এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪১

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪১
Fabiha bushra nimu

প্রথমে’ই আমি তোমার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসা যায়।তার শরীরে নিজ হাতে আঘাত করা,কতটা যন্ত্রনাদায়ক তা’ যদি তোমাকে এক বিন্দু দেখাতে পারতাম।তোমার হয়তো শরীরে আঘাত লেগেছে।কিন্তু আমি আমার কলিজা’তে আঘাত করেছি।তুমি আমার ক্ষতটা অনুভব করতে পারছো ইয়াদ।আমি জানি তুমি আমার ওপরে রাগ করে আছো।তাই খুব গোপনে ফাইয়াজের মাধ্যমে,

ইফাদ’কে দিয়ে চুড়ির ডালাটা তোমার হাতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।আমি জানি আমার চিঠিটা পড়ে,তোমার মুখ হাসি ফুটে উঠেছে।আমি আবারো তোমার কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি।আমি বাবার সামনে তোমাকে মারতে বাধ্য হয়েছি।তুমি তো’ জানোই আমি বাবা’কে কতটা ভয় পাই।বাবা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে না।তিনি এক কথার মানুষ।আমাকে বলেছে।আমি যদি তার কথা মতো বিয়ে না করি।তাহলে উনি তোমার ক্ষতি করে দিবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভয়ে রাজি হয়ে যাই।কিন্তু সারারাত নিজের সাথে যুদ্ধ করে সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে-ও আমার কষ্ট হয়।আমি আর পারছি না ইয়াদ।তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমাকে নিয়ে পালিয়ে চলো প্লিজ।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।বাবা এমনিতে-ই আমাদের ভালো থাকতে দিবে না।আমরা কেউ সারাজীবন থাকতে আসি নাই।যতগুলো দিন বেঁচে আছি।

আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই।তোমার বউ হতে চাই।তোমার বাচ্চার মা হতে চাই।তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন জানো,নিজের জন্য আজ স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি।পরিবারের কথা ভাবছি না।তুমি যদি খারাপ হতে,বাবা যদি তোমার একটা খারাপ দিক দেখাতে পারতো।তাহলে মনকে বুঝ দিতে পারতাম।তুমি পুরোটাই ভালোবাসার মানুষ।তোমাকে শুধু ভালোবাসা যায়।আমি বড্ড লোভী জানো।এত ভালোবাসা রেখে অন্যের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে না।আমাদের ছোট একটা সংসার হবে।যেখানে হাসি খুশি দিয়ে ভরা থাকবে।আজ রাত বারোটায় আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।জামাকাপড় সব গুছিয়ে নিয়েছি।তুমি আসলেই চলে যাব।তোমার অপেক্ষা থাকলাম(পুতুল)

তানহা চিঠি’টা পড়ে নিজের অজান্তে-ই দু’ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিল।ইফাদ আর ফাইয়াজ কোথায় গিয়েছে।তা’ জানার জন্য এসেছিল তানহা।দু’জন’কে নিস্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখে,তাদের দিকে এগিয়ে আসলো।ফাইয়াজ হাঁটুর মাঝখানে নিজের মুখ গুঁজে রেখেছে।ইফাদ স্থির দৃষ্টিতে,ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে।কাগজ’টা পড়ে থাকতে দেখে তানহা কাগজ’টা তুলে নিজেই পড়তে শুরু করেছিল।তানহা-ও ফাইয়াজ আর ইফাদের মতো বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।কথা বলার কোনো ভাষা খুঁজে পেল না।দু’জন ছেলে মানুষ তাই হয়তো কান্না করতে পারছে না।মেয়ে হলে,এখনই মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিত।ইফাদ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল।

–আরো একটা জিনিস দেখবে ফাইয়াজ?ইফাদের কথা শুনে ফাইয়াজ চোখ তুলে তাকালো।অশ্রুকণায় ভরে উঠেছে দু-চোখ।ইফাদ আবার রুমের মধ্যে গেল।একটা কাগজ নিয়ে এসে ফাইয়াজ হাতে দিল।ফাইয়াজ চোখ মুছে কাগজটি খুলে পড়তে শুরু করল।

