এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ২ || লেখিকা বন্যা মৃধা।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ২
লেখিকা বন্যা মৃধা।

আদি: ওরে পেত্নী আমায় ছেড়ে দে আমার কিছু হলে কিন্তু তোকেই আমার বেবির মা হতে হবে।
~~আমায় টেনশনে ফেলে দিয়ে তুই মহা শান্তিতে ঘুমাবি এটা আমি কিভাবে সহ্য করি বল..
আদি: আর ভুলেও ঘুমাব না তবুও আজকের মতো ছেড়ে দে প্লীজ।
~~এখনি পালাব চল। (ছেড়ে দিয়ে)
আদি: পাগল নাকি এখন পালিয়ে গেলে কালকেই আমাদের খুঁজে বের করে অঃতপর বিকেলে বিয়ে এতে তো আমাদের বাবাদের সম্মান নষ্ট হবে না আর সম্মান নষ্ট নাহলে তো আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

~~ তা ঠিক কিন্তু আমরা পালিয়ে কোথায় যাব?
আদি: সব রেডি করা আছে। তুই শুধু বিয়ের কিছুক্ষন আগে রাস্তার মোরে এসে দাঁড়াবি তাহলেই হবে আমি সালমান খানের মতো উপস্থিত থাকব।
~~ আদি আমারনা খুব ভয় করছে যদি বাবা জেনে ফেলে তাহলে কি হবে?
আদি: আরে উগান্ডার পেত্নী এতই যখন ভয় তাহলে বিয়ে করে নে… আর চাইলে আমার থেকে সাহস ধার নিতে পারিস।
~~ কিভাবে?
আদি আমায় জড়িয়ে ধরে..
আদি: এভাবে।
~~ আমায় ছাড় বলছি নাহলে কিন্তু এখুনি তোর ঘার মটকিয়ে রক্ত চুসে খাব।
আদি: আরো বোকা আমি তোকে আমার থেকে সাহস দিচ্ছি।(শক্ত করে ধরে)
~~ আদি গাদি বাবা কল দিচ্ছে আমায় ছেড়ে দে অনেক সাহস দিয়েছিস আর চাই না।
বাবার কথা শুনতেই আদি আমায় ছেড়ে দিল আমি এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে না থেকে আদির রুম প্রস্থান করে এক দৌঁড়ে বাসায় উপস্থিত হলাম এসে দেখি বিরোধী পক্ষ দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা: কোথায় গিয়েছিলি? (ধমক দিয়ে)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~~আদির বাসায়। (মাথা নিঁচু করে)
বাবা: কাল বিয়ে আজ তুই এ বাসা থেকে ওই বাসায় ঘুরে বেড়াচ্ছিস আশেপাশের মানুষ নানা কথা বলছে আর কত সম্মান নষ্ট করবি আমার?
বাবা এখনও তো তোমার সম্মানের কিছুই নষ্ট হয়নি, নষ্ট তো কাল হবে কাল আমি সবথেকে খুশি হবো বিয়েও ভাঙবে আর তোমার সম্মানও ভাঙবে হা হা হা (মনে মনে)
বাবা: ওকে দেখে মনে হচ্ছে বিয়েতে নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল পাকাবে কিন্তু আমি ওর প্লান সফল হতে দেব না। এখন থেকে কাল বিয়ে পর্যন্ত ওর রুম থেকে বের হওয়া বন্ধ। (মাকে বলল)
মনে হচ্ছে এখুনি মায়ের কোলে উঠে তারপর কোল থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে যাই। ভদ্র মেয়ের মতো নিজের রুমে এসে বসে রইলাম। রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না মনের মধ্যে কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে ভয়কে উপরে পাঠিয়ে ফোন ঘাটতে লাগলাম।। কিছুক্ষন পরে রুমে মায়ের প্রবেশ,

