কারনে অকারনে ভালোবাসি গল্পের লিংক || Suraiya Aayat

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১+২
Suraiya Aayat

” ওড়না যখন ছেলেদের ঘড়িতে আটকানোর জন্য তখন তা শরীরে রেখে কি লাভ, ফেলে দাও ?”
কথাটা বলে গা থেকে ওড়নাটা এক টানে খুলে নিয়ে হাতটা বেধে দিলেন আরিশ ভাইয়া তারপর সকলের সামনে দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে লাইব্রেরি রুমের ভিতর টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন ৷ ভয়ে বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে ৷ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে সবাই ৷
দরজাটা খট করে বন্ধ করে চোখ মুখ খিঁচে পা দিয়ে একটা ধুলো মাখা কাঠের চেয়ারটা ঠেলে বলল

” বসো ‌৷”
আরু খানিকটা ভয়ে চেয়ারের দিকে ইশারা করে বলল
” ধুলো ৷”
” নো মোর ওয়ার্ডস সিট ডাউন ৷”
ওনার এমন রুক্ষ কন্ঠের কথা শুনে কলিজা শুকিয়ে এলো ৷আর বেশি কিছু না বলে আরু, চুপচাপ বসে গেল ৷ আরিশ ওর সামনে একটা চেয়ার টেনে নিল তাতেও ধুলো,চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে আরুর হাত থেকে ওড়নাটা খুলে নিয়ে চেয়ারটা ঝেড়ে নিলো ৷ আরু সাথেসাথে হাত দিয়ে শরীরটাকে ঢাকার চেষ্টা করতেই আরিশ বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এখন কি স্লীলতাহানির অপরাধ দেবে আরূপাখি ? আর হাত দিয়ে শরীর ঢেকে কি হবে, অর্ধেক বিয়ে তো হয়েই গেছে পুরো বিয়ে হলো সবকিছু তো আমিই দেখবো ৷”
আরিশের মুখের এই সমস্ত লাগামছাড়া কথা শুনে শরীরের ভিতর একপ্রকার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো আরু , রাগ হচ্ছে আমার বস্তবাতাটাও হৃদয়ে কড়া নাড়ছে ৷
আরু কিছু বলতে যাবে তখনই আরিশ ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো
” কি ? কি বোঝাতে চাইছো? কিছু ভুল বললাম?”
আরূ একটু খানিকটা কঠোর হওয়ার চেষ্টা করে বলল

” আপনি কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করছেন ৷ এগুলো কিন্তু আমাদের শর্তের মাঝে ছিলো না ৷”
আরিশ এবার পায়ের ওপর পা তুলে শার্টের একটা বোতাম খুলে মাথার চুলগুলো অগোছালো করে দিয়ে মুখের চাপ দাঁড়িতে আলতো করতে হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বলল
” ঠিক কোন শর্তটা আরুপাখি? ইউ ক্যান রিমাইন্ড মি ৷”
আরু এবার ফটাফট বলে উঠলো যেন ঠোঁটে কথাটা লেগে ছিলো ৷
” আমাদের মাঝে শর্ত বা চুক্তি যেটাই বলুন না কেন সেটাই,,,,,কথা হয়েছিলো তে আমি যতখন ভার্সিটি তে থাকবো ততখন আপনি আপনার মতো আর আমি আমার মতো , আপনি আমার ভার্সিটি লাইফের স্বধীনতাতে কোন হস্তক্ষেপ করবেন না ৷”
কথাটা বলে থেমে গেল আরু ৷ আরিশ গালে হাত দিয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল

” আর ?”
আরু খানিকটা রেগে বলল
” আর কি ! বাকিটুকু তো আপনি জানেন সেটা আবার আমাকে কেন বলতে বলেছেন?”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
” বাকিটুকু সময় যে আমার সেটা মেনে নিতে কি খুব কষ্ট হয় আরুপাখি ?”
আরু চুপ হয়ে গেল, দেওয়াল আলমারির তাকে থাকা বইগুলোকে দেখতে লাগলো ৷ আরিশ ক্রমশ পলক না ফেলে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি কোন শর্ত ভঙ্গ করিনি, আমার যা করা উচিত ছিলো তাই করেছি ৷ আর তোমার সাহস কি করে হয় অন্য ছেলের ঘড়িতে ওড়না বাধানোর ৷ আর যদি কখনো এমন কিছু দেখেছি তো সেদিনই বিয়ে ৷”
আরু আরিশের দিকে এগিয়ে আরিশের নাকে টোকা দিয়ে বলল

