এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৭

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৭
Fabiha bushra nimu

কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে’র মধ্যে গাছের আড়ালে দু’জন মানুষে’র মধ্যে পিনপিনে নিরবতা বিরাজমান করছে’।আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চৈতালি’র দিকে তাকিয়ে আছে।চৈতালি দৃষ্টিনত করে দাঁড়িয়ে আছে’।

–কলেজে এসব বেয়াদবি করতে আসো’।তোমার বাসার সবাই জানে’।তোমার পরিবার তোমাকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছে।নাকি স্যারদে’র বিরক্ত করার জন্য পাঠিয়েছে’।আমি আগে থেকেই তোমাকে সন্দেহ করে ছিলাম’।কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষারোপ করা সঠিক নয়।সেজন্য আমি প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলাম’।আমি তোমার গার্ডিয়ান ডাকবো’।
চৈতালি চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে ফেললো’।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–স্যার আমি আপনাকে ভালোবাসি’।আপনি যেদিন থেকে আমাদের কলেজে জয়েন করেছন’।তখন থেকে আপনাকে চুপিচুপি দেখতাম।আপনি আমার শিক্ষক সাথে গুরুজন’।সামনাসামনি কিছু বললে,আমাকে রিজেক্ট করে দেন’।আমি সহ্য করতে পারতাম না।আপনাকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে সবাই আপনাকে নিয়ে কানাকানি করতো’।আপনার অসন্মান হোক সেটা আমি চাই না’।তাই কলেজের বাহিরে থেকে আপনাকে এতদিন বিরক্ত করছি’।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না’।আমি অনেক ধৈর্য ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি’।বাসা থেকে আমাকে অনেকবার বিয়ের চাপ দিয়েছে’।কিন্তু আমার মনের পুরোটা জুড়ে আপনি দখল করে বসে আছেন’।যে,মন জুড়ে আপনার বসবাস।সে’ মনে অন্য কেউ কিভাবে ঘর বানাবে’।

–আজকে যা বলেছো’।দ্বিতীয় দিন যেনো আর এসব কথা না শুনি’।এই টুকু বাচ্চা এসব কি বলে’।তুমি জানো তোমার আর আমার বয়সের পার্থক্য অনেক’।একজন স্টুডেন্ট হয়ে টিচারকে প্রেমের প্রপোজাল দাও লজ্জা করে না’।আমাদের সময় আমরা টিচারদের কত সন্মান করতাম’।এসব কল্পনা-ও করতাম না।আর আজকালকার ছেলে এসব কিছু মনেই করে না’।আমার সাথে এসব বেয়াদবি একদম সহ্য করবো না’।আমি তোমাকে শেষ বারের মতো সুযোগ দিচ্ছি’।এমন পাগলামি আবার করতে আসলে আমি তোমার গার্ডিয়ান ডাকবো’। বলেই আবির হনহন করে চলে গেলো’।

আবির চলে যেতেই চৈতালি প্রাণ ভরে শ্বাস নিলো’।আবিরকে দেখলে-ই চৈতালি’র হৃদপিন্ডের গতিবেগ দিগুণ মাত্রায় বেড়ে যায়’।চৈতালি আবিরের থেকে এমন কিছুই আশা করেছিল’।আবির যেমন ছেলে’।খুব সহজে পটবে না।এর জন্য চৈতালি’কে অনেক কাঠকয়লা পোড়াতে হবে’।
চৈতালি ক্লাস করে বের হয়েছে’।তখনই আবির অন্য রুম থেকে বেড়িয়ে অফিস রুমের দিকে যাচ্ছিল’।চৈতালি দ্রুত হেঁটে আবিরের কাছে গেলো’।

–স্যার একটা কথা ছিল’।
–কি কথা জলদি বলো’।আমার ক্লাস আছে যেতে হবে’।
–আপনি আমাদের ক্লাস নেন কেনো’।
–এরকম বোকার মতো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে ইচ্ছে করে না।
–স্যার’!
–স্যার স্যার করে আমার পিছু পিছু আসবে না।তোমার কাজ শেষ এখন তুমি আসতে পারো’।
–স্যার’।

