এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৯ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৯
লেখিকা বন্যা মৃধা
আমরা জিসানকে পাশ কাঁটিয়ে চলে যাচ্ছি তখন কেউ আমার হাত ধরে থামিয়ে দেয় পিছনে ফিরে দেখি অন্য কেউ নয় জিসানই আমার হাত ধরেছে।
~~ জিসান আমার হাত ছাড়ো।
জিসান: যদি না ছাড়ি তাহলে কি করবে?
~~ তোমায় আমি ভালোভাবে বলছি আমার হাত ছেড়ে দাও নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
জিসান: না ছাড়লে কি তোমার বাবাকে আমার কথা বলে দেবা? বলে কোনো লাভ হবে না আমার বাবার কাছে তোমার বাবা কিছুই না আমি চাইলে তোমায় মূহুর্তেই আমার করতে পারি।
জিসানের কথা বলা শেষ হওয়া মাত্রই আদি জিসানের গালে থাপ্পর বসিয়ে দিল অঃতপর বলল..
আদি: হিমু আমার হবু স্ত্রী কারন আমরা আবার বিয়ে করতে যাচ্ছি আমি চাই তোর নজর হিমুর থেকে সরিয়ে নে সেটা তোর জন্যই ভালো হবে।
জিসান রাগে আগুন হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এখুনি সেই আগুনে কলেজ ক্যাম্পাস সব পুরে শূন্য হয়ে যাবে। সব পুরলেও আমি আদি পুরব না কারন দুদিন পরে আমাদের বিয়ে জিসানের আগুনে পুরে গিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাই না তাই আদিকে নিয়ে সেখান থেকে কেঁটে পরি।
সোজা ক্লাসে এসে ক্লাসে মনোযোগ দেই। ক্লাসে সবই উপস্থিত হলেও জিসান উপস্থিত হয়নি হয়তো বেচারা কষ্ট পেয়ে বাসায় চলে গেছে অবশ্য তাকে যেতেই হতো কারন যে আগুন জ্বলছিল তাকে তো ফিরিজে ঢুকতেই হবে। ক্লাস শেষ করে আমরা কলেজের পাশে একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে চলে আসি তারপর খাবার অর্ডার করি। খাবার দিতেই দুজনে পাল্লা দিয়ে খেতে শুরু করি।
আদি: হিমু আমিনা বাসায় ওয়ালেট রেখে এসেছি তাই বলছি কি আজকের বিলটা তুই একটু পে করে দে আমি বাসায় পৌঁছেই ডাবল টাকা দিয়ে দেব।
~~ এক টাকাও দেব না। তুই এতো ছ্যাঁচড়া কেন রে হবু বউয়ের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করে না?
আদি: অন্য মেয়ে হলে ঠিকই লজ্জা লাগতো কিন্তু হবু বউ তো তাই লজ্জা লাগছে না বরং ভালো লাগছে।  আমার মানে তো তোর আর তোর মানে তো আমারই তাই না।
~~ তোর কিডনি যদি তোর হয় তাহলে তো সেটা আমারও তাই ভাবছি তোর কিডনিটা বিক্রি করে বিল পে করব তারপর বাদাম ভাজা খেতে খেতে বাসায় চলে যাব আইডিয়াটা কেমন লাগল মি. আদি..
আদি: পুরোটাই তিতা এই হিমু এবারের মতো বিলটা দিয়ে দে না প্লীজ!