” ভার্সিটিতে আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো,বলেছি না আপনি কিছু বলতে আসবেন না ৷”
আরিশ ওর চেয়ারটা আরুর দিকে টেনে বলল
“কথাটা যখন বলেই ফেলেছো তখন আমিও এখন লুচ্ছামি করলে কেমন হয় ?”
আরুর কথাটা শুনে লজ্জা আর রাগ দুটোই হলো, আরিশ যেন. আদতেও তেমন কিছু না করে তাই উঠে গিয়ে শেল্ফ থেকে একটা বই হাতে তুলে একটু ঘেটে ঘেটে দেখতে লাগলো ৷ আরিশ গিয়ে আরুর পাশে দাঁড়িয়ে ওর টি শার্টের ওপর পরে থাকা সাদা এপ্রোনটা খুলে আরুর গায়ে পরিয়ে দিলো ৷
আরু আরিশের দিকে তাকালো ৷ তারপর হাতে থাকা সাইকোলজির বইটার একটা পাতা খুলে বিড়বিড়িয়ে বলল

” There is no specific source of love in this world, because love goes without reason Which is called …..”(এই পৃথিবীতে ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোন সূত্র নেই, কারনে অকারনেও ভালোবাসা যাই ৷ যেটাকে বলে…..)”
আরুর কথাটা শেষ না করেই আয়াশ বলে উঠলো
” Love for no reason…..কারনে অকারনে ভালোবাসি ৷”
আরু আরিশের দিকে তাকালো,,আরিশের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আরুর নেই ৷ চোখ নামিয়ে নিলো আরু ৷
বইটা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল আরু ৷ আরিশ বইটা হাতে নিয়ে ঘাটতে লাগলো ৷
হনহনিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে আরু, আজকে ওর বান্ধবীগুলোর খবর আছে ৷ ওদের দেওয়া ডেয়ারটা কমপ্লিট করতে গিয়ে ওর এই হেনতেন অবস্থা ৷ আরু খানিকটা ছুটে গেল কিন্তু গিয়ে দেখলো সানা ছাড়া কেউ নেই সবকটা পালিয়েছে ৷ ইচ্ছা করে ওরা ডেয়ারটা দিয়েছিলো ৷ সানার কাছে গিয়ে বেশ জোরে বলে উঠলো

” ওই ডাফার গুলোর জন্য উনি সবার সামনে দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নেওয়ার সুযোগ পেলো নাহলে…”
” নাহলে কি ? শোন ভাইয়ার সুযোগের দরকার নেই, চাইলেই সুযোগ করে নিতে পারে কিন্তু সুযোগ খোঁজেনা কখনো তাই তুই পার পেয়ে যাস আরু ৷ আর ভাইয়া এখন কিছু বলেনি কিন্তু বাসায় গিয়ে তো এত সাহস ফুস হয়ে যাই তখন ভাইয়া তো আলাদাই ক্লাস নিবে দেখিস ৷”
আরুকে শুনিয়ে কথাগুলো বলল সানা ৷

আরু শুকনো ঢোক গিললো ৷ সারাদিন ভার্সিটিতে হল্লা দিলেও , টইটই করে ঘুরলেও আরিশ কিছু বলেননা কারন সেক্ষেত্রে আরুর ছাড় কিন্তু বাসায় ফিরলে শুরু হয় আরিশের প্যারা ৷
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দুজনে রাস্তার ধারে চলে এলো, রিকশা নেবে এখান থেকে ৷ বারবার হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে আরু, 5টার আগেই বাসায় ফিরতে হবে, আরিশ পড়াতে আসে 6টার সময় এখন বাজে 4.45 আর এতটুকু সময়ের মাঝে ওকে বাসায় ফিরে খাওয়া ছাড়া বাকি কাজ গুলো করে নিতে হয় ৷”
রিকশার জন্য আরু আর সানা অপেক্ষা করতে করতে আরিশ ওদের সামনে দিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো ৷
আরিশ চলে যেতেই সানাকে প্রশ্ন করে উঠলো

