এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৬

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৬
Fabiha bushra nimu

চৈতালি পড়াশোনা করছিল।তানহা চৈতালির কাছে আসলো।তানহাকে দেখে,চৈতালি বই বন্ধ করে তানহার দিকে তাকালো।তানহা কোনো ভনিতা না করে বলল।
–তোমার ভাইয়াকে একটু ফোন দিবে।মানুষটা এত দূরের পথে গেল।ঠিক ভাবে পৌঁছেছে কি না জানা হলো না।

–ভাবি তুমি আবার ভাইয়ার কথা ভাবছো?যে,মানুষটা তোমার কথা না ভেবে,তোমাকে একা রেখে চলে গেল।তুমি তার খবর জানতে চাইছো।তোমার জায়গায় আমি হলে,কবেই ভাইয়াকে ছেড়ে চলে যেতাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–মেয়েদের মেনে নিতে,আর মানিয়ে নিতেই জীবন চলে যায় চৈতালি।এখন বুঝবে না।যখন তোমার সংসার হবে।তখন বুঝবে।আমি’ও বিয়ের আগে অনেক বড় বড় কথা বলতাম।কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন রে বোন।মানুষ চামড়ার মুখে অনেক বড় বড় কথা বলে,কিন্তু পাশে কেউ থাকবে না।একটা ডিভোর্সি মেয়ের দিকে সমাজের মানুষ কিভাবে তাকায়।

তার আড়ালে যত বাজে কথা বলে,সেসব কথা যদি শুনতে,তোমার কলিজা কেঁপে উঠবে,উনি বাহিরের দেশেই গিয়েছেন।আমাকে ছেড়ে তো’ আর চলে যান নাই।সংসার থাকলে একটু আকটু ভুল বোঝাবুঝি হবে।তাই বলে ছেড়ে চলে যেতে হবে।ছেড়ে চলে যাওয়াটা সমস্যার সমাধান নয়।পাশে থেকে দু’জন মিলে সমস্যার সমাধান করাই শ্রেষ্ঠ কাজ।তুমি স্বামীকে ছেড়ে চলে যাবে।কোথায় যাবে,সমাজের মানুষের কাছে যাবে।

ওরা তোমাকে মুখে অনেক বড় বড় কথা বলবে,কিন্তু একবেলা খাবার কেউ দিবে না।দশটা টাকা দিয়ে কেউ সাহায্য করবে না।তুমি-ও আমাকে কম কথা শোনা-ও নাই।তোমাকে মাফ করে দিতে পারলে,ইফাদকে কেনো পারবো না।উনি আমার স্বামী।উনি তো’ কোনো অন্যায় করে নাই।যে,আমি উনাকে ছেড়ে চলে যাব।আমি উনাকে ভালোবাসি।

বিয়ে করেছি সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য,ছেড়ে যাবার জন্য নয়।আমার সামনে দ্বিতীয় দিন ছেড়ে দেওয়ার কথা বলবে না চৈতালি,আমার খুব রাগ হয়।তোমার সংসার ভাঙার দায়িত্ব অনেক জন নিবে।কিন্তু তোমাকে সারাজীবন ভালো রাখার দায়িত্ব কেউ নিবে না।এরা শুধু ভাঙতে জানে,জোড়া লাগাতে জানে না।কথা গুলো বলেই তানহা চলে গেল।চৈতালি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

–এইকেই বলে বাঙালি নারী।স্বামী যতই খারাপ হোক কেনো?স্বামীর নামে একটা কিছু বললে-ই সাপের মতো ফস করে উঠে।আরে ভাই আমি মানছি, আমি ভাবিকে কষ্ট দিয়েছি।তার জন্য আমি যে,গভীর ভাবে অনুতপ্ত হয়েছি।আমার বলা কথা গুলো আমাকে কিভাবে পোড়ায়।

