এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৮ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৮
লেখিকা বন্যা মৃধা

আদি: হিমু দরজা খোল আমি তোকে খুব ভালোবাসি এবারের মতো এই সয়তান আদিকে ক্ষমা করে দে.. তোর আদি আর কখনও এমন করবে না। এই হিমু দরজাটা খোল না প্লীজ হিমু!
~~ আদি তুই এখান থেকে চলে যা আমি তোকে ভালোবাসি না আমি শুধু জিসানকে ভালোবাসি কিছুদিন পরে আমি ওকেই বিয়ে করব ভুলে যা আমায়।
আদি: আচ্ছা ভুলে যাব শুধু একটিবার দরজা খোল প্লীজ হিমু!
~~ আমি তোর মুখ দেখতে চাই না চলে যা তুই।

আদি: আমায় যখন সহ্য করতেই পারছিস না তাই চলে
যাচ্ছি আমি। তবে মনে রাখিস এই আদি আর কখনও ফিরবে তোর থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। তোকে আজ আমার জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে গেলাম জিসানকে নিয়ে খুব ভালো থাকিস।
আমি উত্তরে কিছু না বলে রুমে চুপটি করে বসে রইলাম কারন আদি শুধু আমাকে নয় দুই পরিবারের সবাইকে কষ্ট দিয়েছে এর ফল তো ওকে পেতেই হবে। প্রায় ৫ মিনিট কেঁটে যায় কিন্তু আদির আর কোনো রেসপন্স পাচ্ছি না তার মানে কি আদি সত্ত্যি চলে গেল.. না আদি আবার এমন করতে পারে না।

আর এক সেকেন্ড বসে না থেকে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখি আদি নেই। রুম থেকে পা বাড়িয়ে উঁকি মারতেই হঠাৎ আমার হাত ধরে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে আমায় দেয়ালের সঙ্গে চেঁপে ধরে। ঘটনাটা এতোই দ্রুত ঘটে যে কে এমন করল তা বুঝতেই পারলাম না ভয়ে চোখ বন্ধ করে রাখি।
আদি: কি ভেবেছিস আমি চলে গেছি.. এই আদি যেখানে যাবে তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। আমার ভালোবাসার ভাগ আমি কাউকে দেব না।
কথাগুলো শুনে আমি চোখ খুলি। খুব রাগি কন্ঠে কথাগুলো বলছিল আদি। আমাকে দেয়ালের সঙ্গে খুব শক্ত করে চেঁপে ধরায় আমি নড়তেও পারছিলাম না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~~ আবার ফিরে এলি কেন? আনিকা কি তোকে তার কাছে স্থান দেয়নি নাকি অন্য কোনো মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিস?
আদি: নজর তো সেই ছোটবেলা থেকে তোর দিকে ছিল তা তো কখনও বুঝলি না। নজর দিতে দিতে হয়তো আর কিছুদিন পর আমার চোখ খসে পরে যেত।
~~ আর আমি তোর চোখ নিয়ে ফুটবল খেলতাম। চলেই তো যাচ্ছিলি তাহলে আবার কেন ফিরে এলি?
আদি: ভালোবাসি তাই.. তোকে ছাড়া আমি এক মূহুর্তও ভালো থাকতে পারি ন্ আমার খুশির চাবি একমাত্র তুই।
~~আমি তোকে ভালোবাসি না চলে যা।
আদি: সেটা আমি জানি। এই হিমু একবার বল না “ভালোবাসি”।
~~ আমি জিসানকে…

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদি আমার ঠোঁট জোড়া আঁটকে দিল তারপর ঠোঁট ছেড়ে আমার কপালে ভালোবাসার পরস এঁকে দিল। আদির মুখের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠি। আদি আমার মুখে হাত রাখতেই দরজায় কেউ নক করল অঃতপর বলল..
মা: হিমু এভাবে দরজা বন্ধ করেছিস কেন?
আদি: আন্টি আমরা প্রেমে ব্যস্ত আছি এখন দরজা কোনোভাবেই খোলা সম্ভব নয়।
~~ মাকে এটা কেন বললি?
আদি: এই আদিত্য রায় সবসময় সত্য কথা বলে তাই আন্টিকেও সত্যই বললাম। এই হিমু একবার বল না আমায় ভালোবাসিস।
~~ আগে আমার বার্ডে গিফট দে তারপর বলব এর আগে নয়।(মুখ কালো করে)
~~ ও আচ্ছা কাল তো তোর পয়দা দিবস ছিল কিন্তু আমি তোকে এক বাক্স ভালোবাসা গিফট করেছিলাম তুই সেটা কেয়ার না করে বাসায় ফেলে এসেছিস।

