কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১১

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১১
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

সকালের মা সাহানা আর তারেক ইসলাম দুজনেই তাদের একমাত্র মেয়ের হঠাৎ হয়ে যাওয়া বিয়ের খবরে খুশী হবেন নাকি রেগে যাবেন বুঝতে পারছেন না।সাহানা অবশ্য রাগ করতে পারছেনা তার ভালোই লাগছে আজকাল কার যুগে ধ্রুবর মতো ছেলে কি পাওয়া যায়?আর সাহানা বা তারেক কি এমন ছেলে পেতো?

সোনার টুকরো ছেলে নিজেই ধরা দিয়েছে।তাছাড়া মনোয়ারাও সকালকে পছন্দ করেছিলো।উনার মনে হচ্ছে যা হয়েছে আল্লাহর ইশারায় হয়েছে।সাহানা খুশীতে চোখের পানি ফেলে।সন্তানদের সুখ দেখলেই তো শান্তি লাগে,সব বাবা মা’ই চায় সন্তান ভালো থাকুক।তার বড়ো আপা মনোয়ারা যখন বলেছিলো যে উনার বড়ো ভাসুরের ছেলেকে সকালের সাথে বিয়ে দিতে চায় তখনি গটকা লেগেছিলো,আগে ধ্রুবর জন্য হাত পেতে এখনি আবার ভাসুরের ছেলের জন্য হাত চাইছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরে যখন সকালের সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনাটা শুনেন পায়ের তলার মাটি সরে যায়।পরে ধ্রুবই সকালের ছায়া হয়ে আগলে নিয়েছে শুনে সাহানা যেনো বুকে প্রাণ ফিরে পায়।অবশ্য তাদের বিয়ে নিয়ে তারেক বেশ গাইগুই করলেও সাহানা মানিয়ে নিয়েছে।এমপির অভদ্র ছেলের কাছে বিয়ে দেয়ার চেয়ে ধ্রুবকে জামাই হিসেবে মেনে নেয়াই শ্রেয়।দুপুর নাগাদ দুজনে ঢাকার উদ্যেশে বেরিয়ে পরে।

শাহীন রুম থেকে বেরোচ্ছে না।তার আব্বা আনোয়ার মির্জার হুকুম বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার কিন্তু তাছলিমা কেঁদে কেঁটে বলেছে আর মাত্র পাঁচ দিন সে দেশে এই পাঁচদিন বাসায় থাকুক।তাছলিমা নিজেও ছেলের অপরাধ শিকার করেছে কিন্তু আপন ছেলের পক্ষে না এসে কোন খানের কোন সকালের পক্ষে যাবার কোনো মানে হয় না।

তাছলিমা শাশুড়ীর হাতে পায়ে ধরে বাসায় শাহীনের পাঁচ দিন থাকার অনুমতি পেয়েছে,কিন্তু রুমে থাকতে হবে,কারো সাথে কোনো অ/সভ্যতা করা যাবে না।এতেই তিনি খুশী।ছেলেটা চলে যাচ্ছে বিষন্ন মুখে কিন্তু ধ্রুব আর সকাল কি রঙ্গতামাশা করছে দেখলেই তাছলিমার গা জ্ব/লে উঠে।উনার তো ইচ্ছা করে সকালের সুন্দর মুখটা গরম পানি দিয়ে ঝলসে দিতে।ছেমরি তার সোনার টুকরা শাহীনকে রেখে ধ্রুবকে বিয়ে করেছে।

