অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৭

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৭
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_ছাড়ুন আমাকে,একদম ছো*বেন না।আর কি যেন বলেছেন! আমার ছেলেদের সাথে হাসাহাসি করতে ভালো লাগে!তাহলে শুনুন,হ্যাঁ, আমার এই কাজটা ভীষণ ভালো লাগে।আমার মুখ। আমার ইচ্ছা একশো এক বার হাসবো। দাত বত্রিশটা বের করে হাসবো।

আপনার তাতে কি? আজাইরা প্যা*চাল করতে আসছে।সরুন, আমাকে ওই রুমে যেতে দিন
একথা বলেই আঁধারের দিকে তাকাতেই জমে গেলাম আমি।নাকের আগা প্রচন্ড লাল হয়ে আছে তার,কপালের রগ গুলো ফুলে আছে।গলার শিরার সাথে কম্পমান কণ্ঠনালী সবাটাই পরোক্ষ করে তাকালাম তার ক্ষুব্ধ অগ্নি*শর্মা চেহারার দিকে।ঢোক গিলে আমতা আমতা করে আরও কিছু বললো তার আগেই সে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_তোমার ইচ্ছা তাই তো??
_হ্যাঁ, আমার নয়তো আর কার হবে।
আমতাআমতা করে বললাম। আমার কথা শুনে সে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে আসলেন। তার আগানো মোটেও সুবিধার লাগছিলো না আমার।আমি পিছাতে পিছাতে একদম দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলাম।উনি আমার খুব নিকটে এসেই দাড়ালেন।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আমার গলা থেকে ওড়না টেনে খুলে নিলেন। তার এই কাজে আমি হতবিহ্বল।দু হাতেই নিজেকে কোনো রকম ঢাকার চেষ্টা করে বললাম

_এইগুলা কোন ধরনের অস*ভ্যতামি ? ওড়না দিন।
আমার কথা যেন তার কানেই গেলো না।ওড়না হাতে পেচিয়ে বললেন,
_ওই রুমে যাবা না? ওড়না ছাড়াই এভাবে যাও।
একথা বলে আমার ওড়না কাবার্ডে রেখে তা লক করে দিলেন।
_আশ্চর্য, আপনি আমার ওড়না ওখানে রেখেছেন কেনো? আপনার সমস্যা কোথায়? আমার জিনিস নিয়ে টানাটানি করছেন কেনো?

_বউ আমার,, ইচ্ছেও আমার আর বউয়ের ওড়না টাও আমার।
তার ভাবলে*শহীন উত্তর শুনে বুঝতে পারলাম আজ ওই রুমে আর আমার যাওয়া হবে না।এক রাশ মেজাজ খারাপ নিয়ে বারান্দায় গেলাম শুকাতে দেয়া কাপড় আনতে। এখন এই টি শার্ট আর প্লাজো টাই পরতে হবে।ফ্রেশ হয়ে দেখি রুমের লাইট নিভানো।সোফার উপর টেবিল উঠানো নেই।আমি নিশ্চিন্তে আজ সোফায় ঘুমাতে পারবো। এতোদিন এই হনুমানটা ইচ্ছে করে সোফা আটক করে রাখতো তাই অনিচ্ছায় বেডে ঘুমাতে হতো আমায়।আবছা আলোয় নিজের বালিশখানা চোখে পড়লো। সেটি নিতেই আঁধার আমায় টেনে তার বুকের উপর ফেলে জরিয়ে ধরলো,

_আরে,এভাবে নিজের উপর ফেলেছেন কেনো?দেখি ছাড়ুন আমাকে।
_ছাড়ার জন্য ধরি নি। চুপচাপ ঘুমাও।
তার কথা আমার অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
_দম আটকে আসছে আমার এভাবে কিভাবে ঘুমাবো।ঘুম আসবে না আমার।প্লিজ ছা*ড়ুন
আমার মাথাটা এক হাতে তার বুকে জড়িয়ে রেখে বললেন

