এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১১ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১১
লেখিকা বন্যা মৃধা

ফোন হাতে নিয়ে হিমুকে কল দিলাম..হিমুর ফোনের রিং আমার কানে বেঁজে ওঠে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি রাস্তার সাইডে হিমুর ফোন পরে আছে..
হিমুর ফোন এখানে পরে আছে কেন হিমু কোথায়.. আশেপাশে ওকে অনেক খুঁজলাম কিন্তু ওকে কোথাও পেলাম না। বাসায় এসে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করি হিমুর কথা কিন্তু তারা বলে হিমুকে দেখেনি অঃতপর আমরা সবাই মিলে দুই বাসার প্রত্যেকটা স্থানে খুঁজি কিন্তু কোথাও পাইনি। কোথায় যেতে পারে হিমু তাও আবার রাস্তায় ফোন ফেলে। পাড়ায় প্রত্যেক বাসায়, ওর সব ফ্রেন্ডদের বাসায় খোঁজা হয় কিন্তু হিমুকে কোথাও পাওয়া গেল না।
বাবা আর আঙ্কেল হিমুকে খোঁজার জন্য রাস্তায় চেক পোস্ট বসিয়ে দিল কিন্তু হিমুকে পাওয়া গেল না। সারারাত খুঁজেও হিমুকে পাওয়া গেল না। সকালে নিজেকে আবিস্কার করি আমার বিছানায়। চোখ খুলতেই দেখি মা আর হিমুর মা আমার পাশে বসে কাঁদছে আর বাকি সবাই আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

আদি: আন্টি হিমু ফিরে এসেছে?
আন্টি আমার কথার উত্তর না দিয়ে অনবরত কাঁদতে থাকে।
মা: হিমুকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি তবে তোর বাবা খুব তাড়াতাড়ি হিমুকে খুঁজে তোর কাছে নিয়ে আসবে।
মায়ের উত্তর শুনে বেরিয়ে পরি হিমুকে খৌঁজার উদ্দেশ্যে। প্রতিটা যায়গায় খুঁজলাম কিন্তু হিমুকে কোথাও পেলাম না। আজ বাইকের পিছনে হিমুর থাকার কথা ছিল কিন্তু সেই স্থান আজ ফাঁকা পরে আছে।
কোথায় চলি গেলি আমাকে ছেড়ে আমার কথা কি তোর একবারও মনে পরে না..আদি যে তোকে ছাড়া বড় অসহায় প্লীজ হিমু একবার ফিরে আয়।

এভাবে কেঁটে যায় ৪ থেকে ৫ দিন কিন্তু হিমুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রতিটি স্থানে শতবার করে খোঁজ করি কিন্তু আমি ব্যার্থ হই।
নিজেকে রুমে আবদ্ধ করে সেই কাঠের বাক্স আর হিমুর ফোন বুকে আঁকড়ে ধরে বসে আসি আজ চোখের জলও পরছে না হিমুর সঙ্গে সঙ্গে আজ যেন আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলছি। হিমুকে এভাবে আমি হারিয়ে ফেলব তা কখনও ভাবিনি। হঠাৎ হিমুর ফোনে মেসেজ বেঁজে ওঠায় আমি থমকে উঠি। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও মেসেজ বক্সে গিয়ে মেসেজটা চেক করি। মেসেজ চেক করতে গিয়ে একটা মেসেজের উপর আমার নজর
পরে। মেসেজটা ওপেন করতেই আমি অবাক হই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেসেজে স্পষ্ট লেখা “অভিনন্দন হিমু। তোমার মুখের হাসিটা কিছু মূহুর্তের জন্য”। কল লিস্ট চেক করে দেখি যে নম্বর থেকে মেসেজ করা হয়েছিল সেই নম্বর থেকে ৩ বার কলও করা হয়েছে তবে হিমু রিসিভ করেনি। আমি পুনরায় অচেনা নম্বরে করি কিন্তু নম্বরটি বন্ধ পাই তারমানে হিমু কোথাও চলে যায়নি ওকে কেউ জোর করে নিয়ে গেছে কিন্তু কে নিয়ে যেতে পারে? জিসান এসব করেনি তো?
আর ভাবতে না পেরে নিচে গিয়ে সবাইকে ব্যাপারটা জানাই অঃতপর বাবা, আঙ্কেল আমি জিসানের বাসায় রওনা হই। জিসানের বাসায় পোঁছে কাউকে পেলাম না শুধু কিছু দারোয়ান রয়েছে বাসা পাহারা দেওয়ার জন্য। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করায় তারা জানায় জিসানের পুরো পরিবার কিছুদিন আগে অ্যামেরিকা চলে গেছে তবে এদেশে ফিরে আসবে কবে তা তারা জানে না।