~~থাক আর ন্যাকা কান্না করতে হবে না শেষবারের মতো দিয়ে দিচ্ছি নেক্সট টাইম এমন ভুল করলে সত্ত্যি সত্ত্যি তোর কিডনি বিক্রি করে বাদাম ভাজা খাব।
আদি: আচ্ছা।
বিল পে করে আমরা পরবর্তী গন্তব্যে পা বাড়াই কারন আমাদের প্লান হলো কলেজ শেষ হওয়ার পর দুজনে মিলে ঘুরব। আমি আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি
আর আদি ধীর গতিতে ওর মোটর বাইক চালাচ্ছে। রাস্তায় আমরা জ্যামে আটকে যাই তখন আমার চোখে জিসানের চোখ ধরা পরে সেদিকে আর না তাকিয়ে  আমি আদিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাই। যায়গাটা বেশ নির্জন তেমন কোনো মানুষ এখানে আসে না তবে আমরা কলেজ শেষ করে মাঝে মাঝে এখানে ঘুরতে আসতাম। আমি আদির হাত জড়িয়ে ধরে মনের শান্তিতে হাঁটতেছি কিন্তু কোনো এক অজানা আগুনত্বকের সেটা সহ্য হয়নি।
সুভ সময়ে ফোনে মেসেজের সাউন্ড কানে পৌঁছাতেই আমার মনটা একদম নষ্ট বিনষ্ট করে দিল। ফোন চেক করে দেখি মেসেজটা কোনো  গ্রামীণ বা বাংলালিংক অফিস থেকে আগত হয়নি আমার শত্রু মানে জিসান মেসেজ করেছে। “হিমু তুমি আমার সঙ্গে এসব করে একদম ঠিক করোনি যেভাবে হোক তোমাকে তো আমার করবই। এই জিসান একবার যেটা চায় সেটা নিজের করেই ছাড়ে।”
মেসেজটা আদিকে দেখাতেই আদি আমায় এক গাঁদা  বকুনি দিতে শুরু করল..
আদি: যা ওই জিসানের সঙ্গে আর একটু হাত ধরে কলেজ চক্কর দিয়ে আয় আর আমি তোদের দেখে গোলাপ আর শিউলী ফুলের পাপড়ি নিক্ষেপ করবনে।
~~তুই জানিস না আমার গোলাপ পছন্দ না আর আমি তো জিসানের সঙ্গে একটু ফাজলামি করছি বুঝতে পারিনি যে ও এসব করবে।
আদি: এমনিতে তো সব বুঝনির  রানী তুই। কান খুলে আমার কথা শুনে নে যদি জিসান আমার হিমুর দিকে হাত বাড়ায় তাহলে কিন্তু আমি ওকে মেরে ফেলব তারপর তোকে নিয়ে আমিও মরব।
~~আমায় তুই ভালোবাসিস এটা আগে বললে কি এসব আমি করতাম? কখনও করতাম না এসব তোর জন্য হয়ছে তাই প্রবলেম সলভও তুই করবি।
আদি: হুম বাসায় চল মা কল করতেছে বাসায় না গেলে হয়তো ভেবে নেবে আমরা আবার পালিয়েছি।
~~ আচ্ছা চল।
আর লেট না করে আমরা বাসায় চলে আসি আদি বার বার ওর বাসায় যাওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট করছিল কিন্তু আমি যাইনি কারন আমি তো এখন হবু বউ তাই ভেবেছি বিয়ে করে আদির গলায় ঝুলে দেন যাব। যেই কথা সেই কাজ মানে আমি আমার বাসায় চলে আসি বাসার ভিতরে প্রবেশ করতেই আমার চোখ উপরে উঠে গেল কারন দুষ্ট অভি আমার বোনের পাশাপাশি বসে হাত ধরে কথা বলছে তাই উপর থেকে চোখটা এনে টুস করে চোখের স্থানে বসিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম।
~~ আদি ঐশী এখানে বসে কি করছিস তোরা?
অভি: আদি ভাইয়া আর তুমি যা করতে আমরাও তাই করতেছি মানে প্রেম।
~~এখানে যে ইচিং বিচিং চলছে সেটা তোদের হাত ধরতে দেখেই বুঝেছি দাড়া এখনি মাকে ডাকছি।
অভি বসা উঠে আমার কাছে এসে বলল..
অভি: পূর্বের ভালোবাসা তুমি জানোনা অন্যের প্রেমে
বাঁধা দিলে নিজের প্রেমেও বাঁধা পরে তাই বলছি কি আন্টিকে ডেকে এই ভুলটা কখনও করো না।
~~ওই সয়তানের ডিব্বা তুই আমাকে প্রেম শেখাচ্ছিস?
