এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১০ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১০
লেখিকা বন্যা মৃধা
কোনো মতে লাশ থেকে জীবিতি হয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে এক চেনা অচেনা অদ্ভুত লোক জোকার মার্কা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
~~আদি তুই?
আদি: হ্যাঁ কেন আমার স্থানে অন্য কেউ থাকার কথা ছিল?
~~না আমি তো ভেবেছিলাম অভি আমায় জড়িয়ে ধরেছে তাই আমি থাপ্পর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
আদি: তাই নাকি.. তো আমার হবু বউ এখন অভির রুমে কি মতলবে আসা নাকি ওর সঙ্গে প্রেম করতে আসা হয়েছে কোনটা?
~~একদম বাজে কথা বলবি না। তুই তোর রুমের ওয়াশ রুম ছেড়ে এখানে এসেছিস কেন?
~~তখন কলেজ থেকে ফেরার সময় বাইকে বসে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম যে তুই এখন অভির রুমে আসবি তাই আগে থেকে এখানে এসে বসে আসি তোর সঙ্গে প্রেম করব বলে।
~~একটুও ফাজলামি করবি না। সত্ত্যি করে বলতো এখানে কি করছিস?
আদি: উগান্ডার পেত্নী তোর হবু বরের তো দুদিন পরে বিয়ে তাই মা রুমে নতুন জিনিস বসাচ্ছে তাই আমি অভির রুমে।
~~ওহহ আচ্ছা আমায় ছাড় আমি বাসায় যাব।
আদি: ছাড়তে পারি কিন্তু একটা শর্তে।
~~মহারাজা কি শর্ত বলে ফেলুন..
আদি: আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একটা ৫ মিনিটের চুম্মা দে তারপর আমি ভদ্র ছেলের মতো তোকে ছেড়ে দেব প্রয়োজনে কোলে তুলে তোকে পৌঁছে দেব।
~~আমার দ্বারা হবে না। আমায় ছাড় নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করব তারপর সবাই এসে তোকে বকা দেবে।
আদি: তোর আইডিয়া পানিতে ডুবে মরে গেছে কারন এখন তো আমাদের মতেই বিয়ে হবে আর বিয়ের আগে আমরা প্রেম করতেই পারি আর প্রেমে আমার বাবা কেন তোর বাবাও বাঁধা দেবে না।
~~আমায় না ছাড়লে কিন্তু তোকে কামড় দিব।
আদি: তোর কামড় খেতে আমি সবসময় রাজি। কামরটা যদি ঠোঁটে দিস তাহলে তোকে নিয়ে ১৫ সমুদ্রও পাড়ি দিতে রাজি।
আদি কথাগুলো আমার মুখের খুব কাছে এসে বলল। আদির মুখে এসব কথা শুনে আমার কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে হয়তো এমন অনুভূতি হওয়ার কারন আদির কাছে আসা। মূহুর্তেই আমার হার্টবিট হাজার গুন বেড়ে গেল। আমার নাকের সঙ্গে আদির নাক স্পর্শ করতেই আমার সম্পূর্ন শরীর কেঁপে ওঠে। আদির চোখ নেশায় হাবুডাবু খাচ্ছে ধীরে ধীরে ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে। আমার দিকে যত এগোতে থাকে ততই আমার শরীরের কম্পন বাড়তে থাকে। আজ কেন যেন আদিকে বাঁধা দিতে মন চাইছে না বরং মন চাচ্ছে আদির নেশায় ডুবতে। ভয়ে আমি চোখ করে নেই আদি আমার মুখের এতোটাই কাছে যে নিশ্বাস আমার মুখে এসে পরছে।
আমার ঠোঁটে আদির ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই আমি এক ঝলক কেঁপে উঠি সঙ্গে সঙ্গে আদি আমায় ওর সঙ্গে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আদি আমার এতোটাই কাছে যে ওর নিশ্বাস আমার মুখে পরছে সঙ্গে হৃদ স্পন্দনও ত্রমেই বাড়তে থাকে। হঠাৎ ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দ পেতেই আদি আমায় ছেড়ে দেয় আর আমি ওর থেকে কিছুটা সরে দাঁড়াই। তাকিয়ে দেখি আমাদের শত্রু দাঁড়িয়ে আছে মানে অভি।
অভি: ভাইয়া এখানে কি কোনো রোমান্টিক মুভির শুটিং চলতেছিল আমি কি ভুল সময়ে প্রবেশ করে তোমাদের রোমান্সে বিঘ্ন ঘটিয়েছি।
আদি:কোথাও গেলে নক করে যেতে হয় তা শিখিসনি?