” আচ্ছা তোরা দুজন ভাই বোন, একই বাসাতে থাকিস তবুও দুজন একসাথে বাসায় ফিরিস না কেন? নাকি উনি আমাকে পাহারা দিতে বলেছে তোকে কোনটা ?”
সানা ভ্রু কুঁচকে বহল
” স্টুপিড, পাহারা দিতে কেন বলবে আর পাহারা দেওয়ার হলে ভাইয়া তোকে বাসায় দিয়ে আসতো তোকে নিজে যেতে হতো না ৷ বুঝলি? ভাইয়া তো বাসাতেই যাই 5.39টাই ৷”
আরু অবাক হয়ে বলল
” আর এতটুকু সময় উনি কোথায় থাকে?”
” জানিনা আমি , আম্মু জানে আর আমি কখনো জিজ্ঞাসা করিনি ৷”

কথায় কথায় রিকশা এলো ৷ দুজনে রিকশয় বসলো ৷ রোজ রিকশায় উঠলেই পিছন থেকে আরুকে সাবধান করতে রাস্তার কেউ না কেউ বলে
” আফা আপনার ওড়না ঠিক করেন ৷”
কিন্তু আজকে কথাটা শুনতে হলো না কারন গায়ে ওড়না নেই, আরিশের কেমিস্ট্রি ল্যাবের সাদা এপ্রোনটা রয়েছে ৷
কথা গুলো ভাবলো আর মুচকি হাসলো আরু , যে করেই হোক আজকে আরিশকে বাসায় আসতে দেওয়া যাবে না, নাহলে আরিশের কাছে আজ প্রচুর ঝাড়ি খাবে ৷

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এদিক ওদিক পাইচারি করছে আরু,,6.30টা বাজে এখনো আরিশ এলো না, আরিশের হাতে গোনা কয়েকটা দিন দেরি হয় নাহলে তাড়াতাড়িই চলে আসে ৷ , ভার্সিটিতে থাকলে আরিশকে ও ভয় পায় না কিন্তু বাসায় থাকলে আরিশকে প্রচন্ড রকম ভয় পাই কারন সেটুকু সময় আরিশের ৷
আরুকে পাইচারি করতে দেখে ওর মা ভ্রু কুঁচকে বলল
” কি হয়েছে, এমন করছিস কেন শরীর খারাপ ?”
শরীর খারাপ কাথাটা শুনেই আরুর মাথায় বুদ্ধি এলো তারপর ভাবলো যে আরিশ আসলেও যাতে আজকে ওর সাথে দেখা করার সুযোগ না পাই সেই কাজটা পাকাপোক্ত করতে হবে ৷
হঠাৎ করে পেটে হাত দিয়ে বলে উঠলো

” উউউউউমমমমমা গো, উইইইমা !”
ওর এমন বেসুরে আর্দনাত শুনে আরুর মা চমকে আরুর দিকে তাকালেন তারপর বললেন
” কি হয়েছে এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?”
আরু পেটে হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো
” উইইইইমা গো, মরে গেলাম গো,,, উইইইই !”
আরুর মা রেগে ধমক দিয়ে বললেন
” কি হয়েছে কি ! বলবি তো , না বলে এমন চেচাচ্ছিস কেন ?”
আরু এবার বসা থেকে শুয়ে গড়াগড়ি দিয়ে বলল
” কি পেট ব্যাথা গো, শেষ হয়ে গেলাম গো, ও মা গো ৷ আজকে ওনার পড়া করতে পারবো না গো ৷”
উনি ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বললেন

” কেন কি হলো হঠাৎ ?”
আরু বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে আর উইইইমা বলতে বলতে বলে উঠলো
” আর বলোনা আম্মু, ভার্সিটির ক্যানটিনের পচা আর বাসী খাবার খেয়ে এই অবস্থা ৷ আগে জানলে কখনো খেতাম না ৷ উইইইমা গো মরে গেলাম গো ৷”
উনি আরুর পাশে বসে আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
” কতোবার বলেছি ওসব খাবার খাবি না বাসা থেকে নিয়ে যাবি কিন্তু তা তো শুনবি এখন ডাক্তারকে কল দিই আগে ৷”
আরু হঠাৎ সুস্থ মানুষের মতো ঝাড়ি দিয়ে বলল