অভি: একদমই না আমরা তোমার থেকে প্রেম ভালোবাসা শিখেছি তুমি রুলস ভুলে গিয়েছিলে আমি তো শুধু সেটা একটু মনে করিয়ে দিলাম।
~~তুই এখনি আমার বাসা থেকে বিদায় হ আমার বোনকে আমি প্রেম ভালোবাসা শিখিয়ে তোর কাছে পাঠিয়ে দিবনে।
অভি: আচ্ছা পূর্বের ভালোবাসা এজন্যই তো তোমায় এতোগুলা ভালোবাসি।
অভি বাসা থেকে প্রস্থান করার সঙ্গে সঙ্গে বাসায় বাবার প্রবেশ।
বাবা: কলেজ থেকে কোথায় গিয়েছিলি?
বাবার কথার সাউন্ড এতোটাই ত্রীব ছিল যে মা রান্না ঘর থেকে এক দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো।
~~বাবা আমি আদির সঙ্গে ছিলাম। (মাথা নিচু করে)
বাবা: সেটা আমিও জানি। তুই আর আদি নাকি আবার পালানোর চেষ্টা করতেছিস?
~~না বাবা আমরা তো কলেজ শেষে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম। পালানোর কথা তোমায় কে বলল?
বাবা: অভি এসে তো বলল তোরা আবার পালানোর প্লান করতেছিস।
ওই অভির ডিম আমার জীবনটা বাঁশপাতা করে ছাড়বে এখনই আমার পিছনে পড়তেছে না জানি বউ হয়ে গেলে কি করবে.. ওকে তো আজ পানি ছাড়াই গিলে খাব।
মাকে বলে রওনা দিলাম হবু শশুরের বাসায়। বাসায় এসেই অভির রুমে আসলাম কিন্তু ছোট সয়তানকে রুমে পেলাম না। রুম থেকে বের হতে যাব তখনি ওয়াশ রুম থেকে সাউন্ড আসল। তার মানে অভি ওয়াশ রুমে আজ বের হ তারপর দেখিস আমি কি করি। একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। ওয়াশ রুমের দরজা খুলতেই তোয়ালে দিয়ে অভির মুখ ঢেকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরি।
~~ ওই সয়তান তুই আমার পিছনে পড়েছিস কেন? তোকে বলেছি আমার বোনের পিছনে পরে থাকতে আর তুই কিনা আমায় বিপদে ফেলতেছিস তোকে আজ মেরেই ফেলব।
কি হলো কথা বলিছিস না কেন?
অবশ্য কথা বলার কোনো অপশন আমি রাখিনি আমি তো অভির মুখ চেঁপে ধরেছি তাই কথাও বলতে পারছে না শুধু হুম হুম করছে। আমার কোমরে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখি আমি যাকে তোয়ালে দিয়ে চেঁপে ধরেছি এটা তারাই হাত।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৮

~~তোর সাহস তো কম না তুই আমার কোমরে হাত দিয়েছিস।  এখনি হাত সরিয়ে নে নাহলে কিন্তু চিৎকার করে সবাইকে উপরে নিয়ে আসব আর এটা আদির কানে একবার পৌঁছালে তুই আর পৃথিবীতে স্থান পাবি না।
আমার কথা শেষ হতেই অসভ্য ছেলেটা আমায় তার সঙ্গে জড়িয়ে নিল। আমি ওর মুখ ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
~~হবু বরের ভাই, না না তুই আমার নিজের ভাই প্লীজ আমায় ছেড়ে দে।(কান্না জড়িত কন্ঠে)
না সয়তানের ডিব্বাটা আমায় ছাড়ছে না বরং আরো শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরছে। হিমু তোকে এভাবে হার মানলে চলবে না আদির ছোট ভাই হোক অথবা বড় ভাই হোক প্রতিবাদ করতেই হবে প্রয়োজনে আজ সবাইকে বলে অভির একটা কঠিন ব্যবস্থা করতে হবে।
অভি আজ আমার সঙ্গে এমন জঘন্য ব্যবহার করবে তা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে এখনি থাপ্পর মেরে সব দাঁত ফেলে দেব। চোখ মেলে থাপ্পর দিতে গিয়ে আমি মনে মনে ১৯০ডিগ্রি শকড খেয়ে  ২০ বার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কোনো মতে লাশ থেকে জীবিত হয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে এক চেনা অচেনা অদ্ভুত লোক জোকার মার্কা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১০