তোমাকে যদি দেখাতে পারতাম ভাবি।আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিতাম।ভাইয়ার সাথে কথা বলতে দিব।কিন্তু আগে ভাইয়া কয়টা দিন শিক্ষা পাক,তারপরে তোমার সাথে কথা বলতে দিব।তার আগে দিব না।আমি থাকতে তোমাকে এতটুকু-ও কষ্ট পেতে দিব না।তুমি তো’ রাণী ভাবি।তুমি আমাদের রাজ্য পরিচালনা করবে,তুমি কেনো কষ্ট পাবে।চৈতালি থাকতে তোমাকে কষ্ট পেতে দিবে না।

আজকে পহেলা ফাল্গুন।চারদিকে হিমেল হওয়া বইছে।লাল রংয়ের থোকাই থোড়াই ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো খুব সুন্দর করে জানান দিচ্ছে,ফাল্গুন মাস চলে এসেছে।বাচ্চার হলুদ রংয়ের কাপড়ে মেতে উঠেছে।ছোট বড় সবাই হলুদ রংয়ের শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।কেউ পরিবারের সাথে,কেউ বা তার প্রিয়জনের সাথে।ছাদ থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে তানহা।চৈতালি পেছনে থেকে,তানহাকে জড়িয়ে ধরলো।তানহা মৃদু হাসলো।

–আজকে তোমার জন্য একটা উপহার আছে ভাবি।
–তোমার ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে।
–তুমি নিজে কথা বলো না।আবার আমাকে বলছো।ভাইয়া আমার ওপরে খুব রেগে আছে।আমাকে সামনে পেলে,কি করবে আল্লাহ ভালো জানে?

–ঠিকঠাক মতো পৌঁছেছে তো’।খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করেন,নিজের যত্ন নেন তো’।
–তুমি ফোন দিয়ে জেনে নাও।
–উনি আমার কথা জানতে চেয়েছেন।আমি’ও আর উনার কথা জানতে চাইবো না।

–ভাবি মন খারাপ করো না।দেখবে ভাইয়া খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে চলে আসবে।এখন আমার সাথে চলো।বলেই তানহাকে নিয়ে নিচে চলে আসলো।চৈতালির রুমে এসে,অনেক গুলো চুড়ি,সাদা রং লাল পারের দু’টো শাড়ি।দুটো নুপুর,আরো কিছু সাজার জিনিস রয়েছে।তানহা চৈতালি দিকে তাকালো।

–আমার তো’ বেশি টাকা নেই।কিছু জমানো টাকা ছিল।দু’জনের জন্য পাঁচ টাকা করে,একটা হাজার টাকা দিয়ে এই সস্তা শাড়ি দু’টো আর কিছু সাজার জিনিস কিনে নিয়ে আসছি।চুড়ি গুলো আমার অফিসের বস কিনে দিয়েছে।আজকে দু’জন জমিয়ে সাজবো।

বাহিরে ঘুরতে যাব না।বাসার মধ্যে সেজে পুরো বাসায় দৌড়ে বেড়াবো।রাতে পিকনিক করবো আমাদের ছাদে,জন প্রতি একশো টাকা করে ধরেছি।এবার রুমে গিয়ে তোমার ভাগের টাকা নিয়ে আসো।আম্মুর টাকা নিয়ে আসছি।এখন ভাইয়ার থেকে টাকা নিব।তানহা চৈতালির কথা শুনে,হেসে দিল।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।এসব পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না।
–আমার পাগলামির জন্য যদি আমার ভাবিমনির মুখে হাসি ফুটে,তাহলে এমন পাগলামি আমি সব সময় করতে পারবো।সন্ধ্যার আজান দিবে একটু পরে,তুমি টাকা নিয়ে আসো।জিনিসপত্র সব তৈরি করতে হবে।ছাদে চুলা বানাতে হবে।