~~ ওটা রাগ করে করেছি তুই দুই মিনিট ওয়েট কর আমি দৌঁড়ে গিয়ে নিয়ে আসি।
আদি: হয়েছে মহারানি আপনাকে আর কষ্ট করে যেতে হবে না আমি যখন গিফট দিয়েছি তাই আনার দায়িত্বও আমার।
ওরে আদি কি ম্যাজিক জানে নাকি কোনো পেত্নী কি ওর ঘাড়ে চেঁপে বসে আসে..এমন কিছু না হলে তো বাক্সটা ওর হাতে থাকার কথা নয় অবশ্য আমায় দেয়ালের সঙ্গে চেঁপে ধরার সময় আমি কিছু খেয়াল করিনি। আদির দেওয়া কাঠের বাক্স থেকে ঝুমকো জোড়া বের করে আমার কানে পরিয়ে দিল। ছোটবেলায় হারানো ঝুমকো
আর এই ঝুমকোর সেইম ডিজাইন তবে সেটার তুলনায় এটা একটু বড়।
আদি: এবার খুশি তো?

~~ ৫৩ কেজি খুশি।
আদিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরি আজ মনে হচ্ছে আদি আমার পথ চলার একমাত্র চাবিকাঠি। সেই ছোটবেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি ঝগড়া মারামারি হলেও আদি আমায় কখনও কাঁদতে দিত না। আমার প্রতি ওর যে ভালোবাসা সেটা আমি কখনও বুঝিনি হয়তো ও বুঝতেই দেয়নি।
আদি: হিমু আমি তোকে খুব ভালোবাসি প্লীজ তোর থেকে কখনও আমায় দূরে রাখিস না তাহলে কেউ আমায় আর খুঁজে পাবে না।
~~ ভালোবাসি কিনা তা জানিনা তবে তোকে ছাড়া আমি এক মূহুর্তও থাকতে পারব না।
আদি: এতোদিন বলিসনি কেন?
~~ বুদ্ধ তুই জানিস না মেয়েরা মুখ ফুটে কিছু বলে না এসব ছেলেদের আগে বলতে হয়।
আদি: ওরে আমার বউ সাহিত্যিক হয়ে গেছে। কোন টিচারের থেকে ট্রেনিং নিলি রে ভাবছি আমিও সেখানে ভর্তি হয়ে যাব।(হিমুকে ছেড়ে দিয়ে)

~~ ওই সয়তানের হাড্ডি তুই আমায় বউ বললি কেন? আমি তোর কোন জন্মের বউ লাগি?
আদি: তুই তো আমার সেই ছোটবেলা থেকে বউ লাগিস শুধু বাসরটা বাকি ছিল। ভাবছি আজকেই বাসরটা কমপ্লিট করে ফেলব।
~~আদি আমরা তো এই বিয়ে কেউই মানি না তাই ভাবছি আবার বিয়ে করব। আবার বিয়ে করলে শপিং, জুয়েলারি, দামী দামী গিফট পাব আর এসব দিয়ে অনেকদিন বসে বসে খাওয়া যাবে।
আদি: একদম ঠিক বলেছিস আজই বাবাকে জানাতে হবে চল এখনি বাসায় গিয়ে জানাই।
~~তুই যা.. বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার বাসায় থাকব।
আদি: আচ্ছা তাহলে একটা চুম্মা দে এক সেকেন্ডে
চলে যাচ্ছি।
~~ একদমই না বিয়ের আগে হবে না এখন আমার বাসা থেকে বিদায় হ।
আদি: দে না একটা..
~~ দাঁড়া এখুনি বাবাকে ডাকছি..
আদি: এই না না বিয়ের আগে হবু শশুরের বকা খেতে চাই না। এখন চলে যাচ্ছি তবে বিয়ের পর সুদে আসলে তুলে নেব।

আদি চলে গেল। আজ মনের মধ্যে একটা অজানা অনুভূতি কাজ করতে লাগল। আজ এটুকু বুঝেছি যে আদিকে ছাড়া আমার কোনো ভাবেই চলবে না আদি আমার পাশে না থাকলে কখনও আমি ভালো থাকব না। আদিই আমার ভালোথাকার কারন। সেদিন জিসান আমায় বার বার কল করল কিন্তু আমি কল রিসিভ করিনি।
পরবর্তী দিন বিকেলে সবাই মিলে আবার আমাদের বিয়ের প্লান করল আমরা দুজনও সেখানে উপস্থিত। পাঁচদিন পরে আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করে। আবার বিয়ে হবে আমাদের এটা ভাবতে আমার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। সবার মাঝে আমাদের চোখের ইশ্বারা চলেই যাচ্ছে।