_সোফায় কথা মাথায় আনার আগে এটা হাজার বার ভাবা উচিত ছিলো। এটা তোমার শা*স্তি। সারারাত এভাবেই ঘুমাতে হবে তোমায়।বেশি পক পক করে আমার রা*গ বাড়িও না নয়তো ব্যাপার টা তোমার জন্যই খারাপ হবে।আই থিংক তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কিসের কথা বলছি।so,ঘুমাও।

তার ঠান্ডা কথার হুমকি তে নড়াচড়া বন্ধ করে দিলাম আমি।ডিপ ডিপ তার হৃদস্পন্দনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আমি যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছি। কি হচ্ছে! কেন হচ্ছে!এসব কিছুই জানার আগ্রহ পাচ্ছি না।সময় টা কে অদ্ভুত ভালো লাগছে। তার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে।যা তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন আমার মাঝে।এই অনুভূতির মায়াজাল থেকে একদম বেরোতে ইচ্ছে করছে না।এই মানুষটাকে বোধহয় আমি ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেললাম তাহলে।

এভাবেই কেটেছে কিছু দিন। আমার আর আঁধারের সম্পর্ক একেবারেই বন্ধুর মতো। তবে সে রেগে গেলে অন্য ব্যাপার। আলো আপু আর ভোর ভাইয়ার সম্পর্কটা অনেক ভালোবাসা ময়।ভাইয়া আপুকে ভীষণ ভালোবাসেন। প্রতিদিন কোনো না কোনো বাহানায় বাসায় চলে আসেন আপুর সাথে সময় কাটাতে। তাদের খুনসুটি দেখতে ভীষণ ভালো লাগে।
আপুর ফাইনাল পরীক্ষা আমার ইনকোস পরীক্ষার কিছুদিন পর। তাই আপাতত সে চিন্তা মুক্ত। কিন্তু আমি এক মহা ফ্যাসাদে আছি।বিয়ের ঝামেলার কারণে কিছুই পড়া হয়নি।অথচ কোনো প্রিপারেশন ছাড়াই পরীক্ষা দিতে এলাম।ডিপার্টমেন্টে ঢুকতেই মিম আর বেলার সাথে দেখা,

__কিরে বিশ্বসুন্দরী,, এত দিন পর কোন চিপা থেইকা বাহির হইসোস?
_আরে ভাই,তোরা তো জানোস না অনেক ঝামেলা শেষ কইরে পরীক্ষা দিতে আসছি।এখন সর রুম খুজতে দে আমারে,পরে বলবো,, সর
আমার তাড়া দেখে বেলা বললো,
_এতো প্যারা নিচ্ছোস কেন!তোর রুম ৩০৪ এ পড়ছে।প্রথম সারির সেকেন্ড বেঞ্চে সিট। আমরা খুজে রাখছি তুই মহারানী ভিক্টোরিয়ার মতো বইসা পরীক্ষা দিস।এবার বল,এতদিন হাওয়া হইছিলি কেন??
আমি দুই শয়*তান কোম্পানির ম্যানেজার রে আপুর বিয়ের কথা শুনালাম।

_এদের বিয়ের জন্য আমি কোনো প্রিপারেশন ছাড়াই পরীক্ষা দিতে আসছি,বেলাভূমি। আমি হতাশার সুরে বললাম
_তাহলে এই জন্যই প্রিন্সিপাল স্যার কলেজ এ এতদিনের আসে নাই।কিন্তু আলো আপুর বয়ফ্রেন্ড আর প্রিন্সিপাল স্যার ছেলে তো আলাদা! আপুর কি বিয়ে ভেঙে গেছিলো?
_রবিন ফ্রড ছিলো। চিট করছে আপুর সাথে।তাই তাদের ঠিক হওয়া বিয়ে আপু নিজেই ভেঙে দিসে।
অতঃপর ওদের পুরো কাহিনি এ টু জেড বলে এক্সাম হলে গেলাম।

