এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৩

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৩
ইফা আমহৃদ

অপূর্ব ভাইয়ের দৃষ্টিতে সুজন ভাইয়ের দিকে। সুজন ভাইয়ের জবাব নেই, জবাবহীন। তিস্তা আপু অপূর্ব ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “অপূর্ব ভাই, আমি জানি আপনি আপনার বোনের উপর রাগ করে নেই। সামান্য একটু অভিমান করে আছেন। আপনার রাগের তীব্রতা আমার জানা আছে। এই মুহূর্তে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিবেন।

তারপরে বড়ো চাচা আমাদের খুঁজে পেলে কী করবে, আপনি অনুমান করতে পারেন। আমার কোনো ক্ষ/তি হবে না, কিন্তু সুজনকে বাঁচতে দিবে না। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, আপনার একটি ভুলের জন্য আপনার বোন বিধবা হয়ে যাক।”
তিস্তা আপু হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। মামা বাড়ির বোনেদের ভেতরে তিস্তা আপু সবার বড়ো। আজ পর্যন্ত আমি তাকে এতটা ভেঙে পড়তে দেখিনি। সে কেঁদেছে, কিন্তু এতটা কষ্টে নয়। আমার মন পা/ষা/ণ নয়, অতি সহজেই গলে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অপূর্ব ভাই আমার দিকে তাকালেন। তিস্তা আপুর চরণ এই বাড়িতে ক্ষণ স্থায়ী কি-না তা আমার কাছে বোঝালেন ইঙ্গিতে। অপূর্ব ভাইয়ের পা ছেড়ে দাঁড়ালেন। আমার হাতটা ধরে তিস্তা আপু বললেন, “তুই না করিস না আরু, আমার ক্ষতি নিশ্চয়ই তুই চাইবি না।”

“আমি এতো কিছু জানি না। আগেও বলেছি এখনো বলছি, ‘তোমার ভাইয়ের বাড়িতে তুমি থাকবে।’ কিন্তু আমাকে আটকাতে পারবে না।” আমার জবাবে তিস্তা আপু সৌজন্য হাসলেন। ট্রাভেলিং ব্যাগটা দরজার বাইরে রাখা। সুজন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অভিমানী গলায় বললাম, “আপনার বোন যাতে আমার সাথে কথা না বলে। আমার কথা কেউ নাইবা ভাবুক, আমি তার কথা ভাবি।”
আমার এমন জবাবে বুঝে গেলেন অন্তরের কথা। অপূর্ব ভাই অন্য ঘরটা দেখিয়ে বললেন, “ওপাশের ঘরে তোরা দুজনে থাকবি।”

“কিন্তু আরু থাকবে কোথায়? তারচেয়ে বরং আমি আর আরু একঘরে থাকি।” তিস্তা আপুর মোলায়েম কণ্ঠ।
“আরুর চিন্তা তোকে করতে হবে না, তুই তোর চিন্তা কর। (আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন অপূর্ব ভাই) রাগ কমলে ঘরে চলেন মহারানী। কাচ্চি বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে পানি হয়ে গেছে। তোকে খাইয়ে আমি খাবো।”

“আজকাল আরুকে খাইয়ে দিচ্ছেন অপূর্ব ভাই। ভাবা যায় না।” সুজন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন তিস্তা আপু। উত্তরে অপূর্ব ভাই জানায়, “ভাত রান্না করতে গিয়ে হাত পু/ড়ে/ছে। সেই হাত দিয়ে জামা কাপড় কেচেছে। খাইয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় আছে? ভাত নরম করে ফেলেছে। তুই তো খুব ভালো খিচুড়ি রান্না করছে পারিস। ফ্রিজে প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে। খিচুড়ি বানিয়ে ডাক দিস। চল আরু।”

বলেই অপূর্ব ভাই ঘরে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলেন। ট্রাভেলিং ব্যাগ ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন তিস্তা আপু। সুযোগ বুঝে তার ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে নিজের কনিষ্ঠ আঙুল ঘসে ঘসে বললাম, “আট্টি, বাট্টি। জীবনের কাট্টি। আমি যার সাথে আড়ি দেয়, তার সাথে এভাবে করি।”
ছুটে গেলাম অপূর্ব ভাইয়ের পেছনে পেছনে। খেয়েই ঘুম দিবো।

পেরিয়ে গেছে দুইদিন। তিস্তা আপুই ঘরের সব রান্না করে। আমি তাকে টুকিটাকি সাহায্য করি, দুজনের মাঝে তেমন কোনো কথা হয়নি।
রাত ঘুটঘুটে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। বিছানার উপর বাটন ফোন পরে আছে। অপূর্ব ভাই সা/প গেমস খেলতে দিয়েছেন