অভি: যা বাবা এখন আমার দোষ হয়ে গেল এদিকে তোমরা ওয়াশ রুমের দরজা খুলে রোমান্স করতছো আর আমি দেখলেই যত দোষ।
অভির কথায় উত্তর না দিয়ে আমরা ওয়াশ রুম থেকে রুমে আসি অঃতপর অভি বলে..
অভি: তোমাদের অনেকগুলো ধন্যবাদ।(হাসি দিয়ে)
~~ওই অকারনে ধন্যবাদ দিলি কেন? তোর মতলবটা একটু বল তো।
অভি: এই যে রোমান্সের নতুন ফর্মুলাটা আমায় শেখানোর জন্য আমিও তোমার বোনের সঙ্গে এভাবে রোমান্স করতে চাই।(সয়তানি হাসি দিয়ে)
~~কি বললি আমার নিরীহ বোনের সঙ্গে এসব করবি তোকে তো আজ চিবিয়ে খাব।(অভির কান ধরে)
অভি: আমি বলিনি মা বলে বড়দের অনুসরন করে চলতে তাই আমরা তোমাদের অনুসরন করে চলব এটা।
~~একদম চুপ সয়তান ছেলে।
আর বগ বগ না করে আমি বাসায় চলে আসি কারন মা বলে হবু শশুরের বাড়িতে বেশিক্ষন থাকতে নেই আমি  খুব ভদ্র মেয়ে তো তাই আমি বেশিক্ষন না থেকে টুস করে নিজ বাসায় চলে আসি।
বিয়ের দুদিন বাকি আগের মতো আমাদের পালানোর ধান্দা নেই কারন আমরা এখন নিজেদের ইচ্ছেতেই বিয়ে করব। ফাজলামি আর শপিং এ আমাদের এই দুদিন কেঁটে যচ্ছিল তবে এদুদিনে বিকেলটা শুধু আমাদের দুজনের জন্যই ছিল কারন আমাদের পছন্দের যায়গায় যাওয়া মিস হয়নি।
অবশেষে বিয়ের দিন চলে আসে আবার নতুন করে নতুন সাজে আমাদের বাসা সেজে ওঠে। সবার মুখে আলাদা একটা খুশির ছাপ দেখা যাচ্ছে কিন্তু আমার কেন যেন সবার খুশিটা সহ্য হচ্ছে না তবুও সহ্য করে নিলাম। গায়ে হলুদ থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত আদির সঙ্গে আমার ফোনে কথা চলতে থাকে। এক ঘন্টা যাবৎ আমাকে আটা ময়দা দিয়ে সাজানো হচ্ছে তবু এদের সাজানো হচ্ছে না মনে হচ্ছে সাজাতে সাজাতে এরা আমায় পত্নী বানিয়ে দেবে। মাকে বলেছি আদির সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে কোনো অচেনা ছেলের সঙ্গে নয় তাও আমাকে পেত্নীর মতো সাজতেই হবে।
কিছুক্ষন পর আমাদের বিয়ে আমি নতুন বউয়ের মতো রুমে একা একা বসে আছি হঠাৎ আমার ফোনে রিং বাজতেই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি অচেনা একটা নম্বর থেকে কল আসছে। ভেবেছিলাম আদি কল করেছে কিন্তু অন্য নম্বর দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল তাই আর রিসিভ করলাম না। বার বার সেই নম্বর থেকে কল আসল তবুও রিসিভ করলাম না। হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ এলো। চেক করে দেখি ” অভিনন্দন মিস হিমু। তবে তোমার মুখের হাসি শুধু কিছু মূহুর্তের জন্য।”  আমি মেসেজটা দেখে কিছুটা অবাক হই তবু মাথা নষ্ট না করে আমার বিয়েতে মনোযোগ বসাই।
খুব ধুমধাম করে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পর আমাদের দুজনে একটা রুমে বসানো হয় আমরা তখন চোখে চোখে প্রেম করছিলাম কিন্তু কতগুলা ভূত পেত্নী আমাদের প্রেমে ব্যাঘাত ঘটাল মানে অভি আর ঐশীর মতো কিছু সয়তান আমাদের পাশে এসে বসল। এদিকে আমার পেটে, মাথায় ঘুরতেছিল সয়তানি বুদ্ধি আর চেঁপে রাখতে না পেরে আদিকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
কিন্ত তার আগে এই সয়তানের হাড্ডিগুলোকে রুম থেকে বিদায় করতে হবে তাই অভিকে আর বোনকে উদ্দেশ্য করে বললাম..
