কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৩৯

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৩৯
লাবন্য ইয়াসমিন

নিজের বুদ্ধিতে নিজেই বোকা হওয়ার অবস্থা আধারের। কোনো কিছু বিবেচনা না করে একটা অচেনা মেয়েকে দেখে ভেতরে থাকা প/শুটা জেগে উঠেছিল। তাঁকে কক্ষে নিতে দুবার ভাবেনি কিন্তু দাদু এসে ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। খারাপ কিছু হতে পারতো। অর্ধ মানবদের জন্য নারী নিষিদ্ধ না হলে হলেও কিছু বিষয় আছে যেটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দাদু চোখ লাল করে বললেন,

মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না তোমার? নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখো। চাচাকে দেখে কিছু শিখো। নিজের জ্ঞাতি ভাই তাঁকে দেখেও শেখা যায়। তোমার বাবা একটা আহাম্মক তুমিও তেমন। কিভাবে পারলে ওই প্রেতাত্মার রূপ দেখে মজে যেতে? ও কে ছিল খোঁজ নিয়ে দেখো। নিশ্চয়ই কোনো বড় ষড়যন্ত্র চলছে আমাদের বিরুদ্ধে। আধার তুমি দিনকে দিন বুদ্ধি শূণ্য হয়ে যাচ্ছো। এভাবে চললে আমার পতন অনিবার্য। কিভাবে তুমি নিজের বংশ বিস্তার ঘটাবে ? কহিনুরের খোঁজ করো। দেখো কোথায় আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আধার মাথা নিচু করে বসে আছে। কি বলবে মাথায় সত্যি কিছু আসছে না। দাদুর ধমক শুনে আরও ঘাবড়ে গেছে। মেয়ে দেখলে সব বুদ্ধি কিভাবে জানি হাওয়া হয়ে যায়। মেয়েটা যখন ওর হাতটা ধরেছিল হৃদয় পুলকিত হয়ে উঠেছিল। মখমলের মতো কোমল হাতখানা। দাদুর জন্য হলো না ওই রূপসীর প্রেম সাগরে ডুপ দেওয়া। অর্ধমানবের ক্ষতি করবে ওই সামান্য নারী? বিশেষ রাত ছাড়া যার শরীর নেই। অশরীরীর মতো বাতাসে সঙ্গে ঘুরছে সে কিভাবে ষড়যন্ত্র করবে আধার ভাবতে পারছে না। তবুও মিনমিনে কষ্টে বলল,

ভুল করেছি এমন আর হবে না। তুমি তো জানো আমার এরকম হওয়ার কারণ? তবুও কেনো দোষারোপ করছো? প্রমিজ করছি এবার থেকে চোখ কান খোলা রাখবো।
মনে থাকে যেনো। আমার চোখের সামনে থেকে আপাতত বিদায় হও
আধার চুপচাপ কক্ষের বাইরে চলে আসল। দাদুর সামনে থাকা মানেই কথায় কথায় ধমক শোনা। আপাতত মুড খারাপ করতে চাইছে না। হৃদয়ের আন্দোলন এখনো থামেনি। ধুকপুক করছে হৃদপিণ্ড।

ওই মেয়েটাকে ওর চাই। নয়তো অন্য কাউকে। ভালোবাসাতে কোনো অপরাধ নেই। আর মৃ/ত্যু সেতো নিয়তি। কোনো মেয়ে ওর থেকে এতোটা ভালোবাসা নিবে বিনিময়ে নিজের জীবনটা উৎসর্গ করবে এটাতো সাধারণ বিষয়। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ম/রনেও সুখ থাকে তবে ম/রতে দোষের কি?কথাটা ভেবে ও বেরিয়ে পড়লো ক্লাবের দিকে। শহরের ধনী পরিবারের বিগড়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের আখড়া সেখানে। আধারের মতো সুপুরুষ কে দেখে কোনো মেয়েই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। আর পারবেও না।

প্রচণ্ড তুষারপাতে রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। যেটা এবছরের রেকর্ড ভেঙেছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ। দুপুরে গরম ছিল কিন্তু বিকেলে থেকে বরফ পড়ছে। পাথর ফোনের আবহাওয়া বিষয়ক এপস দেখে সঙ্গে শীতের পোশাক রেখেছিল। ভেবেছিলাম দ্রুত ফিরে আসবে কিন্তু হলো না। বড় একটা ডিল সাইন করেছে। সেটার মিটিং ছিল এসব ঝামেলায় পড়ে কহিনুরের খোঁজ করতে পারেনি। মন খারাপ হলেও আপাতত শান্তি লাগছে মেয়েটা এবার ভালো থাকবে।