মা: কিরে এখনও ঘুমানি কেন? কাল সকাল সকাল উঠতে হবে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর।
~~ মা আমি এই বিয়েটা করতে চাই না তুমি বাবাকে একটু বুঝিয়ে বল প্লীজ!
মা: কোনো লাভ নেই জানিস তো তোর বাবার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত আর আদি তো খুব ভালো ছেলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় আর তোরা তো সেদিন একসাথে ছিলি তারপরেও সমস্যা কোথায়?
~~ মা তুমিও এটা বলতে পারলে?
মা: সবাই যেটা বলছে আমিও সেটাই বলেছি এখন আর বগ বগ না করে ঘুমিয়ে পর তোর বাবা দেখলে বকা দেবে।
মায়ের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়ে পরলাম। আজ বুঝতে পারলাম আমার শত্রু মাও আমায় ওই সয়তান আদির গলায় ঝুলানোর জন্য সবাই উঠে পরে লেগেছে। আমরাও দেখে নেব কাল কিভাবে আমাদের বিয়ে দিতে পার.. সব ভাবনার সমাপ্ত ঘটিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে ঘুম ভাঙে মায়ের ডাকে চোখে ঘুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে পা বাড়াতেই মনে এটা আমার বাসা নয় এটা বড় কোনো শপিং মল কিন্তু এই শপিং মলে শুধু আমার রিলেটিভরাই এসেছে। চারদিকে মনোমুগ্ধকর সাজানো দেখে আমি মনে মনে সালমান খানের সঙ্গে ড্যান্স করেতে লাগলাম। আমার আর সালমান খানের রোমান্সে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলো পাগল প্রেমিক অভি।
~~ এই সয়তানের হাড্ডি তুই এখানে কি করছিস?
অভি: আমার ভালবাসার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তার শোক দিবস পালন করতে আসছি।
অভির কথায় আমার ঘোর কাঁটে তারমানে এসব আমার বিয়ের জন্য আয়োজন করা হয়েছে, না না এটা আমি কখনও হতে দেব না।
~~ এই আদি কই রে?
অভি: জানেমন ভাইয়া তো বিয়ের জন্য রেডি হচ্ছে চলো এখুনি আমরা পালিয়ে যাই।
~~ সয়তান ছেলে একদম চুপ পালাব নাকি তোর ভাইয়ের গলায় ঝুলব সেটা আমি বুঝে নেব এখন সামনে থেকে সর।
অভি: জানেমন একটা চুম্মা দাও এক সেকেন্ডে চলে যাব।
~~ তুই যাবি নাকি জুতা খুলব…
অভি: আচ্ছা যাচ্ছি।

ইচ্ছে না থাকা সত্বেও সবাই জোর করে আমায় গায়ে গলুদ অনুষ্ঠানে যোগ করাল গায়ে হলুদের পর সবার কথা মতো রুমে বসে আছি মনে হচ্ছে ছোট বেলায় যেমন পুতুলের পারমিশন না নিয়ে বিয়ে দিতাম ঠিক তেমন করে সবাই মিলে জোর করে আমায় বিয়ের জন্য রেডি করছে। মাঝে মাঝে আদির সঙ্গে কথা বলে মনটা শান্ত করে নিচ্ছি। বিকেলের পর সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো বাড়িতে বিয়ের বাজনা আরো দ্বিগুণ জোরে বাজতে শুরু করল আর এদিকে আমার কলিজা স্থির হতে লাগল। এক গাঁদা আটা ময়দা আর ভারি জুয়েলারি পড়িয়ে সবাই আমার রুম থেকে প্রস্থান করল এই সুযোগে আমি আদি গাদিকে কল দেই।
রিং বাজতেই সয়তানটা কল রিসিভ করে…

~~ আদি একটু পরেই আমার বিয়ে প্লীজ এই বিয়ের হাত থেকে আমায় বাঁচা নাহলে আমার লাইফ শেষ হয়ে যাবে।
আদি: আরে তোর মতো পেত্নীর হাত থেকে আমিও বাঁচতে চাই। টেনশন করিস না সব রেডি আছে শুধু সময়ের অপেক্ষা শোন তুই ঠিক ১০ মিনিট পর রাস্তার মোরে চলে আয় আমি সেখানেই থাকব।
~~আচ্ছা কিন্তু আদি আমার খুব ভয় লাগছে..
আদি: এই সালমান থাকতে কিছু হবে না। (টুট টুট..)
২০ কেজি ভয় নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। সুন্দর সুন্দর কিছু ড্রেস, গয়না আর কিছু টাকা নিয়ে বের হব ঠিক তখনি দরজায় নক পরল।
মা: হিমু দরজা বন্ধ করেছিস কেন? আদির বাড়ির সবাই এখনি এসে পরবে।
~~ এইতো মা শাড়িটা একটু ঠিক করছি আমার বিয়ে বলে কথা পরীর মতো সাজতে হবে তুমি বোনকে একটু পাঠিয়ে দাও।

মায়ের সাউন্ড না পেয়ে বুঝতে পারলাম মা চলে গেছে। কোনো উপায় না পেয়ে জানলা দিয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম কারন আমাদের বাসার পিছনে একটু অন্ধকার টাইপের মানুষ তেমন একটা যাওয়া আসা করে না। পালানোর জন্য দড়ি হিসেবে ব্যবহার করলাম বিয়ের শাড়ি। মনে মনে বাবার থেকে সাহস চুরি করে ঝুলে পরলাম শাড়ির সঙ্গে। নেমে মাথায় ওড়না গুঁজে সোজা চলে আসি রাস্তার মোরে এসে দেখি সেখানে দুটি সয়তান দাঁড়ানো মানে আদি গাদির সঙ্গে তার মোটরগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
~~ তাড়াতাড়ি চল…
আদি: তুই কি সারাজীবনের মতো শশুর বাড়ি যাচ্ছিস?
~~ ওই এটা বললি কেন? ( ভ্রু কুঁচকে)
আদি: না মানে ব্যাগটা তো সেই লেভেলের বড় তাই বললাম আরকি।
~~ সেটা তোকে দেখতে হবে না আমার যা ইচ্ছে তাই করব আর বগ বগ না করে তাড়াতাড়ি চল নাহলে ফেঁসে যাব।
~~ দাঁড়া সৃজনকে একটা কল করে নেই ওইখানে সব ঠিক আছে কিনা।
ওরে আমার ফোন কই… আমি মনে হয় ফোন বাসায় রেখে আসছি তুই দুই মিনিট এখানে দাঁড়া আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।

