এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৫ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৫
লেখিকা বন্যা মৃধা

হঠাৎ জিসান বসা থেকে উঠে দাঁড়াল অঃতপর আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক গাঁদা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল…
জিসান: হিমু আই লাভ ইউ।
জিসানকে কি উত্তর দেব বুঝতে পারছিলাম না এভাবে ক্যাম্পাসে সবার সামনে প্রোপোজ করবে তা ভাবতেই পারিনি জিসানের এমন কান্ড দেখে ক্যাম্পাসের সবাই আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এতোদিন সবটা আমার প্লান ছিল তবে কিছুদিন যাবৎ জিসানের প্রতি আমিও একটু দুর্বল হয়ে পরেছিলাম তবে এটা ভালোবাসা ছিল না শুধু ভালোলাগা। আচ্ছা ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তাইনা? তার মানে কি আমার সাথেও এমন হবে কিন্তু আদির সঙ্গে তো আমার বিয়ে হয়েছে। এখন যদি আমি জিসানের সঙ্গে রিলেশনে যাই আর এই খবর যদি বজ্জাতের গাদি বাসায় পৌঁছে দেয় তাহলে আমার কি হবে? না না কিছু হবে না আমি কিছু হতে দেব না প্রয়োজনে বাবার সামনে মাথা নিচু করে মুখোমুখি জবাব দিব তবু আমার ভালোলাগা নষ্ট হতে দেব না। (মনে মনে)

সব টেনশন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই আমার ভালোলাগার দিকে মানে জিসানের দিকে ঠিক তখনি উদয় হলো বাংলাদেশের নকল প্রেসিডেন্ট আমার ভালোলাগায় বাঁশ দিতে। আমার সম্মুখে এসেই ২০৫০ সালের ভাষন দিতে শুরু করল।
আদি: হিমু তুমি এখানে.. সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজতেছি কল করলাম তাও রেসপন্স পেলাম না এমন করলে চলে বলো.. চলো বাসায় চলো।
~~তুই এখানে কেন???
আদি: আমার হিমু কি আমার উপর খুব রাগ করেছে.. আরে বোকা হাসব্যান্ড ওয়াইফের মধ্যে এমন অভিমান হয়ে থাকে তাই বলে এমন করতে হবে?

আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এবার আমায় জড়িয়ে ধরল এবং পুনরায় বলতে শুরু করল..
আদি: পাগলী মেয়ে এমন কেউ করে.. তুমি এমন করলে আমাদের বেবিও যে কষ্ট পাবে।
আদির শেষ কথাটা শুনে জিসান উঠে চলে গেল আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম জিসানের চোখ বেয়ে জল পরছে। আদির এমন কান্ড দেখে আমিও বিশাল পরিমানের শকড খাই। ও আমার শত্রু তবে আজ এসব বলবে এটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল। আদি আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার হাত ধরল অঃতপর আমায় বাইকে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট করল। আমি আদিকে কিছু বলতে পারলাম না সব যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।
বাসায় পৌঁছাতে আর কিছুটা পথ বাকি ছিল কিন্তু বাসায় না গিয়ে আদি রাস্তার মাঝেই বাইক থামাল বাইক থেকে নেমে দুজনেই নীরবে দাঁড়িয়ে আছি এবার আমার নীরবতা ভেঙে বললাম..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~~এখানে কেন বাইক থামালি, এখানে কি তোর সেই আনিকা রাজকুমারী আসবে?
আদি: না হিমু কেউ আসবে না। আজ আমি তোকে কিছু না বলা কথা বলতে চাই এর আগে অনেকবার বলতে গিয়েও বলতে পারিনি।
~~ আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না তুই জিসানের সামনে এমন কেন করলি, আমার ভালো কি তোর সহ্য হয় না?
আদি: প্লীজ আমার কথাটা একটিবার শোন তারপর তোর যা ভালো লাগে তাই করিস আমি তোকে বাঁধা দিব না।
~~ বললাম তো আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না।(বলেই হাঁটতে শুরু করি)
আদি: হিমু প্লীজ এমন করিস একটিবার আমার কথাটা শোন।
আদির কথায় কান না দিয়ে আমি বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকি কিছুটা এগিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি আদি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আদিকে দেখে আজ কেন যেন মনের মধ্যে অজানা এক অনুভূতি অনুভব করছি তাই আর পিছনে না তাকিয়ে খুব দ্রুত বাসায় চলে আসি।