আমিও খেলি প্রায়ই। বিদ্যুৎ নেই, বাজ পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। তিস্তা আপু ও সুজন ভাই তাদের ঘরে। আমি আমাদের ঘরে। ঘরের মাঝে হলদে মোমবাতি আলো ছড়াচ্ছে। হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠলো। অপূর্ব ভাই ফোন দিয়েছেন। রিসিভ করতেই বললেন, “দ্রুত ছাতাটা নিয়ে নিচে নাম। আমি গাড়িতে বসে আছি। আর শোন সিঁড়ি অন্ধকার, সাথে ফোনের টর্চ নিয়ে আসিস।”

“শুনেন।”
“কী, বল।”
“আমার জন্য আইসক্রিম আনতে পারবেন? অনেক খেতে ইচ্ছে।”
“এতো রাতে? বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা লেগে যাবে। তোর ঠান্ডা লাগলে সহজে সারে না। সর্দিতে রাতে নিজেও ঘুমাবি না, আমাকেও ঘুমাতে দিবি না। অন্য কিছু খেলে বল। অবশ্য এতো বৃষ্টিতে দোকান খোলা পেলে হয়।”

“তাহলে থাক।” মন খা/রা/প করে বললাম আমি। অপূর্ব ভাই তার মনোবিজ্ঞান আমার উপর প্রয়োগ করলেন। চট করে বুঝে গেলেন আমার মন খা/রা/প। আশ্বাস দিয়ে বললেন, “দেখছি পাওয়া যায় কি-না। তুই জিরিয়ে জিরিয়ে নিচে নাম। চৌদ্দ তলা সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে আইসক্রিম নিয়ে আমি হাজির হয়ে যাবো।”

ফোন রেখে দিল। দ্রুত হাতে ছাতা ও ফোনের টর্চ জ্বেলে বেরিয়ে গেলাম অপূর্ব ভাইকে নিতে। অন্ধকারে সিঁড়ি দৈর্ত্যের ভয় করছে। দেয়াল গুলো ‘ঝর্ণার গান’ কবিতার ‘পাহাড়ের মতো’ ঘাড় ঘুরিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। সাথে যুক্ত হয়েছে আমার ছায়া। সেও ভয় দেখাতে ব্যস্ত। চৌদ্দ তলা থেকে নামতে কষ্টের থেকে ভয় বেশি পেলাম। নিচতলায় দাড়োয়ান ঘুমিয়ে আছেন। রাতে মেইন দরজায় তালা থাকে না।

শুধু ছিটকিনি তোলা থাকে। দরজার ছিটকিনি তুলে ছাতা মেলে ধরলাম। কিছুদূরে গাড়ি দেখা যাচ্ছে। অপূর্ব ভাই তার ভেতরে আছেন। সচরাচর অপূর্ব ভাই হাসপাতালের প্রাইভেট ‘কার’ ব্যবহার করেন না। অতি প্রয়োজন ছাড়া। সালোয়ার উঁচু করে সেদিকে গেলাম। বলাই তো হলো না, অপূর্ব ভাই আমাকে শপিং করে এনে দিয়েছেন। সবগুলো বানানো ছিল। দর্জির কাছ থেকে বানাতে হয়নি। ছাতা ধরে বললাম, “তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসুন।”

কোনাকুনি বৃষ্টি পতিত হচ্ছে বলে নিম্ন অংশ ভিজে গেছে। অপূর্ব ভাই নামলেন গাড়ি থেকে। আইসক্রিমের প্যাকেটটা আমার হাতে দিয়ে ছাতাটা তিনি নিলেন। নিচু হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “তোর সমস্যা কোথায় আরু? মানুষ দু’জন, নিয়ে আসার সময় দুটো ছাতা নিয়ে আসবি না। ভিজে ঠান্ডা তোর লাগবে, তার উপর আইসক্রিম খেলে দহলি হয়ে যাবে।”
“প্রয়োজনে আইসক্রিম গরম করে খাবো। তবুও আমি আইসক্রিম খাবো।”

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩২

বলতে বলতে মেইন দরজা অতিক্রম করলাম। ছাতা বন্ধ করে দরজার ছিটকিনি তুলে উপরে উঠতে ব্যস্ত হলাম। লিফ্ট ব্যবহার নিষিদ্ধ। জেনারেটর ব্যবহার করা যায়, রাত্রি বেলা বিধেয় সম্ভব নয়। পাঁচ তলায় উঠতে পা ব্যথা শুরু করল। আর সম্ভব নয় উঠা‌। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছাকৃত ভাবে স্লীপ খেয়ে নিতে পড়ে গেলাম। চিৎকার করে বললাম, “আমার কোমর ভেঙে গেছে অপূর্ব ভাই। আমি আর দাঁড়াতে পারব না। চৌদ্দ তলা বেয়ে উঠার চেয়ে আমারে উটাই লও।” (হিরো আলমের ভঙ্গিতে)

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৪

1 COMMENT

Comments are closed.