তাছলিমা রা/গে কিড়মিড় করে নিজের রুমে ঘুরে।শাহীন যা করেছে তারপরে সকালকে অন্য যায়গায় বিয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না,আর না কেউ বিয়ে করতে আসবে কিন্তু ধ্রুব যেনো শাহীনের ভাড়া ভাতে গোবর ছিটিয়ে দিলো।সম্পূর্ণ ঘটনায় যদিও শাহীনের অ/পরাধ কিন্তু তাছলিমার চোখে সকাল আর ধ্রুব অপরাধী শাহীন মোটেই অপরাধী না,ঘরে এমন মেয়ে থাকলে ছেলেরা একটু আধটু পাগলামি করেই এটা দোষের কিছুনা।ছেলের বিষন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে সকালের উপর রাগের পরিমান বাড়ায়,ব্যর্থিত মুখে ছেলের প্রিয় খাবার রান্না করে।আর মাত্র পাঁচ দিনই শাহীন তার কাছে থাকবে।এই পাঁচদিন ছেলেটার যত্ন করতে পারলেই বাঁচে।

নুরজাহান অবশ্য শাহীনকেই বেশী ভালোবাসে কিন্তু ভালোবাসার পরিমাণ আছে।হ্যাঁ যা ঘটেছে এটা অন্যায় উনিও শাহীনের সাথে সকালের বিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু সকাল আর ধ্রুবর কথা শুনে মত পাল্টেছেন ততোক্ষনে ধ্রুব আর সকাল বিয়ে করে বাসায় এসেছে।শাহীনের কর্মে উনি বেশ অবাক হয়েছেন।এতো আদর করেছে ছেলেটাকে কোনো আবদার কখনো অপূর্ণ রাখেনি এর পরিনাম বুঝি এসব?এতো অধপতন!কথায় আছেনা আদরে বাদর হয়ে গেছে শাহীনের বেলায়ও তাই মা আর দাদীর আদরে,আশকারায় লাগামহীন হয়ে গেছে।

শাহীন বেশ রেগে আছে। মুখ শুকনো কিন্তু চোখে আগু/নের ফুলকি।সব তো ঠিকঠাক’ই হচ্ছিলো,আর সব ঠিক থাকলে এতোক্ষণে সকাল তার বউ থাকতো কিন্তু ঝামেলাটা পাকালো ধ্রুব ল।সব পরিকল্পনা ভেঙে দিলো।ধ্রুব এটা কিভাবে করলো?শাহীনের মনের রা/গ কমার বদলে বাড়ে।আগুনে ঘি পড়লে যেমন দাউদাউ করে জ্বলে উঠে তারও এক অবস্থা রুম থেকে ধ্রুব আর সকালের গলার স্বর শুনলেই রাগের পরিমান বাড়ছে।ইচ্ছে করছে সকালের লম্বা চুলের গোছায় টেনে ধরতে।আচ্ছা সকালের লম্বা চুলগুলো কেটে ফেললে কেমন হয়?চুল কেটে যদি শাহীনের রা/গ,জেদ,প্রতিশোধ কমে তাহলে চুল কাটাই ফাইনাল।

মিতুর আজকে ভার্সিটির প্রথম দিন।উচ্ছল হাসিখুশি তরুনী,মুখে খুশীর ঝিলিক।মিতু অতিরিক্ত সুন্দরী না হলেও উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা মায়াবতী।টানাটানা চোখে কাজল পড়লে চেহারায় আলাদা মায়া বিরাজ করে।মিতু খুব করে চাইছিলো প্রথম দিন সামির সাথে যাক।মানুষ প্রিয় মুহূর্তগুলো প্রিয় মানুষদের সাথে ভাগাভাগি করতেই বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।মিতুও ব্যতিক্রম না।কিশোরীর যে সামির বেশ প্রিয়,মাঝে মাঝে তার মনে হয় সামির বুঝি তার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সামির না থাকলে মিতু ম/রে যাবে।অথচ যে নিজেও জানে এসব যুক্তি মনের যুক্তি এসব সমাজে খাটবে না।মিতু সামিরকে কয়েকবার ফোন দিয়েছে,ছয়বারের সময় সামির ফোন রিসিভ করেছে কিন্তু কথা বলছেনা।মিতু বললো,

