কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৭

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৭
সাবিকুন নাহার নিপা

“এই শাওন!”
শাওন পিছু ফিরে তাকালো। বসুন্ধরার সামনে থেকে খানিক দূরে একটা দোকানের ছায়ায় শাওন দাঁড়িয়ে ছিলো। উদ্দেশ্য টাকা ভাংতি করার। তখনই ডাকটা শুনতে পেল। রিশাব এক রকম ছুটেই এলো। শাওন স্মিত হেসে বলল,

“হাই আপনি এখানে? ”
“রিকশায় ছিলাম। হঠাৎ তোমাকে দেখলাম। ”
“কেমন আছেন? আন্টি, রিতি কেমন আছে?”
“সবাই ভালো। এই তোমরা আমাদের বাড়িতে কবে যাবে?মা তো আন্টিকে ফোন করেছিল।”
“যাব যাব। আপনি এইদিকে?”
“মুভি প্ল্যান ছিলো বন্ধুদের সাথে। তুমি?”
“আমারও শপিং এর প্ল্যান ছিলো। ”
রিশাব স্মিত হেসে বলল,
“আচ্ছা। কফি খাবে? কোল্ড কফি?”
শাওন মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। শাওনের মন খারাপ ভাব দূর হচ্ছে। রিশাবের সাথে কথা বলার সময় একটুও মন খারাপ ছিলো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কোল্ড কফিটা ভালোই ছিলো। শাওনের খুব ভালো লেগেছে। শাওন রিশাব কে বলল,
“থ্যাংক ইউ। জানেন আমার খুব মন খারাপ ছিল।”
রিশাব অবাক গলায় বলল,
“তাই? কেন?”
শাওন হাসলো। এই হাসির অর্থ হচ্ছে ও মন খারাপের কারন টা রিশাব কে বলতে চাচ্ছে না। রিশাবও আর জোর করলো না। কফি খেয়েই শাওন রিকশায় উঠলো।

“আমাদের বাড়ি কবে যাবে জানিও। বাবা তোমাদের গল্প শুনে, দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছেন।”
“যাব যাব। খুব শিগগিরী যাব।”
“ওকে অপেক্ষায় রইলাম। ”
শাওন স্মিত হেসে বলল,
“আচ্ছা।”
শাওন চলে যাবার পর রিশাব একটা ব্যাপার খেয়াল করলো। ও শাওন কে তুমি তুমি করে বলছিল। আশ্চর্য! তুমি সম্বোধন কবে, কখন শুরু হলো তা তো ওর খেয়াল ই নেই।

সুহাস খেতে বসলো অনেক বেলা করে। ইচ্ছে করেই করা। খাবারের মেন্যু দেখে দেখে দীপাকে বলল,
“দীপা আমাকে একটা ডিম ভেজে দাও তো। ”
দীপা বলল,
“এসব খাবেন না?”
“না। সেজন্যই তো ডিম চাইছি। না পারলে বলো, আমি শুধু ভাত ই খেয়ে নেব। লবন আর লেবু দিয়ে খেয়ে ফেলব।”
“এক্ষুনি আনছি।”

আজকে দুপুরের মেন্যু ছিলো টাকি মাছ ভর্তা, পুটি মাছ দিয়ে পটলের ঝোল, ছোট চিংড়ি নারকেল দিয়ে ভর্তা, আম দিয়ে মুগের ডাল আর শোল মাছের ঝোল।
সুহাস এই খাবারগুলো খাচ্ছে না রাগ করে। কারন সুহাসের বাবা বাড়ি ফিরলে তার পছন্দেই রান্না হয়।
দীপা এক বাটি মাংস বের করলো। এটা সুহাসের জন্য রেখেছিল। ও ঠিক জানতো যে সুহাস এসব খাবে না।
ডিমের সঙ্গে মাংসের বাটিটা দেখে সুহাস খানিকটা খুশি হলেও কাঠিন্য বজায় রেখে বলল,
“শুধু ডিম চেয়েছি। ”

“কিন্তু আপনি তো শুধু ডিম দিয়ে ভাত খেতে পারেন না।”
সুহাস এক পলক দীপাকে দেখলো। কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে মাংসের বাটিটা নিলো। খাবার মুখে দেবার সময় দীপার দিকে তাকিয়ে বলল,
“খাবার সময় এভাবে দাঁড়িয়ে থেকো না। আমাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে না। সিলিং ফ্যান টা ভালোই ঘুরছে।”
দীপা মৃদু হেসে চলে গেল। দুপুরে ওরও খাওয়া হয় নি। সুহাসের জন্য না খেয়ে বসে আছে ব্যাপার টা তেমন না। জ্বরের কারণে ভালোরকম অরুচি ধরে গেছে। কিছুই খেতে পারে না ঠিক করে।
দীপা চায়ের পানি বসালো। তেজপাতা, এলাচি, দারুচিনি দিয়ে দিলো পানিতে। সুরমা বেগম তখন রান্নাঘরে এলেন। দীপাকে বললেন,

