অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৫

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৫
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

আচ্ছা” প্রেমিকা” হয়েছো কখনো, তুমি?একেবারে সত্যিকারের প্রেমিকা?প্রেম প্রেম গন্ধ পেয়েছো কখনো?অনুভূতির অ*ত্যাচার সহ্য করেছো? ছোট্ট কিশোরী হৃদয় নিয়ে কখনো কারো জন্য ছট*ফট করেছ?হয়তো না।কি করেই বা তুমি প্রেমিকা হবে,বলো?মায়াময় মানুবীদের যে প্রেম নি*ষিদ্ধ। সে তো একান্তই তার ব্যক্তিগত পুরুষের।
তবে আজ না তোমার এই ব্যক্তিগত পুরুষের খুব করে প্রেমিক পুরুষ হওয়ার সাধ জেগেছে। একদম সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষ। সামনে দাড়িয়ে থাকা সেই প্রেয়সীর নে*শায় মক্ত হওয়া প্রেমিক।তার উদাস দৃষ্টি, দীর্ঘ এলো চুল হাজার খানিক বাহানায় এই প্রেমিক কে ডাকছে।অযথাই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে তার সেই কাজলরাঙা চোখে। তার সেই বেখেয়ালি চাহনিতে। আচ্ছা তুমিও কি এই অনুভূতির অ*ত্যাচারে ব্যকুল হয়েছো!

আমি চুরি পড়ছিলাম।পিঠে হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। আয়নায় পিছনে আঁধারের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলাম। তার স্পর্শ আমার হৃদস্পন্দন কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।তিনি খুব মনযোগ সহকারে পিছনের ফিতা লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর আয়নায় দৃষ্টি মিলিয়ে বললেন,
_now perfect,,মিষ্টি কালারটা তোমায় একটু বেশিই মানিয়েছে।একদম মিষ্টি মিষ্টি লাগছে
তার প্রশংসা আমার অ*স্বস্তি ভাবটা শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো রকম তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে দরজার দিকে যেতেই শুনতে পেলাম,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_নিজের এই রুপ কি বাহির বাসীদের ও দেখাতে চাইছো?নাকি ওরনা ছাড়াই লেহেঙ্গা পড়ার সাধ জেগেছে!
আমি যেন এবার হুশে ফিরলাম। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই হতবাক হয়ে গেলাম। তড়িঘড়ি বিছানার উপর থেকে ওড়না টা গায়ে জড়ালাম। এতোক্ষন আমি উনার সামনে ওড়না ছাড়া ছিলাম ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।
তাড়াতাড়ি করে তার সামনে থেকে যেতেই লেহেঙ্গাতে পা বেজে পড়তেই তিনি ধরে ফেললেন। কোমড় জড়িয়ে একেবারে নিজের কাছে টেনে নিলেন। তার এহেন কান্ডে আমি হকচকিয়ে গেলাম। এক অদ্ভুত জড়তা জেকে ধরলো আমাকে।তার এতো নৈকট্য আমার হৃদকম্পন শতভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে।মুখে জড়তা ভাব নিয়েই বললাম,

__ছাড়ুন, এখন ঠিক আছি,,, আর পরবো না
সে আমার কথায় বাকা হাসলো। তার এই হাসি মোটেও আমার বোধগম্য হলো না।অতঃপর আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
_ছেড়েই তো দিয়েছি।তুমিই তো বারংবার তোমায় কাছে টানার ইঙ্গিত দিচ্ছো।তাই তো এখন আর তোমায় ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।এখন বলো আমার কি করা উচিত!
এমন সময় রোজা আপু আর নীল ভাইয়ার গলা শুনতে পেলাম,

_আমরা কিন্তু কিছু দেখছি না, চোখে কালা চশমা পড়ে আছি।
তাদের কথা শুনে আঁধার বজ্জাত ব্যাটা আমাকে ছেড়ে দিসে।হনুমান আর একটু আগে ছাড়তে পারলি না! এরা এখন আমাকে শুধু শুধুই লজ্জা দিবে।আঁধার চাবি টা নিয়ে দরজায় গিয়ে বললেন,
_চোখের ডাক্তার দেখা। হুদাই কালা চশমা পড়ে নিজেদের জোকার বানানোর কোনো মানেই হয় না।

আপুর আর ভোর ভাইয়ার কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।বরপক্ষের আত্মীয়রা রাতের খাবার এর পর বর সহ বিদায় নিবেন হবেন। আমি ভেবেছিলাম বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে, হয়তো ভোর ভাইয়া আজ রাত এখানে আপুর সাথে থাকবেন কিন্তু ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়েছে তাই ভোর ভাইয়াও নাকি থাকবেন না। রাতের খাবার এর পর চলে যাবেন।আপুর পরীক্ষার এক মাস পর বড় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করে আপুকে তুলে নিবেন তারা।
আমি আপুকে রুমে বসিয়ে আপুর জন্য পানি আনতে নিচে যাচ্ছিলাম

