এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৫

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৫
Fabiha bushra nimu

আজকে আটদিন পরে আবির’কে বাসায় নিয়ে আসা হলো।খুব ভালো ভাবেই আহত হয়েছিল আবির।ফাইয়াজ প্রিয়াকে খবর দেওয়া’র সাথে সাথে প্রিয়া এবং আবিরের বাবা-মা হসপিটালে উপস্থিত হয়।আবির কেমন জানি শান্ত হয়ে গেছে।সেদিনের বিষয় নিয়ে,একটা কথা-ও মুখ দিয়ে বের করে নাই।কেমন জানি শান্ত দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকিয়ে থাকে।হয়তো সুস্থ হবার অপেক্ষায়।ছেলেকে নিয়ে শত-শত চিন্তা হাসনা বেগমে’র মাথায়।কোমল কণ্ঠে বলল।

–আচ্ছা আবির আজকে আমাকে কয়টা সত্যি কথা বলবি।তোকে না আমি চিনতে পারছি না।তুমি আদৌও আমার ছেলে তো’।নাকি ছেলের রুপ ধরে অন্য কেউ।আমি এই আবিরকে তো’ চিনি না।তুই তো’ এমন ছিলি না।এমন হয়ে গেলি কি করে,তুই তো’ তানহাকে ভালোবাসতি।তাহলে প্রিয়াকে কেনো বিয়ে করলি?তোর চোখে তানহার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখে ছিলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তোর ভালোবাসা দেখে,আমার ভেতরে অপরাধবোধ কাজ করছিল জানিস।আমি মানছি,আমি তানহাকে দেখতে পারি না।কিন্তু তুই আমার ছেলে,তোকে কখনো কষ্ট দিতে চাই নাই।আমি তো’ তানহাকে তোর কাছে নিয়ে আসতে চাই ছিলাম।তুই আবার চৈতালির সাথে সম্পর্কে গেলি।আমি ভেবে ছিলাম।তুই হয়তো তানহাকে ভুলে গিয়েছিস।চৈতালিকে আমি মনে মনে ভারি পছন্দ করতাম।তোর বউ করার ইচ্ছে ছিল।কিন্তু তুই চৈতালির সাথে যা করলি।লজ্জায় ওদের সামনে মুখ দেখাতে পারি না।তুই তানহার জন্য বিয়ের শাড়ি,গহনা,আরো কতকিছু নিয়ে আসছিলি।তানহাকে নিয়ে ডায়েরিতে কতকিছু লেখতি।এসব কি ছিল।আজকে তোকে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

–এটা যদি তোমার ফাঁকা মাথায় ঢুকতো।তাহলে এই প্রশ্ন গুলো আজকে করতে না।সেদিনই করতে।যখন বোঝার তখন বুঝো নাই।এখন বুঝে লাভ নাই।তানহাকে আমার ছোট বেলায় ভালো লাগতো।এখন লাগে না।তাই ওকে বিয়ে করি নাই।প্রিয়াকে ভালো লেগেছে।তাই প্রিয়াকে বিয়ে করেছি।মানুষ সময়ের সাথে বদলে যায় আম্মু।আমি’ও বদলে গিয়েছি।
–আমি তোর মা আবির।তুই বদলে গিয়েছিস।আমি তো’ বদলায় নাই।আমি তোকে ঠিক আগের মতো ভালোবাসি।তুই এত অপরাধ করেছিস।তবু্ও সেই ছোট বেলার মতো ভালোবাসি।তুই বললি মানুষ সময়ের সাথে বদলে যায়।কই আমি তো’ বদলায় নাই।তাহলে আমি কি মানুষ না।

–আম্মা এই অমানুষটা’কে বুঝিয়ে লাভ নেই।আপনার ছেলে বিদেশ থেকে এসে,এমনি এমনি এত নাটক করে নাই।বিদেশে গিয়ে কি আকাম করে পালিয়ে এসেছে,
আপনার ছেলেকে জিগ্যেস করেন।প্রিয়ার কথা শুনে,
রাগী দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকালো আবির।হাসনা বেগম তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।
–রিয়াদ আমার মনে হচ্ছে,এবার বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।চল বাসায় ফিরে যাই।ইফাদের কথায় মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লো রিয়াদ।

–তুই তীরে এসে নৌকা ডুবিয়ে দেওয়া’র চিন্তা করছিস।
ইফাদ কেমন জানি ছটফট করছে।রিয়াদ ইফাদের কাঁধে হাত রাখলো।ইফাদ রিয়াদের হাতটা নিজের রুমের মাঝখানে চেপে ধরলো।ইফাদের হৃদপিণ্ডের গতিতে বেগ দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে।কেমন অস্থির হয়ে আসছে ইফাদ।
–ভাই চিন্তা করিস না।সাতটা দিনের-ই তো’ ব্যাপার।রিয়াদের কথা শুনে,ইফাদ চোখ বড় বড় করে তাকালো।

–তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আমি কালকেই চলে আসবো।তানহা অনেক কষ্ট পাচ্ছে।ওকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে,নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাচ্ছি।ওকে কষ্ট পেতে দেখলে,আমার মাথা ঠিক থাকে না।এমনিতেই সাতদিন বাসায় যাই নাই।তাই কান্না-কাটি করে,নিজের কি হাল করেছে দেখছিস।দু’দিন না খেয়ে ছিল।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে।এখন যদি আবার সাতদিন ওকে রেখে থাকি।আবার কান্না করবে।ঠিকমতো খাবে না।নিজের যত্ন করবে না।পাগলের মতো হয়ে থাকবে।ও’ যা শরীর এত চিন্তা করলে,

শরীরের অযত্ন করলে অসুস্থ হয়ে যাবে।তার থেকে ভালো চল বাসায় চলে যাই।আমি আর পারবো না ভাই।আর এক মুহুর্ত তানহাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমি বাসায় চলে গেলাম।
–তোর মতো কেয়ারিং হাসবেন্ড-ই আমার দরকার ছিল।এই জন্যই তোকে এত ভালোবাসি।কেনো যে,

আমি মেয়ে হলাম না।আমি মেয়ে হলে,তোকেই বিয়ে করতাম।আর তোর সব ভালোবাসা আমি পেতাম।এতগুলো দিন কষ্ট করলি।আর কয়টা দিন সহ্য করতে পারবি না।আচ্ছা বেশ সাতদিন না।তিনটা দিন অনন্ত আমাকে সময় দে’।রিয়াদ ইফাদের দিকে তাকিয়ে দেখলো,ইফাদের চোখ দু’টো লালা হয়ে উঠেছে।ছেলে মানুষের কাঁদতে নেই।তাই অশ্রু কথাগুলো বৃষ্টিতে রুপান্তরিত হয়ে ঝরে পড়ছে না।ইফাদ আস্তে করে বলল।
–তানহা অনেক কষ্ট পাচ্ছে,বুকের মাঝখানে অসহ্য ব্যথা অনুভব করতে পারছি।
রিয়াদ কোনো রকম বুঝিয়ে ইফাদকে নিয়ে চলে গেল।

পুরো রুম জুড়ে নীরবতা বিরাজমান করছে।আবির মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করছে না।প্রিয়া বিরক্ত হয়ে বলতে শুরু করল।
–আম্মা আবির বিদেশে দশ কোটি টাকা ঋণ করে,পালিয়ে এসেছে।আপনার কি মনে হয়।তানহার জন্য এত জিনিস পত্র নিয়ে এসেছিল।ওইসব আবির কিনে নিয়ে এসেছিল।ওগুলো সব আমার বিয়ের জিনিস।তানহার বাবা নাকি বিশ বছর প্রবাসে ছিল।তানহার আর কোনো ভাই বোন নেই।তানহার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে,তানহার বাবা ঢাকা শহরে জায়গা কিনে,দশ তলা বাড়ি করেছে।সেটা নাকি তানহার আঠারো বছর বয়স হয়ে যাবার পরেই তানহা’র হয়ে যাবে।

তানহার বাসার দায়িত্ব নাকি আপনার আর আব্বার কাছে দিয়ে গিয়েছে।আবির বিদেশে গিয়ে ব্যবসা শুরু করে,প্রথমে ভালোই চলছিস সবকিছু।কিন্তু আবিরের লোভ আবিরকে ধংস করে দিল।বেশি লোভ করতে চেয়েছিল।যার পরিনতি এখন সে,দেখতে পাচ্ছে।ওর স্থান এতদিন জেলে হতো।যদি আমার বাবা ওকে না বাঁচাত।আমার বাবা নিজের সবকিছু দিয়ে ওকে বাঁচিয়ে দিল।আর এই বেইমান আমাদের রেখে পালিয়ে আসলো।আমার আরো দুই বোন আছে।তাদের ভবিষ্যৎ নেই।তাদের অধিকার নেই।বাবা তার সবকিছু দিয়ে আমার মুখে হাসি ফুটিয়েছে।আবির বলেছিল।

বাবাকে সব টাকা ফেরত দিয়ে দিবে।আম্মা একটা দুইটা টাকা না,দশটা কোটি টাকা।ছেলে খেলা না আম্মা।কয়টা বছর পার হয়ে গেল।একটা কোটি টাকা বাবার হাতে তুলে দিতে পারে নাই।ও যদি বাবার টাকা পরিশোধ করতে না পারে,বাবা ওর নামে থানায় মামলা করে দিবে।ওকে টাকা দিয়ে আজ আমাদের পরিবারের অবস্থা করুন।আম্মু মামার থেকে জমি পেত।মামাকে জমি দিয়ে টাকা নিয়ে এসেছে।সেটা দিয়েই আমাদের সংসার চলছে।

আপনার ছেলে আমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলছে।বিদেশে নানা রকমের মেয়েদের সাথে ছিল তার মেলামেশা,তাদের পেছনে উড়িয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।বউ হয়ে স্বামীর এসব কুকর্ম নিজ চোখে দেখা কতটা কষ্টকর,আম্মা আপনি অনুভব করতে পারছেন।বাঙালি মেয়ে স্বামীর সব অন্যায় মেনে-ও স্বামীর পাশে থাকে।স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না।আমি’ও তার সব অন্যায় মেনে তার পাশে ছিলাম।সে,আমাকে কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয় নাই।ভেবে ছিলাম তার থেকে দূরে সরে গেলে,সে হয়তো ভালো হয়ে যাবে।সুযোগ বুঝে দূরে চলে গেলাম।মাথার ওপরে টাকার চাপ,আমি পাশে নেই।তানহাকে-ও আপনি বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন।আবির প্রায় দিশেহারা হয়ে গিয়ে ছিল।জ্ঞান শূন্য হয়ে পাগলামি করতো।আপনাকে বোঝাতে চেয়েছিল,আবির তানহাকে খুব ভালোবাসে,

তানহাকে ছাড়া আবির মরে যাবে।মায়ের বোকা মন ছেলের নিখুঁত অভিনয়ে ভুলে গিয়েছিলেন।আবির এখানেই থেকে থাকে নাই।টাকার নেশায় আবির এতটা উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল।সে,তানহার গায়ে হাত তুলতে চলে গিয়েছিল।যখন তানহার কাছে মন পেল না।তানহার ননদ চৈতালি বাচ্চা মেয়েটাকে ব্যবহার করতে শুরু করল।আবির ভুল বসত।তানহার বাসার আসল দলিলটা চৈতালিকে দিয়ে ফেলছে।

ভাগ্যের কি পরিহাস দলিলটা তানহার হাতে গিয়েই পড়েছে।তানহাকে ছেড়ে আবির চৈতালিকে বারবার আঘাত করছে,দলিলটা পাওয়ার জন্য।এত কিছু করার পরে-ও আমি ওর পাশে ছিলাম,ওর বিবেক কি একটা বার ভাবে না।এত কিছু করার পরে-ও একটা মেয়ে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।কতটা ভালোবাসলে এত গুলো অন্যায় করার পরে-ও তার সাথে থাকে।অনেক হয়েছে আবির,এবার তোমার সাথে আমার কোর্টে দেখা হবে।আগামী দশদিনের মধ্যে আমার বাবার টাকা পরিশোধ করবে,তা না হলে আমার বাবা আইনের ব্যবস্থা নিবে।