“হ্যালো,সামির ভাই।”
কিছুক্ষণ পরে সামির বললো,
“কোনো দরকার মিতু?এতো সকালে ফোন করলে যে!”
মিতু খানিকটা রে/গে গেলো।ভালোমন্দ জিজ্ঞেস না করেই এসব কেমন কথা?
“কেনো দরকার ছাড়া ফোন দেয়া যাবেনা নাকি?”
“না।আমি তোমার বড়ো ভাইয়ের বন্ধু সুতরাং আমার সাথেও তোমার সম্পর্ক হবে বড়ো ভাই ভাই।আর বড়ো ভাইদের অকারণে ফোন দেয়া অপরাধ।সেই হিসেবে তুমি অপরাধী।”

মিতু বিরক্ত হয়ে বললো,
“সবসময় এতো জ্ঞান দিবেন না তো।”
“বড়ো ভাইয়েরা জ্ঞান দেয় এটাই বড়োভাইদের ভাইগত অধিকার।”
“আপনাকে আমি বড়োভাই বলে মানি না সুতরাং ভাইগতো অধিকার দেখাবেন না।”

সামির অফিসের চেয়ারে চোখ বন্ধ করে হেলে বসে।আজকে একটা ইন্টারভিউ দিতে এসেছে।কপালে কি আছে জানা নেই।আসার পর থেকেই শুনছে টাকা নিয়ে নাকি কয়েকজনের চাকরি হয়ে গেছে ইন্টারভিউ মাত্র লোক দেখানো।মিতু সামিরের কোনো সারা না পেয়ে বললো,

“কথা বলবেন না?”
সামির মুচকি হেসে বললো,
“বলো,শুনছি।”
”আমি আপনাকে ভাই মানি না।কি মানি জানেন?”
“জানতে চাই না।বেকারদের এতোকিছু জানার অধিকার নেই।”
“কথায় কথায় বেকার বেকার করেন কেনো?বিরক্তিকর!”

সামির মুচকি হেসে বললো,
“কেনো ফোন দিয়েছো বলো।”
“আজকে ভার্সিটির প্রথম দিন।”
”তো।”
“আমি চাই আপনি আমার সাথে যান।”
সামির অবাক হয়ে বললো,

“আমি কেনো?ভার্সিটিতে মেয়েরা একা যেতেই বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।জান প্রাণ দিয়ে ছেলেদের প্রমান করাতে চায় সে সিংগেল।আর তুমি কিনা এতোবড়ো একটা ছেলে সাথে নিতে চাচ্ছো?”
সামিরের কথা শুনে মিতু খিলখিল করে হাসে।ভিষণ আদুরী গলায় বললো,
“আমিতো সিংগেল সাজতে চাই না আমি চাই সবাই জানুক আমার একটা হ্যান্ডসাম বয় আছে।”
সামির চুপ করে থাকে।মিতু আকুতি করে বললো,

“প্লিজ,না শুনতে চাই না।”
সামির বুঝলো তার নরম গলা শুনে মেয়েটা ক্ষিপ্ত গতীতে এগিয়ে আসছে।চাপা অথচ রুক্ষ গলায় বললো,
“বেয়াদবি পেয়েছো?লিমিট ক্রস করবানা।কিছু বলিনা দেখে ভেবোনা মাথায় উঠে নাচার অধিকার দিয়েছি।ফোন রাখো।”
শেষের ‘ফোন রাখো’ কথাটা বেশ ধমকানো গলায়ই বললো।সাথে সাথেই মিতু ফোনটা কেটে দিলো।কিশোরী মনে এতোটুকু আঘাতে বেশ অভিমানি হলো মন,চোখের কোন ছাপিয়ে নেমে এলো বর্ষার জল।

প্রথমদিন হওয়াতেই তাড়াতাড়ি ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেলো।মিতু অনেকের সাথেই কথা বলেছে।ফাকে ফাকে মোবাইলের কললিস্ট চেক করতে ভুলেনি।মনে ক্ষীণ আশা ছিলো সামির ফোন দেবে কিন্তু তার মনের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিতেই সামির না ফোন না মেসেজ করলো।মনে কষ্ট থাকলেও মিতু হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করেছে।

