এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৭ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৭
লেখিকা বন্যা মৃধা

তোর সঙ্গে কাঁটানো প্রতিটা মূহুর্ত আমার চোখের সামনে ভাসছে। এই হিমু আর কখনও তোকে কষ্ট দেবে না প্লীজ আদি আমার কাছে ফিরে আয় এভাবে আমার থেকে দূরে থাকিস না…
তুই আমায় উগান্ডার পেত্নী বললে আর তোকে কিছু বলব না ধার করা টাকাও চাইব না তবু তুই ফিরে আয়।
আজ আদির অনুপস্থিতিতে বুঝতে পারতেছি যে আদি আমার কাছে কতটা ইমপরট্যান্ট। ওর দুষ্টমিগুলো ওর হাসি আমার বাঁচার দিশা ছিল। হঠাৎ ফোনে কল আসতে চমকে উঠি ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি জিসান কল করেছে ভেবেছিলাম কলটা আদি দিয়েছে কিন্তু তার উল্টো হলো তাই ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে যাই।

প্রায় এক ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুম থেকে প্রস্থান করব তখনই নজর পরে আদির টেবিলের উপর। সেখানে কাগজের ব্যাগ যাতীয় কিছু রাখা দ্রুত টেবিলের দিকে এগিয়ে যাই। এর আগে ব্যাগটি এখানে কখনও দেখিনি হয়তো ছিল কিন্তু এই দুদিনে সেটা চোখে পরেনি। ব্যাগটির মুখটি টেপ দিয় আঁটকানো হাতে নিতে বুঝতে পারি ভিতরে শক্ত জাতীয় কিছু। ব্যাগটি দেখে যতটা অবাক হচ্ছি তার থেকেও বেশি ভয় লাগছে তবুও ব্যাগটা ছিঁড়ে ফেলি অঃতপর ব্যাগ থেকে বেড়িয়ে আসে সাদার রং এর উপরে কিছুটা কালো রং এর দাগ কাঁটা একটি র্টি-শার্ট, একটি চিরকুট এবং একটি কাঠের বাক্স।

এই টি-শার্টটি আমার চির চেনা কারন এটা আমি আদিকে দিয়েছিলাম। টি-শার্টটি পেয়ে আদি খুব খুশি হয়েছিল। আমার যথেষ্ট মনে আমার দেওয়া টি-শার্টটি আদি টানা ৭ দিন পরেছিল এটা নিয়ে আমি আদিকে প্রচুর খেঁপাতাম।
কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো “এটা আমার ফিউচার ওয়াইফ দিয়েছে” এটা নিয়ে আমাদের মাঝে বিশাল ঝগড়া হয়েছিল এমনি কি আঙ্কেলও আমার হয়ে আদিকে খুব বকে ছিল। অঃতপর চিঠিটা খুলে দেখি স্পষ্ট হই যে এটা আদির হ্যান্ড রাইটিং নিজেকে সামলে চিঠিটা পরতে শুরু করি…
“প্রিয় হিমু…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হিমু আমি তোর পথের কাঁটা হতে চাইনি আর কখনও হতেও চাইব না সবসময় তোর মুখে হাসি দেখতে চেয়েছি। একটা সত্ত্যি কথা কি জানিস যারা সত্ত্যি কারের ভালোবাসে তারাই বুঝতে প্রিয় মানুষটির অবহেলা
কতটা কষ্টের। যেদিন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকেই তোকে হারানোর ভয়টা আরো বেশি ত্রীব হয়ে উঠে ছিল। তোর দুষ্টমিগুলো আমার ভালো লাগত সবসময় তোর ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পূরন করার চেষ্টা করতাম। তুই জিসানকে ভালোবাসিস এটা যে আমি সহ্য করতে পারছি না তাই আজ আমার ভালোবাসার বলিদান দিয়ে তোর থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম হ্যাঁ হিমু আমি তোকে এতটাই ভালোবাসি যে এক মূহুর্ত তোকে না দেখলে আমার মনের ঝড় উঠে।

রাতে যদি তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে হতো তখন তোর বাসায় ছুটে যেতাম তোর শিউলী ফুল গাছ বেয়ে জানালা দিয়ে তোর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আমাদের বিয়ের কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম কিন্তু তুই আমায় বিয়ে করতে রাজি না তাই তোর হাসি মুখটা দেখার জন্য তোকে নিয়ে পালিয়েছিলাম আর সেদিন ইচ্ছে করেই বাসায় ফোন রেখে গিয়েছিলাম যার কারন বাবা আমাদের কথা জানতে পেরে বিয়েটা দেয়।

