কাঞ্চাসোনা পর্ব ১১

কাঞ্চাসোনা পর্ব ১১
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মনোয়ারা চোখে লাগে ব্যাপারটা।ধ্রুব আর সকাল কথা বললেও দুজনকে কাছাকাছি তিনি খুব কমই দেখেন।তাহলে কি ধ্রুব এখনো সকালকে মেনে নিতে পারেনি?এই চিন্তা মাথায় রেখেই এক কাজ করেন তারেক মির্জাকে সাথে নিয়ে এক ভোরে সিলেট বোনের বাসায় চলে যান।বাসায় বলেছেন মানতের জন্য সিলেট যচ্ছেন।যদিও সকাল সারাদিন বাসায় একা থাকে তারপরেও দুজনের জন্য এইটুকু কষ্ট তো করতেই পারে।খালি বাসায় দুজনের বোঝাপড়া যদি ভালো হয়!দুজনের প্রাইভেসির কথা ভেবেই বেড়াতে যায়।মনোয়ারা চলে যাবার সময় সকাল কেঁদে দেয়,মনোয়ারার’ও খারাপ লাগে মেয়েটার মধ্যে মায়ার একটা টান আছে।তিনি ধ্রুবকে শাসনের সুরে বলেন,

“আমরা এক সাপ্তাহ থাকবো।তুই আজকেই অফিসে বলবি বিয়ে করেছিস ছুটি লাগবে।সকাল একা বাসায় থাকতে পারবে না।মনে থাকবে?”
ধ্রুব লক্ষী ছেলের মতো মাথা নাড়ে।উনারা চলে গেলে ধ্রুব সকালের দিকে তাকিয়ে চোখ নাচিয়ে বলে,
“তুমি কি সাংঘাতিক মেয়ে!”
ধ্রুব এমন কথায় সকাল অবাক হয়ে তাকালে ধ্রুব বললো,
“আম্মাকে এভাবে কেঁদে দেখালে যেন আমি তোমাকে মারিটারি।”
সকাল বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মারবেন কেন?মা এক সাপ্তাহের জন্য চলে যাচ্ছে।মন কেমন করছিলো তাই কেঁদেছি।”
ধ্রুব মাথা চুলকে বললো,
“নাকি আমার ভয়ে কাঁদছো?”
সকাল সাহসিকতার সাথে বললো, “আপনাকে ভয় পাই না।”
“হ্যাঁ তা তো দেখলামই,একলা বাসায় আমি কি করে ফেলি সেই ভয়েই কেঁদেছো।”
সকাল চোখ নামিয়ে বললো,
“আপনি খুব জ্বালান তো আমাকে।”

এটা বলেই বিছানা গোছানো শুরু করে।
ধ্রুব মুচকি হাসে।হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙ্গে বললো,
“জ্বালানোর সুযোগ পেলাম কই?বাচ্চা বউ বলেই তো লেখাপড়া শিখাতে হবে।”
ধ্রুবর কথার ধরনে সকাল মুচকি হাসে তা দেখে ধ্রুবই আবার বললো,
“আল্লাহ আমার কষ্টটা যদি কেউ বুঝতো!”
সকাল বললো,

“আপনার অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
ধ্রুব অফিসে যাওয়ার জন্য রেডী হলেই সকালের চোখ ভিজে যায়।গ্রামের মেয়ে খোলা পরিবেশ খোলা হাওয়ায় বসবাস করে অভ্যাস এতোদিন মনোয়ারা থাকাতে খালি খালি লাগেনি।এখন মা ও নেই ধ্রুবও চলে যাচ্ছে। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে।
ধ্রুব সকালের হাত নিজের হাতে নিয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে দু’হাতে গাল ধরে বললো,
“মন খারাপ লাগছে?”
সকাল মাথা নাড়ে।

“আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
“আচ্ছা।”
“আমি আসার আগে যেই দরজা কলিং দিক তুমি দরজা খুলবেনা।কেমন?”
“আচ্ছা।”
“ফোন দেব একটু পর পর।”
সকাল ধ্রুব চোখের দিকে তাকালে ধ্রুব মাথাটা নিচু করে সকালের টসটসে গালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে,কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“লাভ ইউ।”

সকাল নিচু স্বরে বললো,”হুম।”
ধ্রুব মাথা সোজা করে বললো,
“হুম কি?”
সকাল চোখের পলক ফেলে বললো,
“আমিও।”
ধ্রুব ত্যাড়া গলায় বললো,
“আমিও কি?”