ভার্সিটির গেইট দিয়ে বেড়িয়ে মিতু আলগোছে সামনে এগিয়ে যায়।সামনের দিকে চোখ পড়তেই মিতু থমকে যায়,তার পায়ের চলন থেমে যায়।সামনের চায়ের দোকানে সামির চা খাচ্ছে।ঘামে ভিজে সাদা শার্ট গায়ের সাথে লেপ্টে আছে হাতের ফাইল দিয়ে অনবরত গায়ে বাতাস করছে।মিতু পলক ঝাপটে তাকায় এটা স্বপ্ন না এটা বাস্তব।মিতুর অবুজ মন অভিমানে ভারি হয়ে আসে।তার সাথে আসলো না এখন এখানে বসে
চা খাচ্ছে কেনো?সে দ্রুত পায়ে সামনে এগিয়ে যায়।

তাকাবে না এই কঠিন পুরুষের দিকে।কিছুক্ষণ পরেই পাশে সামিরের উপস্থিতি টের পায়।মিতু তাকায় না।সামির মুচকি হাসে।তখন মিতুকে বেশ কড়া কথা শুনিয়ে ফেলেছিলো।কিশোরী যে অভিমানে জর্জরিত হয়ে গেছে এটা বুঝতে দেরি হয়নি।তাইতো ইন্টারভিউ শেষ করেই ভার্সিটির সামনে চলে এসেছে।দ্রুত গতিতে হাটা মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“রেগে আছো?”

মিতু কথা বলেনা।এখন রাগ দেখতে এসেছে?তখন এভাবে কথা বলার সময় মনে ছিলোনা রাগ হবে নাকি না।সামির মিতুর সাথে পা মিলিয়ে হাটে।
“একটা অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম।”
মিতুর মন খানিক নরম হয়।মাথা ঘুরিয়ে ক্লান্ত সামিরের দিকে তাকায়।তার হাতে ফাইল আর ঘামে ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ইন্টারভিউ কেমন হলো?”
“ভালো হয়েছে।”
“আচ্ছা।”
মিতু আর কথা বলেনা।

সামির মিতুর হাত গলিয়ে নিজের হাত রাখে।তার আঙুলের ভাজে মিতুর সরু আঙুল গলিয়ে মিতুর দিকে নরম চোখে তাকায়।এই প্রথম সইচ্ছায় সামির মিতুকে স্পর্শ করেছে আর এই স্পর্শ পেয়ে মিতু কেঁপে ওঠে মাথা উঁচু করে সামিরের দিকে তাকায়।সামিরের এসবে নজর নেই সে সামনে তাকিয়ে আছে।মিতু সামিরের হাতটা একটু শক্ত করে ধরে।সামির সামনে তাকিয়েই বললো,

“জেনে শুনে বি/ষ পান করার এতো ইচ্ছা কেনো মিতু?যানোনা বি/ষ পানে ম/রণ নিশ্চিত?”
সকালের বাবা মা আসাতে সকাল গলে যায়।বাবা মায়ের কাছে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দেয়।সাহানা ভেবেছিলো হঠাৎ হয়ে যাওয়া বিয়েতে সবাই নাখোস থাকবে কিন্তু এখানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত সবাই বেশ হাসিখুশি।সকাল তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।সে নিজেই নিজেকে অপরাধী ভাবছে ভ/য়ে ভ/য়ে বললো,

“পরিস্থিতিতে পরেই এমন কাজ করেছি আম্মা।আমাকে মাফ করে দাও।”
সাহানা সকালের মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
“কাঁদিস না।”

