এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৩ || লেখিকা বন্যা মৃধা।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৩
লেখিকা বন্যা মৃধা।

বাসায় প্রবেশ করতেই কিছু ভূত পেত্নী আমাদের চোখে পরতেই আমরা দুজনেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম।( কিছুটা অজ্ঞানের মধ্যেও পালানোর চেষ্টা।)
কিছুক্ষন পর নিজেকে একটা রুমে আবিস্কার করলাম চোখ খুলতেই দেখলাম আমার চারদিকে অনেক ধরনের ভুত পেত্নী দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আদিকে কোথাও দেখতে পেলাম না। আদি কোথায়.. ও তো আমার সঙ্গেই ছিল। তারমানে কি এই ভূত পেত্নীগুলো আদির ঘাড় মটকে দিয়েছে, এবার কি আমার পালা?
বাবা: অনেক লুকোচুরি খেলা হয়েছে কিন্তু আর নয় এই মূহুর্তে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে তাড়াতাড়ি হিমুকে রেডি করে নিয়ে এসো।(মাকে উদ্দেশ্য করে বলল)
বাবা চলে যাওয়ার পর..

~~ মা আমি এই বিয়ে করতে চাইনা প্লীজ তুমি বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলো।
মা: একদম চুপ আর কত জ্বালাবি আমাদের? আদির সঙ্গে তোর বিয়ে হবেই।
~~ ও মা প্লীজ এই বাচ্চা মেয়েটার সঙ্গে এমন অত্যাচার করো না!
মা: একটাও কথা না আর শোন এখান থেকে পালানোর চেষ্টা ভুলে করতে যাস না বিপদে পরে যাবি কারন আমার স্বামী বাসার চারপাশে লোক লাগিয়ে দিয়েছে।
~~ মা তোমরা আমার সাথে এমন করতে পার না।
মা: একদম ন্যাকামি করবি না আমি যাচ্ছি ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হবি নাহলে তোর বাবাকে পাঠিয়ে দিব।
কেউ আমার মনের কষ্ট বুঝল না। আজ একটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে অন্তত পালাতে পারতাম তাও নেই। অবশ্য থাকলে লাভ হতো না কারন আমি তো বিয়েই করতে চাই না শুধু প্রেম করে টিডিং টিডিং করে ঘুরে বেড়াতে চাই কিন্তু সেটা আমার রাক্ষস বাবা ছিঁনিয়ে নিয়েছে ধুর ভাল লাগে না।

কোনোরকম নিজের সঙ্গে শাড়িটা পেঁচিয়ে পৃথিবীর সব কষ্ট মাথায় নিয়ে বসে আছি। কিছুক্ষন পর মা বোনের প্রবেশ তারা এসে আমায় বিয়ের স্থানে নিয়ে চলল। মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলার সাহস পেলাম না শুধু মাত্র দুই বাবার জন্য। বিয়ের স্থানে এসে দেখি আদি বসে আছে ইচ্ছে করছে এখুনি আদি গাদিকে গিলে খাই অবশ্য এখানে ওর কোনো দোষ নেই কারন আমরা দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার। সাধারন ভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন করা হয় আর আমরা দুজনে বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হই অঃতপর আমাদের নিয়ে বাসায় এলো। বাবা মা আমায় কিছু না বলেই আদির সঙ্গে তার বাসায় পাঠিয়ে দিল। যতদূর জানি মেয়ে শশুর বাড়ি যাওয়ার সময় কাঁদে কিন্তু আমি সেই সুযোগটা পেলাম না ন্যাকা কান্না থেকে আমি বঞ্চিত হলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আন্টি (আদির মা) আমাকে বাসায় এনে এক অন্ধকার রুমে মানে অন্ধকার নামক বাসর ঘরে রেখে দিয়ে চলে গেল। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এটা আদির রুম।
কিছুক্ষন পর রুমে দ্বিতীয় ব্যাক্তির প্রবেশ।
আদি: আমার দিকে রাক্ষসীর মতো তাকিয়ে আছিস কেন?
~~ আদি আমার বিয়ে হয়ে গেছে আমি আর প্রেম করতে পারব না আমার জীবন শেষ তুই আমার জীবন শেষ করে দিয়েছিস।
আমি: এ তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ করবি নাকি মেরে পেত্নী বানিয়ে দেব?
~~ আমি তোকে বিয়ে করিনি মানে বর হিসেবে মানি না।
আদি: তোকে বউ হিসেবে মানতে আমার বয়েই গেছে। আমার বউ তো হবে আমার স্বপ্নের সেই রাজকুমারী.. সর তো আমি ঘুমাব।
~~ আদি তুই এমন করতে পারিস না!

