর মতোই বন্ধুসুলভ আচরণ করেন।আমি একে একে সব গুলো সিংগাড়া, সমুচা ভেজে উঠালাম।
রোল গুলো ভাজছিলাম তখন কলি আপু বললো,

_ছেলে গুলা সব কই? সব সময়ের আগে কমপ্লিট হবে তো?
তার কথা শুনে আমার মনে পড়লো যে তাদেরকে তো অনেক কিছু আনতে বলা হয়েছিলো। তাই বললাম
_নীল আর উদয় ভাইয়া তো বাইরে গেছে ক্লোড ড্রিংকস আর মিষ্টির সবরকম জিনিস আনার জন্য। আর হিমেল আর পবন ডেকোরেশন এর মানুষদের দেখছে।আরাফ ভাই কোথায় তা জানিনা।
_এই তো আমি পিচ্চি ভাবী, আমায় বুঝি তোমরা সবাই অনেক মিস করছিলা?
তার কথায় আমি কিঞ্চিৎ হেসে বললাম,

_অবশ্যই ভাইয়া।তোমায় মিস না করে কি আমরা থাকতে পারি বলো।দুই দিন পরই তো গরুর ডাক্তার হবা।
আমার কথা ভাইয়া মাথা চুলকে বললো
_ওইটা এনিমেলস ডক্টর হবে, বইন।
_হ্যাঁ রে আরাফ তোকে ভীষণ ভাবে মিস করছিলাম। এক জন বুয়া আজ নেই তাই তার কাজ তোকে দিয়ে করাবো।এবার কেক টা ক্রিম দিয়ে ডেকোরেশন কর, ধর
আরাফ ভাইয়ার মুখখানা একেবারে দেখার মতো ছিলো।

সন্ধ্যা পর সব মেহমান উপস্থিত। মেহমান বলতে সবার ফ্রেন্ড রাই সব।নিদ্রা আপু তো অগ্রিমই সেজে নিচে নেমে গেছে।বুঝি না একটা শাড়ি দিয়ে পুরো শরীর ঢাকা যায় কিন্তু এই মেয়ে পেটসহ অর্ধেক শরীর দেখিয়ে কি মজা পাচ্ছে!!ভোর ভাইয়ার সাথে দাঁড়িয়ে দাত সব বের করে হাসতেছে।।কাজ সব আমরা করলাম আর এই ইনি ফ্রি তে মজা নিচ্ছে।আঁধার কে সকাল থেকেই কোথাও দেখতে পেলাম না।আপুর কাছে শুনেছি মাত্র বাহির থেকে এসে রুমে গেছেন।

আমি আজ ইচ্ছে করেই আপুদের সাথে বেশি সেজেছি।আপুদের কথা সাজলে নাকি মন ভালো থাকে। আলো আপু আর আমি সেইম মডেল এর গাউন পরেছি।শুধু কালার ভিন্ন।আমারটা হাল্কা ভায়োলেট কালার আর আপুরটা ব্লু কালার। রোজা আর কলি আপু ফোর পিজ পরেছে।আমি সাইড সিথি করে চুল গুলো সামনে এনে ছেড়ে দিয়েছি।আর একপাশে ওড়না নিলাম ব্যস সাজ কমপ্লিট।তখনই কলি আপু বলল

_কিরে ঐশী, কানের দুলের বক্স আনোনি?
তার কথা শুনে আমার ধ্যান ভাংলো। কিরে আমি তো দুলই পরি নি।
_না আপু,, আমার রুমে আছে। দাঁড়াও আমি এক দৌড়ে যাবো আর আসবো।
রুমে গেলাম।ওয়াশরুমের দরজা অফ। তারমানে রুমের মালিক ভিতরে। আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে দুলের বক্সটা তুলে নিলাম।তখন বক্সের সাথে লেগে সাইডে রাখা পুতির মালাটা ছিড়ে পড়ে গেল। ইশ, এতোসুন্দর মালা ছিড়ে গেল।পছন্দের ছিলো এটা। বক্সটা নিচে রেখে পুতিগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিলাম। কারণ এটা নতুন করে আবার তৈরি করা যাবে।
_ফ্লোরে এভাবে গড়াগড়ি করছো কেন?

গম্ভীর স্বর শুনে তাকালাম উপরে,উনি শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছেন। কি সিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে।চুল বেয়ে পানি পড়ছে।কেমন ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু নিদ্রা আপুর সাথে হেসে হেসে কথা বলার দৃশ্য মনে করেই মেজাজ বিগড়ে গেল আমার।সাহস দেখিয়ে বললাম ,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৮

_আমার ইচ্ছা।আমার গা আমি গড়াগড়ি খাচ্ছি তাতে আপনার আর আপনার সেই প্রেমিকার কি? দেখছেন না পুতি কুড়িয়ে উঠাচ্ছি। তারপরও বনমোরগ এর মতো প্যাকপ্যাক করতে ছেন কেন!আপনার প্রেমিকা নোরা ফাতেহি সেজে নিচে আপনার জন্য বসে আছে। যান গিয়ে আপনার প্রেমিকার কোলে উঠে প্যাকপ্যাক করুন।
আমার কথা শুনে সে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।আমি পাত্তাই দিলাম না।বক্সটা নিয়ে রুম ত্যাগ করলাম।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩০