এক বাক্স ভালোবাসা শেষ পর্ব  || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা শেষ পর্ব 
লেখিকা বন্যা মৃধা

সেদিন আমি নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু মা বাবার কথায় নিজেকে নিয়ে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন খুঁজে পাই। বাবা আমায় বাসায় ফেরার অনেক অনুরোধ করে কিন্তু আমি সাহস পাইনি কারন আমি রেপের স্বীকার হয়েছি সবাই আমার দিকে আমার পরিবারের দিকে আঙুল তুলবে। আমি চাইনি যে আমার জন্য আমার পরিবার নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হোক।
আমার কথা শুনে বাবা বলে আমাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবে যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না আমার পরিবারের দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারবে না আর আমি এটাও চাইনি যে আমি তোর কাছে ফিরে যাই।
কারন আমি যে একটি অপবিত্র মেয়ে। এখন না হলে হয়তো কিছুদিন পরে তোর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো সেই ভয়ে নিজেকে দূরে রাখতে বাধ্য হই।

আদি: সেই ছোট থেকে একসাথে চলেছি এক সাথে বড় হয়েছি কেউ কারোর থেকে কখনও আলাদা থাকিনি এতো বছরে আদিকে এইটুকু চিনতে পেরেছিস… আমি তোকে ভালোবাসি সবসময় তোর খারাপ সময়ে পাশে থাকতে চেয়েছি আর তুই আমায় একটু বিশ্বাস করতে পারলি না..
~~ আদি আমি নিজেই চাইনা যে আমার আমার অপবিত্র শরীরের ছায়া তোর জীবনে প্রবেশ করুক। কষ্ট হলেও আমার থেকে দূরে থাক এটাই চাই।

আদি: তোর সঙ্গে যা হয়েছে সবটাই একটা দুর্ঘটনা সে জন্য নিজেকে কেন দ্বায়ী করছিস.. তোর ইচ্ছেতে এসব হয়নি যার জন্য নিজেকে দ্বায়ি করবি। সেদিন আমায় একটিবার সব বলতে পারতি তাহলে আমাদের মাঝে এমন দুরত্ব হতো না। তোকে ভালোবাসি সব পরিস্থিতে আমি তোর পাশে থাকতে চেয়েছি।
~~ আজ আর সেদিনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আজ যতটা সহজ মনে করছিস সেদিন কিন্তু ততটাই কঠিন ছিল।
আদি: সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত তোর অপেক্ষায় ছিলাম হয়তো বাকি জীবনটা অপেক্ষায় থাকতাম। আজ যেটা করছি সেটা সেদিনও করতাম শুধু তোর ভুল ধারনা ছিল। এই আদি শুধু তোকে ভালোবাসে তোর পাশে থাকতে চায় তোকে সারাজীবন ভালোবাসতে চায়। সেদিন যতটা ভালোবেসেছি আজও ততটা ভালোবাসি এতো বছর পর তোকে খুঁজে পেয়েছি তোকে ভালোবাসার সুযোগ আমি আর হারাতে চাই না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~~ না আদি আমি ফিরতে চাই না তুই এখান থেকে চলে যা বাবা মা আসার আগে এখান থেকে চলে যা প্লীজ!
আদি: আমার সঙ্গে তোকে না নিয়ে আমি ফিরব না প্রয়োজনে আমি তোর সঙ্গে এই গ্রামেই থাকব তবু আমি যাব না আর আঙ্কেল আন্টিকে আসতে দো তারাই সিদ্ধান্ত করবে যে তাদের জামাইকে মেয়ের সঙ্গে এখানে রাখবে নাকি জামাইয়ের সঙ্গে মেয়েকে পাঠিয়ে দেবে।
~~আদি আমি ফাজলামি করছি না এখুনি সবাইকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবি চল..
আদি: না আমি আমার বউয়ের থেকে কোথাও যাচ্ছি না।
~~ আদি আমি শেষ বারের মতো বলছি তুই এখুনি সবাইকে নিয়ে চলে যা।
আদি: আমার বউয়ের বাড়ি মানে আমারও বাড়ি তাই এখানে থাকার যথেষ্ট অধিকার আমার আছে।(বিছনায় গা এলিয়ে)
~~ আদি প্লীজ!

আদি: ওকে আগে কিছু খেতে দে সকাল থেকে কিছু খাইনি ক্ষুধায় পেটের মধ্যে ট্রেন চালাচ্ছে।
হিমু আমার কথা শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেল মনে হচ্ছে রাগ করেছে। অবশ্য রাগ করলে আমার যায় আসে না কারন আমার রাজকুমারীকে পেয়ে গেছি আর হারাতে দেব না বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখব। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম বুঝলামই না।
ঘুম ভাঙে হিমুর ডাকে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আঙ্কেল আন্টিকে। আঙ্কেল আন্টিকে দেখে মনটা আরো ভালো হয়ে গেল।
আঙ্কেল: আদি তোর বাবা মা কেমন আছে?

