এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৩ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৩
লেখিকা বন্যা মৃধা

ইসান: আগে বল কাল আমার সঙ্গে গ্রামে যাবি। হ্যাঁ না বললে কোনোদিন ছাড়ব না।
আদি: আচ্ছা যাব এখন তো ছাড়।
ইসান: অনেক ধন্যবাদ।
(আদি আমি তোকে এভাবে জোর করতে চাইনি কিছুটা বাধ্য হয়ে করেছি কারন তোর মলিন মুখটা আমার মোটেও দেখতে ইচ্ছে করে না। আমি চাই তুই পূর্বের মতো হাসি খুশি থাকিস। এটাও জানি যে তুই হিমুকে ছাড়া কখনও ভালো থাকবি না তবুও আমার কিছুটা ব্যর্থ চেষ্টা। এখানে বসে নিজেকে কষ্ট না দিয়ে গ্রামে গেলে হয়তো তোর কিছুটা ভালো লাগবে।)

আদি: এই ইসান এভাবে হা করে কি ভাবছিস?(ধাক্কা দিয়ে)
ইসান: কই কিছু না তো চল বাসায় যাই।
ইসানকে ওর গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আমিও বাসায় চলে আসি। বাবা প্রবেশ করতেই দেখি বাবা মা বসে আছে হয়তো আমার জন্য ওয়েট করছিল।
আদি: তোমরা এতো রাত অবধি জেগে আছো কেন? বাবা তোমার রাত জাগা বারন তারপরেও কেন এসব করছো চলো এখনি ঘুমাতে।(বাবার দিকে এগিয়ে)
বাবা: তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম অনেকবার তোকে কল করেছি কিন্তু তুই রিসিভ করিসনি তাই খুব চিন্তা হচ্ছিল।
আদি: সরি বাবা ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই টের পাইনি।
বাবা: আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পর।
আদি: ওকে তোমরা আগে যাও দেন আমি যাচ্ছি।

বাবা মা চলে যাওয়ার পরে আমিও ঘুমাতে যাই। প্রতিদিনের মতো আজও হিমুর দেওয়া টি-শার্ট, ওর ফোন আর এক বাক্স ভালোবাসা সঙ্গে নিয়েই ঘুমাই। বাক্সটিতে সেই ঝুমকো জোড়া না থাকলেও হিমুর ভালোবাসার ছোঁয়া বাক্সটিতে রয়েছে। হিমুর স্মৃতি নিয়ে আমি এক প্রকার ঘুমিয়ে যাই।
সকালে আমার ঘুম ভাঙে ইসানের কলে চোখে হাজারো ঘুম নিয়ে কল রিসিভ করি..
ইসান: আদি তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস?
আদি: হুম কেন কিছু হয়েছে?
ইসান: আজ ৯ টায় আমার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল সেটা কি তোর মনে আছে?
আদি: ও সরি তুই একটু ওয়েট কর আমি এখুনি বের হচ্ছি।
ইসান: এখুনি আসতে হবে না এখন ৮ বাজে তুই সবকিছু কমপ্লিট করে তারপর আয়।
আদি: আচ্ছা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দ্রুত সাওয়ার সেরে রেডি হয়ে নিচে চলে আসি। নিচে নেমে মাকে নাস্তা দিতে বলি দিতেই টপ টপ গিলতে শুরু করি। দ্রুত খেতে দেখে আমার দিকে সবাই তা করে তাকিয়ে রইল।
আদি: তোমরা সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
মা: দ্রুত খাচ্ছিস তো তাই। আদি তুই কি কোথাও যাচ্ছিস, অফিসের কাজে?
আদি: ওহহ সরি আমি তোমাদের কাল বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম আমি অফিস থেকে তিনদিনের জন্য ছুটি নিয়েছি ইসানের সঙ্গে ওর গ্রামের বাড়ি যাব বলে।
মা: এতো বছর পর আজ তুই দূরে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছিস এটা শুনে আমি কতটা খুশী হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না।