পাথর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজের মধ্যে থাকা পশু সত্তাকে ভেতরেই খু/ন করবে। কখনও আর বাইরে আসার সুযোগ দিবে না। মনে জোর বাড়াবে। এসব ভাবতে ভাবতেই ও বাড়িতে পৌঁছে গেলো। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে বিধায় কোনোরকমে কক্ষের দরজা বন্ধ করে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। বিছানার মাঝখানে বালিশ রাখা আছে উচু দেখে ও দ্রুত কম্বলের মধ্যে ঢুকে গিয়ে বালিশটা জড়িয়ে ধরে হতভম্ভ হয়ে গেলো।

কোথায় বালিশ?সেখানে জলজান্ত একজন মানুষ শুয়ে আছে। পাথর হন্তদন্ত হয়ে কম্বল সরিয়ে উঠে বসলো। বিছানার মাঝখানে এলোমেলো চুলে এক রমনি হাত পা গুছিয়ে মাথা গুজে শুয়ে আছে। পাথর কাঁপা হাতে মেয়েটার মুখের উপর থেকে চুলের খোছাটা সরিয়ে দিতেই থমকে গেলো। কহিনুর শুয়ে আছে। ওর ঠান্ডা হাতের স্পর্শে মেয়েটা চোখ খুলে মিষ্টি করে হেসে বলল,

হাই,আমি কহিনুর আর তুমি?
পাথর কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই মেয়ের মাথায় কি যে চলছে কথাটা ভেবেই ও ছিঁটকে এসে বলল,
তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে না বললাম আমার থেকে দূরে থাকতে? লজ্জা নেই তোমার?
পাথরের এতোগুলো প্রশ্ন শুনে কহিনুর ঘনঘন চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে দুষ্ট হাসি দিয়ে উত্তর দিলো,
লজ্জা করবে কি জন্য ? আপনার চিন্তা ভাবনা এতো নেগেটিভ, আমি নেহায়েত একটা বাচ্চা মেয়ে। শীতের রাতে যাওয়ার যায়গা নেই তাই আপনার কক্ষে আশ্রয় নিয়েছি। তাড়িয়ে দিয়ে হৃদয় ভাঙার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ করবেন না প্লিজ।
কহিনুরের উপরে পাথর এবার সত্যিই বিরক্ত হলো। প্রচণ্ড রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ওকে এক ঝটকায় বিছানায় ফেলে দিয়ে গলা টি/পে ধরে বলল,

এই মূহুর্তে আমার চোখের সামনে থেকে না গেলে আমি তোমার বাবাকে ফোন করবো। বিয়ে হয়েছে আমার উপরে তোমার অধিকার জন্মেছে তাই এমন করছো তাইনা? ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিবো তাতেও আমার আফসোস থাকবে না। ভালো কথার মেয়ে না তুমি। তুমি নিরীহ মানুষকে খু/ন করেছো তুমি পাপি।। তোমার হাতদুটো খু\নির হাত। আমার থেকে দূরে থাকো। ঘৃ/ণা করি আমি তোমাকে বুঝলে?

পাথরের চোখমুখ থেকে আগুন ঝরছে। এই মেয়েটার থেকে যেভাবেই হোক ওকে দূরে থাকতে হবে সেটা ভেবে ও মনে যা ইচ্ছা হলো বলে দিলো। কহিনুর এতোক্ষন ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে ছিল। একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। জীবন প্রথমবার কেউ ওর সঙ্গে এহেন আচরণ করেছে। ওর দুঃখ হওয়ার কথা চোখে পানি আসার কথা তবুও আসলো না। কহিনুর তো অভিশপ্ত নয় তবুও কেনো ও দুঃখ পেলে কাঁদতে পারেনা? তবে কি অভিশাপ কাটেনি?কহিনুর এলোমেলো ভাবতেই হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। মেয়েটা মলিন হেসে বলল,

টিভি সিরিয়ালে আপনার মত নায়কের বড্ড বেশি দরকার। পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করুন।
পাথর এবার আরও জ্বলে উঠলো। ওকে ছেড়ে দিয়ে পেছনে ফিরে চোখ বন্ধ করে বলল,
রাগিও না আমি রাগলে তোমার জন্য ভালো হবে না। এখুনি চোখে সামনে থেকে দূরে যাও। কখনও এসোনা।
পাথর ঘনঘন নিশ্বাস ইচ্ছা। চোখে পানি টলমল করছে।এভাবে বেশ কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেলো। পাথর পেছন থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘুরে দেখলো কেউ নেই। শূন্য বিছানা পড়ে আছে। পাথর দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে খোঁজ করলো সেখানে নেই।

