এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১ || লেখিকা বন্যা মৃধা।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ১
লেখিকা বন্যা মৃধা।

~~আমার ভদ্র পেটে তোর অভদ্র ভোঁচা বেবি কখনও প্রবেশ করতে দেব না মানে আমি তোকে বিয়ে করতে পারব না তুই আমায় ভুলে যা।
আদি: তোর মতো উগান্ডার পেত্নীকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে। আমি আদিত্য রায় আমার ডিমান্ড জানিস.. মেয়েরা আমাকে পেতে টাকা টাকা উড়িয়ে বেড়ায়। (রাজপুত্রের মতো ভাব দেখিয়ে)

~~ হা হা হা.. টাকাগুলো নিশ্চয়ই আমার শিউলী ফুল গাছের ঝরা পাতার মতো। ভুলে যাস না তোর কি ডিমান্ড তা এই হিমু ভালো করেই জানে। তোর যে খাটাসের মতো চোখ সেটা মেয়ে নয় কোনো টিকটিকির উপর নিক্ষেপ করলেও সে তার লেজ দেখিয়ে চলে যাবে।
আদি: হিমু তুই কিন্তু আমায় অপমান করছিস ভালো হবে না কিন্তু।
~~ খারাপ তো অলরেডি হয়েই গেছে যেভাবে পারিস বিয়েটা ভেঙে দে নাহলে যে আমায় তোর গলায় থুক্কু ফ্যানে ঝুলতে হবে।
আদি: কিছু তো একটা করতেই হবে তা নাহলে আমার স্বপ্নের রাজকুমারীকে পাওয়া হবে না। ভাবতে দে.. পেয়েছি আইডিয়া।
~~ কি আইডিয়া তাড়াতাড়ি বল।

আদি: শোন.. আমি তো কখনই আমার বাবাকে সাহস করে বলতে পারব না তাই তুই তোর বাবাকে বলে দে যে তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস না তাহলেই প্রবলেম সলভ। ( দাঁত কেলিয়ে)
~~ কি বললি তুই?( চোখ গরম করে)
আদি: কই কিছু বলিনি তো।
~~ আমি যদি আমার বাবাকে কথাটা বলতে পারতাম তাহলে তোর পেঁচার মতো ভোঁচা মুখটা আজ দেখতে আসতাম না। জানিস তো আমি বাবাকে কতটা ভয় পাই আর বাবা যে রাগি বললে আমায় গুলি করে মেরে ফেলবে।
আদি: সালা এজন্যই পুলিশের মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নেই অকারনে ফালতু মেয়ের কেস খেতে হলো।
~~ওই আমি ফালতু? আমি ফালতু হলে তুই ভোঁচা হাতির ডিম ঘোড়ার ডিম আর এটা মনে রাখিস শুধু আমার বাবা পুলিশ নয় তোর বাবাও কিন্তু পুলিশ।
আদি: ওটাই তো বড় সমস্যা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~~একদিকে ছোট ভাই প্রপোজ করে ১ বছর ধরে পিছনে পরে আছে আর অন্যদিকে তারই বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করছে এই কষ্ট আমি কই রাখব।
আদি: তোর ফোনের মেমোরিতে রেখে দে।
সোনা ময়না টিয়া জানু ভানু তুই এই নাদাম বাচ্চাকে বিয়ে করে ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিস না। তোর মতো রাক্ষুসীর সাথে বিয়ে হলে আমার জীবন বাঁশপাতা হয়ে যাবে।
~~রাক্ষসী আমি? দাঁড়া তোকে তো আজ গিলে খাব..
আদি বসা থেকে উঠে দৌঁড় দিল আমি ওকে ধরার জন্য ওর পিছনে ছুটলাম। অবশেষে আমরা একটা চায়ের দোকানে গিয়ে থামলাম।
আদি: হিমু পেটের খুব ক্ষুধা পেয়েছে। (হাঁপাতে হাঁপাতে)

