এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩
Fabiha bushra nimu

তানহা রুমের ভেতরে প্রবেশ করে,রোকেয়া বেগমে’র মাথায় কাছে গিয়ে বসলো’।হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে’।কয়েকবার ডাক দিল’।তবু্’ও রোকেয়া বেগমে’র কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,বুকে মাথা রাখলো’।নিঃশ্বাস এখনো চলছে’।চৈতালি ভয়ে চুপসে গেছে’।নীরবে কান্না করে যাচ্ছে’।তানহা উত্তেজিত হয়ে চৈতালিকে বলল’।

–দ্রুত রাস্তায় যাও’।গিয়ে কোনো গাড়ি দেখতে পেলে দাঁড়া করা-ও।যদি গাড়ি না পাও।তাহলে মোড়ের দিকে এগিয়ে যাবে।সময় নষ্ট করো না,আম্মাকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে’।চৈতালি এক মুহুর্ত দেরি করলো না।ছুটে বাহিরে বেড়িয়ে গেলো’।খুব সকাল হওয়ায়।পুরো রাস্তা ফাঁকা।মাঝে মাঝে একদল বয়স্ক মানুষ হেঁটে যাচ্ছে’।চৈতালির পা’ যেনো চলছে না’।জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে’।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজকে ভিষণ করে চৈতালির বাবার কথা মনে পড়ছে’।বাবা থাকলে তাকে এতটা কষ্ট পেতে হতো না’।চৈতালি কোনোরকমে মোড়ে আসলো’।পুরো রাস্তা ফাঁকা’।ত্রিশ মিনিট পড়ে চৈতালি একটা সিএনজির দেখে পেলো’।দ্রুত সিএনজি নিয়ে,নিজের বাসার সামনে আসলো’।বাসায় এসে তানহা’কে বললে,তানহা আর চৈতালি দু’জন মিলে রোকেয়া বেগম’কে ধরে সিএনজিতে তুলে ফেললো’।সিএনজি চলতে শুরু করলো’।পথ যেনো শেষ হচ্ছে না’।এই বিপদের সময় গুলো-ও না’।এতটা দীর্ঘ হয় কেনো’।চৈতালির নিশ্বাস আঁটকে আসছে’।তানহা চৈতালির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল’।

–চিন্তা করো না।আম্মার কিছু হবে না।বাহিরে চৈতালি’কে শান্তনা দিলে-ও,ভেতরে ভেতরে তানহা-ও বেশ ভয় পাচ্ছে’।
কাছের একটি হসপিটালে নিয়ে আসা হলো রোকেয়া বেগম’কে।কয়েকজন ছাড়া সবাই ঘুমে’।তানহা সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে,হসপিটালের মধ্যে গেলো’।একটু পরে দু’জন মহিলা এসে রোকেয়া বেগম’কে হসপিটালের মধ্যে নিয়ে গেলো’।ডক্টর রোকেয়া বেগম’কে দেখছেন।বাহিরে অস্থির হয়ে বসে আছে তানহা আর চৈতালি।
বেশকিছু সময় অতিবাহিত হবার পরে,ডক্টর রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন’।তানহা আর চৈতালি ডক্টরে’র কাছে এগিয়ে গেলো’।

–আমার আম্মা কেমন আছেন’।বলল তানহা।
–আপনার আম্মা প্রচুর টেনশন করেন’।যার ফলে উনি স্ট্রোক করেছেন’।আর একটু দেরি হলে খারাপ কি হয়ে যেতে পারতো।
–এখন কেমন আছেন’।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে’।আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করেছি’।জ্ঞান ফিরলে দেখা করবেন।যতটা পারবেন ওনাকে চিন্তা মুক্ত রাখবেন।এই বয়সে এত চিন্তা আর মানসিক চাপ নিলে উনি মারা’ও যেতে পারেন।
–আমরা এর পরে থেকে আম্মার খেয়াল রাখবো’।
–আপনারা অপেক্ষা করুন।আমার একটা পেসেন্ট আছে’।দেখে আসতে হবে’।আজকে ছুটি দিয়ে দিব।বলে’ই ডক্টর চলে গেলো’।

–চৈতালি ভয়ে তানহার দু-হাত আঁকড়ে ধরে আছে’।মেয়েটা খালি বড়’ই হয়েছে’।বয়সে’র তুলনায় জ্ঞান-বুদ্ধি কম হয়েছে’।
সারাদিন পেড়িয়ে গেলো’।এখনো ইফাদের কোনো ফোন আসলো না’।চৈতালির খুব রাগ হচ্ছে ভাইয়ে’র ওপরে’।
–ভাবি দেখছো’।ভাইয়ার কি’ একটু-ও কান্ড-জ্ঞান নেই’।সারাদিনে একটা বার-ও আম্মুর খোঁজ নিল না’।

–তোমার ভাইয়া তো’ বসে থেকে খায় না বোন।প্রবাস জীবন এত সোজা না।তোমার ভাইকে তার’ মালিক বসিয়ে বসিয়ে টাকা দিবে না।কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।তবেই টাকার দেখা মিলে’।সবাই শুধু প্রবাসীদের টাকাই দেখে’।কিন্তু কষ্টটা কেউ দেখে না’।সবার খালি টাকা আর টাকা।আচ্ছা টাকা দেওয়া’র মানুষটা ভালো আছে কি না’।খেয়েছে কি না’।তার কষ্ট হচ্ছে কি’ না।কেউ কখনো জানতে চেয়েছে।

–স্যরি ভাবি।আমি নিজের বোন হয়ে,কি করে অকৃতজ্ঞদের মতো কথা বললাম।ভাইয়া আমাদের ভালো রাখার জন্য।নিজের সব ইচ্ছে বিসর্জন দিয়ে দূর প্রবাসে পরে আছে’।আমি তা-ও আম্মুর ভালোবাসা পাচ্ছি’।দিনশেষে ভাইয়া সেইটুকু-ও পায় না’।আপনজন ছেড়ে থাকার কষ্টটা ফিল করতে পারছি ভাবি’।
–কান্না করো না সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।কথা বলতে বলতে’ই ইফাদের ফোন আসলো’।চৈতালি দ্রুত ফোন তুলল’।ইফাদ উত্তেজিত হয়ে বলল’।

–তোর মায়ের কি অবস্থা’।এখন কেমন আছে’।টাকা লাগলে আমাকে বলিস।আমি পাঠিয়ে দিব।
চৈতালি ইফাদকে মেসেজ পাঠিয়ে রাখছিল’।মেসেজটা ইফাদের চোখে পড়তেই সাথে সাথে চৈতালিকে ফোন করে’।এমনিতেই সারাদিন মায়ের জন্য মন কেমন করছিল’।বাসায় এসে আগে ফোন হাতে নিয়েছে’।

–এমন করে বলছো কেনো’।আমার মা’ কি তোমার মা হয় না’।টাকা লাগবে না।ভাবি টাকা দিয়েছে’।
–আম্মুর খেয়াল রাখিস।কি হয় না হয়’।আমাকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে রাখবি।আমার চিন্তা হয় অনেক’।
–তাহলে দেশে চলে আসো’।এভাবে সবার থেকে পালিয়ে গেলে কেনো’।ইফাদ আর কোনো কথা বলল না।কল কেটে দিল।বরাবরের মতো চৈতালি এবার-ও হতাশ।তানহা সবকিছু শুনছিল।সবকিছু শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রোকেয়া বেগম’কে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে’।তিনি মোটামুটি এখন অনেকটা-ই সুস্থ হয়েছেন’।তানহা আর চৈতালি মাটিতে বসে আছে’।দু’জন মিলে,গভীর মনযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে’।

–চৈতালি ইফাদকে একটু ফোন দে’।আমি ইফাদের সাথে কথা বলতে চাই’।
–ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলবে না মা’।
–ফোন ধরিয়ে দে’।তারপরে দেখবো কেমন করে কথা না বলে থাকে’।
চৈতালি মায়ের কথা মতো ইফাদকে ফোন দিল’।
হাসনা বেগমে’র সামনে বসে আছে আবির’।চোখে-মুখে হাজারো প্রশ্ন’।খুব খুশি হয়ে বাসায় প্রবেশ করেছিল’।আবিরে’র খুশি বেশিক্ষণ টিকে থাকলো না’।তানহা ভেবে তার ফুফাতো বোনের চোখ ধরে বলল’।

–তানহু পাখি আমি চলে এসেছি।এবার থেকে তোর আর কোনোকিছুর অভাব হবে না।একদম যোগ্য ছেলে হয়ে এসেছি তোর সামনে’।এই সমাজে বেকার ছেলের কোনো দাম নেই রে’ তানহু।এবার মা আমাকে বলতে পারবে না’।তুই নিজেই আমাদের ঘাড়ে বসে খাস।বিয়ে করে বউকে খাওবি কি’।আবিরে’র এসব কথা শুনে মারিয়া থতমত খেয়ে যায়।
–ভাইয়া আমি মারিয়া’।তুমি কি সব বলছো’।আমি তোমার তানহু পাখি না’।দয়া করে আমার চোখ ছাড়ো’।
–ওহ্ স্যরি রে’ মারিয়া’।আমি তোকে তানহা মনে করছিলাম।মা কোথায়’।

–আমি তো জানি না ভাইয়া’।আজ সকালে আসছি আমি’।ফুফাকে দেখলাম বাসায়’।ফুফা বলল বাজার থেকে আসি’।আমি অপেক্ষা করছি’।কিন্তু ফুপু এখনো আসে নাই’।তাই ভাবলাম নুডলস রান্না করে খাই’।
–আম্মুর কাজই তো’ এটা সারাদিন শুধু পাড়া বেড়ায়’।তুই থাক আমি তানহুর সাথে দেখা করে আসি’।

আবির তানহার রুমের দিকে এগিয়ে গেলো’।যত তানহার রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে’।হৃৎপিণ্ডের গতিবেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে’।ভেতরে কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে’।সাহস নিয়েই তানহার রুমে প্রবেশ করলো’।পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার’।আবির ফোন বের করে আলো জ্বালিয়ে দিল’।পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেছে’।রুমের সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে’।শুধু দেখা যাচ্ছে না তার’ তানহা’কে।আবিরে’র তৃষ্ণার্থ দু-চোখ পাগলের মতো তানহাকে খুঁজে চলছে’।দ্রুত তানহার রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো আবির’।ডাইনিং রুমে আসতেই মায়ের দেখা পেলো’।খুশি হয়ে দৌড়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো’।

–মা কেমন আছো’।সারাদিন কোথায় ঘুরে বেড়াও বলো তো’।আমি কখন থেকে এসে অপেক্ষা করছি’।মা’ তানহুকে দেখতে পাচ্ছি না’।ওকে ডেকে দাও তো’।খুব উড়নচণ্ডী হয়েছে না’।আমি এসেছি এবার’ ওর উড়ার পাখা ভেঙে দিব’।
হাসনা বেগম ভয়ে চুপসে গেলো’।চোখে-মুখে ভয় জেঁকে বসেছে’।ধীর গতিতে হাত-পা কাঁপছে’।ছেলেকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে’।সোফায় বসিয়ে দিলেন’।

–আমি তোকে সবকিছু বলছি’।কতদূর থেকে আসলি বল তো’।এসেই তানহা তানহা শুরু করে দিয়েছিস’।আমি তোর জন্য কিছু নিয়ে আসি’।খেতে খেতে গল্প করছি’।বলেই এক প্রকার দৌড়ে পালিয়ে গেলো’ হাসনা বেগম’।
মারিয়া রান্না করে বেড়িয়ে আসছিল’।তখন-ই হাসনা বেগম রান্না ঘরে প্রবেশ করে’।
–ফুপু ভাইয়া চলে এসেছে’।এবার ভাইয়ার পাখিকে ভাইয়ার হাতে তুলে দাও।তানহা কোথায়।তানহা’কে তো’ দেখছি না।
–তুই কখন আসলি মারিয়া’।আবিরের পাশে গিয়ে বস।আমি আবিরের জন্য কিছু নিয়ে আসি’।
–সকালে আসছি ফুপু তুমি মনে হয় পাড়া বেড়াতে গিয়েছিলে’।বলেই মারিয়া চলে গেলো’।