” এই আম্মু তুমি কেমন মানুষ গো, দেখছো তোমার মেয়েটা ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে আগে ওনাকে কল করে আসতে বারন করো তারপর ডাক্টর কে কল করবা ৷ উনি এতোদূর এসে আবার ফিরে যাবেন ওনার কষ্ট হবে না ৷ আআআআ….মা গো ৷”
আবার নাটক শুরু করে দিলো ৷ আরুর কথাতে উনি কনিফিউশানে যে কি করবেন ,তাই আগে ডক্টর কে কল করতে নিলেই ফোনে ফোন এলো ৷ উনি আরিশের ফোন এসেছে দেখে বললেন
” এই দেখ আরিশের ফোন ৷”
আরু রেগে বরল

” ধরো আর বলো আরু অসুস্থ খুব তাই আজ আরিশকে আসতে হবে না ৷”
উনি ফোনটা ধরতেই অপর পাশ থেকে আরিশের মা অনিকা খান বলে উঠলো
” ভাবী আজকে আরিশ যাবে না গো ৷ ওর আসলে ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে ছোট এক্সিডেন্ট হয়েছে ৷”
পাশ থেকে আরিশ বলল
” আম্মু আমি বললাম তো যাবো ৷”
আরুর মা কথাটা শুনে বললেন
” কেন কিভাবে হলো ?”
আর বলোনা রাস্তায় বাইকের সামনে একটা বাচ্চা চলে এসেছিলো তাই ৷”
” ওহহ তা আরিশ এখন কেমন আছে ৷ আর আরুও তো অসুস্থ ৷”

আরু ফোনের ওপাশের কথা কিছু না শুনরেও ও মা যে বলেছে ও অসুস্থ সেটা শুনে মনে লাড্ডু ফুটছে ৷
” আরিশ ঠিকই আছে মঝটামুটি , তবে হালকা জ্বর আসছে ইনজেকশান দেওয়াতে ৷ আর আরুর কি হলো ৷”
” আর বলোনা অনিকা ভার্সিটির ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে অসুস্থ ৷”
ফোনটা লাউডে থাকার দরুন কথাগুলো আরিশের কানে গেল ৷ আরিশ ভার্সিটিতে ঢুকেছে লাঞ্চ টাইমের পর তাই আরুর এই খবরটা রাখতে পারেনি ৷
কথাটা শুনে চুপ করে রইলো ৷
” আচ্ছা তাহলে আমরা কি আরিশকে দেখতে যাবো ?”
আরু পাশ থেকে বলল

” এই আম্মু আমরা যাবো কেন, ওনাকে আসতে না করো শুধু ,আর বলো আরুর অসুস্থতা 2 দিনের মধ্যে ঠিক হবে না ৷”
আরুর মা ধমক দিতেই আরু চুপ হয়ে গেল ৷
” না না আসতে হবে না,,, ”
আর কিছু বলতে যাবে তখনই আরিশ বললো
” তোমাদের আসতে হবে না আমি আসছি !’
কথাটা বলে ফোনটা রেখে দিলো ৷ আরুর মা আরুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল ৷ আরু তো মনে মনে নাগিন ডান্স দিলো
” ওই হোই মেরি দিমাগ কি বাত্তি খুল গায়া ৷ উইইইমা টুইটুই !”

” সাইয়ানে দেখা এসে মে পানি পানি হো গায়ি…
ওই হোই মে তো পুরা পানি পানি পানি হো গায়ি !”
হোম থিয়েটারে গানটা বাজতে বাজতে হঠাৎ এক বেসুরে কন্ঠস্বর গানের তালে মিলে গানের মেলবন্ধনে বিকৃতি সৃষ্টি করছে ৷ হঠাৎ যেন তালটা এদিক ওদিক হয়ে যেতেই আরু ওর তীব্র ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো
” আমার বাসায় আবার দ্বিতীয় বাদশাহ কোথা থেকে চলে এলো, এতো রাতে কার এমন কর্কশ কন্ঠ আমাকে শুনতে হচ্ছে ৷”
নাচতে নাচতে খাট থেকে নেমে আঙুল উচিয়ে কথা গুলো বলছিলো আরু ৷ তখনই দেখলো দরজায় কারোর হাতের বা পায়ের তীব্র আওয়াজে দরজাটা কাঁপছে আর নড়ছে যার অর্থ কেউ দরজাটা খুলতে বলছে ৷ আরু বিরক্ত সহকারে দরজাটা খুলতেই একপ্রকার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পিছিয়ে এলো ৷ রাত 9.30 টা বাজে আর এই মুহূর্তে আরিশকে এই বাড়িতে আশা করেনি আরু ৷
আরিশকে দেখে দুকদম পিছিয়ে এলো আরু ৷ মনের ভিতর অজানা ভয় জানান দিচ্ছে তাহলে মানুষটা কি কোনভাবে বুঝে গেল যে ও নাটক করেছে ৷

