কাঞ্চাসোনা পর্ব ১২

কাঞ্চাসোনা পর্ব ১২
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

“জান সামলাতে পারবা তো?”
সকাল চোখ তুলে ধ্রুবকে দেখে।ধ্রুব কেমন নেশা জড়ানো চোখে তাকিয়ে আছে।সকাল কিছু না বলে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে।যেন চুপ থেকেই সম্মতি দিলো।ধ্রুবর মন ঠান্ডা বাতাসে তোলপাড় খায়,এটাইতো চেয়েছে সইচ্ছায় সকাল কাছে আসুক,হাতে হাত রেখে কানেকানে গোপন ইচ্ছা ব্যক্ত করুক।দুজনে দুজনের চোখে তাকিয়ে কিছুক্ষণ অনুভূতির প্রখরতা বুঝে নিলো।বুঝে নিলো অসহনীয় যন্ত্রনায় দুজনের প্রান ডানা ঝাপটাচ্ছে।

বাহিরে ঝড়ের তান্ডবে জানালার পর্দা শো শো করে উড়ে।বদ্ধ ঘরে ভালোবাসার উন্মাদনার তান্ডবে দুজনের নিঃশ্বাস এর থেকেও বেশি উড়ছে।থরথর করে দুজনের শরীর সমানতালে কাঁপে।ভালোবাসায় বলা কিছু শব্দ চাপা পড়ুক আলিঙ্গনে।অতল সাগরে ডুবে-ভেসে দুজনে স্বর্গসুখের সিড়ির দেখা পেলো।ধ্রুব নিজেকে সামলালো না,এতোদিনের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে চুরমার,ছোট্টখাটো পাখিকে সুখের সাগরে চুবিয়েই উঠালো।সকালের নরম দেহের উষ্ণতায় মিশিয়ে দিলো নিজের সর্বস্ব।সুখে সুখে পাগল করেই ছাড়লো নরম দেহের পাখিকে।ধ্রুব ঘন হওয়া গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“জান,তোমায় এতো আদর আদর লাগে কেন?”
সকাল কথা বলেনা।সে তার সুখের রাজ্যে বিচরণে বেড়িয়েছে,যে রাজ্যের রাজা স্বয়ং ধ্রুব।আর ধ্রুবও কিনা হাত ধরে সারা রাজ্য ঘুরিয়ে আনার চেষ্টায় মুখিয়ে আছে।

রাত চারটা ধ্রুব চুলায় গরম পানি বসায়,বাথরুমের হিটার নষ্ট শীতের রাত তাই বউয়ের জন্য এই কষ্টটা করাই যায়।তার মনে পড়ে সকালকে বিয়ে করবেনা বলেই বাথরুমে গিয়ে কান্না করেছিল আর এখন মনে হচ্ছে সবথেকে বড়ো পাওয়া হচ্ছে সকাল।সবথেকে শান্তি পাওয়া যায় এই তিরতির করে কাঁপা পাখির কাছেই।
সকাল একটু পরপর অস্পষ্ট স্বরে কেঁদে উঠে।সারা শরীরে ব্যাথা চিরবিরিয়ে ওঠে।চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি ঝড়ছে।তার মনে হচ্ছে সে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে।তখনি ধ্রুব নরম গলায় ডাকে।

“সকাল একটু উঠে আসো।”
সকাল উঠে না।ব্যাথায় চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।ফর্সা মুখ ব্যথায় রক্তিম দেখাচ্ছে।স্থির হয়েই শুয়ে থাকে।যেন নড়াচড়া করলেই মরণ।ধ্রুব আবার ডাকে।কোন হেলদোল নেই।ধ্রুব এবার কম্বল সরিয়ে কোলে করেই বাথরুমে নিয়ে যায়।ধ্রুবের বুকে সাথে দাঁড় করিয়েই শরীরে পানি ঢালে।নরম দেহে জ্বলন সর্বত্র।পানি লাগলেই জ্বলন বাড়ে সকাল তার স্বরে চেচিয়ে উঠে,খামচে ধরে ধ্রুবর হাত।ধ্রুব আস্তে করে বলে,”আর একটু জান।”

