অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৮

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৮
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_কেমন আছো,ধ্রুব? কত বছর পর তোমায় দেখলাম!
আঁধার কে ছেড়ে দিয়েই মেয়েটি কথাটা বলল।আঁধার কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি একটু শকের মধ্যে আছেন। আচ্ছা এই মেয়েটা তার সেই প্রেমিকা নয়তো! নাহলে এভাবে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু আধার কিছুই বললো না।ব্যাপার টার হিসেব মিলছে না।

_হোয়াট অ্যা প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ,নিদ্রা!এত বছর কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?
আঁধারের কথায় পুরোপুরি sure না হলেও কিছুটা কনফার্ম হয়েছি এই নিদ্রা নামক মেয়েটির সাথে তার অনেক আগে থেকেই পরিচয়। কিন্তু এটাই কি তার প্রেমিকা যার জন্য আমায় বিয়ের দিন কলে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছিলেন।আঁধারের প্রশ্ন শুনে নিদ্রা কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বললো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_ধ্রুব, আমি আসলে বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক ডিপ্রেসড ছিলাম।তাই কাওকে ইনফর্ম করা ছাড়াই মাকে নিয়ে ইউকে চলে গিয়েছি।তাই তোমাদের কাঊকে আর জানানো হলো না
_।আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। হয়তো এ-ই জন্যই তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েছি বার বার।

_I am so sorry, একচুয়ালি আমি বাবার হঠাৎ মারা যাওয়া টা আমার উপর ভীষণ প্রভাব ফেলে। ইউকে যাওয়ার সময় আমার ফোন অন্যান্য জিনিস পত্রের তেমন কোনো খোঁজ খবর ছিলো না।মায়ের অবস্থা টাও আমার মতোই ছিল তাই সারভেন্ট প্যাকিং যা করেছো তাই পেয়েছি। ফোনের খবর তাই আর নেওয়া হয়নি। ফোনের কারণে তোমাদের সবার নাম্বার আর জোগাড় করা হয়নি।মন খারাপ নিয়েই নিদ্রা নামক মেয়েটি বললো
এরপর নিদ্রার সাথে ড্রইং রুমে সবার আলোচনা চলতে থাকলো।আমি আলো আপুর সাথে তার রুমে চলে আসলাম। এখানে পড়াশোনা কিছুই হবে না।নিদ্রা মেয়েটাকে দেখার পর আমার পড়াশোনার মুডটাও চলে গেছে। ভালো লাগছে না কিছুই। মনটা কেমন বিষিয়ে আছে।

_সতীন কে দেখে মন খারাপ, পাটকাঠি?
আপুর হঠাৎ এহেন প্রশ্নে আমি চমকে উঠলাম।
_কি বলছো,আপু?সতীন টা কোথা থেকে আসলো!
_নিদ্রা আপুর কথা বলছি আমি,ভাইয়ার একসময় এর বেস্ট ফ্রেন্ড। মেয়ে ফ্রেন্ড দের মধ্যে নিদ্রা আপু ইই অনেক ক্লোজড ছিল ভাইয়ার।তাদের দেখে তো সবাই গালফ্রেন্ড -বয়ফ্রেন্ডই ভাবতো।নিদ্রা আপু তো প্রায় আমাদের বাসায় আসতো। আপু যদি UK না যেতো তাহলে তো বাবা তাদের বিয়েই দিয়ে দিতো।

তবে জানিস তো তুই ভাইয়ের বউ হয়েছিল এতে আমি ভীষণ খুশি। নিদ্রা আপু অনেক উগ্র তাই উনাকে কোনো কালেই আমার পছন্দ ছিল না।তুই ভাইকে টাইট দিয়ে রাখবি নয়তো ভাই তোর সতীনের পাল্লায় পড়ে যাবে।তাই আমি তোকে অগ্রিম সাবধান করে রাখলাম।
আপুর কথা শুনে আমার খারাপ মন টা আরও এক ধাপ বেশি খারাপ হয়ে গেছে।এই কত দিনে আমি তো তাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি।যদি আঁধারের ভালোবাসা নিদ্রা আপু হয় তাহলে আমার একপাক্ষিক ভালোবাসার কি হবে!

খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।নিদ্রা আপু আমার আর আঁধারের অপজিটের চেয়ারে বসেছে।খাবার মাঝেই মা নিদ্রা আপু কে প্রশ্ন করলেন
_তোমার কি বিডিতে কয়েক দিন থাকা পড়বে, নিদ্রা?
_হ্যাঁ, আন্টি। বাবার বিজনেস টা এতো দিন ম্যানেজার দেখাশোনা করছিলো। তাই ওটার কাগজ পত্র, হিসাব নিকাশ চেক করতে আর অনেক গুলো ডিল ফাইনাল করতে প্রায় সপ্তাহ খানিক লাগতে পারে।তাই কালকেই হোটেল এ শিফট হবে আমায়।

_যতদিন বিডিতে আছো,আমাদের বাসায় থাকো।হোটেল এ একা উঠতে হবে না।
_না না আন্টি এতোদিন এখানে থাকলে আপনাদের সমস্যা হবে।
_কারো কোনো সমস্যা হবে না,নিদ্রা। আমার কথা অমান্য করা আমার একদম পছন্দ নয়। তা তুমি নিশ্চয়ই জানো।তাই এ ব্যাপার এ আর কথা বাড়ানোর দরকার নেই।
মায়ের কথা শুনে আলো আপু আমাকে চিমটি কেটে বললো,

_তোমার শাশুড়ী মনে হয় তোমার সতীনকে পারমানেন্ট ভাবে রাখার ব্যবস্থা করছে।তোমার বর তো তোমার হাত থেকে গেলো, পাটকাঠি।
খাবার শেষে প্রায় সবাই চলে গেছে বেকার সমাজ বাদে, আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি। আমার জীবন টা শালা সমস্যার গোডাউন।
_পিচ্চি,, তোমার সতীন নিয়ে একদম টেনশন করো না।আমরা সবাই আছি।আগে যেরকম ঐ শাকচুন্নি কে জালাতাম এখন তার তার ডাবল ডোজ দিবো যাতে একদিনেই আউট হয়ে যায়।

নীল ভাইয়ার কথা শুনে আমি সহ বাকিরা হেসে দিলো ।উনি হাজার চিন্তা করা মানুষ কেও হাসাতে পারে।রোজা আপু বলল,
_নীলক্ষেত তুই পারতিও।সেই বার কি ডোজটাই না দিসোছ বেচারির এক সপ্তাহ পেট খারাপ ছিল।
_নিদ্রা আপুর ব্যাগে তেলাপোকা রাখার বুদ্ধিটাও সেই ছিল। আপু তো তা দেখে সারাবাড়ি লাফালাফি করছিলো।
উদয় আর রোজা আপুর কথায় আমি হতবাক। নিদ্রা আপুর সাথে এদের আবার কিসের এতো শত্রুতা। কি সাংঘাতিক!
_লাগবে না ভাইয়া।উনি মেহমান। বেশি দিন থাকবে না।বাদ দাও। পরে অভিশাপ লাগবে।

_হ্যাঁ, তুই তো এখন শাবানার রোল প্লে করবি।তোর জামাই দুই তিনটা বিয়ে করলেও তুই বলবি,,বাদ দাও,, কিছু করলে অভিশাপ লাগবে।
আলো আপুর কথার বিরোধিতা না করেই আমি খাবার টেবিল ত্যাগ করলাম।

রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে।আঁধার ডিভানে বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে।আমি খাটের ওপর বসে পড়ছিলাম।অনেক কষ্ট করে মন বসিয়েছি পড়ায়।তখনই নিদ্রা আপু রুমের দরজা ঠেলে ভিতর এ ঢুকলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
_তোমাদের ডিস্টার্ব করিনি তো,ঐশী?
কমাক্কোল বেডি,,গুরুতরও ডিস্টার্ব করে আবার বলতেসে,”তোমাদের ডিস্টার্ব করিনি তো”।ডং কত!আঁধারের কোনো হেলদোল নেই। সে তার কাজে ব্যস্ত। আরে ভাই,,ল্যাপটপ এ মুখ ডুবাই রাখছোস কেন! সামনে তাকা। দেখ তোর ডারলিং আসছে রুমে।ফুল দিয়া সাগতম জানা।
আমি মুখে পযাপ্ত পরিমাণ হাসি রেখে বললাম,

_একদমি না,আপু।
_পড়ছিলে বুঝি?
চোখেই দেখতেছোস পড়তেছি তারপরও আন্ধার মতোন জিজ্ঞেস করতেছোস কেন!অন্যের জামাই পটানোর ধান্দা(মনে মনে)
_হ্যাঁ আপু, আমার পরীক্ষা তো তাই।
_তোমার পড়ায় ডিস্টার্ব করে ফেললাম। আমি আসলে আঁধারের সাথে বাবার কোম্পানির ব্যাপার এ একটু কথা বলতে এসেছিলাম। if you don’t mind, আমি কি দশ মিনিট কথা বলতে পারি?
আহারে আমার সত্যবাদী মহিলা। এইটুকু বল না যে তোমার জামাইয়ের লগে পিরিত করতে আসছি।গা জ্বলে যাচ্ছে আমার এই মেয়ের নেকামি দেখে।তারপর ও নিজেকে সাভাবিক রেখে বললাম,

_একটু কেন বলবা পুরো কথাই সেরে যাও।তোমার ফ্রেন্ড,কথা বলতেই পারো।এখানে মাইন্ড করার কি আছে!দরজায় দাড়িয়ে আছো কেনো রুমে এসো।বসেই কথা বলো।
আমি বলতে দেরি নিদ্রা আপুর আলোচনা সভা শুরু করতে দেরি হলো না। রাত একটা বেজে চলেছে তারপরও তাদের সেই সভা বহমান। আঁধারও দিব্বি হেসে হেসেই কথা বলছে।আর আমার সামনে থাকলে তার হাসি চিপায় যায় গা।সারাক্ষণ চোখ দুই টারে রাক্ষসের মতো কইরে আমারে ভয় দেখায়,অসভ্য পুরুষমানুষ।

দরজার করাঘাত এ ঘুম ভেঙে গেলো। আলো আপুর গলা শুনতে পেলাম,
_ঐশী, তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো।আমার ক্লাস আছে তাই তোকেও আমার সাথে আগে যেতে হবে। বই নিয়ে নিস।ওখানে গিয়ে পড়তে পারবি।

আমি ঘুমঘুম চোখে উঠে বসার চেষ্টা করতেই কোমড়ে টান অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি আঁধার দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছেন তিনি।তাকে ভীষণ সিগ্ধ আর আদুরে লাগছে ।রাতের কথা মনে পড়তেই তার হাত জোর করেই সরিয়ে দিলাম।রাতে এদের আলোচনা শুনতে শুনতে কান পেকে গেছিলো আমার।পড়ার দিকে মন বসাতেই পারিনি। শেষমেস না পেরে মাথার উপর বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৭

ব্যাটা ওই নিদ্রার সাথে কি সুন্দর প্রেমালাপ করে এখন আমার কোমড় জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে, লুচু কোথাকার।তার হাত জোরেই সরিয়ে দিয়েছি ফলে সে পিটপিট করে আমার দিয়ে তাকায়
_কি সমস্যা তোমার? সকাল সকাল আমার হাতের ওপর এভাবে অত্যাচার চালাচ্ছো কেন?দেখছো না ঘুমাচ্ছি!

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৯