এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৪ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৪
লেখিকা বন্যা মৃধা

গাড়িতে উঠে জুতা খুলে হাত নিতেই দেখি একটা ঝুমকো আমার জুতায় আটকে আছে। ঝুমকোটা জুতার থেকে খুলে হাতে নিয়ে একটু খেয়াল করে দেখলাম। এটা সেই ঝুমকো যেটা আমি হিমুকে গিফট করেছিলাম ঝুমকোটা সেইম ডিজাইন কিন্তু এখানে আসল কিভাবে? হিমুকে আমার দেওয়া ঝুমকো তো ও বিয়ের দিন পরেছিল তার মানে কি হিমু এই গ্রামেই আছে..
আদি: ইসান হিমু এখানেই আছে এই গ্রামেই।
ইসান: কি?

আদি: হ্যাঁ ইসান আমি সত্ত্যি বলছি আমার জুতোর সঙ্গে এই ঝুমকোটা আটকেছিল আমার যথেষ্ট মনে আছে এই ডিজাইনের ঝুমকো আমি ওকে দিয়েছিলাম।(ঝুমকোটা দেখিয়ে)
ইসান: তোর কি সঠিক মনে আছে তুই হিমুকে যে ঝুমকোটা দিয়েছিলি সেটা এইটা সেইম ডিজাইনের?
আদি: হ্যাঁ সেইম ডিজাইনের আমার ফোনে সেই ঝুমকো পরা হিমুর ছবি আছে।
এই দেখ এটা আর হিমুর কানের ঝুমকোটা সম্পূর্ন এক।(ছবি দেখিয়ে)
ইসান: হুম সম্পূর্ন মিল আছে।

আদি: আমার হিমুকে আমি পেয়ে গেছি ও এই গ্রামেই আছে আমি ওকে খুঁজে বের করব।
ইসান: কিন্তু আদি সেইম ঝুমকো অন্য কোনো মেয়েও পরতে পারে আর শহরের জিনিস গ্রামেও বিক্রি হয়।
আদি: না ইসান আমার মন বলছে হিমু এই গ্রামেই আছে ওকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
ইসান: আদি আমার মনে হচ্ছে আমরা কোথাও ভুল করছি চল শহরে চলে যাই।
আদি: ওকে তুই চলে যা তোর সহায়তা আমার কোনো দরকার নেই আমি একাই আমার হিমুকে খুঁজে বের করব।
ইসানকে রেখে গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে গেলাম ইসানের বাড়িতে কারন আন্টিকে এবং বাড়ির সবাইকে হিমুর কথা বলতে হবে। যদি হিমু এখানে থেকে থাকে তারা চিনতে পারে তাই তাদের কাছে ছুটে গেলাম।
আন্টিকে হিমুর ছবি দেখাতে বলল তিনি চেনে না অঃতপর বাড়ির সবাইকে দেখাই কিন্তু একই অবস্থা। রাস্তায় এসে দেখি ইসান দাঁড়িয়ে আছে আমার কাছে বলল..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইসান: টেনশন করিস না আমারা হিমুকে খুঁজে বের করব।
আদি: হুম।(জড়িয়ে ধরে)
দুজনে আশেপাশের সব বাড়িতে গিয়ে এক এক করে খোঁজ নিলাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না কেউ হিমুকে চেনে না। সিদ্ধান্ত নিলাম বাজারের সবাইকে জিজ্ঞেস করার কারন শুধু এই গ্রামের নয় অন্য গ্রাম থেকেও হয়তো এখানে আসে তখন তারা দেখতে পারে তাই আর লেট না করে বাজারে চলে যাই। বাজার বড় থাকায় হিমুর ছবি নিয়ে দুজনে দুদিকে খুঁজতে শুরু করি কিন্তু আমরা ব্যর্থ হই বাজারের একটি লোকও হিমুকে কখনও দেখেনি। ইসানের গ্রামে যত ভাইয়া ফ্রেন্ড আছে তাদের কাছে হিমুর ছবি পাঠিয়ে দেই হিমুকে খোঁজার জন্য। সবাই হিমুকে খুঁজতে বেরিয়ে পরে। সবাই মিলে সারাদিন খুঁজেও হিমুর দেখা মেলে না ব্যর্থ হয়ে ইসানের বাসায় ফিরে আসি। বাবা মাকে কল করে জানিয়ে দেই যে ফিরতে আমার কিছুদিন লেট হবে।

