এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ১৫

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ১৫
ইফা আমহৃদ

ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই?
একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
মাঠ পেরুলেই বন।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝন ঝনাঝন ঝন।

স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। অপূর্ব ভাই দাঁড়িয়ে আছেন পাশে। ভিড় ভাট্টা দিয়ে ঘিরে আছে। ট্রেন এনে থামল সামনে। দু’পা সামনে এগিয়ে বললাম,
“চলুন, ট্রেন চলে এসেছে। সেদিনের মতো ছেড়ে যাবে।”
বলতে বলতে ভিড়ের এক ধাক্কা লাগল। কাঁধে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে উঠলাম। অপূর্ব ভাই এক হাতে টেনে কাছে নিয়ে এলেন। ধমকে বললেন, “আগে সবাইকে নামতে দে। নাহলে জায়গা পাবো কিভাবে?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উচ্চে পড়া ভিড়। একদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পরিচিত কিছু মুখ নজরে এলো। চোখ পরিস্কার করে পুনরায় তাকালাম। হাত ছাড়াতে ছাড়াতে অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, “দেখুন না, শেফু ও তুর এসেছে। পেছনে মামিরাও আছে।”
ভিড় একটু কমলেই অপূর্ব ভাই হাতটা ছেড়ে দিলেন। হাতটা বন্ধনহীন হতেই ছুটে গেলাম। শেফু তুরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। অশ্রু মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে বললাম, “কেমন আছিস তোরা?”

“ভালো না, তোকে প্রচণ্ড মনে পড়ছিল আরু।”
“আমারও মনে পড়েছে। একটু পর আমরা ট্রেনে করে গ্রামে যাচ্ছিলাম। তোরা কেন এলি।”
বড়ো মামি পেছন থেকে কানটা টেনে ধরলেন। ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম, “লাগতে তো সোনাপাখি।”
“কাউকে কিছু না বলে, চলে এলি। তখন আমাদের জানটা বেরিয়ে গেছিল। আমাদেরও প্রচুর লেগেছে।” কাঁচুমাচু করে হাসলাম। নানা ভাই তার শক্তপোক্ত লাঠি দিয়ে মৃদু পিঠে আঘাত করলেন,

“তোর মা-ও এত দুষ্টু ছিল না। যতটা তুই হয়েছিস। কি তাই তো?”
ব্যঙ্গ করে বললাম, “হ্যাঁ, তাই তো। তাই তো! আমি বলেই লাঠি দিয়ে মা/র/ছ। মেয়েকে মা/র/তে গেলে সাত ভাই তোমাকে যা করত। কি তাই তো?”

অপূর্ব ভাইয়ের ফ্লাটে আজ জ্যোৎস্না রাত। তিস্তা আপুর বিয়ের শপিং করতে এসেছে। মামিরা রান্না করতে ব্যস্ত। নানা ভাই ঘুমিয়েছেন পাশের ঘরে। অপূর্ব ভাই ও তিয়াস বাজার করতে গেছে। তুর শেফালী টেলিভিশন দেখছে। গ্ৰামে বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো চ্যানেল নেই। ক্যাবল নেটওয়ার্ক থাকার কারণে মনযোগ টিভিতে। আজ আমার মা সুস্থ থাকলে তিনিও আসতেন। দেখতে পারতেন শহরের বড়ো বড়ো ইমারত।

চায়ের ট্রে নিয়ে মামি মা এলেন। সবাইকে চা দিয়ে এক চা আলাদা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “তিস্তার শরীরটা না-কি ভালো লাগছে না। দ্রুত গিয়ে চায়ের চাপটা দিয়ে আয়। দেখি করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
নিজের চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে তিস্তা আপুর কাছে গেলাম। অপূর্ব ভাইয়ের দুইটা শোবার ঘর, এক বড়ো একটা হলঘর বা বৈঠকখানা, একটা রান্নাঘর ও দুইটা ওয়াশরুম।
তিস্তা আপু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। মুখে অমাবস্যার অন্ধকার। আলতো করে ডাক দিলাম,

“তিস্তা আপু, তোমার চা।”
তিস্তা আপু এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ জোড়া দ্রুত হাতে মুছে নিলেন। বোঝা গেল তিনি কাঁদছেন। নত গলায় বলেন,
“ভেতরে আয়।”
চায়ের কাপটা হাতে দিয়ে পাশে বসলাম। তিস্তা আপু অধৈর্য গলায় বলেন, “প্রয়াস আসছে জানিস?”
সন্দিহান গলায় বললাম, “প্রয়াস ভাই তো গ্ৰামে। এখানে কীভাবে এসেছেন?”