আদি: শুধু তোর জন্য আমি বিয়ের জালে ফেঁসে গেছি তোর জন্যই হয়তো আমার স্বপ্নে সেই রাজকুমারী আর আসবে না। তুই আমার জীবনে একটা লম্বা প্যারা।
~~ কি বললি তুই.. এই হাতির ডিম কি করছি আমি? ( আদির বুকের উপরে উঠে গলা চেঁপে ধরে)
আদি: হিমু ছাড় আমায় নাহলে মরে যাব আর আমি মরে গেলে কিন্তু কোনোদিন আমার বেবির মা হতে পারবি না।
~~ হ্যাঁ তোকে মেরেই ফেলব তারপর সকালের হেডলাইন হবে “বাসর ঘরে বউয়ের হাতে স্বামী খুন” এটা হবে আমাকে বিয়ে করার শাস্তি।

আদি: পালানোর সময় বাসায় ফোন রেখে গেছিলাম সেটা বাবার হাতে পড়ায় ধরা খেয়েছি বাবা সৃজনকে কল করে ওকে ভয় দেখিয়ে এসব করেছে আর সৃজনদের বাসায় নাকি আজ একটা অনুষ্ঠান ছিল সেই সুযোগে..
~~ তোর মতো সয়তানের সঙ্গে সারাজীবন কাঁটাতে হবে এটা ভাবলেই আমার কলিজা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে.. কি করব আমি এখন?
আদি: আয় আমরা বাসর করি তাহলে সব প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে। (দাঁত কেলিয়ে)
~~ কি?? ( রাগি চোখে)
আদি: না মানে বলিছি অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পর আমি ঘুমাইলাম।
আমার সাথে এমনটা হবে তা কখনও ভাবিনি বিয়ে মানে তো স্বামীর দাসী হয়ে থাকা আমি আর আগের চলতে পারব না প্রোপোজ তো দূরের কথা আমার দিকে কেউ ঘুরেও তাকাবে না। আমি আদির দাসী হবো কখনও না দশবার মরে গেলেও না নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেও পারিনি।
সকালে ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আবিস্কার করি আদির বুকে…

~~ ওই আদি গাদি তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি কেন? ( বেড থেকে নেমে)
আদি: তুই আমায় আগে জড়িয়ে ধরেছিস তাই আমি ভাবলাম তুই স্বামীর অধিকার চাস তাই আমিও ধরেছি।
~~ আমি তোকে স্বামী হিসেবে চাইব? এই শোন আমায় পাগলা কুকুরে কামড়ায়নি যে তোকে আমার স্বামী ভাবব। আমি বালিশ ভেবে জড়িয়ে ধরেছি এছাড়া অন্য কিছু নয়।
আদি: আমিও তোকে সেই রাজকুমারী ভেবে জড়িয়ে ধরেছি এছাড়াও অন্যকিছু নয়। (দাঁত কেলিয়ে)
আদির সঙ্গে ফালতু বগ বগ না করে দ্রুত সাওয়ার নিয়ে নিচে চলে আসি কারন নিচের পরিস্থিতিটাও তো দেখতে হবে। আচ্ছা আঙ্কেল আন্টি কি আমায় আগের মতো চলতে দেবে নাকি বাসা বন্দি করে রাখবে.. যাই করুক
ভালো বউয়ের মতো আন্টির মন জোগাতে হবে নাহলে স্বাধীনতার পতাকার মতো উড়তে পারব না।
অভি: জানেমন তোমায় খুব সুন্দর লাগছে ইচ্ছে করছে তোমায় নিয়ে প্রেমের রাজ্য ভ্রমন করে আসি।

~~ এই সয়তানের ডিব্বা একদম ফালতু কথা বলবি না আমি তোর ভাইয়ের বউ আমার সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলবি বুঝেছিস..
অভি কিছুটা আমার কাছে এসে বলল…
অভি: আমি জানি তোমাদের বিয়ে হলেও তোমরা এই বিয়ে মানো না আর মানলে তোমরা অবশ্যই কাল বাসর করতে।
~~আমরা বাসর করেছি কিনা তা তুই জানিস?
অভি: অবশ্যই কারন কাল রাতে দরজায় কান পেতে সব শুনেছি। (বলেই ২৮টা দাঁত বের করে দিল)
কি সয়তান ছেলেরে বাবা… এ ছেলে তো আমায় যে কোনো সময় ভাগিয়ে নিয়ে যাবে অবশ্য আদির যায়গায় অভি থাকলে ভালোই হতো তাহলে আজ এই হাদারাম আদির সঙ্গে বিয়ে হতো না। ভাই কেন যে তুই আদির আগে ডাউনলোড হলি না…
আদির মা: হিমু তুমি একা যে আদি কোথায়?
এইতো সুযোগ আদির গাদিকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার তাই মুখ কালো করে বললাম…