কথাগুলো মনে আসতেই পেটে হাত দিয়ে আগের মতো নাটক শুরু করলো
” উইইই মা গো, বাবাগো, দাদীগো, খালাগো, ফুপিগো, মরে গেলাম গো ! কি পেট ব্যাথা ৷ আআআআ !”
আরিশ আরুর মাথা থেকে পা অবধি একবার তাকিয়ে তারপর হাব ভাব বুঝে রুমে ঢুকতেই আরু গিয়ে বিছানায় শুয়ে পেটে হাত দিয়ে চেপে ওর গোষ্ঠীজপ শুরু করলো ‌,,,বাবা গো ,মা গো, ফুপি গো…
আরুর মা আফসানা বেগম আরিশকে আলতো স্বরে ডেকে বলল
” আরিশ তুমি অসুস্থ, তুমি না হয় গেষ্ট রুমে গিয়ে রেস্ট নাও ৷”

আরিশ ওনার কাছে গিয়ে ওনার হাত থেকে খাবারের প্যাকেট গুলো নিয়ে বলল
” মামী তুমি চিন্তা করো না, আমি ঠিক আছি, জ্বর জ্বর লাগছিলো ওষুধ খেয়ে নিয়েছি ‌৷”
উনি জানেন যে আরিশ এক কথার মানুষ তাই উনি হাজারো পরামর্শ দিলেও আরিশ নেবে না তাই হার মেনে বলল
” আচ্ছা, কিন্তু তোমার কোন অসুবিধা হলে আরুকে বা আমাকে বলো ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
” জ্বি মামী ৷”
উনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই আরিশ দরজাটা ঠেলে দিলো, আরু চোখ পিটপিট করে দেখছে, আরিশের অসুস্থতার কথাটা ওর কানে গেছে তাই আরিশকে আর বেশি প্যাচাবে না ৷
আবার নিজেই ওর আগের বুলি আওড়াতে লাগলো ৷ আরিশ খাবারের প্যাকেট গুলো আরুর বিছানার উপর রেখে বলল
” কি হয়েছে আরুপাখি ?”

আরু এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি দিতে দিতে বলল
” আআআআ বলতেই হবে?”
আরিশ রাগী চোখে আরুর দিকে তাকালো যা দেখে আরু আর বেশি কিছু না ভেবে বলল
” বোঝেন না নাকি কিছু ? মেয়েলি সমস্যা ৷”
আরিশ ভ্রু উচিয়ে বলল
” কিন্তু মামী যে তখন বলল তুমি নাকি কলেজের ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে অসুস্থ তাই তো তোমার জন্য খাবার আনলাম ৷”
খাবার এনেছে কথাটা শুনে আরূ বেশ খুশিখুশি মুখ করে বলল
” রেস্টুরেন্টে থেকে এনেছেন?”
আরিশ মাথা নাড়িতে বলল

” হমম,ফুড প্লাজা থেকে এনেছি , খাবে না ?”
আরূ ভাবলো আরিশ হয়তো কাচ্চি এনেছে তাই আর লোভ সামলাতে না পেরে উঠে বসে বাচ্চাদের মতো করে বলল
“খাবো না কেন,আর আমার তো ক্যান্টিনের খাবার খেয়েই পেট ব্যাথা ৷”
আরিশ খাবারের ঢাকনা গুলো ওপেন করতে করতে বলল
“পরের দিন থেকে ক্যান্টিনের খাবার খেলে খবর আছে ৷”
আরূ একগাল হাসলো আরিশের দিকে তাকিয়ে ৷ তবে খাবারের ঢাকনা গুলো খুলতেই আরূ ওয়াক করে পিছিয়ে গেল ৷ আরূ তাকিয়ে বলল

” কি হলো ৷”
“ইস আমি এসব খাবো না, আমি তো ভাবলাম কোথায় ভালোবেসে কাচ্চি আনবেন আর এসব কি এনেছেন হু, ভেজিটেবল সু্্্যপ….তারপর মাশরূম…ইয়াক…”
আরিশ সু্্যপটা মুখের সামনে ধরে বলল
” অভিনয়টা ভালো করে শিখে উঠতে পারোনি এখনো আরুপাখি….প্যাকটিস করো ঠিক হয়ে যাবে ৷”
আরু মাথা নীচু করে নিলো লজ্জায়, ধরা খেয়ে গেছে আর আরিশ ইচ্ছা করে যে এই ধরনের খাবার এনেছে সেটাও বুঝতে পেরেছে আরু কিন্তু ও যে এগুলো খাবেনা ৷