অভি: দাদাভাই তোমার সঙ্গে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ আজ সব ফ্রেন্ডরা মিলে পিকনিকে যাব।(মুখ কালো করে)
আদি: আচ্ছা আমি ফিরে আসি তারপর তোকে নিয়ে ঘুরতে যাব হ্যাপি?
অভি: আচ্ছা।
বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম ইসানের বাসার উদ্দেশ্যে। ইসানের বাসার সামনে পৌঁছে ইসানকে রাস্তার আসতে বলি কিছুক্ষন পর ইসান চলে আসে অঃতপর আমরা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। টানা ৪ ঘন্টা পর আমরা গ্রামের দেখা পাই। গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে সবার ভালো লাগে বিশেষ করে আমাদের মতো শহরে থাকা ছেলে মেয়েদের।

ছোটবেলায় একবার গ্রামে আমারা দুই পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে এসেছিলাম তখন গ্রামের সৌন্দর্য আরো মনোমুগ্ধকর ছিল। যত দিন যাচ্ছে ততই গ্রামের সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে। হিমুও তখন আমাদের সঙ্গে ছিল গ্রামে গিয়ে অনেক দুষ্টমি করেছিলাম হিমুর সঙ্গে। সেই দিনগুলো হয়তো ফিরে পাব না কিন্তু আজ হিমু সঙ্গে থাকলে খুব ভালো হতো।
ইসান: এই আদি কি হলো কথা বলছিস না কেন? (ধাক্কা দিয়ে)
আদি: কই কিছু না তো বল শুনছি।
ইসান: আমি একা বগ বগ করে যাচ্ছি আর তুই ভাবনার জগতে পরে আছিস। এতো কি ভাবছিস একটু বল তো?
আদি: আরে কিছু না গ্রামটা অনেক পাল্টে গেছে তাই দেখছিলাম।
ইসান: হুম দিন দিন গ্রামও শহরের রুপ নেবে।
কিছুক্ষন পর আমরা ইসানদের বাসায় পৌঁছে যাই ইসানকে ফলো করে আমি ওদের বাড়িতে প্রবেশ করি। বেশ সুন্দর করে বাড়িটি সাজানো নানা রঙের ফুল পাতা দিয়ে সাজানো দেখতে খুবই সুন্দর লাগছিল। বিয়ে বাড়ি বলে কথা সুন্দর করে তো সাজাতেই হবে।

আমাদের আন্টি দেখে খুব খুশী হয়েছে। ফ্রেস হয়ে আসতেই নানা রকমের পিঠা পায়েস মিষ্টি খেতে দিল কারন আন্টি জানে আমি পিঠা পায়েস খেতে খুব ভালোবাসি। আন্টি মাঝে মাঝে পিঠা পায়েস বানিয়ে ইসানের কাছে আমার জন্য পাঠিয়ে দিত। আমার জন্য পাঠালেও খাবারে হিমু ভাগ বসাতো এখানেও হিমু স্মৃতি জুড়ে আছে। আমাদের খাওয়া কমপ্লিট হওয়ার পর ইসান বিয়ের কাজে লেগে পরে কাল বিয়ে সব কাজ তো আজকেই শেষ করতে হবে তাই আমিও ইসানকে সাহায্য করতে শুরু করি। বিকেলটা আমাদের কাজের মধ্য দিয়েই কেঁটে যায় কেন যেন এখানে এসে মনটা হালকা লাগছে তবে সব কিছুর মধ্যেও হিমুকে খুব মনে পরছে।

আমাদের রাতের খাবার খেতে একটু লেট হয় ঘুম আসছিল না তাই ইসানকে নিয়ে ছাদে চলে আসি। দুজনে বসে আড্ডা দিচ্ছি আর আমাদের আড্ডায় মন জোগাতে সঙ্গে রয়েছে সিগারেট।
কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর দুজনে ঘুমাতে চলে আসি। সকালে ঘুম ভাঙে আন্টির ডাকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১০ টা বেঁজে গেছে তাই টুস করে উঠে পরি।
ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে উঠনে চলে আসি। ইসানদের ঘরের সামনে বেশ বড় উঠোন তাই সেখানে গায়ে হলুদের অনুস্ঠানের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আমি অনুস্ঠান যোগ দিতেই কতগুলো পাঁজি মেয়ে আমার মুখে এক গাঁদা হলুদ মাখিয়ে দিল। ঘরে এসে নিজেকে আয়নার সামনে তুলে ধরলাম অঃতপর এই হলুদ আমায় সেই দিন গুলোর কথা মনে করিয়ে দিল।