কক্ষের দরজা বন্ধ করা আছে। ওর মনে হলো মাথায় সমস্যা হচ্ছে।মেয়েটাকে না চাইতেও দেখতে পাচ্ছে। এভাবে চললে পাগল হতে সময় লাগবে না। পাথর চুপচাপ গা এলিয়ে দিলো। মিষ্টি সেই মুখটাকে নিজের একান্তে ভেবে চোখ বন্ধ করলো। দরজার ওপাশে কালো রঙের পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। সকালে নিজের ফ্লাটে ফেরত না গিয়ে এখানে এসে আস্তানা গড়েছে। সাইদ ওর থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে ।

শাশুড়ির সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল বিধায় এখানে থাকতে ওর বিশেষ অসুবিধা হয়নি। পাথরের পাশের কক্ষে ওর জায়গা হয়েছে যদিও শাশুড়ি মায়ের ইচ্ছা ছিল পাথরের কক্ষে পাঠানোর কিন্তু ও নিজেই না বলেছে। কথাগুলো ভেবে ও সাঈদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সাঈদ ফিসফিস করে বলল,
নূর আজ না গেলে হয়না? তফসিল আছে যদি ঠিক পেয়ে যায় তখন?
কহিনুর সামনে এগোতে এগোতে বলল,

তোমার মাথা। এতো ভয় কেনো তোমার? আমাকে অনুসরণ করো। একদম দরকার ছাড়া কথা বলবে না।
নিস্তব্ধ বাড়িতে কোথাও কেউ জেগে নেই। ডাইনিং রুমের লাইট বন্ধ তবে আবছা আলো বিদ্যামান। কহিনুর সাবধানে সিঁড়ি ধরে নেমে এসে বাড়ির পেছনের দরজা ধরে বাইরে এগিয়ে গেলো। সাঈদ আশপাশের খেয়াল রাখছে। চোর চোর অনুভব হচ্ছে। ধরা পড়লেই সব শেষ। যদিও এতোটা ভয়ের নেই তবুও সাবধান থাকতে হচ্ছে। দোতালা বাড়ির পেছনের দিকে বিল্ডিংয়ের সঙ্গে লাগোয়া একটা বিশাল কক্ষ অবস্থিত। সাধারণত এখানে এই বাড়ির অদরকারী জিনিসপত্র রাখা হয়।

বাড়িটা নির্মাণ হয়েছে পাথরের জন্মের বহুকার আগেই তবুও ঠিক নতুনের মতো। তালুকদার সাহেব বাড়ির যত্নতে কোনো ত্রুটি রাখেন না। কহিনুর দরজার লক খুঁলে ভেতরে ঢুকতেই এক ঝাক বাদুর বেরিয়ে পড়লো ওদের মাথার উপর দিয়ে। বহুদিন এই কক্ষটা বন্ধ অবস্থায় আছে হয়তো তাই এরা বাসা বেঁধেছে। কহিনুর মুখে ওড়না জড়িয়ে নিলো যাতে ধুলাবালি না ঢুকে যায়। সঙ্গে আনা টর্চ লাইটের আলো জ্বালিয়ে দেখে নিলো।

দুপাশে লম্বা করে কাঠের পুরাতন আসবাবপত্র চেয়ার টেবিল আর লম্বা তাকে গাদাগাদি করে ফাইলে ঠাসা। কহিনুর চোখ বন্ধ করে নিলো। যার জন্য এখানে আসা সেটার খোঁজ করা জরুরি। ও চোখ বন্ধ করে কিছু উচ্চারণ করতেই সামনে টেবিলের উপরে একটা বই খুলে গেলো। বইয়ের প্রতিটা পৃষ্ট অনবরত উল্টোপাল্টা হচ্ছে। মনে হচ্ছে কক্ষে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। কহিনুর হেসে চোখ বন্ধ করে জলন্ত বইটার দিকে হাত বাড়িয়ে আবারও মিনমিন করে কিছু উচ্চারণ করলো।