–আমার পুতুল,সত্যিই তুমি একটা পুতুল।ইচ্ছে করে তোমাকে রুমের মধ্যে সাজিয়ে রেখে প্রাণ ভয়ে দেখি।তোমাকে সারাজীবন দেখলে-ও ভরবে না আমার দু’নয়ন।তুমি আমাকে মেরেছো।আমি তাতে কিছু মনে করি নাই।আমি ভালো করেই জানি আমার পুতুল সোনা,তার বাবা’কে কতটা ভয় পায়।আমাকে আঘাত করে,সে আমার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছ।এটা আমি জানি।যাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে কল্পনা করতে গিয়ে,আমার দম বন্ধ আসে।তাকে অন্য কারো পাশে কিভাবে সহ্য করবো।আমি অর্থের কাছে হেরে গেলাম পুতুল।

তোমার বাবা তোমাকে নিলামে তুলেছে।শুধু টাকার অভাবে কিনতে পারলাম না।আমাকে তুমি মাফ করে দিও।আমি বেঁচে থাকতে কখনো তোমাকে অন্যের পাশে দেখতে পারবো না।তুমি স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থেকো।আমি না হয় ওপারে ভালো থাকবো।এই রংয়ের দুনিয়ায় তোমাকে ছাড়া চাওয়া’র কিছুই ছিল না।তোমাকে চাওয়ার ছিল,তোমাকে পেলাম না।চুড়ি গুলো নিজে কামাই করে তোমাকে কিনে দিয়ে ছিলাম।বলে ছিলাম কখনো চুড়ি গুলো ফিরিয়ে দিও না।

একটা বেকার ছেলে জানে,টাকা কামানো কতটা কষ্টকর।তুমি আমাকে কথা দিয়ে-ও কথা রাখলে না।চুড়ি গুলো আমাকে ফিরিয়ে দিলে।আমি খুব আঘাত পেয়েছি।তুমি ঠিকি বলো আমি খুব দুর্বল মনের মানুষ,তা না হলে সামান্য বিষয় নিয়ে এতটা কষ্ট পাই।তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জানো পুতুল।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমি আর পারছি না পুতুল।তুমি আমাকে মাফ করে দিও।বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে সুখী হও।পারলে এই অধমকে ভুলে যেও।(ইয়াদ)

–সব হয়েছে বাবার জন্য আমি বাবাকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না।দু’টি ফুল এভাবে ঝড়ে গেল।কি দোষ ছিল দু’জনের,সব অনিয়মের দেওয়াল ভেঙে দু’জন’কে এক করে দিলে,কি এমন ক্ষতি হতো।তাদের সুন্দর একটা সংসার হতো।দিন শেষ একজন আরেকজনের বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে পারতো।মানসিক শান্তির চেয়ে বড় শান্তি পৃথিবীর কোথাও নেই।ইয়াদ ভাইয়া আপুর চিঠিটা খুলেই দেখে নাই।চিঠিটা খুলে দেখলে কি এমন ক্ষতি হতো।দু’জন একসাথে থাকতে পারতো।

আমি বাবাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো না।আমি আবার বাহিরে চলে যাব।আর কখনো বাংলাদেশে আসবো না।বাবাকে দেখলে আমার রাগ হবে।রাগের মাথায় কিছু একটা করে বসবো।আমি আজকেই চলে যাব।বলেই ফাইয়াজ হন্তদন্ত হয়ে ইফাদের বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।

পুরো বাড়ি একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।একটু ভুলের জন্য দু’টো প্রাণ চলে গেল।ইফাদের আফসোস হচ্ছে,কেনো সে,তার ভাইয়া’কে বলল না।ভাইয়া কাগজের লেখা গুলো পড়।ইফাদ যদি জানতো পুতুল আপু,ইয়াদের সাথে পালানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে।নিজের জীবন দিয়ে হলে-ও,পুতুল আপুকে,তার ভাইয়ের কাছে নিয়ে আসতো।কেনো তার ভাইয়ার কথা শুনে চুড়ি গুলো রেখে ভাইয়ের রুমে থেকে বেড়িয়ে আসলো।

ইফাদের চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।বিচ্ছেদের যন্ত্রনা এতটা কঠিন কেনো?চৈতালি কেমন শান্ত চোখ তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে,রোকেয়া বেগমের শরীর খারাপ লাগছে।তানহা ইফাদে’র কাছে এগিয়ে গেল।ইফাদের কাঁধে হাত রাখতে-ই ইফাদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।তানহা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।তানহা কি উত্তর দিবে ভেবে পেল না।ইফাদ’কে নিজের সাথে মিলিয়ে রাখলো।