আবির রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল’।বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো চৈতালির দিকে’।চৈতালি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই’।সুযোগ বুঝে বলল’।
–স্যার আমি আপনাকে ভালোবাসি’।বলেই মাঠের দিকে দৌড় দিল’।ভালোবাসি কথাটা বলার পরে আবিরে’র সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হলো না চৈতালি’র।চৈতালি’কে দৌড়াতে দেখে চৈতালি’র বেস্ট ফ্রেন্ড আফরিন বলল’।
–এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো’?সবাই কেমন করে তোর দিকে তাকিয়ে আছে’।
চৈতালি ভাবলো আফরিন’কে কথাটা বলা ঠিক হবে না’।স্যারের নামে যদি আজেবাজে কথা বলে’।

–কিছু না রে’।আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে’।সেজন্য দৌড়াচ্ছি’।আজ আসি কালকে দেখা হবে’।বলেই চৈতালি চলে গেলো’।
ইফাদ দেওয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে’।কাঁধে কারো স্পর্শ পেতে পেছনে ঘুরে তাকালো’।রিয়াদকে দেখে মলিন হাসলো ইফাদ’।
–তোর মন খারাপ ইফাদ’।
–পৃথিবীতে সবথেকে কাপুরষ তো’ সে’।যে নিজের শক্তি নারীর ওপরে প্রয়োগ করে’।আমার’ও নিজেকে তাদের মধ্যে একজন মনে হচ্ছে’।আমি কি করে একটা মেয়ের গায়ে বিনা কারনে হাত তুললাম।আমার তো’ কারো গায়ে হাত দেওয়া’র অভ্যাস নেই’।

–কতগুলো বছর হয়ে যাচ্ছে’।আমাদের বিয়ে হয়েছে।আমি ভাই রুপার গায়ে ফুলের টোকা-ও দেই নাই’।যখন খুব রাগ হয় মুখে দু’চার কথা শুনিয়ে দেই’।খুব আদরে’র বউ আমার’।মেরে নিজের ক্ষতি নিজে করবো নাকি’।মেয়েদের মনটা অনেক নরম আর স্বচ্ছ হয় জানিস’।এদের মায়া বেশি’।এরা একটু ভালোবাসা পেলে সবকিছু ভুলে যায়’।তুই যদি এর থেকে-ও বেশি আঘাত করে ভালোবাসে দিস।ও’ মেয়ে সবকিছু ভুলে যাবে’।আল্লাহ তায়ালা মেয়েদে’র মনে এতটা মায়া দিয়েছে’।প্রতিটি মেয়ে একদিন মা হবে’।আর মা কখনো খারাপ হয় না ইফাদ’।এমন ভুল আর কখনো করবি না’।আজকে গিয়ে ভাবির কাছে মাফ চেয়ে নিবি কেমন’।

–ও’ মেয়ের সাথে আমি আগে,কথা বলতে পারবো না’।
–শোন মেয়েরা বাঁকা পথে হাটবে-ই।মেজাজ খারাপ হবার মতো উল্টো পাল্টা কথা বলবেই।বাম পাঁজরে’র হাড় যেমন বাঁকা,তারা-ও বাঁকা।তাই তাদের ধৈর্য্য ধরে মেনে নিলে সুখী হবি’।রাসূল(সাঃ) বলেছেন।তোমরা মেয়েদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে’।তাদের বাম পাঁজরের হার হতে সৃষ্টি করা হয়েছে’।আর বাম পাঁজরের হার সবচেয়ে বাঁকা হয়’।তুমি যদি সোজা করতে চেষ্টা করো তা’ ভেঙে যাবে।আর যদি ছেড়ে দাও