সকাল বেহুশের মতো বিছানায় পড়ে আছে।ধ্রুব নিজেও ঝটপট গোসল সেড়ে সকালের কাছে আসে।বউয়ের অবস্থা দেখে অসস্থিতে সারা শরীর কাটাকাটা।
কেমন কুঁকড়ে পড়ে আছে।
একহাতে খুব নরমভাবে সকালকে জড়িয়ে বললো,
“আমি খুব সরি জান।”

সকাল ধ্রুবর দিকে তাকালে ধ্রুব অপরাধী গলায় বললো,
“খুব ব্যাথা লাগছে?কোথায় জ্বলছে?”
ধ্রুবর আদর আদর কথায় সকাল ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিল।ধ্রুবর ভেতরে অপরাধে বিদ্ধ হয়ে গলা রোধ হয়ে গেলো।কাচুমাচু করে বললো,
“সরি তো।”

সকাল কথাই বলেনা তার চোখ বুজে আসে।খানিক পর পর ব্যথারা যে চিরিক দিয়ে উঠে!
ধ্রুব আরেকটু কাছে এসে বললো,
“খুব বেশি খারাপ লাগছে?”
সকাল মাথাটা টেনে ধ্রুব কাছে আনে,প্রশস্ত মানুষটার বুকে বিড়ালছানার মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে বললো,
“না।একটু ব্যাথা।”

ধ্রুব বুঝতে পারে সকালের খারাপ লাগাটা।নিজের উপর নিজেই বিরক্ত।নেতিয়ে যাওয়া সকালকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে কপালে অজস্র চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়ে।সকালের বন্ধ করা চোখের পাতায় ঠোঁট ঠেসে চুমু খায়।সে রাতে আর কারোরই ভাত খাওয়া হলো না,সকালের ধ্রুবর জন্য বানানো স্পেশাল খাবারের বদলে নিজেই স্পেশাল হয়ে গেলো।একটু বেশিই স্পেশাল!

আবছা আবছা সূর্যের আলো সকালের মুখে এসে লাগে।আধো আধো চাহনিতে চোখ খুলে দেখে উজ্জ্বল আলো পর্দা ঠেলে রুমে আসছে।পাশে তাকিয়ে ধ্রুবকে পায় না,চোখে ভেসে উঠে রাতের চিত্র।সাথে সাথে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।ধ্রুবর বলা প্রতিটা আদুরে কথা কানে রিনিজিনি সুরে ধাক্কাচ্ছে।সুঠাম দেহের ধ্রুবর পাগলামি মনে হতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় তনু মন।

নীল নীল মিষ্টি ব্যথায় ঝনঝন করে নাচিয়ে দিয়ে যায় সকালের কোমল দেহ।লজ্জায় কুকড়ে গিয়ে ছটফট করতে থাকে।ধ্রুব আসে খানিক পরে।মাত্রই রান্না শেষ করলো।ধ্রুব যেগুলো পারে সেগুলোই গরম ভাত,ডাল,ডিম ভাজি করেছে।ঘামে ভেজা গেঞ্জি খুলে রাখে।বিছানার কাছে এসে দেখে সকাল মুখের উপর কম্বল জড়িয়ে আছে।লজ্জা পাচ্ছে?ধ্রুব ঠোঁট টিপে মুচকি হাসে।তারপর স্বাভাবিক ভাবে ডাকে,

“সকাল উঠো।”
সকাল নিশ্বাস আটকে পড়ে থাকে।ধ্রুবকে মুখ দেখাবে কি করে?লজ্জা লাগছে তো।ধ্রুবর দেহের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে চোখের তারায়। এই ছেলের চোখে আর তাকানো যাবে না।কম্বলের নিচ থেকেই বললো,”পরে উঠবো।”
ধ্রুব একহাতে কম্বল টেনে ধরে বললো

“পরে কেন?এখনি উঠবে।”
সকাল না না করে।ধ্রুব বিছানার ওপাশে গিয়ে কম্বলে ঢুকে পড়ে।সকাল শক্ত হয়ে শুয়ে থাকে।ধ্রুব আদুরে আদুরে গলায় বলে,
“উঠে পড়ো না হলে আবার যখন তখন হামলা হতে পারে।”

সকাল ধ্রুবর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে হতভম্ব হয়ে চোখ গোল গোল করে ধ্রুবকে দেখে।ধ্রুব ঠোঁট প্রসারিত করে হাসছে।সকাল এদিকে ফিরে আসতে চাইলে ধ্রুব আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।পিছন থেকে গলায় কামড়ে দেয়,হঠাৎ এমন কাজে সকাল আশ্চর্য হয়ে চেচায়।ধ্রুব কামড়ের জায়গায় চুমু দিয়ে বলে,

“না উঠলে আরো দিবো।”
সকালের চোখে মুখে তখন লজ্জার ছড়াছড়ি।উঠে যাবার সময় ধ্রুব বললো,
“তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসো,ভাত খেয়ে ওষুধ খাবে।”
সকাল ভ্রু কুচকে বললো,
“কিসের ওষুধ?”
“ব্যথার।”

ব্যাথার কথা মনে হতেই শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল ধ্রুবর করা পাগামির শিহরণ।
খাবার খাওয়ার সময় দুজনের মুখেই মিটিমিটি হাসি।সারা মুখ জুড়ে খেলে যাচ্ছে প্রশান্তির রেশ।রাতের কথা মনে হতেই কিনা ধ্রুব এবার দাঁত বের করেই হেসে দিলো,সকালও মুখে হাত চেপে হাসে।ইশ এতো ভালোবাসে কেউ!এতো এতো সুখ যন্ত্রণা কেন ভালোবাসায়!

দুদিন পরে সকালের গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে।চোখ মুখ লাল হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।ধ্রুব ছুটে গিয়ে ওষুধ আনে।বিকালের দিকে জ্বর ছাড়লেও রাতে আবার আসে।ওষুধ খাইয়ে ধ্রুব মাথায় পানি দেয়।জ্বর নামার কোন লক্ষন নেই।ধ্রুব থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপে,একশো চার।গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে না মনে হচ্ছে পুড়ে যাবে।সকাল বিছনায় বসে আছে,বাচ্চাদের মতো ঠোঁট গোল করে অভিমানী চোখে ধ্রুবকে দেখছে।ধ্রুব বিছানায় বসার সাথে সাথে বললো,

“কোলে যাব ধ্রুব।”
এই প্রথমবারের মতো সকালের মুখে নিজের নাম শুনে আর তুমি সম্মোধন শুনে ধ্রুব অবাক হয়ে তাকায়।বলে,
“কি? ”
সকাল মাথা দুলিয়ে বললো,
“তোমার কোলে যাব।”

এটা বলেছে ঠিকি কিন্তু ধ্রুবকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরেছে।ধ্রুব সকালের কান্ডকারখানা দেখে বুঝে জ্বরে এসব করছে না হলে কাছে আসলেই তো মোচড়ামুচড়ি শুরু করে।ধ্রুব কোমড়ে হাত রেখে বললো,
“শুয়ে পড়ো জলপট্টি দিয়ে দেই।”
সকাল মাথা নেড়ে বললো,
“আমি শুবো না।”
“কি করবে?”

