এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৪ || লেখিকা বন্যা মৃধা

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৪
লেখিকা বন্যা মৃধা

(ওর নরম হাত দিয়ে আমায় আস্তে করে জড়িয়ে ধরল। ওর হাতের স্পর্ষ পেয়ে মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা এখুনি মাংস হাড্ডি ফেঁটে বাইরে বেরিয়ে আসবে। এর আগে হিমু আমায় অনেকবার জড়িয়ে ধরেছে তবে এমন অনুভূতি কখনও হয়নি। আচ্ছা ও আজ আমার বউ বলে কি এমন অনুভূতি হচ্ছে নাকি শত্রু বলে? আরে যাই হোক মেয়েদের স্পর্ষ পেয়েছি এটাই অনেক।)
আদি: আরেকটু শক্ত করে ধর না।
~~মি. আদি আর কত শক্ত করে ধরব?
আদি: দাঁড়া আমি শিখিয়ে দিচ্ছি..

~~এই রাস্তার মাঝে যদি আর নাটক করিস তাহলে কিন্তু ধাক্কা মেরে ফেলে দেব সঙ্গে আমিও মরব।
আদি: না যেটুকু ধরেছিস ওতেই হবে।
~~এইতো গুড বয়। তাড়াতাড়ি চল আমার বয়ফ্রেন্ডগুলো আমার জন্য অধীর আগ্রহে ওয়েট করছে।
কিছুক্ষন পর আমরা কলেজে পৌঁছাতেই দুজনে আলাদা হয়ে যাই মানে আমি চলে আসি আমার বয়ফ্রেন্ডগুলোর কাছে আর আদি চলে যায় তার গন্তব্যে তবে আমাদের দুজনের ক্লাস এক। ভাবছেন বয়ফ্রেন্ডগুলো কারা..
তাহলে শুনুন আমি এই কলেজের সব থেকে সুন্দরী মেয়ে। ভালোবেসে কেউ কেউ আমায় ক্রাস বলে ডাকে। ওই আদি গাদি ছাড়া সব ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড কারন সবার যত্ন করা ভালোবাসা রিজেক্ট করে আমি নষ্ট করতে চাই না এবং তাদের কষ্ট দিতে চাইই না।

শ্রুতি: এই তুই কলেজে, তোরা না কাল পালিয়েছিলি?
~~হ্যাঁ তবে কোনো লাভ হয়নি বাবা ধরে ফেলছে।
শ্রুতি: তার মানে তোর আর আদির বিয়ে হয়ে গেছে?
~~হয়েছে কিন্তু আমি এসব মানি না কারন ওই বলদ আদিকে কখনও আমার বর হিসেবে মানতে পারব না। আরে ডাবলু তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন আমার কাছে আসো।
ডাবলু হলো কলেজের ভদ্র ভোলাভালা ছেলে কিছুদিন আগে আমার প্রেমে হাবুডাবু খেয়ে আমায় প্রোপোজ করে ফেলে। একটু বেশি মোটা বলে আমি ওকে ডাবলু বলেই ডাকি। প্রোপোজ করতে গিয়ে সে কি ন্যাকা কান্না পরে আর রিজেক্ট করতে পারিনি কারন আমি খুব দয়ালু তো তাই টুস করে একসেপ্ট করে নিয়েছি সেদিন থেকে আমার কথায় নেচে বেড়ায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ডাবলু: না তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। (মাথা নিচু করে)
~~ আরে বিয়ে হয়েছে তাতে কি আমি তো শুধু তোমায় ভালোবাসি কিছুদিন পর আদিকে ছেড়ে তোমার হাত ধরে পালাব।
ডাবলু: তাহলে ঠিক আছে। (৩৬ টা দাঁত বের করে বলল কারন ওর এক্সট্রা ৪ দাঁত বেশি আছে মানে আক্কেল দাঁত।)
~~আচ্ছা তুমি এখন ভদ্র ছেলের মতো ক্লাসে যাও আমরা পরে প্রেম করব।
ডাবলু চলে যাওয়ার পর আমরা হাসিতে মেতে উঠি কারন কলেজে এটাই আমার প্রধান কাজ। বাসায় প্রজা হতে পারি তবে কলেজে আমি রানী।
~~শ্রুতি ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটা কে রে? এর আগে তো কখনও কলেজে দেখিনি।
শ্রুতি: ওর নাম জিসান দুদিন আগে নতুন এসেছে কাউকে কেয়ার করে না এমনকি কোনো মেয়ের সঙ্গে কথাও বলে না।