আজ চোখ চাইছে না ঘুমাতে মনে হচ্ছে হিমু সামনেই দাঁড়িয়ে আছে রাতে আমি ছাদে চলে আসি। ঝুমকোটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছি এটা হিমুর ঝুমকো এটাতে হিমুর হাতের ছোঁয়া রয়েছে। আমার আশেপাশেই হিমু রয়েছে সেটা আমি অনুভব করতে পারছি। হিমু তোকে আমি খুঁজে বের করবই আজ যখন তোর ঝুমকোর দেখা পেয়েছি আমার বিশ্বাস এখানে তোর দেখাও পাব। হিমুর ঝুমকোটা বুকে রেখে ছাদে সুয়ে পরলাম আজ আকাশের বুকে অসজ্র তারা মিটমিট করে জ্বলছে। তারা গুলোর মধ্যে রয়েছে একটি চাঁদ।

হিমু আর আমি একদিন ছাদে বসে চাঁদের জোৎন্সা উপভোগ করছিলাম তখন হিমু আমায় বলেছিল.. “আকাশের বুকে যে চাঁদটা আছে ওইটা আমি আর আমার আশেপাশের মানে চাঁদের পাশের তারাগুলো আমার দুই পরিবারের সদস্য আর দূরবর্তী সব তারাগুলো হলো আমার পিছনে পরে থাকা ছেলেগুলো তবে আমি তাদের কেয়ার করি না”
আমি অনেক কৌতূহল নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “তাহলে আমি কোথায় আছি?”
“তুই আমার আশেপাশে কোথাও নেই। সব থেকে শেষ প্রান্তে যে তারাটি রয়েছে সেটা তুই। চাইলেও তুই সবাইকে টপকিয়ে আমার পাশে আসতে পারবি না”

হিমুর কথা শুনে আমার মুখে অন্ধকার নেমে আসে আমি ওর কথা শুনে ওর থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ঘুরে বসেছিলাম অঃতপর ও আমার সামনে এসে বলেছিল.. “আচ্ছা সয়তানের হাড্ডি মনে কর চাঁদকে তিনটা ভাগ করলাম এই তিন ভাগ থেকে দুই ভাগ আমি আর বাকি এক ভাগের যায়গাটা যদি তোকে দেওয়া হয় তাহলে কেমন হয়?”
আমার উত্তর ছিল “এতোগুলো ভালো হয় তোর পাশে এইটুকু যায়গা আমার জন্য যথেষ্ট।”

সেদিন ওর মুখে ওই কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছিলাম। ও তখন আমায় শুধু ভালো একটা ফ্রেন্ড মনে করত আর আমি ওকে ছোটবেলা থেকেই নিজের মনে করেছি। সবসময় আমি ওর পিছনে লেগে থাকতাম তবু ওকে কখনও আমার মনের কথা বলিনি যদি হিমু রিয়াক্ট করে আমার সঙ্গে কথা না বলে সেই ভয়ে। আর যেদিন আমার মনের কথা ওকে বললাম ও আমায় নিজের করে নিল সেদিনই আমি ওকে হারিয়ে ফেললাম। কেন আমার সাথে এমন হলো?
ইসান: এই আদি..আদি..

ইসানের ডাকে আমার ঘোর কাঁটে অঃতপর আমি ধকমকিয়ে উঠে পরি..
ইসান: রাত ৩টা বাজে আর তুই এখানে শুয়ে আছিস..
আদি: আমি কি হিমুকে খুঁজে পাব?(ইসানকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো)
ইসান: আদি এমন করিস না হিমু যদি এখানে থেকে থাকে অবশ্যই আমরা ওকে খুঁজে বের করব প্রয়োজনে আশেপাশের সব গ্রামে খুঁজে বের করব।
আদি: হিমুকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারছি না।
ইসান: এভাবে ভেঙে পরিস না আমরা ওকে খুঁজে বের করবই।