সকাল বাবার কাছেও মাফ চায়।ধ্রুব উনাদের সাথে কুশল বিনিময় করে নেয়।সাহানা আর তারেক ইসলামের জামাই বেশ পছন্দ হয়।এমন জামাই পেলে সবাই খুশী হবার কথা।তারপরেও উনারা মুখ গম্ভীর করে রাখলেন ধ্রুবর মাথায় হাত ভুলিয়ে তারেক ইসলাম পাঁচ হাজার টাকা হাতে গুজে দিলেন ধ্রুব নিতে না চাইলে তারেক ইসলাম বললেন,
“বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেছে।তুমি আমার মেয়েটাকে ভালো রেখো বাবা।”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,

“দোয়া করবেন।”
রাত যতো গভীর হয় সকালের দেহে ততোই কাঁপুনি আসে।ধ্রুবর কাছে যেতে ভ/য় হয় সে জানে এই ভ/য়টা অকারনের ভ/য়।ধ্রুব তো নিজেই বলেছে সে সকালের সম্মতিহীন কিছু করবেনা।সেই কখন ধ্রুব তার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেছে এখন বাজে রাত বারোটা।মনোয়ারা বেগমের সাথে হাতে হাতে এটা সেটা করতে করতে এতো রাত।ধীর গতীতে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দেখলো ধ্রুব ওপাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।বিছানায় শোয়ার পরে সকালের মনে হলো ধ্রুব ঘুমায়নি বরং সে দেরী করে আসাতে অভিমান করেছে।সকাল আস্তে করে ধ্রুবর পিঠে হাত রাখে মিষ্টি গলায় ডাকলো,

“ঘুমিয়ে গেছেন?এই যে!”
ধ্রুব সকালের দিকে ফিরে।মুখে অভিমানের ছোঁয়া জ্বলজ্বল করছে।সকাল বালিশে মাথা রেখে বললো,
“কি?”

ধ্রুব সকালের লম্বা বেনী হাতে পেচিয়ে নেয়।হালকা টান দিয়ে বললো,
“সারাদিন আমার থেকে লুকিয়ে থাকার কারণ কি?আমি যে রুমে একা সে ব্যাপারে খেয়াল থাকেনা?”
চুলের টানেই সকাল ধ্রুবর দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়।লাজুক হেসে বললো,
“খেয়াল ছিলো তো।”
“আসোনি কেনো?”

ধ্রুব সকালের চোখের দিকে তাকায়।তারপর চোখ নামিয়ে ফেলে ধ্রুবর চোখে তাকানো যায় না।কেমন জানি লাগে,ওই চোখের দৃষ্টি ঘোরলাগা,মায়াময় যা সকালকে মূহুর্তেই আচ্ছন্ন করে ফেলে।আস্তে করে বললো,
“এমনি আসিনি।”
ধ্রুব সকালের হাত ধরে,চোখে চোখ রেখে বললো,
“স্বামী যখন বাসায় থাকবে তখন বউরা কারণে অকারণে সামনে ঘুরাঘুরি করবে।এটাই নিয়ম।তুমিও এই নিয়মেই চলবে।বুঝেছো সুন্দরী?”

সকাল ধ্রুবর হাত থেকে হাত ছাড়াতে চায়।মাথা নিচু করেই বলে,
“আচ্ছা।”
“তোমার বাবা মা আসাতে ভ/য় পেয়েছিলে?”
“হ্যাঁ।উনাদের ছাড়া বিয়ে করেছি যদি রাগ করে থাকতো।”
“তুমি শুধু শুধুই রাগ করেছো,আমাদের দুজনের জন্য আরো আগে থেকেই সমন্ধ দেখা হচ্ছিলো।এখন বিয়ে হওয়াতে বরং সবাই খুশী।”

সকাল বললো,
“আপনিও খুশী?”
ধ্রুব শব্দ করে হেসে বললো,
“কি মনে হয়?”
“জানি না।”
“কি জানো?”
“আজকে মিথ্যা বলে অফিস থেকে আসলেন কেনো?”
ধ্রুব মাথা চুলকে বললো,

“নতুন বিয়ে করলে এমন একটু আধটু মিথ্যা বলাই যায়।”
স্নেহার কথা মনে হওয়াতে সকাল চোখ বড়ো বড়ো করে ধ্রুবর দিকে তাকায়।রাগী গলায় বললো,
“ওই মেয়ে আপনার কি হয়?”
সকাল কাকে ইঙ্গিত করছে সেটা ধ্রব বুঝতে পারে না।ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কোন মেয়ে?”