আরু বহু চেষ্টা করে চোখ পিটপিট করে চোখে জল আনার চেষ্টা করলো ,মনের মাঝে অনেক ইমোশনাল কথাবার্তা ভাবতে লাগলো, যে যে মুভিগুলো দেখে ও কান্না করেছে সেগুলোর কথা ভাবতে লাগলো তাতে যদি ওর চোখে জল চলে আসে…..টানা এক মিনিটের অবিরাম চেষ্টার পর আরু আরিশের দিকে ছলছল চোখ করে তাকিয়ে বলল
” সরি, ৷ আর আমি এগুলো খাবো না প্লিজ ৷”
আরুর চোখের দিকে তাকিয়ে আরিশ বুকে হাত দিয়ে একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে বলল
” উফফ আবার সেই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল….বলেছি না আমার সামনে কাঁদবে না আমার সহ্য হয় না ‌৷”

আরু বিজয়ীর মতো অনুভব করতে লাগলো তারপর আরও চেষ্টা করে এবার চোখ থেকে জল ঝরালো আর ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
” আমি সরি, আসলে আমি ওই ছেলেটার হাতে ঘড়ি বাধাতে চাইনি, ওরাই তো আমাকে ডেয়ার দিয়েছিলো তাই তো অমন করলাম ৷”
আরিশের শরীরের মাঝে এক অসস্তি হচ্ছে, জ্বরের ওষুধ ও খাইনি, বাসা থেকে বলে এসেছিলো যে পথে ওষুধ কিনে খেয়ে নেবে কিন্তু আরুর জন্য খাবার কিনতে হবে সেটা মনে থাকলেও ওষুধ কেনার কথা মনে নেই ৷ আরিশ কপালটা চেপে ধরলো একটু, চোখ মুখ আঁধার হয়ে আসছে তবুও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বলল

“গানটা বন্ধ করো ৷”
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
” কি সুন্দর হচ্ছিল কিন্তু আপনার জন্য আর শুনতেই পারলাম না ! হাহ !”
গানটা বন্ধ করতে গেলেই আরিশ আরুর বিছানায় শুয়ে পড়লো ৷ আরু গান বন্ধ করে এসে দেখে আরিশ ওর বিছানায় শুয়ে আছে দেখে আরিশের পাশে বসে বলল
” এই যে মিস্টার আপনার গেস্টরুমে শোয়ার কথা এখানে শুয়েছেন কেন?”
আরিশ আরুর হাতটা টেনে ওর নিজের ওপর আরুকে ফেলে দিয়ে ,আরিশ নিজের বুকের মাঝে আরুকে জড়িয়ে ধরে নিতেই আরূ ছঠফটিয়ে উঠলো ৷
আরিশ খানিকটা রূক্ষ গলায় বলল

“একদম শান্ত বাচ্চাদের মতো হয়ে থাকবে, কোন নড়াচড়া না ৷”
আরূর হৃদগতি বাড়ছে, আরিশের কাছে বেশিখন থাকলে আরিশের মোহে হারিয়ে যাবে তাই দ্রুত আরিশের বাহুডোর থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আগের তুলনায় আরও বেশি ছটফটিয়ে উঠলে আরিশ আরুকে নীচে ফেলে আরুর দিকে নীচু হয়ে ঝুকে লাল লাল চোখে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
“আমার ভালোবাসাটাকে কি বড্ড প্যারা লাগে ? কাছে আসতে চাইলে দুরে ঠেলে দাও কেন ! তুমি কি জানো না যে এসব করেও লাভ নেই ৷”