আমাদের ইয়ারেই পরে শুনেছি ছেলেটির বাবা অনেক বড়লোক। আসার পর অনেক মেয়েই প্রোপোজ করেছে কিন্তু কারোর দিকে তাকিয়েই দেখেনি।
~~এতো ভাবওয়ালা.. দেখি এই হিমুকে কিভাবে রিজেক্ট করে..
শ্রুতি: তুইও কি অন্য মেয়েদের মতো প্রোপোজ করবি?
~~ আমি প্রোপোজ করব.. হিমু প্রোপোজ করেনা বরং হিমুকে প্রোপোজ করা হয় আমি তো শুধু রাস্তা দেখাব তারপর পাখি আমার কাছে এমনিই ছুটে আসবে।
শ্রুতি: কি করবি তুই?
~~ সেটা দেখতেই পারবি চল এখন ক্লাসে যাই।
আর বগ বগ না করে দুজনে ক্লাসে চলে আসি কারন আজ থেকে এই ভাবওয়ালা ছেলেকে নজরে রাখতে হবে। ক্লাসে এসে দেখি ছেলেটা একা একা লাস্ট বেঞ্চে বসে আছে তাই সুযোগটা মিস না করে শ্রুতিকে অন্য বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়ে আমি তার পাশে বসে পরি। আমি বসতেই সে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসল। তাকে বিরক্ত না করে ভালো মেয়ের মতো তার পাশে বসে ক্লাস করতে লাগলাম।

মাথায় হেব্বি একটা আইডিয়া আসল দ্রুত আইডিয়াটা মেসেজ করে শ্রুতিকে জানিয়ে দিলাম। ক্লাস শেষ হওয়ার সবাই চলে গেল কিন্তু আমরা তিনজন ছাড়া মানে আমি, শ্রুতি আর জিসান নামের ছেলেটি। ছেলেটি উঠে ক্লাস রুম প্রস্থান করবে ঠিক তখনি শ্রুতি জিসানের পথ আঁটকিয়ে প্রোপোজ করল কিন্তু জিসান কেয়ার না করে চলে যাওয়ায় এবার শ্রুতি তার হাত ধরে নানা প্রেম সংলাপ ছাড়তে লাগল ঠিক তখনি এন্ট্রি নিল সিনেমার নায়িকা মানে আমি।
~~ এই মেয়ে তোমাদের সমস্যা কি, কোনো ছেলে দেখলেই কি রাক্ষসীর মতো ঝাঁপিয়ে পরতে হবে, কি মনে করো নিজেদের?
শ্রুতি: ওকে প্রোপোজ আমি করেছি ওতো কিছু বলছে না তাহলে তুমি কেন আমাদের মাঝে আসছো, কি হয় তোমার বয়ফ্রেন্ড?

~~হ্যাঁ ও আমার বয়ফ্রেন্ড। নেক্সট টাইম যেন ওকে ডিসট্রাব করতে না দেখি তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
আমার চোখের ইশ্বারা পেয়ে শ্রুতি আর কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ রাঙিয়ে চলে গেল অঃতপর জিসানকে বললাম..
~~সরি মুখ ফসকে বলে ফেলছি আসলে কাউকে ডিসট্রাব করলে আমার একদম সহ্য হয় না তাই আরকি..
জিসান: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। (মুখের কোনে হাসি টেনে)
কথা বলে জিসান রুম থেকে প্রস্থান করা মাত্র শ্রুতি প্রবেশ করল।
শ্রুতি: আইডিয়া মনে হয় কাজে দিয়েছে।
~~অবশ্যই দেখতে হবে তো এটা হিমুর আইডিয়া। আচ্ছা চল হয়তো আদি আমার জন্য অপেক্ষা করছে লেট হলে বাসায় নালিশ করতে পারে।
আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসি এসে দেখি আদি বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে। কথা বলতে দেখে আমার মাথায় আগুন জ্বলতে লাগল এর আগে এমনটা হয়নি তবে আজকের কারনটা অজানা। আমাকে দেখে মেয়োটি চলে গেল।

~~ আদি এই মেয়েটি কে?
আদি: আমার নিউ গার্ল ফ্রেন্ড মানে আমি ওকে ভালোবাসি।
~~ ও আচ্ছা তাহলে তো আঙ্কেলকে খবরটা দিতে হচ্ছে।
আদি: আমার কোনো সমস্যা নেই। শুনেছি আমাদের ক্লাসে নাকি জিসান নামের একটা বাদর এসেছে দেখলাম তো তার সাথে ভালোই ভাব জমাচ্ছিলি।
~~ তুই দেখলি কিভাবে, কে বলছে তোকে?
আদি: এই হিরো সব খবরই রাখে আর এখন আরো বেশি করে রাখতে হবে কারন তুই আমায় টোকা মারলে আমিও তোকে পাথর ছুড়ে মারব।( সয়তানি হাসি দিয়ে)
সেদিনের মতো আমরা বাসায় চলে আসি। এরপর থেকে শুরু হয় বাসায় আদির সঙ্গে হাড্ডা হাড্ডি লাড়াই আদি আমায় ফাঁসাতে চায় আর আমি আদিকে। কলেজে জিসানের সঙ্গে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেছি এখন জিসান আমার পাশে বসে মুখে হাসি নিয়ে কথা বলে আমরা হাত ধরে এক সঙ্গে ঘুরে বেড়াই এভাবে ভালোই দিন কাঁটছিল।
একদিন কলেজে পৌঁছাতেই সেই মেয়েটা দৌঁড়ে এসে আদিকে জড়িয়ে ধরে একটা কিস করে পুনরায় দৌঁড়ে চলে গেল। এমন কান্ড দেখে আমার চোখ মাটিতে খসে পরল কেউ ফুটবল ভেবে লাথি মারার আগে চোখ আগের স্থানে রেখে বললাম..