“অফিসের মেয়ে।”
“অহ,আমার কলিগ।একসাথেই কাজ করি।”
“তাই বলে এভাবে ঘেষে বসবে?আবার কপালেও হাত দিবে?”
“ও অনেক ফ্রী।তাছাড়া এগুলা তো এখন কোনো ব্যাপার না।”
সকালের চোখ মূহুর্তেই জলে টই টই হয়ে যায়।ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছু বলে না।ধ্রুব সকালের চোখে পানি দেখে বললো,
“আরে কাঁদো কেনো?”

“আমার মোটেই এসব ভালো লাগেনি।”
“আচ্ছা আচ্ছা।আর কেউ এমন করবে না।কেঁদো না বউ।”
ধ্রুবর মুখে বউ ডাক শুনে সকালের বুকে ধিমধিম করে উঠে।মনটা খুশীতে ভরে যায়।মিষ্টি গলায় বললো,
“আমার হাত ছুঁয়ে প্রমিস করেন আর কাউকে এমন কাছে আসতে দিবেন না।”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,
“এটাতো প্রমিস করা যাবে না।”

“কেনো?”
“আর কারো মাঝে তো তুমিও আছো।তুমিতো আমার কাছে আসবেই তাই না?”
সকাল লাজুক মুখে বললো,
“আমি ছাড়া।”
ধ্রুব ইশ ইশ করে বললো,
“ওরে আমার বউ রে!কি পাকনা।”
“আমি মোটেই পাকনা না।আমি ছোট মানুষ।”

ধ্রুব সকালের গাল টেনে বললো,
“হুম আমার ছোট বাবুইসোনা।”
সকাল আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে।ধ্রুবর এই আদুরে কথাগুলো তার খুব ভালো লাগে।ধ্রুব যখন এভাবে ডাকে তখন নিজেকে খুব সুখী সুখী লাগে।তারপর হুট করে চোখ খুলে বললো,
“প্রমিস করেন!”

“প্রমিস,প্রমিস,প্রমিস।তুমি ছাড়া অন্য নারী এই ধ্রুবকে ছুঁবে না।”
ধ্রুব সকালের লাজুক মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে।নরম হাতে হালকা হাত চেপে বললো,
“তোমার হাত এতো নরম।হাড্ডি আছে তো ভেতরে?”
সকাল বললো,

“হাড্ডি ছাড়া হাত হয়?”
“আমার বউয়ের হতে পারে।”
“আমারো হাড্ডি আছে।”
“আচ্ছা টেস্ট করে দেখি?”

এটা বলেই ধ্রুব ঝটপট সকালের নরম হাতে তার দাত আস্তে করে বসিয়ে দেয়।মৃদু কাঁমড়ে সকাল আর্তনাদ করে ছটফটিয়ে উঠে।বেশী ব্যাথা না পেলেও ঠোঁট গোল করে আহ্লাদী চোখে ধ্রুবর দিকে তাকায়।ধ্রুব সকালের আহ্লাদী মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“না।আমার বউয়ের হাতে হাড্ডি আছে।”
সকাল আরো আহ্লাদী হয়ে যায়।কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১০

“ব্যাথা পেয়েছি।”
“এতুটুকু আদরে ব্যাথা পেলে হবে?”
সকাল ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো,
“হবে না?”
ধ্রুব ফিসফিস করে বললো,
“না।সামনে তো আরো বড়ো আদর বাকি।এখনি এমন ছটফট করলে পরে তো দৌড়াদৌড়ি করবে।”
সকাল চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে এই লোক এতো দুষ্ট!খালি তাকে লজ্জা দেয়।ইশ ইশ এই লজ্জা সকাল কই রাখবে?

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১২