আরু আরিশের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে, আরিশের মুখে রাগের আভা স্পষ্ট , চোখ জোড়া লাল তার কারনটা হয়তো আরুর কাছে খুব সংক্ষিপ্ত….উনি অসুস্থ ৷ কিন্তু আরিশের যে এক্সিডেন্ট হয়েছে সেটা আরুর কাছে অজানা ৷ আরিশ আরুর দিকে খানিকটা ঝুকে গেল, আরুর ঠোঁট জোড়া কাঁপছে এদিকে আরিশের জ্বরের ঘোরের গরম নিশ্বাস আরুর মুখে ছেয়ে যাচ্ছে যাতে আরুর মাঝে নারভাসনেসটা বাড়ছে ৷ এমনটা আজ নতুন নয় যে আরিশ ওর এতো কাছে আসেনি, এসেছে তবে কখনো গভীরভাবে আরুকে স্পর্শ করে দেখেনি তবে আজ কি ? কথাটা ভেবে আরু হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামছি মেরে ধরলো ৷ আরিশকে চাইলেও ধাক্কা দিতে পারবে না, সুস্থ থাকলে না হয় ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতো কিন্তু আরিশ অসুস্থ ৷ আরু অসুস্থ হলে আরিশ পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখে, এমন কোন রাত নেই যখন আরু অসুস্থ হয়েছে আর আরিশ সারারাত ওর পাশে থাকেনি ৷

আরিশ আরুর ঠোঁটের কাছে এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ করে আরুর ওপর যেন একপ্রকার নেতিয়ে পড়লো , হঠাৎ করে এমন হওয়াতে আরুর প্রান যায় যায় অবস্থা ৷ আরিশের সমস্ত দেহের ভার ওর ওপর, আরিশের শরীরের তাপমাত্রা ওর শরীরে এসে মিশছে ৷ আরুর নিশ্বাস আটকে আসছে ৷ আরু ওঠার চেষ্টা করলো অনেক , পারছে না কিন্তু এই অবস্থায় কাউকে ডাকাও যাইনা, ডাকলে এমন ভাবে দেখে এক খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে ৷ আরু অনেক চেষ্টার পর উঠে তারপর আরিশকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে গলা ছেড়ে ডাক দিলো
” আম্মু আম্মু !”

ভোররাতে হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছে আরু,সারারাত আরিশের পাশে পাশে ছিলো, আরিশকে ছেড়ে বাসায় ফিরতে চাইনি কিন্তু ওই যে ও আগে থেকেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরে রেখেছে যে ও অসুস্থ তাই বাধ্য হয়ে পারে আসতে হয়েছে ৷ বাসায় এসেই ধপ করে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লো আরু, চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়লো কিছুখন আগে আরিশ ওর ওপর নেতিয়ে ছিলো ৷ কথাটা ভেবে আবার উঠে গেল, ঘড়ির দিকে তাকালো তারপর দেখলো ভোর 5.45 বাজে ৷ সকালে আরিশকে দেখে তারপর ভার্সিটি যবে তাই আরিশের জন্য নিজের হাতে রান্না করে নিয়ে যাবে তাই কিচেনে গেল হালকা কিছু খাবার রান্নার জন্য ৷ রান্না শেষ হতে হতে প্রায় 7.30 বেজে গেল ৷ আরু তাড়াতাড়ি করে গোসল সেরে নিলো হসপিটার যাবে তারপর ভার্সিটি ৷ ঠিক 9টার দিকে বেরিয়ে গেল হসপিটালের উদ্দেশ্যে ৷

রিকশায় উঠতেই সানা ফোন করলো কিন্তু রাস্তার গাড়ির আওয়াজে আরু শুনতে পাইনি তাই ফোন ধরেনি ৷ হসপিটালের সামনে নেমে গেল আরু ৷ দ্রুত পায়ে আরিশের রুমের দিকে হেটে গেল তারপর গিয়ে দেখলো আরিশ নেই ৷ আরিশকে সেখানে না দেখে প্রথমে ভাবলো রুম চেন্জ করা হয়েছে কিন্তু পরে রিসেপশনিস্টের কাছে গিয়ে জানতে পারলো যে আরিশের ছুটি হয়ে গেছে 8টার সময় ৷ শুনে আরুর মেজাজটাই বিগড়ে গেল ৷ ভাবলো যে আজকে বাসায় গিয়ে সবাইকে ঝাড়বে ঝড়ের গতিতে যে কেন কেউ ওকে ফোন করে কিছু বলেনি ৷ সোজা ভার্সিটি গেল আরু ৷ সেখানেও কাউকে না পেয়ে রেগে নিজের ক্লাসরুমে যেতে গেলেই হঠাৎ কেউ দরজার পাশ থেকে ওর হাতটা টেনে নিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে নিলো ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৩