এসব জেনে একদম কাঁদবি না তুই তো জিসানকে ভালোবাসিস আর জিসানও তোকে খুব ভালোবাসে ও তোকে খুব ভালো রাখবে। আর ডিভোর্সের প্রয়োজন হবে না কারন আমি তো তোর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। ভালো থাকিস আমার জন্য টেনশন করিস না তোর খুশিতেই আমি ভালো থাকব।”
আদির লেখাগুলো পড়ে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। আদি আমার জন্য সবার থেকে দূরে চলে গেছে এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারব না।
পুনরায় আবার পড়তে শুরু করলাম..

” তোর থেকে ৩ হাজার ৪ শত ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা ধার নিয়েছিলাম সেটা ইচ্ছে করেই ফেরত দেইনি তবে আজ দিয়ে দিলাম। মনে আছে ছোটবেলায় তোর এক জোড়া পছন্দের ঝুমকো ছিল সেখান থেকে একটা হারিয়ে ফেলেছিলি তার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেছিলি। তখন থেকে ভেবেছিলাম এমন ঝুমকো কিনে তোর মুখে হাসি ফিরিয়ে দেব। এই বাক্সতে এক জোড়া ঝুমকো রয়েছে সেটা তোর জন্য। এই ঝুমকোটা সেই ধার করা টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। ঝুমকো কিনতে ৩৫০ টাকা লেগেছিল আর বাকি টাকা বাইকের পিছনে খরচ করেছি মানে ঝুমকোটা খুঁজতে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। খুঁজে পেয়েও তোকে দেইনি ভেবেছিলাম আমাদের বাসরে তোকে নিজের হাতে পরিয়ে দিব কিন্তু সেই অধিকার তুই জিসানকে দিয়েছিস। রেখে গেলাম তোর জন্য আমার এক বাক্স ভালোবাসা। প্লীজ আমার উপর কখনও রাগ করিস না এই সয়তানের হাড্ডিকে মাফ করে দিস আর যদি তোর হৃদয়ে আমার জন্য সামন্য ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে এই নম্বরে কল করিস আমি দৌঁড়ে এসে আমার বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাকব। ০১৩১৯৪৫****
ইতি,
তোর সয়তানের হাড্ডি সঙ্গে তোর জন্য এক বাক্স ভালোবাসা।”

না আদি তোকে আমার থেকে কোথাও যেতে দেব না তুই সবসময় আমার সঙ্গে থাকবি। তোকে ছাড়া যে আমার এক মূহুর্তও চলবে না সেটা আমি এই দুদিনেই বুঝতেছি।
দ্রুত ফোনটা হাত নিয়ে বাবাকে আর আঙ্কেলকে কল করে বলি বাসায় ফিরতে অঃতপর নিচে এসে সবাইকে ডেকে বসার ঘরে বসে আছি। কিছুক্ষন পর বাবা এবং আঙ্কেলও বাসায় আসে তারা প্রশ্ন করার আগেই তাদের থামিয়ে চিঠিতে দেওয়া সেই নম্বরে কল দেই রিং হতেই আদি কল রিসিভ করে…
আদি: হিমু আই লাভ ইউ।

~~হুম।
আদি: তুই কি জানিস না হাসব্যান্ড আই লাভ ইউ বললে তার উত্তরে আই লাভ ইউ টু বলতে হয়।
~~এখুনি বাসায় ফিরে না এলে আই লাভ ইউ টু তো দূরের কথা আই লাভ ইউ জিরোও বলব না এই মূহুর্তে বাসায় ফিরে আয়।
আদি: তুই পাঁচ মিনিট ওয়েট কর আমি দুই মিনিটে আসছি।
আমরা সবাই আদির জন্য অপেক্ষা করতে থাকি কারন আঙ্কেল আন্টি খুব ভেঙে পরেছিল আদির জন্য। সিঁড়ি দিয়ে কারোর নামার শব্দ শুনে আমরা অবাক হই কারন বাসার সবাই এখানে রয়েছে তাহলে কে উপর থেকে নামছে..
সিঁড়িতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আমি যথেষ্ট অবাক হই যার কারন আদি উপর থেকে নিচে নামছে। নিচে নামা মাত্র আন্টি আদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। খেয়াল করলাম আদি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আদির হাসি দেখে আমার মনে ওর জন্য দ্বিগুণ রাগ সৃষ্টি হলো। আঙ্কেলের মুখ দেখে মনে হচ্ছে আদির উপর খুব রাগ করেছে আর সহ্য করতে না পেরে আদিকে প্রশ্ন করল..