ভালোবাসি বলতে সকালের খুব লজ্জা লাগছে আর এই দুষ্টু ধ্রুবও নাছোড়বান্দা।লাজুক হেসে বললো,
“ভালোবাসি।”
ধ্রুবর মন প্রাপ্তির পূর্নতায় ভরে উঠে।সকালের কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বললো,
“ফোন দেব।আল্লাহ হাফেজ।”
ধ্রুব চলে গেলে সকাল রান্না করে,মন খারাপ না হওয়ার জন্য এটা সেটা করে দেখে দুইটা বেজে গেছে।এরমাঝে ধ্রুব অনেকবার ফোন দিয়েছে।একবার ফোন দিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,”বউ ছুটি তো দিচ্ছে না।”
সকাল ধ্রুব কথার ধরনে হেসে বললো,

“থাক লাগবে না।”
“আমার বউ বাসায় একা আমি এখানে!এটা কি হয়?ছুটি না দিলে চাকরি ছেড়ে দিবো।”
এটা সেটা বলে ফোন রাখার পর।সকালের খুব একা একা লাগলো,বিছানায় শুয়ে ধ্রুব যে পারফিউম ব্যবহার করে সেটা কাছে এনে বাতাসে ছাড়লো নিশ্বাস নিলে যেন মনে হয় ধ্রুব কাছেই আছে ।সকাল বালিশে হেলান দিয়ে ভাবে আচ্ছা ধ্রুবটাকে কি একটু কাছে টানা উচিত না?

অন্য হাজবেন্ড হলে তো প্রথমেই অধিকার আদায়ের জন্য জোড় করতো।আর উনি সময় দিয়েছে,আর সকালও কেমন সময়টা ব্যবহার করছে,উনার এই সময় দেয়াটা সম্মান করে হলেও সকালের উচিত ধ্রুবকে কাছে টানা।ধ্রুবকে যে সকাল ভিষন ভালোবেসে ফেলেছে সে খবর কি ধ্রুব রাখে?এখন কাছে থাকলে,দুষ্টু দুষ্টু কথা বললেই সকালের শান্তি লাগে।এই যে হুটহাট আলতো করে ছুঁয়ে দেয়,সকালের সেকি ভালো লাগে।সেও সমানতালে ছুঁয়ে দিতে চায়,কিন্তু লজ্জাটাই তো তার পিছু ছাড়ে না।এসব ভেবে নিজেই অকারনে লজ্জা পেয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে হাসে।

সন্ধ্যায় ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি নামে ধ্রুব ফোন দিয়ে যানায় ছুটি পেয়েছে।হাতের কাজ করে বাসায় আসতে আসতে রাত আটটা বাজবে।সকাল ভেবে পেলো না এই বৃষ্টির রাতে সে কি করবে,গা ছমছমে পরিবেশ যেন সকালের দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হাসে।একা বাসায় মেঘের গর্জন শুনে সকালের বুক কেঁপে উঠে।চারদিকে তাকিয়ে মনে হয় দেয়াল তাকে ভয় দেখাচ্ছে ।হুট করেই মনে হলো বউ সেজে ধ্রুবকে চমকে দেয়া যায়।বেচারার বউ সাজ দেখার খুব শখ।যেমন কথা তেমন কাজ।মনের মাধুরী মিশিয়ে লজ্জায় মেখে সকাল বউ সেজে নিলো।আয়নায় নিজেকে দেখে অজানা ভয়ে বুক টিপ টিপ করে।মোবাইলে টাইম দেখে দশটা বেজে গেছে।ধ্রুব এখনো এলো না এটা ভাবতে ভাবতে ধ্রুবকে ফোন দিলে জানায় বাসার নিচে আছে।