তাহলে সর্বদা বাঁকা থাকবে’।সুতরাং তাদের সাথে উত্তম পূর্ণ আচরণ করতে থাকো’।(বুখারী শরীফ-৩৩৩১)
–আমি ও’ মেয়ের সাথে কথাই বলবো না’।ও’ মেয়ে ওর মতো থাকবে’।আমি আমার মতে থাকবো’।
–ও’ মেয়ে ও’ মেয়ে করিস কেনো’।তোর বউ হয়’।একটু ভালোবাসে দেখিস’।মেয়ে মানুষ ভালোবাসা পেলে তোকে রাজ্যের রাজা করে রাখবে’।মেয়েদের ভালোবাসা এতটা গভীর’।
–তারমানে কি বোঝাতে চাস।ছেলে মানুষ ভালোবাসতে জানে না’।শুধু মেয়েরাই গভীর ভাবে ভালোবাসতে জানে।ছেলেরা গভীর ভাবে ভালোবাসতে জানে না’।

–তাহলে ভাবিকে ভালোবেসে দেখা’।
–আমাকে ইচ্ছে করে কথা জালে ফাঁসিয়ে দিলি’।থাকবো না তোর বাসায়।বলেই ইফাদ চলে যেতে লাগলো’।
–কোথায় যাচ্ছিস।খেয়ে তো যাবি’।
–তোর বাড়ির খাবার তুই খা’।বলেই চলে গেলো ইফাদ’।

তানহা রান্না ঘরে রান্না করছে’।রোকেয়া বেগম পাশে বসে গল্প করছেন’।তখনই ইফাদ বাসায় প্রবেশ করে’।
–আম্মু আমার ক্ষুদা লাগছে’।তাড়াতাড়ি খেতে দাও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি’।
–তানহা মা’ যাও ইফাদকে খেতে দিয়ে আসো’।
–আম্মা রাগ করবেন না’।ও’ ছেলে আমার গায়ে হাত তুলেছে’।আমি কিছুতেই ও’ ছেলেকে খেতে দিতে পারবো না’।আপনার ছেলে আপনি খেতে দিন’।

–তানহা এসব কি কথা মা’।
–রাগ করবেন না’।আমি উনাকে খেতে দিব না।উনি আমাকে মারলেন কেনো’।
–এতবড় হয়ে বাচ্চাদের মতো আচরণ করলে হবে’।ইফাদ তোমার গায়ে বিনা কারনে হাত তুলেছে এর শাস্তি ইফাদ পাবে।তুমি আমাকে একটু সময় দাও।আমার হাঁটুতে ব্যাথা বেড়েছে।তুমি গিয়ে খেতে দাও’।তানহা বিরক্ত হয়ে ইফাদের খাবার ব্যবস্থা করতে লাগলো’।পাটি বিছিয়ে সব খাবার পাটির ওপরে রাখলো’।ইফাদ ফ্রেশ হয়ে এসে,মাথা নিচু করে খেতে বসলো’।ইফাদ খাচ্ছে তানহা বসে আছে’।ইফাদে’র খাওয়া প্রায় শেষ’।তানহা রোকেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল’।

–আম্মা আপনার ছেলের কিছু লাগবে নাকি জিজ্ঞাসা করেন’।
–আম্মু তোমার ছেলের বউকে বলে দাও।তার জামাইয়ে’র আর কিছু লাগবে না’।তানহা সব খাবার তুলতে শুরু করলো’।ইফাদ যাওয়া’র আগে বলে গেলো’।
–মেয়ে মানুষের এত রাগ ভালো না’।
–না শুধু ছেলে মানুষ রাগ করবে’।মেয়ে মানুষ বানের জলে ভেসে এসেছে’।বলেই রান্না ঘরের দিকে তেরে গেল।
–এই মেয়ে পারে তো’ রাগ দিয়ে রান্না ঘর খেয়ে ফেলবে’।রোকেয়া বেগম উঠে নিজের রুমে চলে গেলো’।তানহা রান্না করছিল’।হাঠাৎ করে কেউ তাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো’।

–ভাবিমনি’।
–চৈতালি আমি কাজ করছি গলা ছাড়ো’।
–আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই’।
–হেয়ালি না করে যে,উদ্দেশ্যে এসেছো’।আসল কথা বলো’।আমার বোনকে আমি ভালো করে জানি’।কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া আমার বোন আমাকে এত ভালোবাসা দেখায় না’।