জিসানের চলে যাওয়ায় আমার মনে সন্দেহেরর ইশ্বারা দিচ্ছে কেন যেন মনে হচ্ছে হিমুর হারিয়ে যাওয়ার পিছনে জিসানের হাত রয়েছে। বাবাকে বলে হিমুর ফোনের সেই অচেনা নম্বর ট্রাক করার ব্যবস্থা করি কিন্তু আমি এটাতেও ব্যার্থ হই কারন অচেনা নম্বরটি কোনো ♥ লোডের দোকানের নম্বর। দোকানের আশেপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় কিছুই জানতে পারলাম না।
১০ দিন হয়ে যায় তবুও না হিমুর কোনো খবর মেলে না। নিজেকে আজ অসহায় লাগছে। কোথায় চলে গেলি আমায় একা করে একবারও আমার কথা তোর মনে পরে না.. এই হিমু তোকে ছাড়া আমি এক মূহুর্তও ভালো থাকতে পারব না প্লীজ একটিবার আমার কাছে ফিরে আয় আর কখনও তোকে আমার হাত ছাড়া করব না।
হিমুর সাথে কাঁটানো মূহুর্ত আর ওর দেওয়া টি-শার্টটি আমার কাছে পরে আছে কিন্তু হিমু নেই। এক বাক্স ভালোবাসার শুধু বাক্সটাই পরে আছে কিন্তু হিমু নেই।

আরো দুদিন পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিস্কার করি। চোখ মেলে দেখি আমার পাশে বাবা মা আর অভি দাঁড়িয়ে আছে..
আদি: মা হিমুকে পাওয়া গেছে?
মা: আদি এখনও হিমুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। (কান্নাজরিত কন্ঠে)
আদি: মা হিমু কি সত্ত্যি আমার থেকে চলে গেছে, ওকি আমার কাছে আর কখনও ফিরবে না?
মা উত্তর না দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
আদি: কেঁদো মা হিমু ফিরে আসবে ওকে ফিরে আসতেই হবে। ও একদিন আমার কাছে ফিরে আসবেই এটা আমার বিশ্বাস। আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ওর জন্য অপেক্ষা করব।

হসপিটাল থেকে বাসায় এসে জানতে পারি হিমুর পরিবার বাসা ছেড়ে চলে গেছে মাকে জিজ্ঞেস করায় বলল আমি যেদিন অসুস্থ হয়ে পরি আমায় নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার পর থেকে তারাও উধাও হয়ে যাও।
আঙ্কেল আন্টির এভাবে চলে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারছি না। তাদের নম্বরে কল করে বন্ধ পাই অঃতপর অভির কাছে জানতে পারি হিমুর ছোট বোনের নম্বরও সেদিন থেকে অফ।
হিমু ফিরে আসবে এই বিশ্বাস নিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করি। বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে আমি কলেজ যাব।

আজ কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই বাবা মায়ের মুখে হাসি ফিরে এলো। নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হই তবে আজকে থেকে বাইকে নয় রিক্সায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই কারন বাইকের পিছনে হিমুর থাকার কথা ছিল। আজ যখন হিমু আমার পাশে নেই তাই বাইককে নিজের থেকে দূরে রাখলাম। কলেজে প্রবেশ করতেই ফ্রেন্ডরা আমার কাছে ছুটে এলো একে একে সবাই হিমুর ব্যাপারে জানতে চাইল কিন্তু আমি ওদের কোনো উত্তর না দিয়ে ক্লাসে চলে এলাম। ক্লাসরুমে প্রবেশ করতেই হিমুর স্মৃতি আমায় আঁকড়ে ধরল।

