এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৬ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৬
লেখিকা বন্যা মৃধা

আদি: হিমু আমি তোকে সেই ছোটবেলা থেকে খুব ভালোবাসি রে.. নিজের থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসি প্লীজ এভাবে আমার হাত ছেড়ে দিস না..
তুই জিসানকে ভালোবাসিস আমায় ভালোবসিস না তাই তোকে ছেড়ে আমি অনেক দূরে চলে যাব। কখনও আমায় খুঁজে পাবি না হয়তো আর খোঁজার চেষ্টাই করবি না। সবসময় এভাবে হাসিখুশি থাকিস তোর মুখে হাসি থাকলে আমিও ভালো থাকব।
(অঃতপর একটা চিরকুট রেখে বেড়িয়ে পরলাম অজানা এক গন্তব্যে। মন না চাইতেও আজ বাইকের স্পীড ত্রমেই বাড়ছে।)

অভির চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙে চোখ মেলে দেখি সকাল হয়ে গেছে তাই বেডকে বায় দিয়ে দরজা খুললাম। মূহুর্তেই রুমে অভি প্রবেশ করে অভির মুখে আকাশ সমান অভিমান দেখা যাচ্ছে।
~~ কি হয়েছে পাগল প্রেমিক মুখটা এমন অন্ধকারে জড়িয়ে রেখেছিস কেন?
অভি: শুধু তোমার জন্য।
~~ আমি আবার কি করলাম শুনি।
অভি: তোমার আইডিয়ায় কাল রাতে তোমার বোনকে পটাতে মেসেজ দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার রাক্ষুসী বোন আঙ্কেলকে সব বলে দিয়েছে তাই আঙ্কেল কল করে বলেছে আবার ডিস্টার্ব করলে বাবাকে বলে দেবে।
~~ আরে বোকা ছেলে প্রেমে এমন অনেক শত্রু হানা দেয় তাই বলে কি প্রেমকে ছেড়ে দিতে হবে.. ভীতু ছেলে হয়ে থাকিস না সাহসী হয়ে আমার বোনকে তুলে নিয়ে আয়।

অভি: হুম ভাইয়ার মতো আমিও তোমার বোনকে তুলে নিয়ে আসব।
আদি কোথায়.. ওতো প্রতিদিন লেট করে ঘুম থেকে ওঠে তাহলে আজ এতো সকালে উঠে কোথায় গিয়েছে? বুঝেছি হয়তো তার পিরিতের আনিকা তাকে ডেকেছে তাই ছন্নছাড়া প্রেমিকের মতো ৭ সমুদ্র ১৩ নদী পার হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গেছে। (মনে মনে)
অভি: জিএফর দিভাই কি হলো?
~~ কই কিছু না তো তুই এখন যা গিয়ে ওকে পটানোর প্লান কর।
অভি চলে যাওয়ার পর আমি ওয়াশ রুমে চলে আসি। সাওয়ার কমপ্লিট করে সুন্দর একটা ড্রেস পরে নেই অঃতপর বের হয়ে সাজতে বসে পরি। চোখে কাজল হালকা মেকাপে নিজেকে আবদ্ধ করি। এতো ঘটা করে সাজার কারন কি জানেন.. তাহলে শুনুন..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আজ কলেজে গিয়ে জিসানকে ভালোলাগার কথা বলে দেব তবে আমি ওকে ভালোবাসি না কিন্তু ভালোবাসতে চাই। বজ্জাত আদির থেকে জিসান হাজার গুন ভালো ও আমায় খুব ভালোবাসে। আর লেট না করে নিচে চলে আসি খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত থাকলেও আদিকে দেখা যাচ্ছিল না। আদির বাবা মা আমায় আদির কথা জিজ্ঞেস করায় আমি বলেছি সকাল থেকেই ওকে দেখিনি আর আমায় কিছু বলেও যায়নি। খাওয়ার পর্ব কমপ্লিট করে খুব দ্রুত কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই কারন অন্যদিনের থেকে আজ কলেজ যাওয়ার আগ্রহটা খুব বেশি। রাস্তায় জ্যাম থাকায় কিছুটা লেট হয়।
তাই কলেজে পৌঁছেই দ্রুত ক্লাসে চলে আসি। জিসানের পাশে বসতেই ও আমাকে দেখে মুচকি একটা হাসি উপহার দিল। অঃতপর আমরা ক্লাসে মনোযোগ দিলাম। ক্লাস শেষে বের হতে যাব তখন জিসান আমার হাত ধরে বলল..
জিসান: তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে আমার সঙ্গে চলো।