~~ আসলে আন্টি আদি এখনো ঘুমাচ্ছে আমি ওকে অনেক ডেকেছি কিন্তু আমাকে বকা দিয়ে পাঠিয়ে দিল।
আদির বাবা: কি অপদার্থটা তোমায় বকা দিয়েছে ওর সাহস তো কম নয় ওকে নিচে আসতে দাও ওকে গুলি করে মারব।
এইতো হিমু তোর বুদ্ধি কাজে দিয়েছে এবার আদিকে কে বাঁচায়। আমাকে এই বিয়ের হাত থেকে যেদিন মুক্তি দিয়ে পালাতে সফল হবি সেদিন তোর পিছু ছাড়ব এর আগে নয় আঙ্কেল আন্টিকে দিয়েই তোকে জ্বালিয়ে কয়লা বানিয়ে দিব।
অভি: বাবা ওই তো ভাইয়া চলে এসেছে।
আয় আয় তোর জন্য সুন্দর গিফট তৈরী করা হয়েছে। (মনে মনে)
আদির বাবা: আদি তুই নাকি হিমুকে বকা দিয়েছিস, তোর সাহস কিভাবে হয় আমার পরিবারের একমাত্র বড় ছেলের বউকে বকা দেওয়ার?

(এটা কি হলো সকাল সকাল বাবা আমায় বকা দিচ্ছে কেন আমি আবার কি করলাম নাকি আমার বিরুদ্ধে কোনো স্বড়যন্র করছে… হিমু কেন হাসছে তার মানে আমাকে নিয়ে এই পেত্নী নিশ্চয়ই কিছু বলেছে তোকে তো পরে দেখে নিচ্ছি। ভাতের সঙ্গে বাবার এক গাঁদা বকুনি ফ্রি খেয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেব ঠিক তখন আমার রাক্ষস বাবার ডাক পরল..)
আদির বাবা: আদি আজ থেকে প্রতিদিন তোর সঙ্গে বাইকে করে হিমুকে নিয়ে যাবি এবং বাসায় নিয়ে আসবি আমি চাইনা আমার ছেলের বউ একা কলেজে যাক।
আদি: আচ্ছা আগের মতোই মাঝে মাঝে নিয়ে যাব কিন্তু প্রতিদিন পারব না।
আদির বাবা: কেন পারবি না?
আদি: আমার কলেজের মেয়েরা ওকে যদি আমার বাইকের পিছনে প্রতিদিন দেখে তাহলে আর কোনো মেয়ে আমার প্রোপোজে রাজি হবে না।
আদির বাবা: কি বললি তুই? আরেকবার বল তো…
আদি: তোমরা সবাই যেটা শুনেছ সেটাই বলেছি।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ২

আদির বাবা: আমার বন্দুকটা নিয়ে এসো এখুনি আমি ওর মাথার খুলি উড়িয়ে দেব।( আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বলল)
ওরে আঙ্কেল তো রেগে পুরাই আগুন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে আঙ্কেলের শরীরে ডিম ছুড়ে মারলে নিমিষেই অমলেট হয়ে যাবে। আঙ্কেলের কথা শুনে মূহুর্তেই আদি তার পা জড়িয়ে ধরল…
আদি: ও বাবা আমার বউকে প্রতিদিন বাইকের পিছনে বসিয়ে কলেজে নিয়ে যাব প্রয়োজনে ওকে নিয়ে সম্পূর্ন কলেজ দশবার চক্কর দিব তবু এমনটা করো না।
আদির বাবা: আচ্ছা ঠিক আছে এখন ওকে নিয়ে কলেজে যা।
আদি আর কিছু না বলে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল আর আমিও ওকে অনুসরন করে পিছনে চলে আসলাম। আমি বাইকের পিছনে উঠি কিছুটা পথ যেতেই বাইক থামিয়ে বলল…
আদি: আমার বাইকের পিছনে প্রতিদিন যেতে হলে তোকে একটা শর্ত মানতে হবে।

~~ কি শর্ত? বল শুনি…
আদি: আমাকে জড়িয়ে ধরতে হবে মানে আমি খুব স্পীডে চালাই তো তাই।
~~দাঁড়া এখনি আঙ্কেলকে কল করতেছি।
আদি: কর আমার কোনো সমস্যা নেই কারন আমি এখন বাইরে পালাতে এক সেকেন্ডও প্রোয়োজন হবে না। আমি পালানোর পর তোকে একটা টাকলা নানার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমায় দাওয়ার করিস রোস্ট খাওয়ার জন্য এখন আমি আমার রাজকুমারীর কাছে গেলাম…
~~ আরে জড়িয়ে ধরছি তো।
আদি: এইতো বুদ্ধিমতী মেয়ে শক্ত করে ধর।
( ওর নরম হাত দিয়ে আমায় আস্তে করে জড়িয়ে ধরল। ওর হাতের স্পর্ষ পেয়ে মনে হচ্ছে আমার কলিজা এখনি মাংস হাড্ডি ফেঁটে বাইরে বেরিয়ে আসবে। এর আগেও হিমু আমায় জড়িয়ে ধরেছে তবে কখনও এমন অনুভূতি হয়নি।)

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৪

1 COMMENT

Comments are closed.