~~এই হাতির ডিম তুই এখন কোথায়ও যেতে পারবি না সামান্য একটা ফোনের জন্য আমি তোর গলায় ঝুলতে চাই না। (আদির জামার কর্লার ধরে)
আদি: আরে এভাবে ধরছিস কেন? আমি যাব দেন ফোনটা নিয়ে চলে আসব।
~~ কোনো প্রয়োজন নেই আমরা সেখানে পৌঁছেই সব জানতে পারব তবুও তুই বাসায় যেতে পারবি না।
আদি: হিমু একটু বোঝার চেষ্টা কর আমার ফোন সঙ্গে না থাকলে মনে হয় আমি আমার গার্ল ফ্রেন্ডকে হারিয়ে ফেলছি।
~~ একদম ন্যাকামি করবি না এখনি বাইক স্টার্ট কর নাহলে এখন তোর কপালে কি আইটেম আছে তা আমি নিজেও জানিনা।
আদি: আচ্ছা চল।
আর এক মূহুর্ত সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আদি ওর মোটর গাড়ি স্টার্ট করল অবশেষে আমরা পালাতে সফল হলাম। বিয়ে মানেই প্যারা আর এই প্যারায় হিমু কখনও পরবে না। রাতের অন্ধকারে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের গন্তব্য স্থলে।

~~ এটা কি বাইক নাকি কোনো রিক্সা? (রেগে)
আদি: তোর চোখে কি ন্যাবা হয়েছে নাকি যে আমার বিএম ডব্লিউ বাইককে রিক্সা বলছিস?
~~ যেভাবে চালাচ্ছিস কোনো অন্ধ লোকও বলবে এটা রিক্সা না সারা রাতে কেন এক বছরেও আমরা পৌঁছাতে পারব না।
আদি: তোর স্থানে গার্ল ফ্রেন্ড থাকলেই দেখিয়ে দিতাম এটা বিএম ডব্লিউ নাকি সিএম ডব্লিউ। আমার গার্ল ফ্রেন্ড আমায় আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরবে আর আমি ওর হাতের স্পর্ষ পেয়ে সুখের জোয়ারে ভাসতে থাকব মানে ফুল গিয়ারে চালাব।
~~ আদি আমরা এখন বিয়ের হাত থেকে পালাচ্ছি এভাবে বাইক চালালে বাবা রিক্সা নিয়ে আমাদের পিছনে আসলেও ধরে ফেলবে।
আদি: এতোই যখন বিএম ডব্লিউতে উড়তে চাচ্ছিস একবার গার্ল ফ্রেন্ডের মতো জড়িয়ে ধরলেই তো হয়।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১

~~ আমি তোকে জড়িয়ে ধরব? কখনও না এতোদিনে ধরিনি আজও ধরবো না।
আদি: কেন একটু জড়িয়ে ধরলে কি আমার বেবির মা হয়ে যাবি?
~~ কি বললি তুই…আমি হবো তোর বেবির মা? তোর সঙ্গে বিয়ে হলেও না।
আদি: এমন করছিস কেন… একটু জড়িয়ে ধরলে এতোক্ষনে আমরা পৌঁছে যেতাম প্লীজ একটু ধরনা প্লীজ প্লীজ…
~~ ওকে ওকে ধরছি তবুও দ্রুত চালা।

আদি: এখন দেখাচ্ছি এটা রিক্সা নাকি বিএম ডব্লিউ।
১ ঘন্টা পর আমরা আমাদের গন্তব্য
স্থলে পোঁছাই হয়তো আমাদের বাবা মা এতোক্ষনে বিভিন্ন স্থানে লোক লাগিয়ে দিয়েছে আমাদের খোঁজার জন্য কিন্ত আমরা তো তাদের থেকে দ্বিগুণ চালাক তাই তাদের অজানা স্থানে চলে এসেছি। এসে কিছুটা অবাক হই কারন বাড়িটি বেশ সুন্দর করে সাজানো ঠিক বিয়ে বাড়ির মতো।
~~ আদি এখানে কি কোনো অনুষ্ঠান নাকি?
আদি: জানিনা সৃজন তো আমায় তেমন কিছু বলেনি চল ভিতরে গিয়ে দেখি।
~~ হুম চল।
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই কিছু ভূত পেত্নী আমাদের চোখে পরতেই আমরা দুজনেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম। ( কিছুটা অজ্ঞানের মধ্যেও পালানোর চেষ্টা)

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ৩