সারপ্রাইজের কথাটা শুনে আমি খুব খুশি হই। জিসান আমায় তার গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি জিসানের দিকে তাকিয়ে আছি। জিসান আমায় কলেজের ছাদে নিয়ে আসে এসে কিছুটা অবাক হই কারন এখানে কলেজের প্রায় স্টুডেন্ট রয়েছে। সম্পূর্ন ছাদ রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো সবার মাঝে শ্রুতিও রয়েছে তাই ওকে ইশ্বারা করলাম কিন্তু ও মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দিল।
জিসান আমায় নিয়ে ছাদের মাঝ বরাবর এলো সেখানে টেবিলে সুন্দর একটা কেক রাখা রয়েছে সবাই আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিসান কি করতে চাচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকল না।
জিসান: হ্যাপি বার্ডে হিমু..

জিসানের সঙ্গে সবাই উইস করতে শুরু করল। জিসানের এমন কান্ডে আমার সম্পূর্ন শরীর কেঁপে ওঠে। আজ আমার জন্মদিন এটা আমার মাথায়ই ছিল না। মনে পড়ে যায় এক বছর আগের কথা।
আদি আমার জন্মদিনে প্রতিবছর বিভিন্ন ভাবে সারপ্রাইজ দিয়েছে তবে এর আগের জন্মদিনের সারপ্রাইজটা বেশি স্পেশাল ছিল কারন “সেদিন আদি রাত ১২ টার পর ভূতের মতো আমার রুমে উপস্থিত হয় তারপর ৫ টাকার একটা কেকের উপর মোমবাতি বসিয়ে বার্ডে উইস করে। আমার জন্মদিন হলেও সম্পূর্ন কেকটা আদি একাই খেয়েছিল। হঠাৎ ওর পকেট থেকে একটা রিং বের করে আমার আঙুলে পরিয়ে দেয় রিংটা পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। পরেরদিন জানতে পারি রিং কেনার জন্য আন্টির থেকে টাকা চুরি করেছিল তার জন্য আঙ্কেল ওকে খুব বকুনি দিয়েছিল।”
আদি ছোটবেলা থেকে সবার আগেই আমায় উইস করতো ওতো এই দিনটির কথা কখনও ভুলত না তাহলে আজ কিভাবে ভুলে গেল..

~~ আজ আমার বার্ডে তুমি তা জানো কিভাবে আমি তো তোমায় কখনও বলিনি।
জিসান: কাল রাতে আমায় আদি কল করেছিল ও বলেছে।
~~ আদি??
জিসান আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল অঃতপর সবার সামনে একটা রিং এগিয়ে বলল…
জিসান: উইল ইউ মেরি মি?
জিসানের বাড়িয়ে দেওয়া রিংটা দেখে আদির দেওয়া রিং এর দিকে তাকাই। আমি আজও আদির দেওয়া রিং পরে আছি।
আদি নিজে উইস না করে জিসানকে কেন বলল আমার জন্মদিনের কথা.. হঠাৎ মাথায় এলো কাল রাতের কথা। কাল আমি আদিকে বলেছিলাম ডিভোর্সের কথা তারপর আবার সকালে আদির উধাও হওয়া মানে আদি কোথাও চলে গেছে?
জিসান: আই লাভ ইউ হিমু। উইল ইউ মেরি মি?
আদি চলে গেল কেন, আমি কি ওকে চলে
বাধ্য করেছি, কেন করল এমন?

কোনো প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। হয়তো আদি আমার জন্য চলে গেছে আজ অজান্তেই চোখের জল গাল বেয়ে পরছে। এই চোখের জলের কারনটাও বুঝতে পারছিলাম না শুধু মনে হচ্ছে আমার জীবন থেকে খুব গুরুত্বপূর্ন জিনিস হারিয়ে গেছে।
জিসান: হিমু কি হয়েছে, তুমি কাঁদছো কেন?
জিসানকে কোনো উত্তর না দিয়ে সবার সামনে থেকে দৌঁড়ে চলে আসি কারন এখন আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো বাসায় পৌঁছানো। আদিকে কল করলাম কিন্তু আদির ফোন বন্ধ বার বার আদিকে কল দেই কিন্তু প্রতিবার আমি ব্যর্থ হই। বাসায় পৌঁছেই আন্টিকে জিজ্ঞেস করায় আন্টি কাঁদছে।
আদির মা: সকাল থেকে আদিকে কলে পাওয়া যাচ্ছে না সব বন্ধুদের বাসায় খবর নেওয়া হয়েছে কিন্তু আদি কোথাও নেই।

