মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ১২

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ১২
লেখিকাঃ দিশা মনি

ইভানা ভ্রু পাকিয়ে তাকিয়ে আছে ফাহিমের দিকে। ফাহিম মুখ টিপে মিটিমিটি হাসছে শুধু। ইভানা আর থাকতে না পেরে বলেই দিলো,
‘কেমন ছেলে আপনি? বিয়ের আগে গার্লফ্রেন্ড ছিল সেই কথা আবার বড় মুখ করে নিজের বউয়ের সামনে বলছেন!’
‘কেন তুমি কি জেলাস? তোমার মেবি বয়ফ্রেন্ড ছিল না, আই গেস।’

‘কে বলেছে ছিলনা? আমার ক্লাস সেভেনে একটা, এইটে দুইটা, নাইনে তিনটা এবং টেনে,,,,’
‘থাক আর বলতে হবে না। এখন তোমার ম্যাট্রিক ফেল করার কারণটা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। যার এতগুলো বয়ফ্রেন্ড সে কিভাবে ভালো রেজাল্ট করবে? এতগুলো বয়ফ্রেন্ড সামলে তো পড়ার সময়ই পাবে না।’
ইভানা কিছু বলতে যাবে এমন সময় তোহা রুমে চলে এলো। এসেই ফাহিম ও ইভানাকে একসাথে দেখে বেশ ইতস্তত বোধ করল। বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘সরি, মনে হয় ডিস্টার্ব করলাম। ক্যারি অন।’
ইভানা সাথে সাথেই বলে উঠল,
‘কোন ডিস্টার্ব হইনি আপাই। তুই আয়। আর এই যে মিস্টার ফাহিম আপনি প্লিজ বাইরে যান। আমার আপাইয়ের সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।’
ফাহিম বিরক্ত হয় ইভানার এমন কথায়। কিছুটা অপমানিত বোধ করে। তবে সেই বিরক্তিটা প্রকাশ না করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

‘ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তাহলে।’
ফাহিম রুম থেকে বেরোতেই ইভানা দ্রুত গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। তোহা ভ্রু কুচকে তাকায় ইভানার দিকে। বলে,
‘দরজাটা লাগিয়ে দিলি কেন?’
‘তোর সাথে খুব খুব খুব জরুরি কথা আছে। তাই আরকি।’
‘হুম, কি বলবি বল।’
‘আচ্ছা আপাই তুই কি প্রেম করেছিস কখনো?’
‘…’
‘কি হলো চুপ করে আছিস কেন বল।’

‘এটা আবার কেমন প্রশ্ন? আমাকে দেখে কি তোর মনে হয় আমার এসব ভোগাস কাজে ওয়েস্ট করার মতো টাইম আছে? মেডিকেল স্টুডেন্ট হলে বুঝতি, মেডিকেল স্টুডেন্টদের প্রেম করা একপ্রকার নিষিদ্ধ। নিজের জন্যই টাইম পাওয়া যায়না সেখানে আবার নাকি প্রেম! বিলাসিতা।’
‘উফ,,তোর কাছে একটা সামান্য কথা জানতে চাইলাম আর তুই পুরো রচনা শুনিয়ে দিলি। যাইহোক তোর কি আজকালকার যুগের প্রেম সম্পর্কে কোন আইডিয়া আছে?’

‘তা তো আছে। আমার অনেক বান্ধবীদের তো প্রেম করতে দেখেছি।’
‘আচ্ছা রিলেশনে থাকলে মানুষ কি কি করে?’
‘রিলেশন করলে একসাথে ঘুরতে যায়, রেস্টুরেন্টে খেতে যায়, কোন পার্কে যায় আর,,,’
ইভানা উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘আর কি?’

‘আর কিস টিস করে,,কিন্তু তুই এসব জানতে চাইছিস কেন?’
তোহার কথা শুনে ইভানা নিজের কল্পনায় হারিয়ে যায়। সে কল্পনা করে ফাহিম অন্য একটি মেয়েকে কিস করছে। মানসপটে দৃশ্যটা ভেসে উঠতেই ইভানা চেচিয়ে বলে ওঠে,
‘না,আআআ এটা হতে পারে না।’
‘কি হতে পারে না?’
ইভানা কিছু না বলে দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। জানিনা এখন কি করবে সে!