সঙ্গে সঙ্গে বইটা ওর হাতে চলে আসলো। সাঈদ চোখ বড় বড় করে সবটা দেখছে। মেয়েটার কাছে সত্যিই ক্ষমতা আছে বলতে হয়। বইটা নিয়ে কহিনুর আর অপেক্ষা করলো না। যেভাবে এসেছিল সেভাবে বেরিয়ে গেলো। বাড়ির বাইরের বাগানে ফুলগুলো বরফের নিচে চাপা পড়েছে হয়তো। কিছুটা দূরে এসে কহিনুর বইটাকে যেভাবে ডেকেছিল সেভাবেই গায়েব করে দিলো। সাঈদ এবার আর কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলো না। বলে উঠলো,

নূর এটা কি করলে? বইটা যে পালিয়ে গেলো। তুমি জানো ওই বইটা কতটা দুষ্ট? এই স্টোর রুমে ওর আগমন ঘটেছিল জনাবের পিতার হাত ধরে। আর সেই থেকে ও এখানেই আছে। ওই বইটার বিশেষ বিশেষ গুরুত্ব আছে। অলৌকিক বই ওটা।
কহিনুর হেসে উঠে বলল,

সব জানি। ওই বইয়ের প্রতিটা পৃষ্ঠাতে লুকিয়ে আছে রহস্য। বইটাকে আমি নিজের স্পর্শ দিয়েছি তাই ও আর পালাতে পারবে না। খান বংশের ইতিহাস জানার জন্য ওকে আমার দরকার। সামান্য বুদ্ধি জ্ঞান নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করা কঠিন। কক্ষে চলো।
কহিনুর পা বাড়ালো নিজের কক্ষের দিকে। আপাতত ঘুমাতে হবে। আগামীকাল থেকে রহস্য উৎঘাটনে বের হবে।

জুবায়েরের জন্য রান্না করছে অধরা। বাড়ির কারো উপরে ওর বিশ্বাস নেই। কখন কিভাবে বিপদ এসে ঘাড়ে চাপে ঠিক নেই। অধরা রান্না শেষে খাবার নিয়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে আসলো। দাদুকে আজ ভোর থেক দেখা যাচ্ছে না। অধরা ভাবলো দাদু বুড়ো বয়সে একজন সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছে। এই দাদুর মনে ঘাপলা আছে। কথাটা ভেবে ও ঠিক করলো আজকেই দাদুর কক্ষে হামলা দিবে। জুবায়ের ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। অধরা ওর দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলল,

খেয়ে আমাকে ধণ্য করুণ।
জুবায়ের ফট করে ল্যাপটপ থেকে চোখ উচু করে বলল,
কাজের মধ্যে চুমু টুমু খাওয়া যাবে না বউ। ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে।
অধরা ভ্রু কুচকে কপট রাখ দেখিয়ে বলল,
আমারতো খেয়ে কাজকর্ম নেই আপনাকে আমি এসব অশালীন প্রস্তাব দিবো। আমি খাবারের কথা বলেছি।
ওর কথা শুনে জুবায়ের দাঁত বের করে হেসে বলল,

আমার হাত বিজি আছে তুমি সাহায্য করো না একটু প্লিজ। স্টোর রুমের চাবি পেয়েছি কিন্তু সেখানে কিছুই নেই। দাদুর কক্ষে গিয়ে খোঁজ করতে হবে। জামসেদ বলেছিল দাদুর মধ্যে কিছু একটার অস্তিত্ব আছে। কি হতে পারে চিন্তার বিষয়।
জুবায়েরের কথা শুনে অধরা কিছু একটা ভেবে বলল,
উনি আবারও কালো যাদুর উপাসনা করছেন নাতো? অভিশাপ যেতে না যেতে আবারও সেসব ডাকছে। কহিনুরকে চাইছেন কিন্তু কেনো? কিসের অভাব উনার?
জুবায়ের হেসে উঠে বলল

একটা সুন্দরী বউয়ের অভাব। হয়তো কহিনুরের সাহায্যে নিজের যৌবন আর স্ত্রী দুটোই চাইছেন। বয়স হচ্ছে তো।
কঠিন সময়ে কিভাবে মজা নিতে হয় জুবায়ের খুব ভালো করে জানে। অধরা বিরক্তি নিয়ে বলল,
অহস্য আপনি। খেয়ে নিন আমার কাজ আছে। যতসব আজেবাজে ভাবনা শুধুমাত্র আপনার মাথাতেই আসে। গতকাল দাদুর সঙ্গে ঝামেলা করেছেন জামসেদ ভাই আমাকে বলেছেন।
জুবায়ের ওর কথার পাত্তা দিলো না। সামান্য হেসে বলল

শুনো না কালো শাড়িতে তোমাকে না দারুণ লাগে বিকেলে পরবে একটু প্লিজ? গতকাল তো দেখতেই পারিনি। আজ পরবে বিকালে একটু বাইরে যাবো।
জুবায়েরের মুখটা এবার মলিন হয়ে উঠলো। গতবার কালো রঙের শাড়ি পরতে বলেছিল তাঁর একটা কারণ ছিল তবে আজ কেনো? অধরা ওর মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বলল,
সত্যি করে বলুনতো আপনার মাথায় কি চলছে? কিছু লুকাচ্ছেন আমার থেকে?