হাসনা বেগম প্রিয়ার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।তার ছোট আবির এতটা নিচে নেমে গেল কি করে,কথা গুলো স্বপ্নের মতো লাগছে।আবির মায়ের হাত ধরে বলল।
–আম্মু তুমি বাবাকে কিছু বলো না।আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।আমি নিজেকে ঠিক করে নিব।প্রিয়া প্লিজ আমাকে কয়টা দিন সময় দাও।আমি তোমাদের সব টাকা শোধ করে দিব।আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে পারবো।তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে।দেখবে সবকিছু সহজ হয়ে গেছে।
–তুমি তানহাকে ভালোবাসতে,আমাকে পেয়ে তানহাকে ভুলে গেলে,আমার থেকে ভালোকিছু পেলে,আমাকে ভুলে যাবে না।তার কোনো নিশ্চয়তা আছে।

–আমি সবকিছু করার পরে-ও তোমার সাথেই আছি।তোমার জন্য সবকিছু করছি।আমি তো চেষ্টা করছি।আর কয়টা দিন সময় দাও।আমি তোমার বাবার টাকা শোধ করে দিব।যদি শোধ করতে না পারি।তাহলে তুমি নিজ হাতে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিও।

–এটাই শেষ সুযোগ টাকা দিতে না পারলে তোমার কি অবস্থা করবো।তুমি নিজে-ও জানো না।
–তুমি সুযোগ দিলে-ও,এই অমানুষটা’কে আমি আর একটা সুযোগ-ও দিব না।হাসনা তুমি এই বেয়াদবটাকে আমার বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলো।আজকে যদি আমার চোখের সামনে থাকে,আমি ওকে খুন করে ফেলবো।মাহতাব সাহেবের হুংকারে সবাই কেঁপে উঠলো।হাসনা বেগম ভয়ে মুখ দিয়ে টু শব্দ করার সাহস পেল না।মাহতাব সাহেবের রাগ খুবই ভয়ংকর।মাহতাব সাহেব আবিরের ঘাড় ধরে বাসার বাহিরে বার করে দিল।প্রিয়া আমতা আমতা করে বলল।

–আব্বা আবির অসুস্থ।আজকে রাতটা যদি একটু থাকতে দিতেন।
–তোমার কোনো আত্মাসন্মান নেই।এমন চরিত্র হীন ছেলের সাথে সংসার করছো।এতকিছু করার পরে-ও তার জন্য দরদ দেখাচ্ছো।যে,অন্যায় করে আর যে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়।দু’জনেই সমান অপরাধী।তোমার যদি এতই রাখতে হয়।নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে রাখো।ওকে আমি তাজ্যপুত্র করে দেয় নাই।এটাই ওর ভাগ্য ভালো।বলেই মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিল।

পরের দিন সকাল বেলা,কালকে রাতে তানহা দরজা দেওয়া’র পরে আর রুম থেকে বের হয় নাই।সকালে উঠে প্রতিদিনের মতো কাজ করছে।মেয়েটা একদম চুপচাপ হয়ে আছে।চোখ-মুখ ফুলে আছে।রোকেয়া বেগম।তানহার পাশে আসলেন।তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।অনেকক্ষণ ভালোবাসে বোঝালো।তানহা যেনো কষ্ট না পায়।চাইলেই কি সব ইচ্ছে পূর্ণ হয়।না চাইতে-ও বেহায়া মনটা কষ্ট পেয়ে বসে।তানহা কাজ শেষ করে নিজের রুমে শুইয়ে ছিল।চৈতালি তানহার কাছে আসলো।তানহার পাশে শুইয়ে পড়ল।পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশ ফিরে তাকালো তানহা।চৈতালিকে দেখে কিছু বলল না।