সকাল দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে রুমে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।মিনিট কয়েক পরেই দরজা খুলার শব্দ হলে সকালের ঠোঁট শুকিয়ে আসে।শাড়ীর আঁচল খামচে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।ধ্রুব যখন গম্ভীর গলায় ডাকছে তখন সকালের হৃদস্পন্দন আরো তাড়াতাড়ি ছুটে চলে।

সারাদিন ধ্রুবর মন আনচান করেছে সকালের জন্য।অনেক কষ্টে ছুটি নিয়েছে।পাখিটা সারাদিন বাসায় একা এটা ভেবেই খারাপ লেগেছে।অবশেষে বৃষ্টিতে ভিজেই চলে এসেছে।দরজা খুলা দেখে ভ্রু কুচকে উঠে।সকালকে ডেকেও কোন সারা না পেয়ে দ্রুত পায়ে রুমে আসে।ভিজা শরীর থেকে পানি টপটপ করে পরে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।

রুমে এসে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।সকাল খয়েরী শাড়ি গায়ে জড়িয়ে দোপাট্টা মাথায় দিয়ে একদম নতুন বউয়ের মতো সেজে গুজে দাঁড়িয়ে।ধ্রুবর মনে হলো এটা বুঝি পুতুল।বৃষ্টির শব্দ,আকাশে মেঘের গুরুমগুরম গর্জনে,এক মাতাল ভিজা সোদা গন্ধে চারিপাশ ছেয়ে আছে,এই মাতাল করা গন্ধে ধ্রুব নিজেও নেশাগ্রস্ত হয়ে গেলো।বুকটা কি বেশিই লাফাচ্ছে না?এমন করে আবেদনময়ী হয়ে কাছে ডাকলে কাছে না গিয়ে থাকা যায়?এই মেয়ে তাকে পাগল বানিয়ে ফেলবে।ব্যাগটা আলগোছে রেখে ছোট ছোট পা ফেলে প্রেয়সীর দিকে এগিয়ে গেলো।খুব কাছে দাঁড়িয়ে ঠোঁট নেড়ে বললো,

“সুন্দর লাগছে।”
বৃষ্টিতে ভিজে আসা ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে সকালের মনে হলো,ধ্রুবর চোখগুলো আজ নেশা করেছে। মাথাটা নিচু করে বললো,
“আপনি কাপড় পালটে আসুন।ঠান্ডা লাগবে।”
ধ্রুবর কানে বুঝি সকালের কথা গেলো না।নেশার মতো সকালের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজকে নিজেকে আটকানোর কোন রাস্তা ধ্রুব দেখছেনা।হাত পা উত্তেজনায় অবশ হয়ে আসছে।দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মাথা এদিক ওদিক করেও কোন লাভ হয় না।

সকালের নাকের চারপাশে লজ্জায় সুরসুরি দিচ্ছে।এভাবে তাকায় কেউ?সে ধ্রুবর দিকে না তাকিয়ে বললো, “আসুন কাপড় দিচ্ছি।”

