এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ২

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ২
Fabiha bushra nimu

তানহা’কে আশেপাশে’র সবাই দেখে যাচ্ছে’।ঘরোয়া ভাবে-ই তানহা আর ইফাদে’র বিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে’।সবাই তানহা’র খুব প্রশংসা করছে’।ইফাদে’র কথা জানতে চাইলে,রোকেয়া বেগমে’র মুখে আধার ঘনিয়ে আসে’।কোনে রকম সবাই’কে বুঝিয়ে বিদায় করেছেন’।

আবির বাসায় আসছে,শুনে তানহা’র চাচির ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে’।ছেলে বাসায় আসলে ছেলেকে সে’ কি’ জবাব দিবে’।তার থেকে-ও বেশি ভয়ংকর তার ছেলে’।একমাস পরে আবির বাসায় আসবে’।আজকে’ই মা’কে ফোনে জানিয়েছে’।এসে’ই তানহা’কে বিয়ে করবে’।বুদ্ধি হওয়া বয়স থেকে তানহা’কে নিয়ে,তার সব স্বপ্ন।আবিরের মনের রাণী করে রাখতে চায় তানহা’কে।আবির যতদিন বাসায় ছিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তানহা’র শরীরে কেউ ফুলের টোকা দেওয়া’র সাহস পেত না’।হাজার হলে-ও আবির বাসার একমাত্র ছেলে’।ছোট বেলা থেকে-ই সাধ্যের মধ্যে থাকলে আবিরে’র সব ইচ্ছে পূরণ চেষ্টা করেছে আবিরে’র মা’।যেদিন আবির তানহা’র কথা বলেছিল।সেদিন আবিরে’র মায়ের মুখ কালো হয়ে গিয়েছিল।কৌশলে আবির’কে পড়াশোনার জন্য বাহিরে পাঠিয়ে দেয়’।আবির যাওয়া’র সময় তার মাকে বলে গিয়েছিল।আমার তানহাকে তোমার কাছে আমানত রেখে গেলাম মা’।তুমি আমার তানহাকে দেখে রেখো’।আবির তানহাকে কখনো বুঝতে দেয় নাই।আবির তানহাকে কতটা ভালোবাসে’।আবির চায় নাই।তানহার ছোট মস্তিষ্কে আবিরের জন্য ভয় তৈরি হোক’।তবে ভাই হিসেবে তানহা আবিরকে অনেক ভালোবাসে’।

ইফাদ রেডি হয়ে কাজে বেড়িয়ে পড়ল’।সৌদি আরবের বিশাল এক রেস্টুরেন্টে কাজ করে আবির’।প্রবাস জীবন এত সোজা না’।দুই মিনিট বসে থাকার সময় নেই’।বসিয়ে বসিয়ে তো’ আর মালিক টাকা দিবে না ইফাদকে’।ইফাদ কাজ করছিল।ঠিক সেই সময়ে স্রুতি আসে রেস্টুরেন্টে’।পরনে তার টিয়া রংয়ের সালোয়ার কামিজ পড়া’।সৌদি আবর হওয়া’য় খুব শালিন ভাবে চলাফেরা করে স্রুতি’।সৌদি আরবে স্রুতির খালা থাকে’।প্রায় ঘুরতে আসে খালার বাসায় ভিসা শেষ হয়ে গেলে আবার দেশে ফিরে যায়’।স্রুতিকে দেখে ইফাদে’র জলন্ত রাগ আরো দিগুণ বেড়ে গেলো’।স্রুতি এসে বসতে বসতে বলল’।

–কি গো’ কালা চাঁদ কেমন আছো’।শুনলাম দেশে গিয়েছিলে নাকি’।আমাকে বলো নাই’ যে’।আমাকে বললে,আমি তোমার বাসায় চলে যেতাম।খেতে দেওয়া’র ভয়ে বলো নি’।কতটুকুই আর খেতাম বলো’।আমার এইটুকুই পেট’।
–খালার বাসায় কি খাবার কম দিচ্ছে ম্যাডাম’।সৌদি আবর থেকে বাংলাদেশে গিয়ে খেয়ে আসতে হবে’।আমার তো’ মনে হচ্ছে,খাওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব এসেছেন।মানুষ এক দেশে কতবার ঘুরতে আসে’।

–ভালোই কথা বলতে শিখে গেছো’।আমি এই বার দিয়ে দু’বার আসলাম।পাঁচ বছর আগে আসছিলাম’।আবার পাঁচ বছর পরে আসলাম’।তিনমাস থেকে চলে যাব’।তারপর বলো,দেশে গিয়েছিলে কি করতে’।
–বিয়ে করতে গিয়ে ছিলাম’।
ইফাদের কথায় স্রুতি হেঁসে দিলো’।তারপরে বলল’।
–তোমার মতো কালা মানিক’রে আমি ছাড়া কেউ বিয়ে করবে না’।যতই ভাব দেখা-ও না কেনো।শেষমেশ আমাকে-ই তোমার বিয়ে করতে হবে’।