~~ তাহলে আদি কোথায় যেতে পারে?
আদির মা: জানিনা হিমু আমার ছেলে কোথায় চলে গেল.. আদির বাবা আর তোমার বাবা আদিকে খোঁজার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লোক পাঠিয়েছে কিন্তু এখনো আদিকে পাওয়া যায়নি।
আদি কোথায় যেতে পারে, এভাবেই কেন চলে গেল.. আমার সব ফ্রেন্ডদের কাছে কল করে আনিকা নামের মেয়েটির বাসার ঠিকানা খুঁজে পাই সেখানে গিয়ে আনিকাকে পেলেও আদিকে পেলাম না বরং আনিকা বলল তার নাকি আদির সঙ্গে কিছুদিন যাবৎ কথাই হয়নি। এর আগে আদির সঙ্গে আনিকার মেলামেশাটা নাকি আদির প্লান ছিল তবে এই প্লানের কারন আনিকার অজানা। আনিকার থেকে এমন উত্তর পেয়ে বাসায় ছুঁটে আসি কিন্তু এখনো আদির খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাবা মা আমায় অনেক কিছু বলল কোনো উত্তর দিতে পারলাম না।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এলো কিন্তু আদি এখনও নিখোঁজ। আঙ্কেল আন্টি কেঁদেই যাচ্ছে আজ মনে হচ্ছে এসবের জন্য আমি দায়ী আমার জন্যই হয়তো আদি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরি তা নিজেই জানিনা।
সকালে কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভাঙে নিচে নেমে দেখি আন্টি হাউমাউ করে কাঁদছে তার মানে এখনও আদির খোঁজ পাওয়া যায়নি তাই আন্টি এভাবে ভেঙে পরেছে।
খুব দ্রুত ফ্রেস হয়ে আদিকে খুঁজতে বেরিয়ে পরি আদির আমার পছন্দের স্থানে খুঁজতে চলে যাই। একের পর এক স্থানে গেলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। এদিকে জিসান বার বার কল করে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে একদমই আমার নজর নেই। আমার মন আজ শুধু আদির কথাই ভাবছে। আমাদের খুশির, খুনসুটির, অভিমানের মূহুর্তের কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এমন সময় আমার সামনে উপস্থিত হয় জিসান।
জিসান: হিমু তুমি এখানে? তোমায় কাল থেকে কল করেই যাচ্ছি কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি কল রিসিভ করছিলে না কেন?

জিসানের কথা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছালেও কোনো উত্তর দিতে পারছিলাম না শুধু চোখ দিয়ে অনবরত জল পরছে।
জিসান: হিমু তুমি এভাবে কাঁদছো কেন, বাসায় কিছু হয়েছে নাকি তোমায় কেউ কিছু বলেছে?
কি হলো কথা বলছো না কেন?
~~আদিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
জিসান: কি বলছো এসব, কখন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?
~~ কাল থেকে।
জিসানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাসায় চলে আসি এসে দেখি বাবা আর আদির বাবা দুজনে কথা বলছে। বাবাকে দেখতেই দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৫

~~ বাবা প্লীজ আদিকে খুঁজে বের করো।
বাবা: এভাবে ভেঙে পরিস না আমরা ওকে খুঁজে বের করবই।
~~ আদিকে না দেখলে আমার খুব কষ্ট হয় ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।
বাবা: টেনশন করিস না আমরা খুব শীঘ্রই আদিকে খুঁজে বের করব।
বাবা আর আঙ্কেল আবার বেরিয়ে পরল আদিকে খোঁজার উদ্দেশ্যে অঃতপর আমি রুমে চলে আসি।
কেন চলে গেলি আমাকে ছেড়ে.. আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকব? তোর সঙ্গে কাঁটানো প্রতিটা মূহুর্ত আমার চোখের সামনে ভাসছে। এই হিমু আর কখনও তোকে কষ্ট দেবে না প্লীজ আদি আমার কাছে ফিরে আয় এভাবে আমার থেকে দূরে থাকিস না…

( আদি কি হিমুর থেকে সত্ত্যি চলে গেল নাকি ফিরে আসবে? অবশ্যই মতামত জানাবেন কারন আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে আদিকে বিদায় করা হবে অথবা ফিরিয়ে আনা হবে।
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৭