বাসায় প্রবেশ করতেই সবাই আদির কথা জানতে চাইলে আমি বলি ও আমায় নামিয়ে দিয়ে ফ্রেন্ডের সাথে ধুরতে গেছে।
তখন থেকেই মনের মধ্যে কে যেন হাতুড়ি পিটাচ্ছে হয়তো জিসানের জন্য এমন অনুভব করছি। এতোদিনে এটুকু বুঝেছি যে জিসান আমায় খুব ভালোবাসে জিসানের সঙ্গে এমনটা করা আমার একদমই ঠিক হয়নি তাই ফোন হাতে নিয়ে জিসানকে কল করলাম কিন্তু রিসিভ করল না আবার কল করায় কেঁটে দিল।
বিকেল গড়িয়ে রাত হতে চলল কিন্তু আদি এখনো বাসায় আসছে না সবাই তাকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাচ্ছে বাসার সবার মুখে টেনশনের ছাপ দেখা যাচ্ছে। আমি এসবে মাথা না ঘামিয়ে জিসানকে কল করতে থাকি।। অবশেষে রাত ১০টা নাগাদ জিসান আমার কল রিসিভ করে..

~~ তোমায় সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছি কেঁটে দিচ্ছিলে কেন?
জিসান: এতোদিন আমার পাশে থেকে একটু একটু ভালোবাসার মানে বোঝালে আমাকে তোমার মায়ায় বাঁধলে আর যখন আমার মনের কথা তোমায় বললাম তখন তুমি আমায় দূরে ঠেলে দিলে কেন করলে আমার সাথে এমন?
~~ জিসান বিশ্বাস করো আমি এসবের ব্যাপারে কিছু জানতাম না আর তুমি তো জানো আমাদের বিয়ে হলেও আমরা এ বিয়ে মানি না।
জিসান: বিয়েই যদি না মানো তাহলে আদি যে বললো তোমাদের বেবির কথা সেটা কি?
~~ ও চায় না যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলি আর আমি যদি প্রথম থেকে এই বিয়ে না মানি তাহলে বেবি কি গাছ থেকে পরবে?

জিসান: হুম সেটা ঠিক। হিমু সত্ত্যি আমি তোমায় খুব ভালোবাসি তোমাকে এক মূহুর্ত না দেখলে আমার ভালো লাগেনা সবসময় তোমায় দেখতে ইচ্ছে করে।
জিসানের কথায় কি উত্তর দেব.. সত্ত্যি এটা যে আমি জিসানকে ভালোবাসিনা তবে ওর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। শুধু ভালো লাগা থেকে তো আর একটা সম্পর্ক তৈরী হয় না আর আমি তো এখন আদির স্ত্রী।
জিসান: কি হলো কথা বলছো না কেন?
~~জিসান আমাকে কয়েকদিন সময় দাও।
জিসান: হিমু আমি তোমায় জোর করব না তবে আমি তোমায় সত্ত্যি ভালোবাসি।
~~ হুম এখন রাখছি পরে কথা হবে।
জিসানের কল কাঁটতেই রুমে অভির প্রবেশ সয়তানি হাসি দিয়ে বলল..
অভি: জানো জানু আমার কপালটাই খারাপ ভেবেছিলাম ভাইয়া কোনো মেয়ে নিয়ে পালিয়েছে এই সুযোগে তোমার আমায় বিয়েটা সেরে ফেলব কিন্তু সেটা আর হলো না।

~~ আদি বাসায় আসছে কখন?
অভি: এই তো মাত্র বাবা ভাইয়াকে হেব্বি বকুনি দিচ্ছে হয়তো আজ ভাইয়াকে গুলি করে মেরে ফেলে সেই খবরই তোমায় দিতে আসছি।
~~ ওরে পিচ্ছি অভিটা আমায় কতো ভালোবাসে আগে বুঝলে ছোটবেলায়ই বিয়ে করে নিতাম।
অভি: এখন করলেও সমস্যা নেই কারন তোমায় বিয়ে করতে আমি সবসময় রাজি।
~~ওই সয়তানের হাড্ডি তুই আমার পিছনে কেন পরিস আমার বোনকে প্রোপোজ করতে পারিস না?
অভি: তাই তো এটা তো কখনও ভাবিনি। আজ থেকে তোমার সঙ্গে ব্রেকাপ আর তোমায় এতোগুলো ধন্যবাদ এতো সুন্দর আইডিয়া দেওয়ার জন্য তবে আমি কিন্তু তোমায় ভুলতে সব ভুলতে পারব না একটু ভালোবাসব কারন সবাই বলে প্রথম ভালোবাসা ভোলা যায় না তাই আমি…