–তারমানে তুমি বলছো।আমি তোমাকে ভালোবাসি না।শুধু প্রয়োজন তোমাকে ভালোবাসি’।
–আমাকে ভালোবাসো।কিন্তু প্রয়োজনে একটু বেশি ভালোবাসো।যা’ আমার কাছে অতিরিক্ত মনে হয়’।
–আবির স্যারকে আজকে আমি আমার মনের কথা জানিয়ে দিয়েছি’।স্যার সোজা আমাকে না করে দিয়েছে’।এখন তুমি আমাকে সাহায্য করবে’।
–না করে দিয়েছে।কাহিনি এখানেই শেষ।মরিচীকার পেছনে ছুটে লাভ নেই’।এসব বিষয়ে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারলাম না’।

–আমি কিন্তু ভাইয়াকে বলে দিব।তুমি প্রতিদিন আমার ফোন থেকে ভাইয়ার ছবি দেখতে আর মুচকি মুচকি হাসতে’।দোকান থেকে ভাইয়া ছবি বের করে নিয়ে আসছো’।প্রতিদিন ভাইয়ার ছবি দেখে দেখে রাতে ঘুমাও।ভাইয়াকে নিয়ে শতশত শব্দ লেখা আছে তোমার ডায়েরিতে’।আমি সবকিছু ভাইয়াকে বলে দিব’।তানহা দ্রুত চৈতালির মুখ চেপে ধরলো’।লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।

–আস্তে বলো তোমার ভাইয়া বাসায় আছে।সবকিছু শুনে ফেলবে’।কাউকে না বলে কারো ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া একদম উচিৎ না’।তোমার এই বিষয়টা আমার একদম পছন্দ হলো না।আমি খুব কষ্ট পেয়েছি’।
–রাগ করো না ভাবিমনি আমি দেখতে চাই নাই।একদিন তোমার গিয়ে রুমে ছিলাম।তুমি ভাইয়ার ছবি বুকে রেখে ঘুমাচ্ছিলে’।তোমার ডায়েরি খোলা অবস্থায় বিছানায় পড়ে ছিল’।সেখানে থেকে কিছু অক্ষর আমার চোখে পড়ে’।তাই কৌতূহল মেটাতে পড়েছি।প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও’।

–নিজের রুমে যাও।আমাকে কাজ করতে দাও’।চৈতালি মাথা নত করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো’।তানহা ভাবতে শুরু করলো।কে’?এই আবির যে,চৈতালির মাথাটা নষ্ট করে দিয়েছে।বিষয়টা বেশি দূর যাওয়ার আগে-ই আম্মাকে জানানো প্রয়োজন’।বলেই নিজের কাজে মনযোগ দিল তানহা’।
রাতে খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে দেখে ইফাদ ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে তার ওপরে কম্বল বিছিয়েছে’।ওপরে থেকে বালিশ নিয়ে নিচে শুইয়ে পড়ল’।

–নিজেকে মহান প্রমাণ করতে চায় নাকি এই ছেলে’।এই শীতের মধ্যে ঠান্ডা মেঝেতে ঘুমাবে’।ডং দেখলে বাঁচি না’।আমি ভাই বিছানায় শুইয়ে পড়ি’।আমি ওনার মতো এত মহান হতে পারবো না’।তানহা কেমন জানি উসখুস করছে’।ইফাদের জন্য ডায়েরি লিখতে পারছে না’।প্রতিদিন এক শব্দ হলে-ও তানহা ডায়েরিতে লিখে।রোকেয়া বেগমের থেকে অনুমতি নিয়ে ডায়েরিটা কিনে এনেছিল তানহা।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৬

একা একা ভালো লাগে না।তাই সময় কাটানোর জন্য ডায়েরি লিখে তানহা’।ইফাদ ফেসবুকে স্ক্রল করছিল।ইফাদের ফোনে একটু পর পর টুংটাং শব্দ হচ্ছে’।তানহা গভীর আগ্রহ নিয়ে আড়চোখে দেখার চেষ্টা করছে কে’? ইফাদকে মেসেজ করছে’।খুব করে বলতে ইচ্ছে করছিল।এতরাতে ইফাদকে কে’?মেসেজ করছে’।মনের কথা মনে রেখে ঘুমিয়ে গেলো তানহা’।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৮