নিজেকে সামলে ক্লাসে মনোযোগ দেই। ক্লাসের শেষে হিমুর বেস্ট ফ্রেন্ড শ্রুতিকে দেখতে না পেয়ে আমার ফ্রেন্ডেদের কাছে শ্রুতির ব্যাপারে জানতে প্রশ্ন করি। ওরা উত্তরে বলে কিছুদিন যাবৎ শ্রুতিও কলেজে আসছে না। তাই বাসায় না ফিরে শ্রুতির বাসায় চলে যাই সেখানে পৌঁছে শ্রুতির থেকে জানতে পারি ওর নাকি কিছুদিন পরে বিয়ে তাই ও কলেজে আসছে এক রাশ কষ্ট নিয়ে বাসায় চলে আসি।

হিমুর স্মৃতি নিয়ে পথ চলতে শুরু করি প্রতিনিয়ত জিসানের বাসায় গিয়ে খবর নিতাম তারা এখনও ফিরেছে কিনা কিন্তু প্রতিবার আমি ব্যর্থ হই। আঙ্কেল আন্টিকে অনেক খুঁজেছি তাদের খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
রোজ বিকেলে হিমুর পছন্দের যায়গায় গিয়ে হিমুকে অনুভব করতাম আমার বিশ্বাস আছে যে হিমুকে আমি একদিন ঠিক খুঁজে বের করব সেদিন আর আমাদের মধ্যে কোনো দুরত্ব থাকবে না আর কোনো মূল্যে আমার থেকে ওকে হারিয়ে যেতে দেব না। মাঝে মাঝে রাত দিন আমার রাস্তায়ই কেঁটে যায়।

কিছুদিন পরে আমার এক্সাম চলে আসে তাই পড়াশুনায় মনোযোগ বসিয়ে এক্সাম কমপ্লিট করি।
হিমুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে কেঁটে যায় ৭ বছর এদিকে আমার পড়াশুনাও কমপ্লিট হয় পাশাপাশি একটা জবও করছি তবে আজও সবাইকে খুঁজে বেড়াই আজও হিমুর জন্য রাস্তায় ওয়েট করি, ওর বার্ডেতে একা একা কেক কাঁটি। ওর প্রতিটি বার্ডের গিফট যত্ন সহকারে রেখে দেই। নিজেকে এটা বলে সাত্বনা দেই যে হিমু পাশে নেই তাতে কি হয়েছে হিমুর স্মৃতিগুলো তো আমার কাছে আছে আমি নাহয় ওর স্মৃতিগুলোকে নিয়ে ওর জন্য ওয়েট করব।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১০

প্রায়ই কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে একা একা বসে থাকতাম কিন্তু কিছুদিন যাবৎ কলেজে যাওয়া হয়না তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ কলেজে যাব। কলেজে পৌঁছে আমাদের সেই ক্লাসরুমে বসে হিমুর সঙ্গে কাঁটানো খুনসুটি মূহুর্তগুলো আমায় হিমুর কথা আরো বেশি মনে করিয়ে দেয়। প্রায় ২ ঘন্টা পর বাসায় ফেরার জন্য আমি কলেজ প্রস্থান করি।
বাসায় ফিরে দেখি বাবা মা খুশিতে মেতে উঠেছে কারনটা অজানা আগ বাড়িয়ে কারনটা জানতে চাইলাম না। রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি এটা নতুন কিছু নয় হিমু চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাই। যে বারন করত সেই আমায় একা রেখে চলে গেছে তাই আর সিগারেটা বন্ধ করিনি যেদিন ও নিজে এসে বন্ধ করতে বলবে একমাত্র সেদিনই বন্ধ হবে এর আগে নয়।

আজ হিমুকে বড্ড বেশি মনে পরছে। মুখ দিয়ে যতটা সিগারেটের ধোঁয়া বের হচ্ছে ততটাই চোখ বেয়ে জল পরছে। নিজেকে সামলে সিগারেট ফেলে দিয়ে ঘুমাতে চলে আসি হিমুর স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে পরি।
সকালে মায়ের ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। মায়ের জোরাজোরিতে দ্রুত ফ্রেস হয়ে রুম প্রস্থান করি। নিচে নামতেই দেখি বাবা মায়ের সঙ্গে কিছু লোক বসে আছে হয়তো কোনো রিলেটিভ হবে তাই মাথা না ঘামিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসি। অঃতপর একটা মহিলা বলে ওঠে…
অচেনা মহিলাটি: ছেলে আমাদের পছন্দ হয়েছে।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১২