এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৫

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৫
ইফা আমহৃদ

বিরতিহীন ধারায় ঝরছে হিলশে গুঁড়ি। জানালা দিয়ে দমকা হাওয়া ঘরের ভেতরে প্রবেশ করছে। অপূর্ব ভাই জানালা ঘেঁষে কথা বলছেন ফোনে। ভালো লাগছে না। তিস্তা আপুর কাছে গেলাম। রান্নাঘরে দুজনের রোমান্টিক দৃশ্য দেখে ফিরে এলাম। কাবাবের হাড্ডি হওয়ার ইচ্ছে নেই। ঘরে ফিরে এলাম।

প্রেমময় দৃষ্টিতে অপূর্ব ভাইয়ের দিকে দেখলাম। অপূর্ব ভাই আর আমার সম্পর্কটা ঠিক থাকলে..। অন্য জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। পরপর কয়েক গাড়ি এসে থামল বাড়ির সামনে। বড়ো চাচা ও মিহির ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমেছে। পেছনে অনেক মানুষ। আমি চমকে গেলাম। অপূর্ব ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম, “জানালা দিয়ে দেখুন, চাচা আর মিহির ভাই। তারা আমাদের এখানে কী করছে?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কোথায়, দেখি।”
অপূর্ব ভাই কল বিচ্ছিন্ন করে আমার দিকে তাকালেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে হতভম্ব হলেন তিনিও। চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারি করলেন ঘরে। উচ্চে স্বরে ডাকলেন, “তিস্তা, সুজন এদিকে আয় জলদি।”
অবিলম্বে হাজির হলেন দু’জনে। তিস্তা আপু ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, “কী হয়েছে ভাইয়া?”
“আমাদের খোঁজে কেউ আসলে বলবি, ‘অপূর্ব আহসান বা আরু নামের কাউকে তোরা চিনিস না। একজন মনোচিকিৎসক এখানে থাকতো, এখন আর এখানে থাকে না। আমরা থাকি। বউ নিয়ে অন্য কোথাও থাকে।”

“বুঝলাম না, আপনাদের খোঁজে কে আসবে।” সুজন ভাই।
“আরুর চাচারা এসেছে আমাদের খোঁজে। ফোন বন্ধ করে রাখবো। তোরা কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করবি না। অতি প্রয়োজন পড়লে পাশের ফ্লাটে ফোন দিবো। নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলবো।” বলেই অপূর্ব ভাইয়ের হাস্যোজ্জ্বল ফ্রেমবন্দি ছবিটা সোফার ভেতরে লুকিয়ে রাখলেন। আলমারির সিন্দুক থেকে টাকার বান্ডিলটা পকেটে নিয়ে আমার হাত ধরলেন। দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। অপূর্ব ভাই রেলিং বিহীন বারান্দায় গেলেন।

আমার হাত ধরে পনেরো তলার বারান্দায় উঠে গেলেন। সেই ফ্লাটের বারান্দা দিয়ে ভাড়াটের ঘরে গেলাম। কেউ নেই, দরজা খোলা। আলগোছে ঘর থেকে দু’জনে বেরিয়ে গেলাম। পনেরো তলার থেকে লিফট ধরে সোজা চব্বিশ তলায় পৌঁছে গেলাম। পুরোটা সময় অপূর্ব ভাইয়ের হাত খামচে ধরে রেখে ছিলাম। ‘কাঁপা ঘরে’ কেঁপে কেঁপে উঠেছি। পৌঁছে গেলাম সেখানে, যেখানে ছাদের অবস্থান। ছাদে ফুলের গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ফুলের গন্ধ নাকে ভেসে আছে। বৃষ্টি এখনো অঝোর ধারায় ঝরছে। গাছ ধরে রেলিং-এ উঠে গেলেন। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “দ্রুত হাত দে। আমাদের অনেকটা পথ পেরিয়ে যেতে হবে।”

“বৃষ্টিতে ছাদ পিচ্ছিল। পরে আধম/রা হবো না, একদম আরও উপরে উঠে যাবো।”
“আমি তো উপরেই যেতে চাই। পালিয়ে পালিয়ে বাঁচতে পারব? পারব না। তারচেয়ে শান্তিতে চলে যাই।” ভীত হলাম আমি। দুকদম পিছিয়ে গেলাম তৎক্ষণাৎ। অপূর্ব ভাই কপাল কুঁচকে ফেললেন। হাতটা এগিয়ে ধমক দিয়ে বললেন, “বিরক্ত করিস না। তাড়াতাড়ি হাত দে।

তোর বাবা চাচারা তো আস্ত একটা ডা/কা/ত। মেয়ে আনার অপ/রা/ধে এসে আমাকে..
মুখ ভেংচি দিয়ে হাত এগিয়ে দিলাম। অপূর্ব ভাই রেলিং পেরিয়ে অন্যপাশের এপার্টমেন্টের গেলেন। আমাকে টেনে তার সামনে নিয়ে গেলেন। ছাদ পেরিয়ে এপার্টমেন্টের ভেতরে গেল। লিফট দিয়ে নেমে গেলাম। নিচে দাড়োয়ান অপূর্ব ভাইকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, “ডাক্তার সাহেব আপনি এখানে? তা কখন এলেন?”