“প্রয়াস গ্ৰামে আমাকে দেখতে গিয়েছিল আরু। ও শহরে চাকুরি করে। প্রয়াস আর পিয়াস দুজনে। দু’জনেই আসছে।”
পেরিয়ে গেল কিছু অপ্রিয় মুহূর্ত। ধোঁয়া ওঠা চা বরফের পরিনত হয়েছে। নম্র গলায় বললাম, “সুজন ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে তোমার?”
“হম। হয়েছিল।” তিস্তার আপুর সংক্ষিপ্ত জবাব। দরজাটা একটু ভিরিয়ে দিয়ে বললাম, “তুমি কী বলেছ? আর কী বলেছে?”
“আমার বিয়ের কথা তাকে বলেছি। বলেছি চলো পালিয়ে যাই। কিন্তু সে বলছে, স্যাটেল না হয়ে বিয়ে করবে না।”
“মামা বা মামিকে বলেছিলে?”

“না। ভয় করে।”
“তাহলে আর কী একজন দেবদাস আরেকজন দেবদাসী হয়ে যাও।” বলেই বেরিয়ে এলাম। মনটা অশান্ত। ভালোবাসা শব্দটার সাথে আমি অপরিচিত হলেও পুরোনো সিনেমাতে দেখছি। কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।
ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই পিয়াস ও প্রয়াস ভাইকে দেখতে পেলাম। দূর থেকে আমার ময়না পাখিটা ছুটে এসে আমার কাঁধে বসল। গালে ঠোকর দিয়ে বলে, “আরুপাখি, ঐ ব/জ্জা/ত ছেলেটা এসেছে। একটা শিক্ষা দিবি না ওকে?”

“হম। দিবো তো!”
রান্নাঘরে মামিরা কাজ করছেন। শরবত তৈরি থেকে সেমাই পর্যন্ত। তাকের উপর মরিচের গুঁড়া শব্দটা দৃষ্টিগোচর হলো। আশেপাশে তাকিয়ে ট্রেটা হাতে নিয়ে বললাম, “আমি দিয়ে আসি?”
“না তুই পারবি না।”
বড়ো মামি বলেন, “সাবধানে নিস। যাতে না পরে।”

সকলের অগোচরে দুই চামচ মরিচের গুঁড়া একটা শরবতের গ্লাসে মিশিয়ে হাসলাম। রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললাম, “থাক তোমরাই দাও।”
অতঃপর ওয়াশরুমে গেলাম। ব্যবহার করা স্যাবলন সাবান সামনে ঘঁষে ঘষে লাগিয়ে রাখল।
তিস্তা আপু ঘরে গেলাম পুনরায়। শেফালী তুর। তিস্তা আপু ঘরে বসে আছে। ছেলেদের সামনে মেয়েদের যাওয়া নিষেধ। তিস্তা আপু উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, “কোথায় গিয়েছিলি?”

পিয়াস ও প্রয়াস ভাইয়ের সামনে শরবতের ট্রে রাখা। পিয়াস গ্লাস নিয়ে পান করতেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললাম, “৩, ২, ১ । খেলা শুরু।”
“কীসের খেলা?” সবাই একসাথে। আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকাল। পিয়াসের চোখ মুখ কালো হয়ে গেল। চোখগুলো টকটকে লাল। ‘কী হলো এটা?’ আমি ব্যতিত বুঝতে পারল না কেউ। গ্লাস রেখে ছুটে গেল ওয়াশরুমে। পরক্ষণেই ধপাস শব্দ পাওয়া গেল। সবাই একসাথে ছুটে গেলাম সেখানে। পিয়াস ওয়াশরুমে শুয়ে কাতরাচ্ছে। ভিজে গেছেন।

তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হলেন অপূর্ব ভাই। ওয়াশরুমে পা রাখতে পিছলে গেলেন তিনিও। দেয়াল ধরে সামনে নিলেন নিজেকে। মেঝেতে এক পলক তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন। ধরে ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন। আমরা মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছি বাইরে। দরজা খুলে অপূর্ব ভাই বললেন, “আমার একটা পোশাক নিয়ে আয়।”

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ১৪

“আমি আনছি” বলে ঘরে ছুটে গেলাম। অপূর্ব ভাইয়ের একটা পোশাক বের করলাম। অপূর্ব ভাইয়ের বারান্দায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। যেন আস্তো একটা বাগান। প্রয়োজন মতো বিচুটি মিশিয়ে দিলাম।

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ১৬