রাতে আদির সঙ্গে কথা বলে ঘুমে মনোযোগ দিব তখন একটা অচেনা নম্বর থেকে কল আসল। আমি রিসিভ করতেই একটা চেনা কন্ঠস্বর আমার কানে ভেসে এলো।কারন কন্ঠস্বরটি জিসানের ছিল।
জিসান: কাল থেকে তোমায় কল করেই যাচ্ছি রিসিভ করছিলে না কেন?(রাগী কন্ঠে)
~~জিসান আমায় আর কখনও কল করো না।
জিসান: কেন কি হয়েছে?
~~এতোদিন তোমার সঙ্গে আমার কথা বলা এক সাথে চলা সবই শুধু একটা প্লান ছিল অন্য কিছু নয়।
জিসান: মানে?

~~হ্যাঁ এটাই সত্ত্যি। আমি কলেজে গিয়ে ফ্রেন্ডের থেকে যখন শুনেছিলাম যে তুমি কোনো মেয়েদের কেয়ার করো না তখন থেকে তোমার সঙ্গে নাটক করতে শুরু করি আর আমি প্লানে সফল হই।
জিসান: তুমি আমার সঙ্গে এমন করতে পারো না আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয় আমি তোমায় খুব ভালোবাসি হিমু।
~~ জিসান একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমায় ভালোবাসি না সব নাটক ছিল।
জিসান: আমি জানি তুমি মিথ্যে বলছো আচ্ছা তুমি কি তোমার পরিবারের কারনে আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছো তাহলে বলো কালকেই বাবাকে তোমার বাসায় পাঠাচ্ছি।

~~কতবার বলব আমি তোমাকে ভালবাসি না.. আমি আদিকে ভালোবাসি ওর সঙ্গে কিছুদিন পরে আবার আমার বিয়ে।
জিসান: তুমি আমার সঙ্গে কাজটা একদম ঠিক করলে না। হিমু মনে রেখো এর মাসুল তোমায় দিতে হবে।
~~তোমার যা ইচ্ছে তাই করো সো প্লীজ আমায় কখনও বিরক্ত করো না।
জিসানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেঁটে আদির কথা ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে আমি ঘুমের রাজ্যে পা বাড়াই।
মা: হিমু.. এই হিমু কি হয়েছে তোর, ঘুমের মধ্যে এভাবে কাঁদছিস কেন?
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙতেই মা আর বোনকে আমার পাশে দেখি। এতো সকালে আমার রুমে তাদের দেখে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করি…

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৭

~~ মা আদির থেকে আমায় কেউ আলাদা করতে চায় সে চায় না যে আমরা একসাথে থাকি।
মা: বোকা মেয়ে তুই এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিলি কিছু হয়নি আর কে তোদের আলাদা করবে..
রুমে আদির প্রবেশ..
আদি: কি রে পেত্নী ৯টা বাজে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস কলেজ যাবি না নাকি বিয়ের কথা শুনে কলেজকে ভুলে গেছিস।

~~ কি ৯ টা বেজে গেছে.. আমায় একটা কল দিলে পারতি।(মুখ কালো করে)
আদি: তোকে সেই ৭টা থেকে কল করতে করতে আমি দুইবার মরে আবার ফিরে এসেছি আর তুই বলতেছিস আমি তোকে কল করিনি।
ফোন চেক করে দেখি সত্ত্যিই আদি আমায় অনেকবার কল করেছিল কিন্তু আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল। মা, বোন আর আদি নিচে চলে গেল আর আমি দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলাম। সাওয়ার সেরে নিচে এসে দেখি সবাই মিলে গল্প করছে তারপর আমরা নাস্তা করে আদির মোটর বাইকে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আগের তুলনায় এখন আদিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি।

~~আদি তোর থেকে আমায় কে যেন কেঁড়ে নিতে চায়।
আদি: হুম তোর ওই ফালতু স্বপ্নের কথা আন্টির থেকে শুনেছি।
~~ আমার খুব ভয় লাগছে।
আদি: কি বলিস এসব.. উগান্ডার পেত্নীর মুখে এসব মানায় না। কলেজে পৌঁছে গেছি নামবি নাকি এভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকবি।
বাইক থেকে আমি আর আদি নেমে ক্যাম্পাসের ভিতরের পা বাড়াতেই কিছুটা অবাক হই.. কারন জিসান আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তবে জিসান একা নয় ওর সঙ্গে আরো তিন-চারটা ছেলেও রয়েছে।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৯