~~ তা আমাকে কেন বলছিস? খাবি তুই টাকা দিবি তুই এখানে আমাকে বলার কোনো কারন নেই।
আদি: ওটাই তো সমস্যা বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে বাবার থেকে বকা খেয়ে টাকা আনতে ভুলে গেছি। (মুখ কালো করে)
~~কি ভেবেছিস তোর ওই ভোঁচা মুখটা কালো করে বললেই আমি টাকা দিয়ে দিব… কখনও না তোর কাছে আমি ২ হাজার ৭শত ৪৩টাকা ৫০পয়সা পাই আগে সেটা দে দেন টাকা দেব এর আগে এক টাকাও পাবি না।
আদি: হিমু আমার ক্ষূধার্ত পেটের সাথে এমন অত্যাচার করিস না পাপ লাগবে।
~~একদম ফালতু কথা বলবি না আগে বাকি টাকা দে নাহলে যে তোর হাজারগুন পাপ লাগবে।
আদি: তুই যদি এখন আমার খাবারের টাকা দিয়ে দিস তাহলে আমি বিয়ে ভাঙার ব্যবস্থা করব আর যদি না দিস তাহলে তোকে সারাজীবন এই ভোঁচার সঙ্গে থাকতে হবে।

~~আদি আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে চল আজকের সব টাকা আমি দিব কিন্তু যেভাবে হোক এই বিয়েটা তোকে ভাঙতে হবে।
আদি: ওকে কাজ হয়ে যাবে চল আগে পেটকে ক্ষুধামুক্ত করে আসি।
(আমি জানি বোকা হিমু তোকে বিয়ে ভাঙার কথা বললে তুই রাজি হয়ে যাবি তাই তো এই প্লান কিন্তু বিয়ে তো আমিও ভাঙতে চাই। আগে খেয়ে নেই দেন বিয়ের ভাঙার প্লান করা যাবে। পাশের একটা রেস্টুরেন্টে দুজনে চলে আসি তারপর আমার ইচ্ছে মতো খাবার অর্ডার দিলাম কারন আজ হিমু টাকা পেমেন্ট করবে। খাবার দিতেই গিলতে শুরু করলাম।)
~~এই আদি..
আদি: হুম বল।
~~বিয়ে ভাঙবি কি করে?
আদি: আগে পেটকে শান্ত করে নেই তারপর সব তোকে খোলসা করে বলব তুইও খা।

~~ এতো খেয়েছিস তারপরও তোর পেট ভরেনি? আর কত খাবি তুই?
আদি: এই সুযোগ মনে হয়না যে আর পাব। (ফিসফিসিয়ে)
~~কিছু বললি?
আদি: না তো।
খাওয়া শেষ করার পর এক ভদ্রলোক বিল কার্ড নিয়ে উপস্থিত হলো কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখি ৭৫০টা। টাকাটা দিতে কষ্ট হলেও চোখ বন্ধ করে টাকাটা দিয়ে দিলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি আদি নেই তারমানে আমায় ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে।
~~ আদিত্য রায় তুই কাজটা একদম ঠিক করিসনি মনে রাখিস আমাকে ঠকানোর ফল সুদে আসলে উঠিয়ে নেব।( অঃতপর ৭কেজি রাগ নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে প্রস্থান করলাম।)
আদি: সরি হিমু এই মূহুর্তে আমার কাছে কোনো প্লান নেই। তোকে এখন প্লান না বললে তুই আমার মান সম্মান এই রেস্টুরেন্টেই খেয়ে ফেলতি।(টেবিলের নিচ থেকে বের হয়ে)
বাসায় প্রবেশ করার পর..

বাবা: কোথায় গিয়েছিলি এই ভর দুপুরে বিয়ের হাত থেকে পালাতে? (চোখ গরম করে)
~~ না বাবা।( মাথা নিঁচু করে)
বাবা: হিমু আমার কথা কান খুলে শুনে নে আমরা যখন এই বিয়ে ঠিক করেছি তোকে এই বিয়ে করতেই হবে এমনিতেও পাড়ায় আমার মান সম্মান শেষ করে দিছিস।
বাবার কথায় বিপরীতে কিছু বলতে না পেরে সোজা নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম অঃতপর সেদিনের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের মধ্যে ঝাঁপ দিলাম।