সন্ধ্যা পরে,,নাস্তা করার পর যে যার যার কাজে ব্যস্ত। বাবা বাসায় নেই।কোম্পানির নতুন ডিল করতে তাকে দেশের বাইরে যেতে হয়েছে।
নীল ভাইয়া,কলি, রোজা আপু উদয় আর আরাফ ভাইয়কে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে সীমের বিচির খোসা ছাড়াচ্ছে।তারা বেকার সমাজ তাই মেঝো মা তাদের এই কাজ সঁপে দিয়েছেন ।মা আর মেঝো মা আমার পাশেই বসে ফোনে খবর দেখছেন।সন্ধ্যার পর সবসময় ড্রইং রুমে টিভি তে খবর দেখেন কিন্তু আমি পড়ছিলাম তাই আজ ফোনে দেখছেন।

মেঝো মা ছোট চাচীর বিপরীত,, একদম আমার শাশুড়ী মায়ের মতো।এই কয়েক দিন আমার তার সাথে খুব গভীর সখ্যতা গড়ে উঠেছে। উনি প্রতিদিন ভাত মেখে তার প্লেট থেকেই আমাকে খাইয়ে দেয়। উদয় আর আরাফ ভাইয়া এই নিয়ে আ*ক্ষেপ করলেও মেঝো মার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমার শাশুড়ী ও এই নিয়ে কিছু বলে না বরং তাকে খুশি ই মনে হয়।মাঝেমধ্যে আমার তাদের নিজের আপন মা মনে হয়।আল্লাহ আমাকে আমার মায়ের অবহেলা পরবর্তীতে এই দুজন মা উপহার দিয়েছেন।

আমার কালকে দুই সাব্জেক্ট একসাথে পরীক্ষা। আমি আর আপু ড্রইং রুমকে পুরাই বইয়ের গোডাউন বানাই ফেলছি।পুরো দমে পড়াশোনা করছি।যাতে কোনো রকম পাশ নাম্বার তুলতে পারি।এখানে খারাপ করলে ফাইনাল দিতে দিবে না। তাই জীবন দিয়েও পাশ নাম্বার তুলতে হবে।

পড়ার মনোযোগ এর বাশ স্বরুপ দরজার কলিং বেল টা এমন ভাবে বাজছে,মনে হচ্ছে,এটা প্রবেশ এর দরজা না টয়লেট এর দরজা ,বাহিরে থাকা ব্যক্তির ইমারজেন্সিতে হাগু পাইসে।বই হাতে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলাম দরজা খুলতে।আরে ভাই আর বাজাইছ না,,দারা,ভিতরে থাকা মানুষ গুলো দরজা খুলতে পায়ে হাইটে আসবে,,প্লেনে উড়ে না।এভাবে কলিং বেলটার প্রান নিস না।
দরজা খুলে একজন সাদা বান্দরনীকে দেখবো ভাবতেই পারিনি।দেখিনি এই মেয়েকে আগে কখনো। আপুর বিয়েতেও আসে নি।মেয়ের ড্রেস-আপ একদম ভালো লাগে নি আমার।এর থেকে কলি আপু ভালো টপস পরে অন্তত গা ঢাকা থাকে।

_কে এসেছে,,ঐশী?
মায়ের কথা শুনে আমি সেই মেয়েটিকে আসতে বলে ড্রইং রুমে গিয়ে দাড়ালাম। মেয়েটি রুমে ড্রইং রুমে এসে মা কে সালাম জানালো।তাদের কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম মেয়েটা সবার পরিচিত। ততক্ষণে বেকার সমাজ ও ড্রইং রুমে উপস্থিত হলো।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৬

আঁধার সিড়ি দিয়ে নামতেই সাদা বান্দরনীটা তাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি সহ বাকিরা কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি। এই দৃশ্য কিছুটা কাটার মতো আমার গায়ে বিধলো।হৃদয়ের পী*ড়ন ক্ষানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন যেন মেয়েটাকে এই মুহূর্তে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে ।কে সে!কি হয় আঁধারের! আর এভাবে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো কেন?

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৮