কিছুক্ষন পর ইসান আমায় নিয়ে রুমে এলো কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম নিজেই বুঝলাম না। সকালে উঠে ইসানকে নিয়ে হিমুকে খুঁজতে বরিয়ে গ্রামটা বড় হলেও গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়িতে হিমুকে খোঁজা হয় কিন্তু পেলাম না। এরপর বেরিয়ে পরি পাশের গ্রাম গুলোতে সেখানেও হিমুকে না পেয়ে সেদিনও বাসায় ফিরে আসি। ইসান বলছে পাশে আরো একটি ছোট গ্রাম আছে সেখানে আমরা এখনও খুঁজে দেখিনি তাই কাল আমরা সেখানে যাব। আমার মন বলছে আমার হিমু ওইখানেই আছে। এদিকে মা বাবা বার বার কল করে বাসায় যেতে বলছে কিন্তু হিমুকে না নিয়ে ফিরব না।
পরেরদিন সকালে যখন হিমুকে খুঁজতে বের হই তখন অভিকে চোখে পরে ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
আদি: অভি তুই এখানে?

অভি: হ্যাঁ দাদাভাই। আমার দাদাভাই হিমু দিদিভাইকে একা খুঁজবে এটা তো হতে পারে না।
আদি: আমি এখানে হিমুকে খুঁজতেছি তুই এটা জানলি কিভাবে?
অভি: তুমি বাসায় ফিরছিলে না তাই আমার সন্দেহ হচ্ছিল বার বার মনে হচ্ছিল তুমি হিমু দিদিভাইয়ের খোঁজ পেয়েছো তাই কাল রাতে আমি ইসান দাদাভাইকে কল করেছিলাম কিন্তু উনি আমায় কিছু বলতে চাচ্ছিল না অনেক রিকুয়েস্ট করার আমায় সবটা জানিয়েছে।
আদি: মা বাবা কেমন আছে, বাবার শরীর ঠিক আছে তো?
অভি: ঠিক আছে কিন্তু বাবা তোমায় নিয়ে খুব টেনশন করছে।

কথা কমপ্লিট করে গাড়ি নিয়ে আমরা সেই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। কিছুক্ষন পরে পৌঁছে যাই। কিছু বাড়িতে গিয়ে হিমুর ছবি দেখাতে তারা না বোধক উত্তর জানাল। অঃতপর আমরা গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করি। প্রবেশ করতেই বুঝতে পারি এখানে মেলা জাতীয় কিছু হচ্ছে তবে কিসের মেলা তা অজানা। মেলা মানে বিশাল আয়োজন এখানে ছোট বড় সব ধরনের লোক দেখা যাচ্ছে। বেশি লোকজন থাকায় আমারা তিনদিকে চলে যাই। প্রত্যেকটা দোকানে দোকানে ছবি দেখাই কিন্তু এখানেও আমি ব্যর্থ হই। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা আমরা হিমু মেলা দিয়ে খুঁজতে থাকি। ওর কোনো খবর না পেয়ে আমরা একটি চায়ের দোকানে একত্রিত হই।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৩

ইসান: এখানেও হিমুকে খুঁজে পেলাম না হিমু কি গ্রামে নেই তার মানে আমাদের ধারনা ভুল ছিল?
আদি: জানিনা তবে আমার মন বলছে আমি হিমুকে এখানেই খুঁজে পাব।
ইসান: এখানের প্রতিটি গ্রামে ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে কিন্তি হিমুকে কেউ চেনে না আমার মনে হয় হিমু এখানে নেই থাকলে কেউ তো ওকে চিনত।
অভি: হ্যাঁ দাদাভাই ইসান দাদাভাই ঠিক বলেছে হয়তো দিদিভাই এখানে নেই বাসায় ফিরে চলো।
আদি: হিমু যদি এখানে না থাকে তাহলে ওর ঝুমকো এখানে আসবে কি করে?
ইসান: হয়তো এটা অন্য কারোর।

আদি: না এটা অন্যকারোর নয় এটা হিমুর ঝুমকো।
ইসান: আচ্ছা তোরা এখানে থাক আমি খুঁজে দেখি মেলায় কোনো খাবারের হোটেল বসেছে নাকি অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।
(আদির কাছে অভিকে রেখে হোটেল খোঁজার জন্য চলে আসি। একটা হোটেল দেখে এগিয়ে যাই সেখানে কিছু মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে হিমুর ছবি মেয়েদের দেখাতেই একটা মেয়ে রাগি কন্ঠে বলে ওঠে..)
“এটা তো আমার দিদিভাই”

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৫