আসুন বিয়ের মূল কাহিনীটা জেনে নিন। আদি গাদির বাবা আর আমার রাগি বাবা দুজনে ছোট্টবেলার বন্ধু। পাশাপাশি থাকায় ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি মানে স্কুল কলেজ ঝগড়া মারামারি সব একসাথেই চলছিল। একদিন আমার জীবনে আমাবস্যার রাত নেমে এলো। কলেজ শেষ করে দুজনে ঘুরতে গিয়েছিলাম ফেরার পথে আদির বাইক নষ্ট হওয়ায় রাত অনেক হয়ে যায় অন্যদিকে আমার জীবন তসনস করার জন্য বৃষ্টি শুরু হয়। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে একটা হোটেলে রাত কাঁটাতে বাধ্য হই। সকালে দরজা খুলতেই দেখি আমাদের শত্রু দাঁড়িয়ে আছে মানে বাবা। পরে জানতে পারি এখানে নাকি খারাপ ছেলে মেয়েরা আসে অঃতপর আমাদের এক সঙ্গে থাকার কথাটা পাড়ার চিপায়ও পৌঁছে যায় তার জন্য আজ আমার এই অবস্থা।

দরজা ধাক্কার শব্দ আমার কানে পৌঁছাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৯টা বেঁজে গেছে টুস করে শুয়ে থাকা থেকে বসে পরি। দরজার অপরদিক থেকে বাবা মায়ের চিৎকার শোনা যাচ্ছে বুঝলাম বাবা ৩৬০ কেজি রাগ নিয়ে আছে। ধীরে ধীরে উঠে দরজা খুলে দিলাম অঃতপর ১৯৭১ সালের ভাষন দিতে শুরু করল…
বাবা: কি করেছিস এতোক্ষন, বিকেল থেকে ডাকছি তা কানে যায়নি?
~~ বাবা আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
বাবা: ঘুমিয়েছিলি নাকি বিয়ে ভাঙার প্লান করছিলি সেটা আমি ভালো করেই জানি। এক্ষুনি নিচে আয় কিছু ইমপরট্যান্ট কথা আছে।

ফ্রেস হয়ে বাবার আদেশ অনুযায়ী নিচে চলে আসি। ভদ্র মেয়ের মতো বোনের পাশে বসে খেতে শুরু করি।
বাবা: আমরা পরশুদিন বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছি কাল শপিং এর কাজটা সেরে ফেলো।(মাকে উদ্দেশ্য করে)
বাবার কথাটা শুনে আমার কলিজা স্থির হয়ে গেল ওই আদি গাদিকে আমি বিয়ে করব এটা ভাবতেই আমি মনে মনে দুইবার সুসাইড করে নিলাম।
রুমে প্রবেশ করেই আদিকে কল দিলাম…
আদি: হ্যাঁ বাবু বলো..

~~সোনা আমি তোমার স্বপ্নের বাবু নয় আমি তোমার হবু বউ।
আদি: বউ মানে আমি তোকে কোনোদিন বিয়ে করব না প্রয়োজনে দেবদাস হয়ে থাকব তবুও তোর মতো পেত্নীকে নয় আমি তো সেই রাজকন্যাকে বিয়ে করব ভালোবাসব আদর করব…
~~আরে রাখ তো তোর ভালোবাসা আদর এদিকে বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গেছে আর তুই এখনো রাজপেত্নীকে নিয়ে আছিস।
আদি: কি বলছিস এসব শেষ পর্যন্ত আমার ভালোবাসার বলিদান দিয়ে তোকে বিয়ে করতে হবে…
~~ তোর মতো হ্যাবলা ক্যাবলা ভোঁচাকে আমি বিয়ে করব কখনও না। বিয়ে ভাঙব কি করে সেটা ভাব।
আদি: যদি বিয়েতে বিয়ের পাত্র পাত্রীই না থাকে তাহলে কি বিয়ে হওয়া সম্ভব?
~~মানে?
আদি: বিয়ের আগে পাত্র পাত্রী দুজন ভ্যানিস হয়ে যাবে মানে আমরা পালাব।
~~তোর মাথা ঠিক আছে? এটা যদি বাবা জানতে পারে তাহলে তোর সঙ্গে আমাকেও উড়িয়ে দেবে। এসব ফালতু প্লান বাদ দিয়ে অন্য কোনো আইডিয়া ভাব।