_ছোট্ট আপু,তুমিও এসেছো আলো আপুর বিয়েতে?
পরিচিত কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম, তাকিয়ে দেখি উদয় ভাইয়া
_ভাইয়া আমি তো এখানেই থাকি। আপনি কখন এলেন?
_এইতো বিকেলেই আসলাম। আসলে খুলনা থেকে এখানে আসাটা অনেক ঝামেলা।
_আপনি না চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এ ইন্টার্নিশীপ এ আছেন তাহলে খুলনা থাকেন কেনো?
আমি কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়াকে।

_আসলে আমরা এ বাড়ি ছেড়ে একটা কারনে খুলনায় শীফট হয়েছিলাম। আমি আর আরাফ এখানেই মেডিকেলে চান্স হওয়ায় আবার চট্টগ্রাম এ থাকা আর কি।তুমি কি ধ্রুব ভাইয়ার মামাতো বোন টা নাকি?
__না,,আম আমি তো
_ও আমার বউ।
আঁধারের কথায় আমি সামনে তাকালাম। উদয় ভাইয়া তো টাসকি খেয়ে গেছেন। আধার একজন মধ্য বয়সী নারীর কাধে হাত রেখে দাড়িয়ে আছেন। সেই নারীকে আমায় দেখিয়ে বললেন,,

_মেঝো মা এই হচ্ছে তোমার ধ্রুবের বউ।তোমাদের এতো করে বলার পরোও তোমরা বিয়েতে আসো নি।
মেঝ মা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি তাকে সালাম দিলাম।তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার মুখ দু হাতে ধরে একদৃষ্টিতেবেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে বললেন,
_ধ্রুব,, ওকে কোথায় পেয়েছো? ওর মা-বাবাকে আমরা থাকতে একদিন ডেকো। আলাপ করবো।
উনার কথা শুনে আমি ঘাব*ড়ে গেলাম। আম্মু -আব্বুকে উনি কি জন্য খুজছেন।
খাবার শেষে এবার বর দের যাবার বেলা।তাই ভোর ভাইয়া আর আলো আপুকে তার রুমে কিছু সময় আলাদা কথা বলার জন্য দেওয়া হয়েছে। আর প্রিন্সিপাল স্যার আর তার ওয়াইফ নিচে মা,বাবা আর বাকিদের সাথে কথা বলছেন।

আলো বারান্দায় ছিলো। ভোরের উপস্থিতি টের পেতেই নড়েচড়ে দাঁড়ায়।
_বলেছিলাম না বউ,,তোমায় খুব তাড়াতাড়িই নিজের কাছে নিয়ে আসবো। অর্ধেক ব্যবস্থা এখন করলাম আর বাকিটা তোমার এক্সাম এর পর করবো।
ভোরের কথা শুনে আলো অবাকের চূড়ান্ত পযার্য়ে। সেদিন অফিসের পর এই প্রথম ভোর আবার তার সাথে কথা বলেছে।এতদিন বিয়ের কথা চললেও ভোর আলোর সাথে আলাদা করে কোনো কথা বলে নি।ভোরের এমন কথায় আলোর কিছু একটা সন্দেহ হলো।ভোরের দিকে ফিরে ডেবডেবে চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

_মানে,,আপনি কখন বলেছেন!আপনার সাথে তো আমার একবারই আপনার অফিসে দেখা হয়েছিল। তখন তো,,
আলোকে আর বলতে না দিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নেয় ভোর।এনে আলো ঘা*বড়ে যায়।হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক এর তুলনায় দ্বিগুণ পর্যায়ে চলছে।একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরেছে তাকে।যার কারণে মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে।ভোর আলোর লজ্জা রাঙা মুখ দেখে মুচকি হেসে বলল
_সেদিন, ভাসিটির স্টোর রুমের কথা ভুলে গেছো বউপাখি!

আলোর কাছে এবার সবটা বিস্ময়কর লাগছে।সে ভোরের চোখে চোখ রেখে বললো
_তার মানে ঐদিনের বদমাইশ লোকটা আপনিই ছিলেন!
আবার ভোর আলোকে আরও কাছে টেনে নিয়ে বললো,
_হ্যাঁ, শুধু ওইদিনের নয়,তোমায় মেসেজ রোজ ডি*স্টার্ব করা তারপর রবিনের ভিডিও ক্লিপ গুলো তোমার কাছে সেন্ড করা মানুষটাও আমি ছিলাম।
আলো যেন অবাক হওয়া ওও ভুলে গেছে।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৪

এই মানুষটা কে সে আগে তো কখনো দেখে নি। তাহলে সে তার নাম্বার টা কীভাবে পাবে!আর তাকেই বা কেন মেসেজ করতো!তার সাথে রবিনের রিলেশন ছিলো জানার পরো ও কেন তাকে বিয়ে করেছে।রবিনের ভিডিও ফুটেজ গুলোই বা তার কাছে কেনো পাঠিয়েছে! এসব চিন্তা যেন মাথায় জটলা পাকিয়ে ফেলেছে।সে এতটাই বেখেয়ালি যে ভোরের এতো নিকটে থেকেও তার হুস নেই।তার মন এখন কৌতূহলে ভরপুর হয়ে আছে তাই সে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
_কিন্তু আপনি এসব কেনো করেছেন?সবকিছু জানার পরোও আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়েই বা কেনো করেছেন??

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২৬