আমি হিমুর জন্মদিনের কেক একা খেয়ে নিতাম আর এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হিমু আমার জন্মদিনের কেক আমার মুখে মাখিয়ে দিত। আজ হিমু আমার পাশে থাকলে হয়তো ওই পাঁজি মেয়েরা আমার মুখে হলুদ লাগাতে পারত না। হিমু কোথায় তুই, কবে আসবি আমার কাছে ফিরে, কবে আমায় জড়িয়ে ধরে বলবি “আমি তোকে এতোগুলা ভালোবাসি” কবে বলবি? একটিবার ফিরে আয় তোকে যত্ন করে আমার বুকে লুকিয়ে রাখব প্লীজ ফিরে আয়।
ইসান: আদি তুই কাঁদছিস কেন কি হয়েছে তোর কেউ কিছু বলেছে?
আদি: নারে কিছু হয়নি চোখে কি যেন পরেছে।
ইসান: বুঝেছি.. চল এখুনি ফ্রেস হয়ে আয় আমরা বাজারে যাব কিছু ফুল কিনতে।
আদি: আচ্ছা আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।

দ্রুত ফ্রেস হয়ে আমি আর ইসান গাড়ি নিয়ে বরিয়ে পরি। ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা বাজারে পৌঁছে যাই এখানের বাজারটা মোটামুটি অনেকটাই বড়। ইসান ফুল কিনতে ফুলের দোকানে চলে যায় আর আমি বাজারটা ঘুরে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। শহরের বাজার গুলো থেকে গ্রামের বাজার অনেকটাই ভিন্ন তবে দেখে মনে হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে আমাদের যা দরকার সব সব এখানে রয়েছে। কিছুক্ষন পর ইসান ফুল নিয়ে চলে আসে অঃতপর আমরা বাসায় রওনা দেই।

সন্ধ্যার বিয়ের লগ্ন অনুযায়ী বিয়ে শুরু করা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে হিমুকে বড্ড বেশি মনে পরছে। সেদিন আমাদেরও বিয়ে হয়েছিল আর বিয়ের পর দুজনে পালাতে গিয়ে আমি হিমুকে হারিয়েছি। মনটাকে কিছুতেই সামাল দিতে পারছি না তাই বিয়ের অনুস্ঠান থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য বেরিয়ে পরলাম। গ্রামের রাস্তা অন্ধকার আর সেই অন্ধকার রাস্তা দিয়ে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছি। কোথায় যাচ্ছি সেটা আমি নিজেও জানি না।
হিমুর পাগলামী অভিমান দুষ্টমি আমাকে খুব কাঁদায় ওর ভালোবাসাই আমাকে এতোদিন বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি আজও বিশ্বাস করি হিমু একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে ও আমার কাছে ফিরে আসবেই।
সকালে নিজেকে আবদ্ধ করি বাড়িতে আবছা চোখ মেলে দেখি ইসানের বাড়ির সবাই আমার আশপাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১২

আদি: কি হয়েছিল আমার?
ইসান: কাল রাতে বোনের বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর তোকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। খুব ভোরে পাশের বাড়ির একটা ভাইয়া কাজে যাচ্ছিল তখন তোকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে আমাদের সবাইকে খবর দেয় অঃতপর আমরা পৌঁছে তুই দেখি তুই অজ্ঞান অবস্থায় আছিস তোকে বাড়ি নিয়ে আসি তারপর তোর জ্ঞান ফিরে।
আদি: ওহহ.. হয়তো কোনো কারনে মাথা ঘুরে পরে গেছিলাম ইসান আমাদের বাসায় ফিরতে হবে অফিস থেকে কল এসেছিল।

ইসান: তুই আগে সুস্থ হ দেন যাব।
আদি: আমি একদম ঠিক আছি।
কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে খেয়ে দেয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরি। গাড়িতে উঠতে যাব তখন আমার পায়ে ব্যাথা অনুভব করি খেয়ার করে দেখি আমার জুতার নিচে কিছু একটা গেঁথে গেছে। গাড়িতে উঠে জুতা খুলে হাতে নিতেই দেখি একটা ঝুমকো আমার জুতায় আটকে আছে।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৪