আদি: ভালো তবে বাবা মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরে। তোমরা চলে আসার পর সবকিছু পাল্টে গেছে আগের মতো কিছু নেই আঙ্কেল তোমরা শহরে ফিরে চলো।
আঙ্কেল: সেটা পরে ভেবে দেখা যাবে চলো এখন খেতে যাওয়া যাক।
পাশের পুকুর থেকে আমরা হাত মুখ ধুঁয়ে খেতে এসে দেখি মাটিতে মাদুর বিছিয়ে দিয়েছে। চট করে আমরা বসে পরি আমাদের সঙ্গে আঙ্কেল ঐশীও রয়েছে আর পরিবেশন করছে আমার মিষ্টি বউ আর আন্টি।

তিন থেকে চার রকমের তরকারি রান্না করা হয়েছে দেখতে যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই সুস্বাদু। আচ্ছা আন্টি তো বাসায় ছিল না আর ঐশী তো অভি আর ইসানের সঙ্গে কথায় ব্যস্ত ছিল তাহলে এসব রান্না কে করেছে.. তার মানে কি এসব হিমুর হাতের খেল আমার জানামতে হিমু জল সিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই পারে না একবার পরখ করে দেখতে হবে।
আদি: আন্টি খাবারগুলো কোন হোটেল থেকে অর্ডার করা হয়েছে ভাবছি সেই হোটেলে কর্মচারী হিসেবে যোগ দেব যদি তাদের থেকে কিছু শিখতে পারি।

ঐশী: দাদাভাই এসব রান্না তো আমার হিমু দিদিভাই নিজ হাতে করেছে।
আদি: কি হিমু এসব এসব রান্না করেছে?
ঐশী: হ্যাঁ দাদাভাই।
আদি: আচ্ছা শশুর মশাই আমার বউ কবে এমন সুস্বাদু রান্না শিখল?
আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিল আর হিমু আমার দিকে ২০ কেজি রাগ নিয়ে তাকিয়ে ওর অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি ওকে রাগানোর জন্য আবার বললাম..
আদি: যাক এখন থেকে প্রতিদিন মিষ্টি বউয়ের হাতের সুস্বাদু রান্না খাওয়া যাবে।
হিমু আমার কথা শুনে রেগে স্থান ত্যাগ করল হয়তো আমি খুব বেশি বলে ফেলেছি এখন কি হবে.. বউয়ের রাগ ভাঙাতে হবে নাহলে হয়তো কপালে আর এমন খাবার জুটবে না।

খাবারের প্লেট নিয়ে সবার সামনে থেকে উঠে হিমুর রুমে যাই। বেচারি রেগে গাল ফুলিয়ে রেখেছে একদম মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। হিমুর মুখে যেন এক আকাশ অন্ধকার নেমে এসেছে। ওর কাছে যেতই অন্যদিকে ঘুরে বসল।
আদি: আমার হাতে ব্যাথা করেছে একটু খাইয়ে দিবি?
~~আমি তোর টাকা দিয়ে কেনা কাজের মেয়ে নই যে তুই বললেই খাইয়ে দেব।
আদি: তুই কাজের মেয়ে কেন হবি তুই তো আমার একমাত্র বউ।
~~আদি একদম ফালতু কথা বলবি না আমি কিছু মানি না।
আদি: শুধু বগ বগ করবি নাকি আমায় খাইয়ে দিবি?
~~ না দিব না।
ও আমায় না খাইয়ে দিলেও আমি ওকে জোর করে খাইয়ে দিলাম দেখ এখন কত মজা।
আদি: গিলে বল আমার বউয়ের হাতের রান্না কেমন?
~~ঘোড়ার ডিমের মতো।

খাওয়া কমপ্লিট হওয়ার পর আমি আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলছিলাম। কথা শেষ হতেই হিমুকে খুঁজতে শুরু করি কিন্তু কোথাও পাই না অভি ঐশী ইসান কেউ ঘরে নেই তবে কি সবাই এক সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেছে। অভিকে কল করার জন্য ফোন হাতে নিতেই দেখি অভির মেসেজ “দাদাভাই জলদি পুকুর পাড়ে চলে এসো আমি আর ঐশী প্রেম করছি হিমু দিদিভাই একা একা বসে আছে এই সুযোগ মিস করো না”
মেসেজ দেখা মাত্রই ছুঁটে চলে এলাম পুকুর পাড়ে। সবার থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে হিমু একা একা বসে আছে আমি ওর পাশে গিয়ে বসেতেই আমায় ওর চোখ দিয়ে গিলতে শুরু করল…
~~কেন এসেছিস এখানে আমাকে কষ্ট দিতে পূর্বের কথা মনে করিয়ে দিতে?
আদি: একদম না আমার হিমুকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে এসেছি অবশ্য বিয়ে তো দুইবার হয়েছে এখন শুধু ঘরে তুললেই হবে।