ফাইয়াজ বাসায় এসে সোজা মায়ের কাছে গেল।কোনো কথা না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।ছেলের করুন অবস্থা দেখে,রাহেলা চৌধুরী অস্থির হয়ে উঠলো।স্নেহের হাত মাথায় রেখে বলল।
–আমার বাবুইয়ের কি হয়েছে।

–আমার পুতুল আপুকে এনে দাও আম্মু।আমার আপুর কথা খুব মনে পড়ে।আপুর কথা মনে হলে,খুব কষ্ট হয়।একটা নজর দেখতে ইচ্ছে করে।ছেলের কথায় রাহেলা চৌধুরী চুপসে যান।দু-চোখে অশ্রুকণা গুলো এসে হানা দেয়।বোনের কথা মনে হলেই ছেলে এমন পাগলামি করে।একটু পরে ফাইয়াজ উঠে চলে গেল।চোখ দু’টো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।
তানহা সবাই’কে বুঝিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিল।ইফাদ’কে বুঝিয়ে রুমে নিয়ে আসলো।

–একদিন সবাই’কে চলে যেতে হবে।কেউ সারাজীবন থাকতে আসে নাই।তুমি কষ্ট পেও না।নামাজ পড়ে ভাইয়ার জন্য দোয়া করো।
ইফাদ কোনো উওর দিল না।চুপচাপ বিছানায় শুইয়ে পড়ল।
ঘড়ির কাটায় রাত দু’টো বাজে,আবির চুপ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলো।ঘন্টা খানিক পরে একটা ছোট বাসার সামনে এসে পৌঁছালো।বাসার মধ্যে প্রবেশ করতে-ই চেয়ারে কাউকে বসে থাকতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।আবির’কে দেখে আগন্তুক বলল।

–তুমি চলে এসেছো?
–জ্বী এতরাত করে আসাটা উচিৎ হয় নাই।আপনি ভালো করেই জানেন,আমি নিজের বাসায় থাকি না।আমার বউয়ের বাসায় থাকি।
–ছেলে মানুষ হয়ে বউয়ের বাসায় থাকো লজ্জা করে না।
–আমার মনে হয়,আমি এখানে কাজে এসেছি।আপনার জ্ঞান শুনতে আসি নাই।
–আবির তুমি ভুলে যাচ্ছো,আমি কে?আমি চাইলে নিমিষেই তোমাকে শেষ করে দিতে পারি।আবির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল।

–সে,আপনি যা ইচ্ছে খুশি করে নিতে পারেন।আমার কোনো ক্ষতি হবে না।সব ক্ষতি কিন্তু আপনার-ই হবে।আবিরের কথা শুনে আগন্তুক দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,হয়তো নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা করছে।
–কালকে ইফাদ’কে তুলে,এখানে নিয়ে আসবে।মারতে মারতে আধমরা করে ফেলবে।তারপরে তানহা’কে ফোন দিবে।ভালোই ভালোই যদি সাইন না করে,স্বামীর সাথে বউকে-ও লাশ বানিয়ে দিবে।যে,করেই হোক চৌধুরীর ছেলের সাথে,আমার মেয়ের বিয়ে দিতেই হবে।এর জন্য আমার অনেক টাকা আর ক্ষমতা লাগবে।

–আপনি ঐ’ আশাই করুন।চৌধুরীর ছেলে ইফাদের বোন’কে ভালোবাসে,আপনার মেয়েকে কোনোদিন বিয়ে করবে না।
–সেটা তুমি আমার হাতে ছেড়ে দাও।কালকে সময় মতো কাজ করতে পারবে।নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো।
–অন্য ব্যবস্থা করলে ভালোই হয়।আমাকে কষ্ট করতে হবে না।আগন্তুক আবিরে’র দিকে ক্রোধিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।আবির আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।আবির’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আগন্তুক চলে যায়।আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাউকে একটা ফোন দিল।ফোনের ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে,আবিরের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪০

(অন্য দিন চেয়ে-ও ২ হাজার রিয়েক্ট পাই না।কালকের পর্বে সবাই না খেয়ে ৩০০০ হাজারের বেশি রিয়েক্ট তুলে দিয়েছেন।সন্ধ্যার মধ্যে যদি এই পর্বে ২০০০ রিয়েক্ট উঠে।তাহলে রাতে আরেকটা পর্ব দিবো।হাতে সমস্যা তাই পর্ব ছোট হয়েছে।সবাই পুতুল আর ইয়াদের কাহিনি তুলে ধরতে বলেছিলেন।তাই তুলে ধরেছি।কেউ আবার বলিয়েন না আজাইরা কাহিনি লেখছি।)

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪২