এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১২ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১২
লেখিকা বন্যা মৃধা

অচেনা মহিলাটি: ছেলে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
মহিলাটির কথা শুনে আমি বাবা মায়ের দিকে তাকাই কিন্তু তারা আমায় কেয়ার না করে তাদের সঙ্গে কথা বলেই যাচ্ছে। মা আমার হাত ধরে আছে না পরছি সবার সামনে থেকে উঠে চলে যেতে আর না পারছি কিছু বলতে। হয়তো আমি সবার সামনে রিয়াক্ট করতে পারি কিন্তু তাতে বাবার সম্মান নষ্ট হবে তাই কিছু না বলে সবার সঙ্গে বসে রইলাম। কিছুক্ষন পর মা আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল..
মা: ও ইশিতা.. অনেক সুন্দর এবং খুব ভালো মেয়ে আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে।
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি সবাই মিলে আমার সঙ্গে এমন করছে কেন..
মা: আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ঐশীকে দেখ কত ভদ্র মেয়ে আমার আদির সঙ্গে অনেক ভালো মানাবে।

মায়ের জোরাজোরিতে অচেনা মেয়েটির দিকে তাকাই একবার তাকাতেই চোখ অন্যদিকে নিক্ষেপ করি। আমার চোখ আজও শুধু হিমুকে দেখতে চায় হিমুর স্থানে অন্য কোনো মেয়ে থাকবে এটা আমি কখনও ভাবতে পারব না। সবার সঙ্গে বসে ছিলাম কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না। তারা আরো কিছুক্ষন বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে চলে যায় অঃতপর মায়ের দেওয়া আমার মুখের বাঁধন খুলে ফেলি…
আদি: কি হচ্ছিল এসব? আমাকে না জানিয়ে আমার সঙ্গে এত বড় অন্যায় কেন করা হচ্ছে?
মা: আদি আমরা তোর ভালোর জন্যই এসব করছি আর কতদিন হিমুর জন্য ওয়েট করবি?
আদি: আমি ওর জন্য শেষ নিশ্বাস অবধি ওয়েট করব কারন আমি ওকে সত্ত্যি ভালোবাসি আর আমার বিশ্বাস হিমু একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে।

মা: হিমু বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা আমরা কেউ জানি না ওর জন্য নিজেকে কেন কষ্ট দিবি?
আদি: হিমু অবশ্যই বেঁচে আছে আমার জন্য বেঁচে আছে ওকে আমার জন্য বেঁচে থাকতেই হবে।
মা: আমরা তোর মা বাবা বছরের পর বছর তোর কষ্ট দেখে যাচ্ছি কিন্তু আর দেখতে চাই না দিন বদলাচ্ছে কিন্তু এখনও নিজেকে বদলাসনি। অন্য মায়েদের মতো আমি আমার ছেলের মুখে হাসি দেখতে চাই।
আদি: হাসি.. আমার হাসি খুশি তো হিমুকে ঘিরে।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
মা: আমি তোকে এভাবে আর দেখতে পারব না তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইসিতার সঙ্গে তোর বিয়ের ডেট ফিক্সড করব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আদি: হিমুকে ছাড়া অন্য কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পার না।
সেখানে আর এক সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরি অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিসের কাজের শেষের দিকে আমার ফ্রেন্ড ইসানের কল আসে..
ইসান: আদি তোকে একটা খবর দেওয়ার আছে।
আদি: কি বল।
ইসান: জিসান আজ দেশে ফিরে এসেছে।
আদি: কি??
ইসান: হ্যাঁ আদি আমি সত্ত্যি বলছি জিসান দেশে আসছে আমি এখন জিসানের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
আদি: তুই দাঁড়া আমি এখুনি আসছি।

খুব দ্রুত গাড়ি নিয়ে জিসানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই পৌঁছে দেখি জিসানের বাসার সামনে ইসান দাঁড়িয়ে অঃতপর ইসানকে নিয়ে জিসানের বাসায় প্রবেশ করি। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখি জিসান সোফায় বসে আছে। এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে ওর দিকে এগিয়ে যাই আমাদের দেখে বলে..
জিসান: আদি ইসান তোরা?
আদি: জিসান হিমু কোথায়?
জিসান: মানে?
আদি: হিমুকে কোথায় রেখেছিস?
জিসান: পাগলের মতো কি সব বকছিস, আমি হিমুকে কোথায় রাখব..
আদি: একদম ন্যাকামি করবি না। আমি জানি জিসান সেদিন রাস্তা থেকে তুই হিমুকে জোর করে নিয়ে গেছিস।(জিসানের শার্টের কলার ধরে)

জিসান: আদি তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস যে এটা আমার বাসা চাইলে আমি তোকে পুলিশে দিতে পারি।
আদি: জিসান প্লীজ হিমুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে তার বিনিময়ে তুই যা বলবি আমি তাই শুনব তবু আমার হিমুকে ফিরিয়ে দে।(কলার ছেড়ে হাটু গেড়ে)
জিসান: আমি সত্ত্যি বলছি হিমুর ব্যাপারে কিছু জানিনা তবে আমি হিমুকে…
জিসান কথাটা ক্লিয়ার করে না বলেই থেমে গেল।
ইসান: প্লীজ জিসান থেমে থাকিস না এতো বছর আদি নিজেকে একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছিল শুধু বেঁচে আছে হিমু ফিরে আসবে সেই আশা নিয়ে।
জিসান: হ্যাঁ আদি সেদিন রাতে আমি হিমুকে কিডন্যাপ করেছিলাম।
আদি: জিসান আমার হিমু কোথায়?

জিসান: হিমুকে কিডন্যাপ করে আমাদের পুরোনো বাসায় ৭দিন বেঁধে রেখেছিলাম। একটু একটু করে অনেক বুঝিয়েছি হিমুকে যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি কিন্তু হিমু সবসময় একটা কথাই বলতো ও আমাকে নয় তোকে ভালোবাসে। হিমুকে কিডন্যাপ করার ঘটনা বাবা জেনে ফেলে বাবার কথায় আমি ওকে ছেড়ে দেই অঃতপর আমি আমার ভালোবাসার থেকে দূর চলে যাই তবে আমি হিমুর কোনো ক্ষতি করিনি। আদি আমি ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা ও বুঝবে কিন্তু ও বুঝেনি তাই আর জোর করিনি। হয়তো আমার রাগ তোর উপর ছিল তবে আমার ভালোবাসার উপর নয়।

আদি: তুই মিথ্যে বলছিস। এই জিসান একটিবার বলনা হিমুকে কোথায় রেখেছিস!
জিসানের বাবা: আদি জিসান সত্ত্যি কথা বলছে। আমি ওকে বলেছিলাম হিমুকে ফিরিয়ে দিতে তাই হিমুকে ছেড়ে দেয়।
আদি: কিন্তু আঙ্কেল হিমু তো আজও ফিরে আসেনি আমরা আজও খুঁজে পাইনি ওকে।
জিসান: কি হিমু ফিরে যায়নি, তাহলে ও কোথায় গিয়েছে?
আদি: জানি না জিসান ও আমাকে একা করে কোথায় চলে গিয়েছে। আজও হিমুকে খুঁজি কিন্তু ওর দেখা এখনও আমি পাইনি।

আর কিছু না বলে আমি আর ইসান জিসানের বাসা থেকে প্রস্থান করি। ইসান চলে যায় তার বাসায় আর আমি আমার বাসায়। রুমে এসে হিমুর দেওয়া টি-শার্টটি হাতে নিয়ে বসে আছি। বিকেল গড়িয়ে রাত হয় তবু হিমুকে নিয়ে আমার ভাবনার শেষ হয়না। হিমুকে ফিরে পাওয়ার একটাই পথ ছিল সেটা হল জিসান কিন্তু জিসানের থেকে সব শুনে সেটাও আজ হারিয়ে ফেললাম।
এই হিমু কেন এভাবে আমার থেকে হারিয়ে গেলি.. আমার জন্য কি তোর একটুও কষ্ট হয় না? কবে আমার কাছে ফিরে আসবি, কবে আমার সব কষ্ট তোর ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবি? দেখ আদি আজও তোর জন্য অপেক্ষা করছে প্লীজ এক বার আমার কাছে ফিরে আয়।
অভি: দাদাভাই তুমি আজও হিমু দিদিয়াকে জন্য কাঁদছো?
আদি: কই না তো চোখে কি যেন পরেছে। (চোখ মুছে)