হরেক রকমের লাইটিং, ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো বাড়ি। ফাহিম-ইভানার বৌভাত উপলক্ষে অনেক অতিথিরও সমাগম ঘটেছে। বিভিন্ন ধরনের রান্নাও করা হয়েছে বৌভাত উপলক্ষে।
ইভানা সিড়ি দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে নিচে নামছিল। আচমকাই হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নেয়। এমন সময় তাকে ধরে ফেলে কেউ। নিজের শক্ত বাহুতে আবদ্ধ করে নেয় ইভানাকে। ইভানা চোখ তুলে তাকাতেই ফাহিমকে দেখতে পায়। ফাহিম ইভানাকে হালকা ধমকের সুরে বলে,
‘দেখে চলবে তো। এখনই বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটে যেতো।’

ইভানা কিছু সময় মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ফাহিমের দিকে। অতঃপর ফাহিমের তখনকার বলা কথাগুলোই মনে পড়তেই ভীষণ রাগ হয় তার। সে দ্রুত ফাহিমের থেকে দূরে সরে আসে। বেশ শক্ত গলায় বলে,
‘আমি নিজেকে সামলাতে পারি। কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।’
বলেই ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায়। ফাহিম আনমনে বলে,
‘ওর আবার কি হলো? এত রুড বিভেব করছে কেন?’

ইভানা একটু সামনে এগিয়ে আসতেই নিজের মা বাবাকে দেখতে পায়। সে দ্রুত তাদের কাছে চলে আসে৷ ইশরাত খাতুন ইভানাকে জড়িয়ে ধরে। ইভানা বলে,
‘তোমাকে অনেক মিস করেছি আম্মু।’
‘আমিও। তোকে ছাড়া বাড়িটা ফাকা ফাকা লাগছিল।’
ইভানা আশেপাশে তাকায়। নিজের দাদাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে তারিকুল ইসলামকে প্রশ্ন করে,
‘আব্বু দাদাজান কোথায়? উনি কি আসেন নি?’

‘তুই তো চিনিস আব্বুকে। ওনার জেদ সম্পর্কেও তোর ধারণা আছে। যেখানে উনি এই বিয়েটাই মেনে নেন নি। সেখানে তুই কিভাবে ভাবলি উনি এখানে আসবেন?’
ইভানার মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল৷ তার মুখে যেন আমাবস্যার চাঁদ নেমে এলো। ইশরাত খাতুন ইভানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

‘চিন্তা করিস না একদম। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে একসময়। তুই শুধু একটু ধৈর্য রাখ।’
ইভানা মলীম হাসে। এরমধ্যে ফারজানা বেগম ইভানাকে নিজের কাছে ডাকেন। ইভানা নিজের মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফারজানা বেগমের কাছে যান। ফারজানা বেগম কয়েকজনের সাথে ইভানার পরিচয় দিয়ে বলেন,
‘এই হইলো গিয়া আমার ছোট পোলার বউ ইভানা।’
সকলের মাঝে উপস্থিত একজন মহিলা বললেন,
‘মাশাল্লাহ, বেশ সুন্দরী তো দেখতে। কারো নজর না লাগুক।’

ইভানা স্মিত আছে। পরক্ষণেই অপর একজনের কথায় তার সেই হাসি মিলিয়ে যায়। একজন পৌঢ়া বলেন,
‘এই মাইয়ার লগে তো তোমার বড় পোলার বিয়া হওনের কথা আছিল। তা ছোট পোলার বিয়া হইল কেন? বড় পোলার কি পছন্দ হয়নি?’
সাথে সাথে সবাই একে অপরের পানে তাকাতে থাকে। নিজেদের মতো কথা বলতে থাকে। ইভানা খুব অসহায় বোধ করে। ফারজানা বেগমও কিভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন সেটা ঠাহর করতে পারছিলেন না।

‘যা হওয়ার ছিল, সেটা অতীত। যা হয়েছে সেটাই বর্তমান। ইভানার পরিচয় হলো ও আমার স্ত্রী। এটাই ওর পরিচয়। আশা করি আপনারা কারো মনে আর কোন ধরনের প্রশ্ন নেই?’
ফাহিমের এক কথায় সবাই তার পানে চায়। ফাহিম বেশ শক্তভাবেই কথাটা বলে। ইভানা খুব খুশি হয় ফাহিমের আগমনে। তার মনে হতে থাকে এবার হয়তো পরিস্থিতি ঠান্ডা হবে। সে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায় ফাহিমের দিকে। কারণ ফাহিম আজ আবার তার সম্মান রক্ষা করল।