–এই কালা মানিকরে’ই আসমানের পরী বিয়ে করছে’।তোমার থেকে সুন্দর আমার বউ’।
নিজের কথাতে নিজেই অবাক হলো ইফাদ’।এটা সে, কি বলে ফেললো’।সে,বিয়ে করেছে ঠিকি’।কিন্তু তার বউকে চোখের দেখা-ও দেখে নাই।মায়ের ওপরে রাগ করে চলে এসেছে’।
–তুমি খুব সুন্দর জোক্স বলতে পারো ইফাদ’।বিয়ে করেছো’।তাহলে তোমার বউকে দেখা-ও দেখি।কেমন সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করেছো তুমি’।
ইফাদ এবার মাথা চুলকিয়ে ভাবতে লাগলো’।এখন কি করবে সে’।কোনো উপায় না পেয়ে বলল’।

–কি খাবেন বলুন।নিয়ে আসি’।
–কথা উল্টিয়ে দিচ্ছো’।
–ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে এখানে আসেন নাই নিশ্চয়’।
–কিন্তু আমার কালা মানিক সত্যি সত্যি বিয়ে করলো নাকি’।জানতে হবে না।
ইফাদ খুব ধৈর্য সহকারে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে’।দেশটা যদি সৌদি আরব না হতো’।বাংলাদেশ হলে কানের নিচে দু’টো লাগিয়ে দিত।ছ্যাঁচরা মেয়ে কোথাকার’।এমন ছ্যাঁচরা মেয়ে দু’টো দেখে নাই ইফাদ’।স্রুতির থেকে অনুমতি নিয়ে খাবার নিয়ে এসে দিল ইফাদ’।ইফাদকে যখন দেখেছে’।প্রতিদিন আসবে।বিরক্ত হয়ে নিজের কাজে মন দিল ইফাদ’।
চৈতালি আর তানহা এক বিছানায় পাশাপাশি শুইয়ে আছে’।চৈতালির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো’।

–ভাবি ভাইয়া’কে ফোন দেই।কথা বলবে’।
তানহা’র বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো’।বিয়ে হয়েছে,অথচ মানুষটাকে চোখের দেখা’ও দেখে নাই’।অসহায় দৃষ্টিতে চৈতালির দিকে তাকিয়ে আছে’।চৈতালি ইফাদ’কে ফোন দিল’।ইফাদ কাজ করছিল’।কল কেটে দিয়ে কাজ করতে শুরু করলো’।

সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে ফিরলো ইফাদ’।গোসল করে খেতে বসেছে’।খাওয়া দাওয়াটা ঠিকমতো হয় না’।খেয়ে বিছানায় গা’ এলিয়ে দিয়ে,নিজের ফোনটা হাতে নিলো’।ছোট বোনের অনেক গুলো কল দেখে বোন’কে ফোন দিল’।পৃথিবীতে এই একটা মানুষের ওপরে রাগ করে থাকতে পারে না।ইফাদ ছাড়া মেয়েটার আবদার পূরন করার মানুষ নেই।চৈতালি যত আবদার ইফাদের কাছে’।বাবা মারা যাওয়া’র চল্লিশ দিনের মাথায় ইফাদের বড় ভাই আত্নহত্যা করে’।পরিবারে সব চাপ এসে পরে ইফাদের ওপরে’।ইফাদ তখন অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল’।পরিবারের হাল ধরতে পড়াশোনা ছেড়ে দূর প্রবাসে পাড়ি জামাতে হয় ইফাদের’।
চৈতালি ভাইয়ের ফোন পেয়ে খুশিতে আটখানা’।ভাবতেই পারে নাই।তার ভাই তার সাথে কথা বলবে’।তড়িঘড়ি করে ফোন তুললো’।

–আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।কেমন আছো’।আমি তোমার ওপরে রাগ করছি।তুৃমি এভাবে না বলে চলে গেলে কেনো’।কথা বলবে না আমার সাথে’।
ইফাদ সালামের উত্তর নিয়ে,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল’।
–তুই সবকিছু জানতি।তবু্-ও আমাকে কিছু জানাসনি কেনো’।
–ভাইয়া আম্মু তোমার ভালোর জন্যই করেছে’।তুমি একটা ভুল ধারনা মনে বেঁধে রেখেছো’।তুমি তো’ ভাবিমনি’কে দেখো নাই’।দেখলে ভাবিমনি’কে দেখলে আর বিদেশে যেতে চাইবে না।