“এইতো একটু আগে। জমিল ভাই ফোন দিয়েছিলেন। তাকে দেখতে এসেছি।”
আমরা এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। বৃষ্টি বাদলের দিনে রাস্তাঘাট শুনশান। কোনো গাড়ি নেই। পানি জমে গেছে। আকাশে মেঘ গর্জে উঠছে। আমরা পানির ভেতরে দিয়ে ছোপ ছোপ করে দৌড়ে চলেছি। পায়ে ব্যথায় ততটা এগোতে পারছি না। দৃষ্টি পেছনে যেতেই লক্ষ্য করলাম একদল লোক আমাদের পেছনে ছুটে আসছে। চ্যাঁচিয়ে বললাম, “দেখুন, তারা আসছে।”
সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছি। তারা অনেক নিকটে এসেছে। পা ব্যথা করছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, “আর পারছি না, একটু দাঁড়ান।”

“আরেকটু পথ। গাড়ি পেয়ে যাবো।”
কিছুদূর যেতেই মালবাহী ট্রাক দেখতে পেলাম। হাত ছেড়ে লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেন তিনি। পা থেমে গেছে। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছি। অপূর্ব ভাই চিৎকার করে বলেন, “আরু একটু কষ্ট কর, ওরা পিছনে। তোকে ধরে ফেলবে। প্লীজ আরু, আর একটু পথ।”
ধীরে ধীরে হাঁটার প্রচেষ্টা করলাম। ট্রাক চালক অপূর্ব ভাইয়ের গলা শুনে গাড়ি থামালেন। থমথমে গলায় বলেন, “গাড়িতে কে?”

“আমরা একটু বিপদে পড়েছি ভাই। কিছু লোক আমাদের পেছনে পরেছে। একটু সাহায্য করুন। আমার মিসেস কে গাড়িতে তুলে নিন। পরে আমি আপনাকে সবটা খুলে বলছি।” অপূর্ব ভাইয়ের মিনতি মেনে নিলেন তিনি। গাড়ি থামিয়ে দিলেন। আমি তৎক্ষণাৎ গাড়ির কাছে চলে এসেছি। অপূর্ব ভাই হাত এগিয়ে দিতেই ধরলাম তার হাত। বাম পা রেখে গাড়িতে উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দিলেন চালক। হুমড়ি খেয়ে পড়লাম অপূর্ব ভাইয়ের বুকের উপর। ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়ে বালুর ভেতরে পড়লেন তিনি। আমি তার বুকে চুপটি করে বসে হাঁপাচ্ছি। ফুল স্পিডে গাড়ি চলছে।

বৃষ্টি থামার নাম নেই। এখনো ঝরছে। গাড়ির কাচের উপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে লেপ্টে যাচ্ছে একে অপরের সাথে। গাড়ির ভেতরে আমরা। শরীরের উপরে অপূর্ব ভাইয়ের শার্ট। জড়িয়ে রেখেছেন আমাকে। ভিজে আমার শরীর জমে গেছে। রীতিমতো কাঁপছি। ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছিলাম, তাই গাড়ির ভেতরে নিয়ে এসেছে। ঠান্ডায় মাথা ভার হয়ে আছে। শহর থেকে অনেকটা দূরে আমরা রয়েছি। গাড়ি থেমেছে।

“কিছু খাবি?”
“ঠান্ডা লাগছে। শীত করছে। ক্ষুদা লেগেছে। একটু বাড়িতে যাবো। প্লীজ আমাকে একটু ঘরে নিয়ে যাবেন। কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাবো।”

গ্লাসে টোকা পড়ল। কাঁচ তুলতেই হেলপার চায়ের ওয়ান টাইম কাপ এগিয়ে দিলেন। শুকনো একটা ধন্যবাদ দিয়ে কাপ গ্রহণ করলেন। ড্রাইভার ও হেলপার গাড়িতে বসলেন। গাড়ি চলতে শুরু করল। ফুঁ দিয়ে আমার মুখের দিকে এগিয়ে দিলেন। এক চুমুক দিয়ে অপূর্ব ভাইয়ের বুকে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে যাচ্ছি। ‘পায়ে ব্যথা ও মাথা ভার’ – যখন তখন জ্বর আসতে পারে। মাথায় ডানহাতের এপিঠ ওপিঠ দিয়ে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে বলেন, “একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর। আশেপাশে দেখি কোথাও থাকার উপযোগী ঘর পাই কি-না?”

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৪

রেসপন্স করার অনুরোধ রইল
এবার আমরা গল্পের মূল কেন্দ্র ঢুকবো। তারপরেই সমাপ্ত। ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকুন।

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৬

1 COMMENT

Comments are closed.