আমরা সাজবো তার জন্য সময়ের প্রয়োজন।দেরি করো না।তাড়াতাড়ি টাকা নিয়ে আসো।তানহা আর কোনো কথা বলল না।মেয়েটা তানহাকে ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।কেউ বলবে এই মেয়েটা কয়দিন আগে একটা ছেলের জন্য তার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে।আজকে সাতদিন হলো ইফাদ বাসায় নেই।তানহার মনটা বিষাদে ছেয়ে গেছে।কোনো কিছুই ভালো লাগে না।আল্লাহ তায়ালার ওপরে ভরসা রেখে দিন গুলো পার করছে।সবাই তাকে নিরাশ করলে-ও আল্লাহ তায়ালা তাকে কখনো নিরাশ করবে না।

–ভাইয়া আমরা পিকনিক করছি।তোমার ভাগের একশো টাকা দাও।
–তোকে সামনে পেলে,কেটে কুটি কুটি করে তেলে ভাজবো।
–আমার কোনো দোষ নেই।তুমি ভাবিকে কষ্ট দিয়েছো।আমি তোমাকে ভাবির কষ্টটা অনুভব করিয়েছি।

–তানহাকে ছাড়া আমার এক একটা সেকেন্ড কেমন যাচ্ছে,আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে?আমার দম বন্ধ হয়ে আসে জানিস।আগে আমি মেয়েদের দেখতে পারতাম না।এখন একটা মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়লো।
–তাহলে তোমাকে পাবনা রেখে আসবো।তারপরে সুন্দর একটা ছেলে দেখে,ভাবিকে আবার বিয়ে দিব।

–চৈতালি সাহস খুব বেড়ে গেছে।বাসায় খালি আসতে দে’।
–আমাকে ভয় দেখাচ্ছো।আমি ভাবিকে সবকিছু বলে দিব।
–তুই আমার নিজের মায়ের পেটের বোন।নাকি শত্রু বল তো।এতগুলো দিন কষ্ট করেছি।তুই এক নিমিষেই সবকিছু শেষ করে দিবি।
–তুমি টাকা দাও।তাহলে ভাবিকে কিছু বলবো না।খুব যত্ন করে রাখছি বউকে।
–তোর বউ না আমার বউ।

–তোমার বউ মানের বাড়ির বউ।তাহলে আমার বউ।কথা কম বলো।ভাবি যেকোনো সময় চলে আসবে।ইফাদ চৈতালিকে বিকাশে একশো টাকা পাঠিয়ে দিল।চৈতালি খুশি হয়ে ফোন রেখে দিল।সন্ধ্যার নামাজ পড়ে দু’জন মিলে,নিজেদের কাজে লেগে গেল।
–ভাবি রাতের নামাজ শেষ করে,রান্না করতে আসবো।তারপরে রাত বারোটায় খাব।অনেক মজা হবে।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আম্মা যদি রাগ করেন।
–আম্মু কিছু বলবে না।আম্মুকে বলাই আছে।আম্মু-ও থাকবে আমাদের সাথে।তানহা চোখ গোল গোল করে চৈতালির দিকে তাকালো।চৈতালি কাজ শেষ করে তানহাকে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।দু’জন মিলে শাড়ি পড়ে,সুন্দর করে সাজলো।দু-হাত ভরে চুড়ি পড়েছে তানহা আর চৈতালি।দু’জন মিলে পুরো বাসায় দৌড়া-দৌড়ি করছে।চুড়ি আর নুপুর রিনিঝিনি শব্দে পুরো বাড়ি মেতে উঠেছে।রোকেয়া বেগম মুগ্ধ দৃষ্টিতে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।

–কি শুরু করেছিস।পড়ে যাবি,এভাবে দৌড়াদৌড়ি করিস না।
–তুমি ভাবিকে থামতে বলো।আমি ভাবিকে ভুল কিছু বলেছি।ভাইয়া ভাবিকে খালি রেখে চলে যায়।তাই বলেছি ভাবিকে আরেকটা বিয়ে দিব।আর আমার ওপরে রেগে গেছে।
–বাজে কথা বললে,তো রাগবেই।তুই খুব পাকনা হয়েছিস।ইফাদ আসলে,এবার তোকে বিয়ে দিয়ে দিব।