~~ তুই যাবি এখান থেকে নাকি আমার রাক্ষসী রুপটা দেখতে চাস..
আমার কথা শুনে অভি চলে গেল অঃতপর আমি শুয়ে পরি কারন আদির মুখটা আমার একদম দেখতে ইচ্ছে করছে না জিসানের কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখ লেগে যায় হঠাৎ দরজার খট খট শব্দ কানে পৌঁছাতে ঘুম ভেঙে যায় আড় চোখে তাকিয়ে দেখি আদি শোফায় শুয়ে আছে আমি কেয়ার না করে ঘুমে মনোযোগ বসাই।
এরপর থেকে আমাদের মাঝে শুরু হয় কঠিন শত্রুতা এবং দুরত্ব। দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায় আদি বাইকে আর আমি রিক্সায় করে কলেজে যাই। দুজনের মধ্যে কথা বলা একদম অফ ইদানিং আদির মুখে অন্ধকার দেখা যাচ্ছে হয়তো আনিকার সঙ্গে কিছু হয়েছে।

এভাবে কেঁটে যায় কিছুদিন আদির সঙ্গে যতটা আমার দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে ঠিক ততটাই জিসানের সঙ্গে আমার মেলামেশাটাও বাড়ছে একদিন আমি রুমে বসে ফোন ঘাটতেছিলাম তখন আদি আমার সামনে বরাবর বসে।
আদি: হিমু তুই জিসানকে ভালোবাসিস?
~~ তা জেনে তুই কি করবি? আর যদি জানাটা খুব ইমপরট্যান্ট হয় তাহলে আমার উত্তর হবে হ্যাঁ আমি জিসানকে ভালোবাসি আর সেটা একটু না অনেকটা।
আদি: তুই যখন জিসানকে ভালোবাসিস আমি তোকে বাঁধা দেব না তুই ওকে নিয়ে সুখে থাক এটা আগেও চেয়েছি আর ভবিষ্যতেও চাইব।
~~ আদি একটা হেল্প করবি?
আদি: হুম বল চেষ্টা করব।
~~ তুই বাবা মাকে একটু ম্যানেজ করে আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দে প্লীজ!
আদি: আচ্ছা তুই যেটা চাইবি সেটাই হবে আমি সবাইকে বলে আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দেব হ্যাপি?
~~ এতগুলা হ্যাপি এই নাহলে আমার
ছোটবেলার শত্রু সরি বন্ধু। (জড়িয়ে ধরে)
আদি: অনেক রাত হয়েছে এখনি লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পর জিসানের সঙ্গে নাহয় কাল কথা বলিস।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৪

~~ আচ্ছা কিন্তু একটা শর্তে।
আদি: হুম বল।
~~ আজকে তুই আমার পাশে ঘুমাবি প্লীজ না করিস না প্লীজ প্লীজ!
আদি: আচ্ছা ঘুমাব তুই ঘুমিয়ে পর আমি একটু আসছি।
~~ আচ্ছা।
( বেলকনিতে গিয়ে সিগারেটের ধোঁয়ায় মগ্ন হই। একদিন ফাজলামি করে সিগারেট খেয়েছিলাম বলে পুরো কলেজ আমাকে কান ধরে চক্কর দিতে হয়েছিল এটা ছিল সিগারেট খাওয়ার শাস্তি আর এই শাস্তিটা দিয়েছিল হিমু। আজ মনে হচ্ছে এই সিগারেট ছাড়া আমার আপন কেউ নেই। হিমুর সাথে কাঁটানো প্রতিটি মূহুর্ত আমার বুকে বিঁধছে যাকে সব থেকে আপন মনে করতাম সেই আমায় আজ পর করে দিল। টানা এক ঘন্টা পর সিগারেটকে দূরে সরিয়ে ঘুমাতে আসি।

হিমু ঘুমিয়ে পরেছে হিমুকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে খুব সুন্দর লাগে মুখটা মায়ায় ভরা। প্রতিদিনের মতো আজও ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি তবে আজ চোখের জল চোখে নয় গাল বেয়ে পড়ছে।)
আদি: হিমু আমি তোকে সেই ছোটবেলা থেকে খুব ভালোবাসি রে.. নিজের থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসি প্লীজ এভাবে আমার হাত ছেড়ে দিস না।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৬