আবির আর মারিয়া অধীর আগ্রহে তানহার কথা শোনার জন্য বসে আছে’।হাসনা বেগম ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলল’।
–আবির তোকে আমি কথাটা কিভাবে যে,বলবো বুঝতে পারছি না’।তুই শুনলে সহ্য করতে পারবি না’।
মায়ের গলার আওয়াজ কেমন জানি শোনাচ্ছে’।আবিরে’র মনে হাজারো চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে’।হাত-পা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে’।তানহু পাখির কিছু হয় নাই তো’ আবার।চক্ষুদ্বয় গুলো রক্তিম বর্ণ হয়ে আসছে’।লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে আবিরে’র।চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো’।

–তানহার কি হয়েছে বলো মা’।হেয়ালি একদম পছন্দ করি না আমি’।
–তানহার বিয়ে হয়ে গেছে’।
কথাটা শোনা মাত্রই দু-কদম পিছিয়ে গেলো আবির’।মনে হচ্ছে বিশাল আকাশটা তার মাথা ওপরে এসে পড়েছে’।কিছু মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় আবির।অসহায় দৃষ্টি নিয়ে মায়ের দিকে তাকালো’।

–মা’ গো’ আমি তোমার দু’টি পায়ে পড়ি’।আমার সাথে এমন মজা করো না’।না হলে অকালে তুমি ছেলে হারা হয়ে যাবে’।আমার প্রতিটা রাত জানে’।দূর দেশে কি ভাবে আমি তানহাকে ছাড়া থেকেছি’।আমি কিভাবে তানহা’কে ভালো রাখবো।কি করলে তানহা আমার সাথে খুশি থাকবে’।এসব ভেবে এত পড়াশোনা করেছি’।তানহার ছবি বুকে নিয়ে আমি শতশত রাত পার করে দিয়েছি’।আমি তানহা’কে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।মা’ তুমি বলেছিলে না’।

আমার কি’ যোগ্যতা আছে’।বিয়ের পরে তানহা তোমাদের কাছে হাত পাতবে’।তখন তোমরা তানহা’কে কিছু দিতে পারবে না’।আর তানহা’কে কিছু দিতে না পারলে’।তানহা এমনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে’।ও’ মা’ তখন আমার টাকা ছিল না’।আমার কোনো যোগ্যতা ছিল না’।এখন আমার সব হয়েছে মা’।তানহা’কে বিয়ে করার মতো যোগ্যতা হয়েছে’।এখন তানহা আমার কাছে ভালো থাকবে’।উচ্চ শিক্ষা লাভের আমার কোনো দরকার ছিল না’।তবু্ও তোমার কথায় আমি উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছি’।আমি না তানহা’কে তোমার কাছে আমানত রেখে গিয়েছিলাম।তাহলে তানহার বিয়ে কি করে হলো’।আমার তানহা কোথায় মা’।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ২

হাসনা বেগম মাথা নিচু করে আছে’।কোনো উত্তর করছে না’।মারিয়া অবাক হয়ে সবকিছু দেখছে’।হাসনা বেগমের নিরবতা আবির’কে দিগুন কষ্ট দিচ্ছে’।নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে আবির চিৎকার করে উঠলো’।মারিয়া সহ হাসনা বেগমের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো’।ছেলের এ’ কি রুপ’।ছেলের এমন উন্মাদ আচরণের সাথে পরিচিত নন হাসনা বেগম।তানহাকে বিয়ে দিয়ে কি সে’ ভুল করলো’।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