আদির বাবা: কোথায় ছিলি এই দু-দিন?
আদি: বাবা আমি বাসায়ই ছিলাম কিন্তু সবার থেকে আড়ালে।
আদির বাবা: কোথায়??
আদি: আমার রুমের পাশে যে রুমটা আছে ওইখানে কেউ যায় না তাই আমি ওইখানে জল, খাবার নিয়ে লুকিয়ে ছিলাম।
আঙ্কেল আদির কথা শুনে থাপ্পর বসিয়ে দিল অঃতপর বলল..
আদির বাবা: তোর চলে যাওয়ায় আমরা কতটা কষ্ট পেয়েছি সেটার ব্যাপারে কি কোনো ধারনা আছে?
আদি আঙ্কেলের প্রশ্নে কোনো উত্তর দিচ্ছে না বরং গালে হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আদির বাবা: কি হলো উত্তর দিচ্ছিস না কেন? আজ তোকে আমার ছেলে বলতে ঘৃনা হচ্ছে আমার ছেলে হয়ে এসব কিভাবে করতে পারলি? একবার কি মনে হয়নি যে আমরা কষ্ট পাব। তোর মা কতটা কষ্ট পেয়েছে তা বুঝিস.. আর হিমু.. ও তো সব কিছু বাদ দিয়ে পাগলের মতো তোকে খুঁজেছে।
আদি: সরি বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আদির বাবা: সব ভুলের ক্ষমা সরি দিয়ে হয় না। আদি কিছু কিছু ঘটনা আমাদের বুকে বিঁধে থাকে আর সেই ক্ষত কখনও ভালো হয় না। আমরা তোর মা বাবা এখন নাহলেও কিছুদিন পর ঠিকই ক্ষমা করে দেব কিন্তু তুই তো হিমুর বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছিস।
( হিমুর দিকে তাকাতেই দেখি হিমুর চোখ দিয়ে অঝরে জল পরছে হয়তো আমি চলে যাওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছে কিন্তু আমি তো ওর জন্যই এসব করেছি। আমি হিমুর দিকে এগিয়ে যেতেই ওর কান্নার গতিটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।)
আদি: সরি হিমু আর এমন করব প্লীজ এবারের মতো আমায় মাফ করে দে।
~~ কেন করলি এসব, আমাকে কষ্ট দিতে?
আদি: তোর কষ্ট হোক এটা আমি কখনও চাইনি।
~~ তাহলে কেন এমন করলি আমার সাথে?

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৬

আদি: আমি বাধ্য হয়ে করছি এসব কারন আমি জানতাম আমার শূন্যতাই তোকে বুঝিয়ে দেবে যে তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস। তোকে সারাজীবন আমার করে রাখতে চেয়েছি কিন্তু সেটা তুই কখনও বুঝিসনি।
~~ তোর শূন্যতা আমাকে একটু একটু করে পুড়িয়ে ফেলতেছিল।
আদি: প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দে আর কখনও এমন করব না।( হাঁটু গেরে)
~~ ভালোবাসি না আমি তোকে। আবার যেখানে ইচ্ছে চলে না।
আদি: প্লীজ হিমু এমন করিস না তুই আমার জীবনে না থাকলে আমি বাঁচতে পারব না। (হিমুকে জড়িয়ে ধরে)

~~ বললাম তো আমি তোকে ভালোবাসি না আমায় ছেড়ে দে।
আদি: আমি জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস প্লীজ একবার বল না আমি তোর মুখ থেকে একটিবার শুনতে চাই।
~~ কতবার তোকে একটা কথা বলতে হবে? আমি যখন বলেছি ভালোবাসি না তার মানে ভালোবাসিই না।(আদিকে ছাড়িয়ে)
আদির বাসা থেকে দৌঁড়ে আমার বাসায় চলে আসি কারন আদিকে কি বলব কিছু বুঝতে পারছিলাম তবে আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি ওকে পেতেই হবে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম কারন আমি জানি আমার রাগ ভাঙাতে আদি ছুটে আসবেই।
আদি: হিমু দরজা খোল আমি তোকে খুব ভালোবাসি এবারের মতো এই সয়তান আদিকে ক্ষমা করে দে.. তোর আদি আর কখনও এমন করবে না এটাই লাস্ট কান ধরছি প্লীজ ক্ষমা করে দে।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৮