–বউ তুমি কষ্ট পাচ্ছ কেনো?সবাই খালি তোমাকে কষ্ট দেয়।আর তুমি সহ্য করো।তুমি আর ভাইয়ার জন্য কষ্ট পাবে না।পারলে ভাইয়াকে বেশি করে কষ্ট দিবে।ভাইয়া যদি ফোন দেয়।তাহলে ভাইয়ার সাথে কথা বলবে না।
–আমার তো’ ফোন-ই নেই।রাগ করে সেদিন ভেঙে ফেলছি।তুমি আজকে অফিসে যাও নাই।
–আজকে অফিস ছুটি।আজকে আমরা ঘুরতে যাব।ঐসব ছবি তুলে ভাইয়াকে দেখাবো।দেখবে আর জ্বলবে লুচির মতো ফুলবে।

–আমি কোথায়-ও যাব না।
–যাবে না।বললে-ই হলো বিকেলে তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যাব।একটা নাটক দেখবে ভাবি।খুব হাসির হাসতে হাসতে তোমার পেট ব্যথা হয়ে যাবে।বলেই নাটক বের করে দেখতে লাগলো।তানহার কাছে নাটকটা বেশ ভালো লাগছে।একটু পর পর দু’জনের হাসির শব্দে রুমটা ভরে উঠছে।তানহা চৈতালিকে জড়িয়ে ধরে আছে।নাটক দেখতে দেখতে দু’জনেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।রোকেয়া বেগম দু’জনকে দেখে হেসে চলে গেল।

বিকেলে দু’জন রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ল।চৈতালি কিছুতেই তানহাকে কষ্ট পেতে দিবে না।নিজের সবটুকু দিয়ে হলে-ও তানহার মনটা ভালো রাখার চেষ্টা করবে।আজকে চৈতালি বাসায় ছিল।খুব একটা খারাপ লাগে নাই তানহার।কালকে চৈতালি থাকবে না।সারাদিন যেমন-তেমন রাতে হলে,সে কি করবে।দিনের আলোয় কষ্ট গুলো আড়াল করা গেলে-ও রাতের অন্ধকারে চোখের পানি আড়াল করা যায় না।

–তুমি বুঝতে পেরেছো।তোমাকে আমি কি’ বলতে চেয়েছি।ইফাদ আসলে,তুমি তোমার কাজে লেগে পড়বে।
–জ্বী ভাইয়া।আপনারা কালকে কখন এসেছেন।
–রাতে এসেছি।এখন এখানে থেকে যাও।আর তোমার বোনকে গিয়ে বলো আমি ডাকছি।
–জ্বী ভাইয়া আমি এখনই আপুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।বলেই চলে গেল।দরজার কাছে আসতেই অনিকে দেখতে পেল।অনিকে বলল।

–প্রিয়া আপুকে বল দুলাভাই আপুকে ডাকছে।
–তোমাকে বলেছে,তুমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসো।
–তোর এতবড় সাহস আমার মুখে মুখে কথা বলছিস।আম্মুকে বলে তোর কি অবস্থা করি।অনি মুখ বাকিয়ে চলে গেল।
কালকে তানহার সাথে কথা বলার জন্য ইফাদ ছটফট করছে।যতবার তানহাকে ফোন দিয়েছে।তানহার ফোন বন্ধ পেয়েছে।বেশ চিন্তা হচ্ছে,তানহার জন্য।ইফাদ এবার চৈতালিকে ফোন দিল।চৈতালি সাথে সাথে ফোন তুলল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৪

–ভাবির খবর বাদের সব খবর দিতে পারবো।যে,মানুষটাকে একা রেখে চলে গিয়েছো।সে মানুষটা বাঁচল কি মরলো।তা’ তোমাকে জানতে হবে না।ইফাদ চৈতালিকে ধমকে উঠলো।চৈতালি ভয়ে চুপ হয়ে গেল।তুমি ভাবিকে ঠিক যতটা কষ্ট দিবে,তোমাকে-ও সমান কষ্ট অনুভব করতে হবে ভাইয়া।কষ্ট পেলে কেমন লাগে,কষ্টের অনুভূতিটা তোমাকে অনুভব করাবো।কষ্ট পেলে,ভাবি একা পাবে কেনো?ভাবির মতো তোমাকে-ও কষ্ট পেতে হবে।বলেই কল কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিল চৈতালি।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৬