অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৬

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৬
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_বলুন, কেন বিয়ে করেছেন আমায়?,জবাব দিন।
আলোর কথায় ভোর মুচকি হেসে তাকে আরও নিকটে টেনে নিলো।আলো কিছুটা ভড়কে গেল এমন হাসি দেখে। নড়াচড়া করলো ছাড়া পাওয়ার কিন্তু সফল হল না।ভোর আলোর চোখে চোখ রেখেই বললো,

_একপলক দেখায় ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায়।দেশের বাইরে থেকে ফেরার দু দিনের মাঝেই কেউ এভাবে তার ভুবন ভুলানো হাসির দ্বারা আমার মন চুরি করে ফেলবে বুঝতেই পারিনি।তার একখানা সূক্ষ্ম চোখের দৃষ্টিতেও হৃদকম্পন জোরালো করে দিয়েছিল আমার।তার সেই কন্ঠস্বর শুনার এক অদম্য ইচ্ছে জেগেছিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাই তো সেদিন ই প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে তার নাম্বার নিয়ে ছিলাম।সেই রাত থেকেই তাকে জালাতন করতে লাগলাম।কিন্তু সেদিন ভাসিটির সামনে তোমায় রবিন এর সাথে হেসে কথা বলতে দেখে মে*জাজ বিগ*ড়ে গিয়েছিল তাই স্টোর রুমে নিয়ে রাগ ঝেড়েছিলাম। রবিন তোমার উডবি যেনে নিজের উপর ই রাগ হচ্ছিলো। ভাবতেই খারাপ লাগছিলো যে আমি অন্যের উডবি কে ভালোবেসেছি।তবুও আমি আমার ভালোবাসাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি।ভেবেছিলাম তোমায় তুলে নিয়ে বিয়ে করবো কিন্তু রবিন আমার কাজটাকে এতটা সহজ করে দিবে ভাবতেই পারিনি।

অতঃপর তোমার সেই কুলাঙ্গা উডবির ব্যান্ড বাজালাম। তারপর নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের করে নিলাম।
কিন্তু জানো তো,,এখনো আমার হৃদয়টা বিষাদগ্রস্ত। তোমার ভাইয়ের ভিলেনি শর্ত পরীক্ষার পর তোমায় শশুর বাড়ি যেতে দেবে।তাই তো তোমায় পেয়েও এখনো অনেক দূরত্ব। শুনেছি,, দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়,, এই কথার ভিত্তিতে নাহয় তোমায় ছাড়া আরো ওও কয়েক দিবস পার করবো।ভালোবাসার মানুষ টাকে পেয়েছি এই আনন্দে আমি এই কয়েক দিবস অনায়াসে পার করে দিবো।

আলো অবাক দৃষ্টিতে ভোরের কথা শুনছে।
আসলে সঠিক মানুষের সাথে আমাদের একটু দেরিতেই পরিচয় হয়।
আলোর কেনো যেন ভোরের প্রত্যেক টা কথা ভীষণ ভাবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। তবে তার মন দোটানায় পড়ে আছে। যদি এবার ওও তার সাথে প্রতারণা হয়।এই মানুষটাও যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন!
ভোর আলোর ভাবনার মাঝেই ফোড়ন কেটে বলল

_কিছু কিছু প্রতারক দের কারনে মানুষ সত্যিকার ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করে।আমি তোমার বিশ্বাস কে ঠুনকো হতে দেব না,,বউ তাই আমাকে ওই রবিন এর সাথে তুলনা করা বন্ধ করো,,নয়তো পিটাবো তোমাকে।
শেষের কথা টা শুনে আলো ভোরের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ভোর তার ওষ্ঠোদয় আলোর কপালে ছোয়ালো।পরম সুখের আবেশে চোখ বুজে ফেলল আলো।কেমন যেন শান্তি অনুভব করলো সে।হয়তো ব্যক্তিগত পুরুষের স্পর্শ টাই এমন

_খেয়াল রেখো নিজের।তোমার কাছে পরীক্ষা পর্যন্ত সময় আছে। নিজেকে ওইসব ফাউল চিন্তাধারা থেকে বের করো।আমার প্রেমময় অত্যাচার সহ্য করার প্রিপারেশন নেও।আল্লাহ হাফিজ।
একথা বলে ভোর তাৎক্ষনিকভাবে আলোর রুম ত্যাগ করলো। আলো ভোরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। সে তো তার জীবনে একটা বিশ্বাস যোগ্য মানুষকে খুজছিলো।তবে কি এই তার বিশ্বাসযোগ্য মানুষ।

_পিচ্চি তুমি ধ্রুব ভাইয়ের বউ আগে বলো নি কেন??আমি আরও তোমাকে ভাইয়ের বোন বানিয়ে দিচ্ছিলাম।
আড্ডার মাঝে উদয় ভাইয়া কথায় সবাই আমার দিকে তাকালো।
__আসলে ভাইয়া, বলার সুযোগই হয় নি
আমি আমতা আমতা করে বললাম
_তুই ব্যাটা বিয়ের দিন খুলনা থাকবি।আর ঐশী তোর কানেকানে গিয়ে বলে আসবে সে ভাইয়ে বউ।বেয়াদ্দপ
রোজা আপুর কথায় তাদের কাজিনদের মধ্যে হাসির রোল পরে গেল।