চৈতালির কথা শুনে ইফাদ চৈতালিকে ধমক দিল’।চৈতালি ভয়ে চুপসে গেলো’।মন খারাপ করে ফেললো’।
–তোর কিছু লাগবে’।পড়াশোনা করছিস ঠিকমতো’।তুই এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে না’।সামনে তোর পরীক্ষা’।পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাদিন ফোন ঘাঁটিস।বাসায় গেলে এবার ফোন কেঁড়ে নিব।আর দিব না।
–ভাইয়া মায়ের কথা জানতে চাইলে না।
–আমার কোনো মা নেই’।তোর কোনো কথা থাকলে বল’।না হলে আমার ঘুম পেয়েছে।আমি ঘুমাবো।সকালে কাজে যেতে হবে’।

–তোমার বউদের সাথে কথা বলবে ভাইয়া’।ওপাশ থেকে আর কোনো উওর আসলো না’।ইফাদ কল কেটে দিয়েছে’।রোকেয়া বেগম দরজার কাছে থেকে সবকিছু শুনছিলেন’।দু-চোখে পানি এসে ছলছল করছে’।তিনি আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালেন না।রুম ত্যাগ করে বেড়িয়ে গেলেন’।তানহা’র নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে ‘।আজ তার জন্য এতগুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে’।সে আসলে’ই অপয়া।যার জীবনে যায়।সব সুখ শান্তি নষ্ট করে দেয়’।তানহাকে কান্না করতে দেখে চৈতালি তানহার মাথায় হাত রাখলো’।

–তুমি কান্না করো না ভাবি।সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।ভাইয়া সাময়িক ভাবে অভিমান করে আছে।ভাইয়ার অভিমান শেষ হলে,সবকিছু এতটা সুন্দর হবে।তুমি ভাবতে-ও পারবে না।তুমি যতটা কল্পনা করবে।তার থেকে বেশি সুন্দর হবে।তোমার জীবন।

পরের দিন সকাল বেলা রোকেয়া বেগম দরজা খুলছেন না’।চৈতালির বেশ চিন্তা হচ্ছে’।নামাজ পড়ার জন্য তিনি খুব ভোরে উঠেন’।তানহা নামাজ পড়ে বাহিরে এসে চৈতালিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চৈতালির কাছে আসলো’।তানহার উপস্থিতি পেয়ে চৈতালি ভয়ে তানহার দু’হাত আঁকড়ে ধরলো’।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল’।

–ভাবি আম্মু দরজা খুলছে না।
–ডেকেছিলে’।উনি তো সকালে উঠেন তাই না’।
–আম্মু সবার আগে উঠে নামাজ পড়ে রান্না করে।
পুরো বাসা নিস্তব্ধ হয়ে আছে’।দু’জনের গা কেমন ছমছম করে উঠলো’।দু’জন অনেক চেষ্টা করে-ও দরজা খুলতে পারলেন না’।ভয়ে দুজনের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে’।চৈতালি বাধ্য হয়ে ইফাদকে ফোন দিল।অনেক বার কল কেটে যাওয়ার পরে ইফাদ কল রিসিভ করল’।সৌদি আরবে এখনো ভোরের আলো ফুটেনি।বেশ বিরক্ত হয়ে বলল’।

–কি হয়েছে’।এভাবে ফোন দিচ্ছিস কেনো’।
–ভাইয়া মা’ দরজা খুলছে না’।
–ডাক দিলেই তো পারিস।আমাকে কেনো ফোন করছিস।
–ডেকেছি।মা কোনো সাড়াশব্দ করছে না’।
–আবার কোন নাটক সাজিয়েছে কে’ জানে’।
–ভাইয়া কি সব বাজে কথা বলছো’।আমি জানি মা তোমাকে বিয়ে দেওয়া’র জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।তাই বলে যে,মা প্রতিদিন সকালে নামাজ বাদ দেয় না।সেই মা নামাজ পড়তে-ও উঠে নাই।বিষয়টা কি তোমাকে একটু-ও ভাবাচ্ছে না’।
ইফাদ ঘুমের রেশ কাটিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করলো ‘।তারপরে বলল’।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ১

–বাসার পেছনে যা’।জানালা দিয়ে ভেতর গিয়ে দেখ কি হয়েছে’।আমাকে ফোন করে জানাবি’।চৈতালি তাড়াতাড়ি করে বাসার পেছনে গেলো’।হালকা ধাক্কা দিতেই জানালা খুলে গেলো’।চৈতালি রুমের মধ্যে গিয়ে দেখলো’।রোকেয়া বেগম কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুইয়ে আছে’।চৈতালি দ্রুত মায়ের কাছে গেলো’।মায়ের হাত-পা কেমন জানি ঠান্ডা লাগছে’।ভয়ে কথা গলায় এসে আঠকে আসছে’।দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল চৈতালি’।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