“আমার জন্যও একটু চা কোরো দীপা। শাওন টার অবস্থা দেখেছ! একটা মেয়ে এতো টা অ*সভ্য হয় কী করে বলোতো!”
দীপা হাসলো। সুরমা বেগম বললেন,
“হেসো না তো। সুহাস তো অন্তত কিছু বলতে পারে। তাও বলবে না। সংসারের প্রতি কী ওর কোনো দায়িত্বই নেই! একটা মাত্র বোন। তার সঙ্গে কথাবার্তা বলে পাড়া পড়শীর মতন। এসব কী!”
“আপনার ছেলে তো বাসার সবার সঙ্গেই ওরকম মা। ”
সুরমা বেগম দীপাকে এক নজর দেখলেন। ছেলের স্বভাব সে নিজেও জানে। খুব ভালো করে জানে। তবুও গলায় খানিকটা কৃত্রিম জোর এনে বলল,

“ওরকম থাকলে তো চলবে না। তুমি কেন সহ্য করো। কঠিন কঠিন কথা তুমিও শুনিয়ে দিবে। ”
দীপা হেসে ফেলল। সুরমা বেগম আর কিছু বললেন না। এসব কিছু বলে আসলে লাভ নেই। তাই বললেন,
“আচ্ছা যাও। সুহাসের চা তুমি নিয়ে যাও।”
দীপা চা নিয়ে গেল।

সুহাস টিভি দেখছে। টকশো টাইপ কিছু একটা। দুই বৃদ্ধ লোক দেশের সমসাময়িক বিষয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু দুজনের ই বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যে বিষয়ে কথা বলার কথা সেই বিষয়ে এরা সম্ভবত খুব একটা হোমওয়ার্ক করে আসে নি। তাই অবস্থা লেজে গোবরে। সুহাস গভীর মনোযোগে অনুষ্ঠান টা দেখছে। শেষ পর্যন্ত এদের অবস্থাটা ঠিক কী দাঁড়ায় সেটাই দেখার বিষয়।
দীপা চা এনে সামনে রাখলো। ট্রে তে করে চা এনেছে। আলাদা করে লেবু কুচি আর চিনি। সুন্দর সাজিয়ে এনেছে। এমন সাজানো গোছানো দেখলে খেতে ইচ্ছে করে না। তাকিয়ে শুধু দেখতে মনে চায়।
সুহাস চায়ের কাপ নিলো। দীপা তখনও দাঁড়িয়ে আছে। সুহাস জিজ্ঞেস করলো,

“তুমি কী কিছু বলবে?”
“হ্যাঁ। ”
“তাহলে বলো!”
“আপনি এই ঘরে চলে আসুন। গেস্ট রুমে আপনার ভালো ঘুম হয় নি। মা’ও ব্যাপার টা ভালোভাবে দেখছে না।”
“ভালো, খারাপ দেখার তো কিছু নেই। তোমার পরীক্ষা বলেই রুম টা ছেড়ে দেয়া হয়েছে।”
“আপনি চলে আসুন। রাতে আমি তেমন পড়াশোনা করিও না। আমি দিনের বেলাই পড়ি। সমস্যা হবে না। ”
“আমারও সমস্যা হচ্ছে না।”
দীপা আর জোর করলো না। জোর করেও লাভ নেই। সুহাস যা ভাবে তাই ই করে। ওর মন না চাইলে কিছুতেই ও’কে আনা যাবে না।

রাতের খাবারের পর সুহাস যথারীতি গেস্ট রুমে ঘুমাতে গেল। দীপাও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খোলার আগ পর্যন্ত দীপা ভাবে নি যে দরজার ওপাশে সুহাস থাকতে পারে।
সুহাস ঘরে ঢুকে বলল,
“আমি দেয়ালের ওইদিকে শুয়ে পড়ছি।”
দীপা বলল,

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৬

“আচ্ছা। আমি মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ব।”
সুহাস রুক্ষস্বরে বলল,
“না। আবার জ্বর বাঁধাবে নাকি। খাটে ঘুমাও।”
দীপা দুরুদুরু বুকে খাটে শুতে গেল।

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৮