চৈতালি দাঁড়িয়ে পড়ল।মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে,মায়ের দিকে তাকালো।তানহা চৈতালির মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে।হঠাৎ করে দরজায় কলিং বেলে বেজে উঠলো।তানহা দরজা খুলে,ইফাদকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদের চেহারায় মলিনতা বিদ্যামান।ফ্যাকাসে হয়ে আছে মুখখানা।ইফাদ অসহায় দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকালো।তানহা কোনো কথা বলল না।মাথা নিচু করে সরে দাঁড়াল।

–আমার সাথে কথা বলবে না।
তানহা নিরুত্তর।সমস্ত অভিমান গুলো মনে এসে হানা দিয়েছে।দাঁড়িয়ে না থেকে,ড্রয়িং রুমে চলে আসলো।ইফাদ-ও তানহার পেছনে পেছনে আসলো।রোকেয়া বেগমকে ছেলেকে দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।

–ইফাদ তুই।
–হ্যাঁ আম্মু তোমার ছেলে বিদেশে যায় নাই।কোথায় গিয়েছিল জানো।বলে গিয়ে থেমে গেল।রোকেয়া বেগম যথেষ্ট রেগে গিয়েছেন।তা উনার মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।ইফাদ মায়ের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

–ইফাদ তুই সবকিছু ছেলে-খেলা মনে করিস।তুই কি আমাদের সাথে ফাজলামি করছিস।এটা তোর কেমন ধরনের ব্যবহার।একটা বার মেয়েটা’র দিকে তাকিয়ে দেখেছিস।তোর চিন্তায় নিজের কি হাল করেছে।আমি খুব বড় ভুল করে ফেললাম।তানহাকে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে।

–আমার মতো করে কেউ তানহাকে ভালোবাসতে পারবে না আম্মু।আমি তো শুধু..
–চুপ কর বেয়াদব।একদম আমার সাথে কথা বলবি না।বিয়ের পর থেকে মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছিস।

আবার বলছিস,তোর মতো করে৷কেউ ভালোবাসতে পারবে না।মেয়েটার রুপে-গুনে কোনো দিকে কমতি আছে।অন্য জায়গায় বিয়ে হলে,রাজরানী হয়ে থাকতো।ভেবেছিলাম এতিম মেয়েটাকে কখনো কষ্ট পেতে দিব না।কিন্তু তুই আমার আশা পূর্ণ হতে দিলি না।তানহাকে নিয়ে যদি তোর এতই সমস্যা থাকে।তাহলে বলে দে’।আমি তানহাকে আবার বিয়ে দিব।

–আম্মু এমন কথা বলবে না।আমার অনেক খারাপ লাগে।ওর মুখে অন্য ছেলের নাম শুনলেই আমার বুকে ব্যথা করে।অন্য কারো হয়ে গেলে,আমি মরেই যাব।আমি বেঁচে থাকতে তানহা কারো হতে পারবে না।

–বেয়াদবি করার আগে মনে ছিল না।একটা বার ভাবলি না।মেয়েটার মনের অবস্থা কি হতে পারে।
–আম্মু আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর কখনো এমন ভুল করবো না।
–আমি তোর কাছে আমার মেয়েকে আর দিব না।এখন তুই ভুল করলেই কি আর না করলেই কি?

–আম্মু আমি তো,,
–তানহার কাছে ক্ষমা চা’।তুই নিসন্দেহে অপরাধ করেছিস।ইফাদ তানহার দিকে তাকিয়ে বলল।

–তানহা আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর কখনো এমন করবো না।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।তানহা ইফাদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে,চৈতালিকে বলল।
–চৈতালি চলো।আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।বলেই চৈতালির হাত ধরে ওপরে চলে গেল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৫

ইফাদ অসহায় দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।রোকেয়া বেগম বললেন।ঠিক হয়েছে।বলেই নিজের রুমে চলে গেল।ইফাদ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।শেষমেশ আম্মু-ও আমার সাথে শত্রুতা করল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৭