~~সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব সহজ না পরিস্থিতি মানুষকে বদলাতে সাহায্য করে।
আদি: হিমু শুধু আমার উপর একটু ভরসা কর সব আগের মতো হয়ে যাবে আগের মতোই আমি তোকে ভালোবাসতে চাই। দুর্ঘটনার জন্য তুই আমার থেকে দূরে চলে গিয়েছিলি এতো বছর পেয়ে আমি তোকে হারাতে চাই না তাহলে আর নিজেকে সামলাতে পারব না।
হিমু: যদি আঙ্কেল আন্টি মেনে না নেয়?
আদি: বাবা তোকে কতটা ভালোবাসে তা কি ভুলে গেছিস?
হিমু: না কিন্তু খুব ভয় হয়।
আদি: যাই হয়ে যাক আমি সবসময় তোর পাশে আছি।

সন্ধ্যা হতেই আমরা বাড়ি চলে আছি হিমুর মুখটা ভারী দেখাচ্ছে হয়তো কোনো ব্যাপারে চিন্তিত।
রাতে সবাই খেয়ে এক সঙ্গে বসে আছি তাই সবার উপস্থিতে বাবাকে কল করি। হিমুকে খুঁজে পেয়েছি এটা শুনতেই তারা খুব খুশী হয় অঃতপর হিমুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা বাবা মাকে জানাই। শুনে অবাক হলেও বাবা মা বলে তাদের ছেলের বউকে কালকেই বাসায় নিয়ে যেতে।

বাবা মার এমন উত্তর শুনে আঙ্কেল আন্টিও খুব খুশী হয়। হিমু সবার মধ্যে থেকে স্থান ত্যাগ করে আমিও হিমুকে অনুসরন ওর পিছনে চলে আসি। ঘরের পাশে বড় একটা শিউলী ফুল গাছ রয়েছে সূর্যের আলোতে ফুলগুলো একটু দেখা যাচ্ছে। দিনেই সেটা চোখে পরে ছিল কিন্তু তখন গাছে ফুল ছিল না। শিউলী ফুলের গন্ধে সম্পূর্ন বাড়ি মাতিয়ে তুলছে। হিমু শিউলী ফুল গাছটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হিমুর ঠিক উল্টো দিকে গাছে হেলান দিয়ে চাঁদের আলো উপভোগ করতে থাকি।
হিমু: আদি আমায় কতটা আর কতদিন ভালোবাসবি?
আদি: জানিনা তবে যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন ভালোবেসে যাব।

এক বাক্স ভালোবাসা  পর্ব ১৫

~~ সয়তানের হাড্ডি একদম মুভির ডায়লগ দিবি না তাহলে তোকে গলা টিপে মেরে ফেলব।
আদি: উগান্ডার পেত্নী আমি মরে যাব মরে গেলে কিন্তু আমার বেবির মা হতে পারবি না।
পাগলিটা আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আমি সুযোগটা হাত ছাড়া না করে টুস করে আমিও আমার হিমুকে জড়িয়ে ধরি।
~~ এখন বল..
আদি: আমার হিমুকে আমি লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ভালোবাসি আর সারাজীবন ভালোবেসে পাশে থাকতে চাই। আমার বুকের বাম পাশে আমার হার্ট রয়েছে আর ডান পাশে তুই। আমার বেঁচে থাকার জন্য যতটা হার্ট গুরুত্বপূর্ন ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ন আমার হিমু।।

সমাপ্ত।

(অনেক ভালোবাসায় এভাবেই দুরত্ব সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে পরিস্থিতি মানুষকে দূরে চলে যেতে বাধ্য করে অথবা নিজেকে শেষ করতে তবে হিমু সেই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচার পথ খুঁজে পেয়েছে। আদি সে তো হিমুকে যথেষ্ট ভালোবাসে সে হিমুর পাশে থাকতে চেয়েছে যে কোনো পরিস্থিতিতে। বিশ্বাসই ভালোবাসাকে বহু বছর টিকিয়ে রাখে।
আবার নতুন কোনো গল্প নিয়ে হাজির হবো ততদিন ভালো থাকবেন আর হ্যাঁ হিমুর আদির গল্প কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)