এটা বলে সরে যেতে নিলেই ধ্রুব হাত টেনে সকালকে তার ভিজা শরীরের সাথে চেপে ধরে।ছোটখাটো সকালের মাথা ধ্রুবর গলার কাছে গিয়ে মাথা ঠেকেছে,হাত রেখেছে ধ্রুবর বুকে।সকালের হাতে স্পষ্ট ধ্রুবর বুকের উত্তেজনা স্পর্শ করে যাচ্ছে।সকালের কচি মন থরথর করে কেঁপে উঠে,নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ধ্রুব কোমড়ে হাত রেখে খুব মোলায়েম করে জড়িয়ে ধরে।এন্ডোনালির শিরিশিরানি, আর বিষাক্ত ইচ্ছেরা এলোমেলো ছুটে ধ্রুবকে অস্থির করে দিচ্ছে। প্রিয়তমার এই মনকাড়া রুপে ধ্রুব নিজেকে খুব পাগল পাগল রুপে আবিষ্কার করলো।মাথাটা নিচু করে ধরা গলায় সকালের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“এতো সেজেছো কেন?”
ধ্রুবর এমন পাগল করা কন্ঠকে সকাল ভয় পায়।মাথাটা নামিয়ে,ধ্রুবর মতোই ফিসফিস করে বললো,
“আপনি বউ সাজ দেখতে চেয়েছিলেন।তাই।”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,
“আমার ইচ্ছে পুরন করছো।”
সকাল মাথা নেড়ে বললো
“হ্যাঁ ”

ধ্রুব সকালের কাধে চুমু খেয়ে বলে,
“আমার তো আরো অনেক কিছুই ইচ্ছা করে।সব পুরুন করবে?”
সকাল ধ্রুবর চোখে চোখ রাখে।ধ্রুবর চোখে নিষিদ্ধ ইচ্ছের আনাগোনা।সকাল বুঝে যায় ধ্রুবর ইচ্ছার কথা।মাথা আরো নিচু করে নিতেই ধ্রুব বাধা দেয়।এই মেয়ে এমন কেন?কেন বুঝেনা ধ্রুবর যন্ত্রনা?সকালের লজ্জামাখা মুখ ধ্রুব টেনে কাছে নেয়।নেশার মতো ধ্রুব সকালের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ঘষে,সকাল আবেশে ঘুঙ্গিয়ে উঠে।প্রেমে উত্বপ্ত ঠোঁট মিশিয়ে ধ্রুব সকালেকে উপরে তুলে নেয়।ধ্রুব আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করে তার আদরে তার পাখিটাও সামিল হচ্ছে সাড়া দিয়ে জানান দিচ্ছে ভালোবাসার যন্ত্রনা।ধ্রুবর এতোদিনের ধৈর্য,সংযম নিমিষেই সব ভেঙ্গে চুড়মাড় হয়ে গেলো।সকালের মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে বললো,

“কেন পাগল করে দিচ্ছো।”
সকাল ঘোর লাগা চোখে ধ্রুবকে দেখে।তার মনটা বলছে আজকের রাতটা অন্যরাতের মতো না,আজকে ভিন্ন কিছু হবে।শরীরের কাঁপনে হাত দিয়ে শক্ত করে খাঁমচে ধরে ধ্রুবর ভেজা শার্ট।
ধ্রুবর নিঃশ্বাস তখন বেশামাল। ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাকা করে ঝড়ের বেগে শ্বাস টেনে নেয়।সকাল সম্মোহনী চোখে ধ্রুবর চোখে তাকায়।অনেক ইচ্ছের কাজটা করে বসে,হাত বাড়িয়ে ধ্রুবর ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।নরম হাতের ছোঁয়ায় ধ্রুবর পুরুষালী পুরু ঠোঁট তিরতির করে কাঁপে।

সকালের গালে নিজের গাল লাগিয়ে বললো,
“জান সামলাতে পারবা তো?”

কাঞ্চাসোনা পর্ব ১০

❝কি ব্যাপার বাচ্চারা কি লজ্জায় লাল টাল হয়ে যাচ্ছে নাকি?শোনো বাচ্চারা লজ্জা পেলে আমার দোষ ভুল করেও দিবা না,সব দোষ ধ্রুবর,উনি আবার শিক্ষকটা ভালো কিনা!❞
❝আজান দিয়ে দিয়েছে রি চেক করার সময় পাইনি।ভুল থাকলে বলে যাবেন।❞
❝দুপুরের ভাত খাইতে যাইতেছি মাত্র।এতো কষ্ট করে লিখি একটু নিজের মনোভাবটা কমেন্টে লিখে যাবেন।❞
ভালোবাসা

কাঞ্চাসোনা পর্ব ১২