_আচ্ছা ভাবী,তোমার কোনো ছোট বোন নেই?না মানে,,কতো দিন আর সিংগেল থাকবো বলো।আমার তো তোমায় বেশ ভালো লাগলো। তোমার বোন নিশ্চয়ই তোমার মতই মিষ্টি হবে,, মুখে এক গাল হাসি রেখেই আরাফ ভাইয়া বললেন
__না,, ভাইয়া। তবে বড় বোন আছে।আপনার থেকে সিনিয়র হবে।আপনি চাইলে আপুর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আমার কথা শুনে সবাই আরেক দফা হাসাহাসি করলো।এভাবেই সবার আড্ডা বরযাত্রী যাওয়ার অনেক সময় পর পর্যন্ত চললো। শেষে আঁধারের ধমকে সবাই যার যার রুমে ঘুমাতে গেলো।আমি আর রোজা আপু রান্না ঘরে আছি।

__আরে ঐশী,, আর কয়টা মিষ্টি খাবা!পেট খারাপ হবে তো!
__এইতো আপু এটাই লাস্ট।এরপরই তোমাদের সাথে ঘুমাতে যাবো।
এগারো নাম্বার মিষ্টি টা খেতে খেতেই বললাম আমি।
__ভাই কিছু বলবেনা?
_না, উনি আজ যা খেটেছে তাতে এতক্ষণে এক ঘুম হয়ে গেছে তার।আমি রুমে গেলে শুধু শুধু ডিস্টার্ব হবে।তাছাড়া তোমরা রুমে এখন অনেক মজা করবা।আমি কিছুতেই তা মিস করতে চাই না।
আপু দুইটা কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আমার হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

_চলো বোন,,নয়তো পুরো ফ্রিজের মিষ্টির প্যাকেট এক রাতেই ফিনিস করে দেবে তুমি।
সিড়ি পেরুতেই আপুর রুম থেকে সবার কথা শুনতে পেলাম। তারমানে সব ছেলেরা সহ সব কাজিন রাই আছে আপুর রুমে। যাক তাহলে আড্ডা টা সেই হবে।

__ঐশী,, তোমার ভাইয়ের রুমে যাওয়া উচিত। নয়তো ভাইয়া তোমাকে খুজতে খুজতে আমাদের রুমে চলে আসবে। পরে তোমার সাথে আমাদের ও ধোলাই দিবে।
আপুর কথা শুনে আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
__তুমি হুদাই প্যারা নিচ্ছো।তোমার ভাই কোন দেশের মিনিস্টার যে এতো ডরাও।আরে আমি আছি না।আমি সবটাই সাসামমলে
আর বলতে পারলাম না তার আগেই চিরচেনা সেই শক্তপোক্ত হাত আমায় রুমে টেনে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমি কিংকতব্যবিমূড়। ঘটনা টা এতোটাই দ্রুত ঘটলো যে কিছু বুঝে উঠতেই পারি নি।আঁধার আমায় দেয়ালে চেপে ধরেই বললেন,

_সমস্যা কি তোমার? তোমায় রুমে ডেকেছি কানে যায়নি? আবার ওই রুমে কেনো যাচ্ছিলে?
তার সারামুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট। আমার আঁখিযুগল আটকে গেলো তার উন্মুক্ত বুকে বিন্দু বিন্দু পানি কণায়।উনি হয়তো মাত্রই শাওয়ার নিয়েছেন। একদম স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে।কিন্তু তার চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। এখন আবার কেন রাগলো আল্লাহ যানে।উনি মনে শুধু রাগ করার বাহানাতেই থাকে।তাই আমতাআমতা করে বললাম,
__আপুদের রুমে ঘুমাবো আমি।সবাই ওখানে মজা করছে। আমাকে যেতে দিন।ছাড়ুন

আমার এই কথাটা যেন তার রাগের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে।হাতের বাধন শক্ত করে চোখ ছোট তাকিয়ে বললেন,
_কোথাও যাবে না তুমি।এখানেই থাকবা।রুম থেকে এক পা বেরুলে বারান্দা থেকে ছুড়ে ফেলে দিবো একদম।
তার কথায় আমার রাগ লাগলো।ওখানে সবাই মজা করছে আর আমাকে এই জল্লাদ এর কাছে থাকতে হবে,, এটা কেমন কথা।
তাই বিপরীতে বললাম,
_আমি যাবো।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৫

_কেন?ছেলেদের সাথে কথা বলতে বুঝি খুব ভালো লাগে।তাইতো তখন কি হেসে হেসেই কথা না কথা বলছিলে!ডানা গজিয়েছে না তোমার? ডানা কিভাবে ছাটানো যায় তা এই ডাক্তার খুব ভালো করেই যানে।
এবার যেন ভীষণই রাগ লাগলো আমার। এক ধাক্কায় তাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলাম। কেমন নিচু মন-মানসিকতা তার!আমি আমার সব দেবর আর ননদ এর সাথেই তো কথা বলছিলাম। তার এতো পুড়তেছে কেন তা তো বুঝতেসি না। তাই কপাট রাগ নিয়েই বললাম,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৭