আদি: আরে উগান্ডার পেত্নী কেউ কিছু জানতে পারবে না। বিয়ের ঠিক কিছুক্ষন পূর্বে পাত্র পাত্রী ভ্যানিস তারপর এখানের পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ব্যাক করব আমার মনে হয় এসব করলে সবাই ভেবে নেবে বিয়েতে আমরা দুজনের কেউ রাজি নই অঃতপর বিয়ে ক্যানসেল।
~~তোর প্লান কাজে দেবে তো?
আদি: ১০০তে ২০০ কাজে দেবে তুই রাজি থাকলে ১ চাপ নাহলে বিয়ের জন্য রেডি হ।
~~ওকে আমি রাজি। তোকে বিয়ে না করার জন্য এই হিমু সব করতে পারে এখন যা তোর স্বপ্নের রাজপেত্নীর কাছে।
কল কেঁটে শান্তির একটা ঘুম দিলাম কারন কিছুদিন যাবৎ এই বিয়ে টিয়ে আমার ঘুমকে হারাম করে দিয়েছে।
সকালে মা এক প্রকার জোরে করে শপিং করতে নিয়ে গেল। এই সুযোগে মা বোনের আড়ালে কিছু সুন্দর সুন্দর ড্রেস নিয়ে নেই বেশি শাড়ি নিয়ে লাভ নেই কারন বিয়ে তো হবেই না তাই ভাবলাম টপ গাউন পরে বিয়ে ক্যানসেলের পর কলেজে ছেলেদের ইমপ্রেস করতে পারব।

সকাল থেকে আদিকে কল করে যাচ্ছি কিন্তু অসভ্য ছেলেটাকে ফোনেই পাচ্ছি না। কাল পালাব আর সে এখন ফোন অফ করে রেখেছে। শপিং থেকে বাসায় ফেরার পথে আদিকে রাস্তায়ও দেখলাম না। আমার কেমন যেন সন্দেহ হলো… এদিকে পুরো বাসা সাজানো শেষ মনে হচ্ছে কাল সত্ত্যিই আমার বিয়ে হয়ে যাবে ওই আদির সঙ্গে।
কাউকে কিছু না বলে আদির বাসায় রওনা দেই এসে দেখি আন্টি বসে আছে অঃতপর তাকে প্রশ্ন করি।

~~আন্টি সয়তানটা কোথায়?
আদির মা: হিমু যে এসো এসো আমার বড় ছেলের বউ বলে কথা।
অভি: হিমু দিদি তুমি? তোমাকে দেখে আমার মনের বাগানে গোলাপ ফুঁটছে দেখবা…(আদির সয়তান ভাই)
~~রাখ তো তোর গোলাপ তোর বজ্জাত ভাই কোথায়?
আদির মা: আদি তো রুমে কিন্তু তুমি আজ সেখানে যেতে পারবে না কারন কাল তোমাদের বিয়ে এখন এক রুমে প্রবেশ না করাই ভালো।
আন্টির কথা মাথার বাইরে রেখে আদির রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
আদির দিকে তাকাতেই সেই লেভেলের একটা শকড খেলাম। কাল যার বিয়ে সে আজ এভাবে নাক ডেকে ঘুমাতে পারে কিভাবে..

~~এই আদি.. আদি.. (ধাক্কা দিয়ে)
আদি: অভি বিরক্ত করিস নাতো ঘুমাতে দে।
আমি টেনশন করে মাথা নষ্ট করে ফেলছি আর তুই পরে পরে ঘুমাচ্ছিস দাঁড়া তোর ঘুমের চৌদ্দটা বাজাচ্ছি।
~~এখনি উঠবি নাহলে আজ তোকে মেরে ফেলব।(গলা টিপে ধরে)
আদি: ওরে পেত্নী আমায় ছেড়ে দে আমার কিছু হলে কিন্তু তোকেই আমার বেবির মা হতে হবে।

এক বাক্স ভালোবাসা পর্ব ২