~~তোরা সবাইকে নিয়ে রুম থেকে বের হয় আদির সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।
অভি: মায়ের বারন আছে তাই আমরা তোমাদের সঙ্গেই থাকব।
~~ওই একদম ন্যাকামি করবি না। আমরা তো তোদের থেকে বড় তাই যা বলেছি তাই শুনবি আর যদি না শুনিস আমি নিজেই তোদের প্রেমে রাক্ষুসী রুপে আক্রমন করব।
অভি: আচ্ছা যাচ্ছি কিন্তু এটা বলো তো আমরা চলে যাওয়ার পরে তোমরা দুজনে কি করবা?
~~প্রেম করব তবু তোরা এখান থেকে এখন বিদায় হ।
আমার আর আদির ধমকে সবাই রুম থেকে প্রস্থান করল অঃতপর আমি আদির কাছে এসে বলি..
~~চল এখন আমরা পালিয়ে যাই।
আদি: কি?? তোর মাথা ঠিক আছে তো?
~~সম্পূর্ন ঠিক আছে আর মাথার ব্যাটারিতে ফুল চার্চও। আমার সেই ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে বিয়ের পর বরের সঙ্গে পালাব প্লীজ চল না আমরা পালিয়ে যাই।
আদি: আমরা তো এখন আমাদের ইচ্ছেতেই বিয়ে
করেছি তাহলে কেন পালাব.. এখন এসব করলে সবার সম্মান নষ্ট হবে।
~~তার মানে তুই আমায় নিয়ে পালাবি না এটাই তো?
আদি: আরে উগান্ডার পেত্নী শুধু শুধু আমরা কেন পালাব?
~~ধুর তোকে বিয়ে করাই আমার ভুল ছিল এর থেকে জিসানকে বিয়ে করলে আমায় নিয়ে এতোক্ষনে আকাশে নিয়ে যেত চাঁদ দেখানোর জন্য।
আদি: কি বললি তুই??(চোখ রাঙিয়ে)

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৯

~~এই আদি চল না আমরা তোর বিএম ডব্লিউতে পালিয়ে আকাশে ঘুরতে যাই প্লীজ প্লীজ..
আদি: ওকে কিন্তু নেক্সট টাইম জিসানের নাম তোর মুখে শুনলে তোকে মেরে আমিও মরে যাব।
~~আচ্ছা প্রমিজ আর কখনও বলব না হ্যাপি?
আদি: হুম এখন চল।
~~না না আমরা পালাচ্ছি তাই আলাদা আলাদা চুপিচুপি সবার আড়ালে যাব আমি আগে যাচ্ছি তারপর তুই।
আদি: ওকে।
আমার প্লান অনুযায়ী নিজেকে একটা কালো কাপড় দিয়ে মুড়ে সবার চোখের আড়ালে বাসা থেকে বের হই। আমি সেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি আদিও কিছুক্ষন পর এলো। আমি সেখানে একা দাঁড়িয়ে থাকি আর আদি ওর মোটরগাড়ি আনতে চলে  গেল।
 (পাগলী একটা বউ জুটছে আমার কপালে বিয়ের পর যে ওকে নিয়ে এভাবে পালাতে হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। বাইক নিতে এসে বাবাকে কল করে সবটা জানিয়ে দিলাম শুধু শুধু তারা আমাদের জন্য টেনশন করবে তা তো হতে পারে না।
বাইক নিয়ে সেখানে পৌঁছে দেখি হিমু নেই। হিমু তো এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল এটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় যেতে পারে, বাসায় চলে যায়নি তো.. বাইক রেখে আশেপাশে খুঁজে দেখলাম কিন্তু হিমুকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। ফোন হাত নিয়ে হিমুকে কল দিলাম.. হিমুর ফোনের রিংটন আমার কানে বেঁজে ওঠে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি রাস্তার সাইডে ওর ফোনটা পরে আছে…)

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১১