অভি: জানো দাদাভাই আমিও কাঁদি আমার দ্বিতীয় ভালোবাসার জন্য কিন্তু পাই না। আচ্ছা দাদাভাই তুমি হিমু দিদিয়াকে অনেক ভালোবাসতে তাইনা?
আদি: ভালোবাসতাম কিনা জানি না তবে আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকে ভালোবাসব।
অভি: আমিও তোমাদের মতো এমন লায়লা মজনুর প্রেম শিখতে চাই। আমায় একটু শেখাও তো আমিও আমার লায়নাকে খুঁজে হাত ধরে ঘুরতে চাই।
আদি: হয়েছে আর তোকে ন্যাকামি করতে হবে না কত টাকা লাগবে সেটা বল।
অভি: আমার দাদাভাই এতোগুলো ভালো। না বলতেই সব বুঝে ফেলে মাত্র ৫ হাজার টাকা লাগবে কাল ফ্রেন্ডদের সঙ্গে ঘুরতে যাব।
আদি: আচ্ছা পেয়ে যাবি চল ডিনার করে আসি।
আমি আর অভি ডিনার করার জন্য নিচে নামতেই দেখি বাবা মা দুজনেই খাবার টেবিলে বসে আছে তাই আমরাও খাবার টেবিলে বসে পরি অঃতপর সবাই খেতে শুরু করি।
মা: আদি আমি আর তোর বাবা বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছি।

আদি: কি? আমার পারমিশন না নিয়ে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে দিলে? (টেবিল থেকে উঠে)
মা: আমরা তোর মা বাবা তোর কিসে ভালো হবে আর কিসে খারাপ হবে সেটা আমরাই দেখব।
আদি: বাবা তুমি মাকে একটু বোঝাও এ বিয়ে আমি করতে পারব না কারন আমি হিমুকে ভালোবাসি ওকে ছাড়া আর অন্য কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারব।
বাবা: আদি তোর মা এসব তোর খারাপের জন্য করছে না।
আদা: বাবা তুমিও এমন বলতে পারলে?
মা: হিমুর জন্য আর কত বছর অপেক্ষা করবি?

আদি: যতদিন এই আদি বেঁচে থাকবে ঠিক ততদিন আমি ওর জন্য ওয়েট করব। আমার বিয়ে নিয়ে যদি আর কখনও বাসায় কোনো কথা হয় তাহলে হয়তো আর কোনোদিন আমার মুখটাই দেখতে পারবে আর এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।
অভি: দাদাভাই শোনো.. না খেয়ে চলে যেয়ো না।
মা কেন তুমি এসব করছো দাদাভাই কতটা কষ্ট পাচ্ছে তা কি তুমি বুঝো না? এসবের জন্য দাদাভাই আমাদের থেকে দূরে চলে যাক সেটা চাও?
দাদাভাই যদি এবাসা থেকে চলে যায় তাহলে আমিও চলে যাব।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১১

(বাসা থেকে বেরিয়ে সব ফ্রেন্ডদের কল করলাম সেই রাস্তায় মোড়ে আসতে। একটু পরে এক এক করে সবাই এলো অঃতপর সবাই মিলে আড্ডা দিতে শুরু করি। আমাদের সবাইকে সঙ্গ দিতে রয়েছে সবার হাতে একটা একটা সিগারেট। নিজেদের মতো সবাই সিগারেট টেনে যাচ্ছে আমি সবার থেকে কম নয় বরং অন্যদের থেকে কিছুটা এগিয়ে আছি। কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর অন্যরা চলে যায় আমি আর ইসান রাস্তা দিয়ে এক পা এক পা এগোতে থাকি। অঃতপর ইসান বলে ওঠে…

ইসান: হঠাৎ করে বাবা বোনের বিয়ে ঠিক করছে কাল গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে তুইও আমার সঙ্গে চল।
আদি: না ইসান আমি এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে পারব না এই শহরে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
ইসান: আদি আমরা দুদিন থেকে চলে আসব। গ্রামে গেলে তোর মনটাও ভালো হবে।
আদি: আমার মন ভালো হওয়ার কারনটা তুই জানিস।
ইসান: মা তোকে নিয়ে যেতে বলেছে তুই না গেলে আমায় বাড়িতে ঢুকতে দেবে না প্লীজ চল না নাহলে আমি গ্রাম ছাড়া হয়ে যাব।(পা জড়িয়ে ধরে)
আদি: আরে কি করছিস এসব পা ছাড়।
ইসান: আগে বল কাল আমার সঙ্গে গ্রামে যাবি হ্যাঁ না বললে কোনোদিন ছাড়ব না।
আদি: আচ্ছা যাব।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১৩