সকালের চোখ লাল হয়ে আছে,ঠোঁট দেখাচ্ছে শুষ্ক।ধ্রুবর চোখে চেয়ে বললো,
“তোমাকে দেখবো।কত্ত আদর লাগে জানো মনে হয় কাঁমড়ে খেয়ে ফেলি।”
ধ্রুব হাসে।আচ্ছা মনের কথা বেরোচ্ছে!ধ্রুবও সুযোগে বললো,
“আর কি ইচ্ছে করে?”

সকাল ফিকফিক করে হেসে ফেলে,
“তোমার আদর খেতে ইচ্ছে করে।”
সকাল ধ্রুবর গলায় কামড়ে দেয়,ধ্রুব ছটফটিয়ে উঠলে সকাল মাথা দুলিয়ে বলে,
“মনে আছে সেদিন দিয়েছিলে?সুদবোধ করলাম।”
ধ্রুব হেসে বললো,

“আচ্ছা!আমিতো আরো অনেক কিছুই দিয়েছি সব সুদবোধ করে দাও।”
সকাল চুপ হয়ে গলায় মুখ গুজে পড়ে থাকে।
ধ্রুব কোমড়ে চিমটি দিয়ে বললো,
“পাগলের বুঝ ষোলআনা।”

সকাল এভাবেই ঘুমিয়ে যায়।ধ্রুব সকালের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় এই মেয়েটাই তার কলিজা।এটা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব।এই যে কাছে আছে মনে হচ্ছে সারা ঘরে শান্তি বিরাজ করছে।বিয়ের আগেও যাকে চিনতো না এখন সেই মেয়েটাকেই সবচেয়ে প্রিয় লাগছে।স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বুঝি আল্লাহ এভাবেই মধুর করে দেয়!একে অপরের আনন্দের,সুখের খোরাক বানিয়ে দেয়!

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুইটা ছুঁইছুঁই।সকাল ধ্রুবর উদোম গায়ে লেপ্টে আছে।গোচা দাড়িতে নিজের তুলতুলে গাল ঘসে।ধ্রুবর ঘুম ছুটে যায়,জড়ানো কন্ঠে বলে,
“কি হয়েছে সোনা?খারাপ লাগছে?”
সকাল ঠোঁট উল্টে বললো,
“উহু,আদর খেতে মন চাচ্ছে।আদর খাবো।”

ধ্রুব সকালের কথা শুনে স্থির চোখে সকালকে পরখ করে।শরীর এখনো আগুন গরম।সে সকালের কপালে হাত দিয়ে বললো,
“আচ্ছা শরীর ভালো হোক।বেশি করে আদর দিবো।”
সকাল ত্যাড়া গলায় বললো,
“আমি এখনি বলছি মানে এখনি।”
ধ্রুব হাল ছাড়ে না বুঝানোর ভঙ্গিতে বলে,

“তুমি অসুস্থ!”
সকাল মিনমিন করে বলে,
“কিছু হবে না।”
ধ্রুব মাথা চুল টেনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে বললো,
“আল্লাহ!কোন দুঃখে পিচ্ছি বিয়ে করছিলাম?”
সকাল কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,
❝জান,আদর দাও না❞.

কাঞ্চাসোনা পর্ব ১১

❝গাইজ সকাল অজ্ঞান হয়নি,কিন্তু অজ্ঞান হয়ে যায় কিনা সেই চিন্তায় আপনারাই অজ্ঞান হয়ে গেলেন😑😑❞
❝আরেকটা কথা আমি লিখি আপনারা পড়েন,সুতরাং আমাদের কমেন্টগুলো গল্পের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকুক,লেখিকাকে নিয়ে কথা কম বলি এটাই ভালো তাই না?আরে ভাই লেখিকা খুশী থাকলেই তো গল্প ভালো হবে।❞
❝আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা,গল্পটা পড়তে কি বোরিং লাগছে?❞
❝কার কার জ্বর উঠলে এমন আবলতাবল বলার অভ্যাস আছে ভাই?❞

কাঞ্চাসোনা পর্ব ১৩