তবে সমাজে কিছু মানুষ থাকে যারা এত সহজে চুপ হবার নয়। তেমনই একজন হলো ফাহিমের মামি। তিনি বলে উঠলেন,
‘এটা তুমি কেমন কথা বলছ ভাগিনা? আমরা সবাই তো জানতাম ফারহানের সাথেই মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আমরা তো কিছু সমস্যার জন্য বিয়ের দিন আসতেই পারিনি। আজ বৌভাতে এসে দেখছি তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে। এসবের মানে কি? ফারহান কেন বিয়েটা করলোনা? মেয়েটার মধ্যে কি কোন কমতি আছে?’
‘সবাই হিরার মূল্য বোঝে না মামি। কয়লার খনিতেই কিন্তু হিরা থাকে। আমি কয়লার খনি থেকে হিরা বের করতে চাই জন্যই বিয়েটা করেছি। আশা করি তোমার আর কোন প্রশ্ন নেই।’

ফাহিমের মামি এবার চুপসে যান। এমনিতে ফারহানের সাথে বিয়েটা না হওয়ায় তিনি খুশিই হয়েছেন। কারণ তিনি তো তার মেয়ে ঝর্ণার সাথে ফারহানের বিয়ে দিতে চান। ফারহানের মতো একটা সরকারি চাকরিজীবী পাত্র কি এত সহজে হাতছাড়া করা যায়? শুধু নিজের গায়ের ঝাঝ মেটাতেই তিনি এসব কথা বললেন। কারণ আজ ফারহানের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে তো তাকে আঙুল চুষতে হতো।

বৌভাতের পরিস্থিতি এবার একটু ভালো হয়। সবাই খেতে বসে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফাহিম উঠে হাত ধুতে যাবে এমন সময় কেউ পেছন থেকে এসে তার পিঠে গা’ট্টা মে’রে বলল,
‘হেই ফাহিম! এই টুকু একটা পুচকে ছেলে বিয়ে করে নিলি আর আমাকে একবার জানালিও না।’
ফাহিম পিঠে হাত দিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
‘ঝর্ণা আপু তুমি! কেমন আছ?’

‘আমি তো বিন্দাস আছি। কাল অব্দি তোর ভাইয়ের শোকে দেবদাসী হয়ে বসে ছিলাম আর আজ তো আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে। জানিস আমি যেদিন থেকে ফারহানের বিয়ের কথা শুনেছি সেদিন থেকে প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাইতাম যেন কোন মিরাকল হয় আর এই বিয়েটা ভেঙে যাক। আল্লাহ আমার দোয়াটা কবুল করেছে। থ্যাকিউ পুচকে ছেলে বিয়েটা করে নেওয়ার জন্য।’

‘থাক আর থ্যাংকস দিতে হবে না। আর আমি মোটেই পুচকে নই, আমার বয়স এখন ২৩ চলছে।’
‘এ,,২৩। আমার বয়স কত জানিস? ২৫ বছর। তোর থেকে গুণে গুণে দুই বছর ১ মাস ১৮ দিনের বড়। আমি এখনো বিয়ে করলাম না আর তুই,,,,আচ্ছা বাদ দে তোর বড় ভাই কোথায় রে?’
‘নিজের ঘরেই আছে। যাও দেখা করে আসো।’
ইভানা অনেকক্ষণ ধরেই ফাহিম ও ঝর্ণাকে দেখছে৷ অনেক জেলাস ফিল হচ্ছে তার। নিজের প্লেটে থাকা ভাতগুলো মাখতে মাখতে সে মনে মনে বললো,

‘আমার সামনে তো যত ঢং আর এই মেয়েটার সামনে দেখো কেমন হেসে হেসে কথা বলছে। আচ্ছা এটা কি ওনার সেই গার্লফ্রেন্ড নাকি? বেহায়া লোক একটা বিয়ের পর গার্লফ্রেন্ডকে বাড়িতে ডেকে এনে ঢং করছে। অসহ্য।’

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ১১

গতকাল কিছু সমস্যার জন্য গল্প দিতে পারিনি। আজকের পর্বটা আপনাদের কেমন লাগছে জানাবেন। আজকের কোন লাইনটি আপনাদের বেস্ট লেগেছে? কমেন্ট করে জানান

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ১৩