~~ ওপপস তাহলে জল এতোদূর গড়িয়েছে তোদের বিয়ের ব্যাপারে কি বাসায় কথা বলব?
আদি: আরে রাখ তো তোর বিয়ে একটা বিয়ে করে যে প্যারা পাচ্ছি আবার বিয়ে কখনও না।
~~তাহলে এসব কি? সম্পূর্ন ট্রু লাভ চলছে আর আমি বললেই দোষ।
আদি: জ্বী এটা ট্রু লাভ তাতে তোর কি.. তবে তোর মতো হাতে হাত রেখে ক্যাম্পাস চক্কর মারি না।
সয়তানের হাড্ডিটা সয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেল অঃতপর আমি জিসানকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।
জিসান: হিমু তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
~~ হ্যাঁ বলো।
জিসান: আজ নয় কাল তো কলেজে অনুষ্ঠান তাই ভেবেছি কাল বলব।
~~ আচ্ছা তুমি ক্লাসে যাও আমি একটু ফ্রেন্ডদের সঙ্গে কথা বলে আসছি।
জিসান চলে যাওয়ার আমি খুশিতে আকাশের উপর দিয়ে উড়তে লাগলাম শ্রুতির হাতের স্পর্ষ পেয়ে আমার ডানা দুটি ভেঙে যাওয়ায় মাটিতে পরে গেলাম।
শ্রুতি: এত খুশী কেন?

~~ আমার এতোদিনের কষ্ট কাল সফল হতে যাচ্ছে তাই।
শ্রুতি: মানে আদি কাল তোকে ছেড়ে দিচ্ছে?
~~ আরে হাদারাম তা নয়। জিসানের কথায় যেটুকু বুঝেছি কাল আমায় ও প্রোপোজ করবে।
শ্রুতি: তাই নাকি ট্রিট চাই কিন্তু।
~~ পেয়ে যাবি চল জিসানের সঙ্গে আরেকটু লুকোচুরি খেলে আসি।
অঃতপর আমরা ক্লাসে চলে আসি। সেদিনের মতো কলেজ শেষ করে বাসায় চলে আসি।
বিকেলে বাসায় সবাই মিলে গল্প করছি শুধু আদি ছাড়া। কিছুক্ষন পর আদি আমার পাশে এসে বসে কিন্তু সে ফোনের মধ্যে বিজি ছিল হয়তো সেই চিকনি চামেলির সঙ্গে ইন্টু পিন্টু করছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে হয়তো আমাকে দেখিয়ে এসব করছে তাই আমিও বজ্জাত আদিকে দেখিয়ে ফোনটা কানে গুঁজে স্থান ত্যাগ করলাম।
প্রতিদিনের মতো পরের দিনও সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য বাইকে আদির পিছনে বসে আছি কিছু পথ অতিক্রম করতেই আদি বলল..
আদি: কি হলো আজ জড়িয়ে ধরছিস না কেন?

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৩

~~ দেখতে পাচ্ছিস না আমি আজ সুন্দর করে সেজেছি তোকে জড়িয়ে ধরলে আমার মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে।
আদি: তাই তো ভাবি আটা ময়দার গন্ধ কোথার থেকে আসছে। কলেজে সামন্য অনুষ্ঠানের জন্য এতো সাজার কি আছে..
~~ সেটা তোরর বোঝার বয়স হয়নি আর বগ বগ না করে তাড়াতাড়ি চল।
কলেজে পৌঁছে দেখি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে তাই দ্রুত জিসানের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। আজ জিসান আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে এটা আমার চোখের আড়াল হলো না দুজনেই বাক নীরবে দাঁড়িয়ে আছি। অবশেষে জিসান নীরবতা ভেঙে বলল..
জিসান: হিমু তোমায় আজ খুব সুন্দর লাগছে।
~~ধন্যবাদ।
কিছুক্ষন পর আদি আমায় ইশ্বারায় ডাকল কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ওর কাছে গেলাম।

~~ সমস্যা কি তোর? একটুও আমায় শান্তিতে থাকতে দিবি না?
আদি: আসলে আমার ওয়ালেটটা ভুলে বাসায় রেখে আসছি কিছু টাকা দে বাসায় পৌঁছেই দিয়ে দেব।
~~ তোর কাছে ৩ হাজার ৪ শত ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা পাই আগে সেটা দে তারপর দেব।
আদি: এমন করিস না আনিকার কাছে আমার মান সম্নান নষ্ট হোক এটা তো তুই কখনও চাইবি না তাইনা..(সেই জড়িয়ে ধরা মেয়েটি)
~~ বেশ করে চাই এক টাকাও পাবি না আমি যাচ্ছি বায়।
আদি আমায় অনেক বার ডাকল কিন্তু ওর কথা কেয়ার না করে জিসানের কাছে চলে আসি।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবার মতো আমি আর জিসানও ক্যাম্পাসে বসে আছি। হঠাৎ জিসান বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।
আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক গাঁদা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল..

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৫