জুবায়ের মাথা নাড়িয়ে না বলে অধরাকে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়ে ওর কাধে মুখ রেখে বলল,
মারিয়াকে দেখতে যাবো। কতদিন দেখিনা ওকে। যাবে না তুমি?
অধরা দ্রুত জুবায়েরের দিকে ঘুরে বসলো। মারিয়ার জন্য ও যে উতলা হচ্ছে না তেমনটা না। মেয়েটাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে। অধরার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কি অবস্থায় দেখবে মেয়েটাকে সেটাই চিন্তা করতে লাগলো।

সকালে নাস্তার টেবিলে কহিনুরকে দেখে পাথর অবাক হলো। রাতে ভেবেছিল স্বপ্ন দেখছে কিন্তু না এসব বুঝলো সবটা সত্যি। কহিনুর বোবার মতো বসে আছে। সঙ্গে তফসিলও আছে। পাথর ভ্রু কুচকে বলল,
আন্টি তুমি ওকে এখানে থাকতে দিতে পারলে?
মিসেস তালুকদার ভ্রু কুচকে বললেন,

কেনোরে বাড়ির বউ বাড়িতে থাকবে এতে অবাক হওয়ার কি আছে। মেয়েটা কত মিষ্টি। তাছাড়া খুব তো তখন বোবা বলে অবহেলা করলি কিন্তু এখন? মেয়েটা চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে গেছে। কথা বলতে পারে। জানিস তো ওর বিয়ে তোর থেকেও বেটার ছেলের সঙ্গে হওয়া দরকার ছিল। ওর জন্য তোকে আমার পছন্দ হচ্ছে না।
পাথর বিরক্তি নিয়ে প্লেট উল্টে বলল,

তাহলে আর কি ভালো ছেলে দেখে তোমার বউমাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো। এমনিতেই উনি আবার লোকদের হৃদপিণ্ড ছিনিয়ে নিতে উস্তাদ।
তফসিল চুপচাপ পাথরের খাবার রেডি করে দিচ্ছে। ও উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে জুসের গ্লাস এনে পাথরের সামনে রাখতেই কহিনুর সেটা চোখের পলকে ঢকঢক করে খেতে নিয়ে বলল,
সুগার কম হয়েছে। আরও একটু হলে ভালো হতো।
তফসিল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ভেবেছিল পাথরকে খাওয়াবে কিন্তু হলো না। সব রাগ গিয়ে জমা হলো কহিনুরের উপরে। পাথর ভ্রু কুচকে বলল,

আস্তে ধিরে খাওয়া যায়না? সামান্য জুস নিয়ে মারামারি করছো। এই জন্যই বলি বাচ্চা।
পাথর আর অপেক্ষা করলো না। চলে আসলো বাইরে। কহিনুর টেবিলে ছেড়ে নিজের কক্ষে ফিরে বইটা নিয়ে বসে পড়লো। জানালা দরজা বন্ধ করে দিলো। সাঈদ বসেছে ওর সামনে। বইটা খুলতেই চারদিকে আলোকিত হয়ে উঠলো। ঠিক তখনই জানালার ওপাশে মনে হচ্ছে কেউ একজন লাঠি দ্বারা আঘাত করছে। সাঈদ কিছু বলতে চাইলো কিন্তু কহিনুর মুখে হাত রেখে নিষেধ করে ফিসফিস করে বলল,

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৩৮

বইয়ের রক্ষক বাইরে দাঁড়িয়ে। যতই সমস্যা হোক বইটা একবারে শেষ করতে হবে। আমাকে বিরক্ত করবে না।
সাঈদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। কি আছে এই বইয়ের মধ্যে? এতো এতো গোপনীয়তা কিসের? পাথরের বাবা কি কাজে এই বইটা ব্যবহার করতো আর খান পরিবারের সঙ্গে এর কি সম্পর্ক থাকতে পারে?

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৪০